তুমি এই ছোট্ট ফ্ল্যাটটাকে নিজের মনের মত করে সাজিয়ে
তুলবে। গড়ে তুলবে সংসার। সেজন্যই তো আগে তোমার নামটা দিলাম।” আমার কথা
শুনে প্রিয়াও হেসে বলেছিল, “উফ্। তোমার সঙ্গে কথায় পেরে ওঠা একদম অসম্ভব।
সবকথার উত্তর ঠিক তোমার ঠোঁটে লেগেই থাকে।” কথাগুলো মনে পড়তেই, কাঁপা
কাঁপা হাতে নেমপ্লেটটার উপর হাত বোলালাম। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল কি একটা?
হবে হয়তো। বর্তমানে নিজের শরীর, নিজের মন, নিজের আত্মা, নিজের বিবেক -
কোনোও কিছুর উপরেই কোনো লাগাম নেই, কোনো কন্ট্রোল নেই আমার। যখন যেটা খুশী
বিদ্রোহ করছে। তাদের সেই বিদ্রোহকে শক্ত হাতে দমন করতে বারবার অসমর্থ হচ্ছি
আমি। তাই ওদের ছেড়ে দিয়েছি স্রোতের মুখে। আর নিজেকে সঁপে দিয়েছি
ভাগ্যের হাতে। এখন আমার শরীর নেই। মন নেই। আত্মা নেই। বিবেক নেই। আমি
কায়াহীন। এক অশরীরী। আচ্ছা, আমি কি দূর্বল হয়ে পড়ছি? কিন্তু এই মুহুর্তে
তো আমার দূর্বল হওয়ার কথা নয়! আমাকে শক্ত হতে হব। দৃঢ় হতে হবে। এই
ব্রাহ্মমুহুর্তে ভেঙ্গে পড়লে আমি সফল হব কি করে? আমাকে তো আজ সফল হতেই
হবে। আমার অভীষ্ট লক্ষ্যকে করতে হবে করায়ত্ত। যতটা না আমার নিজের জন্য।
তার থেকেও বেশী প্রিয়ার জন্য। কিন্তু প্রিয়া কে? সে কি কেবলই আমার
স্ত্রী? না। কেবল স্ত্রীর সংকীর্ণ পরিচয়ের বেড়াজালে তাকে আমি আটকে রাখতে
পারব না। সে আমার বন্ধু। সে আমার সখা। সে আমার সাথী। আমার ভালবাসা। আমার
জীবনের প্রথম ও একমাত্র নারী। তার জীবনের জন্য, তার সুখের জন্য তো আমাকে
পারতেই হবে। হবেই। নাহলে আমি যে হেরে যাব। নিজের কাছে। প্রিয়ার কাছে। চোখ
বন্ধ করে বড় একটা শ্বাস নিলাম। বুকের ধুকপুকুনিটাকে পাঁজরের আড়ালে অতি
সাবধানে লুকিয়ে রেখে, কাঁপা হাতটাকে শক্ত করলাম। মনকে করলাম দৃঢ়। পকেটে
হাতটা ঢোকালাম। ঠাণ্ডা বস্তুটা যথাস্থানেই আছে। বস্তুটার গা বাঁচিয়ে
ফ্ল্যাটের চাবিটাকে আলগোছে বের করে আনলাম। চাবি ঘুরিয়ে দরজাটা খুললাম।
Home, Sweet Home। কিন্তু আমার কাছে এটা ঘর নয়, এককথায় নরক। যতক্ষণ থাকি
ততক্ষণ মনে হয় যেন নরকের আগুনে পুড়ে যাচ্ছি। ঝলসে যাচ্ছে আমার সারা শরীর।
সেই সাথে মনটাও। দরজাটা খুলতেই থিকথিকে অন্ধকার স্বাগত জানালো আমাকে। পা
বাড়িয়ে পদার্পণ করলাম সেই অন্ধকারে। এতদিনে অভ্যেস হয়ে গেছে এসব কিছুর।
অন্যান্য দিন হাতড়ে সুইচ খুঁজে আলো জ্বালাই। আজ ইচ্ছা করল না। নিঃশব্দে
ঘরের ভিতর ঢুকে দরজা আবার বন্ধ করে দিলাম। এতক্ষণ প্যাসেজের আলো খোলা দরজা
পেয়ে ঘরটাকে কিছুটা হলেও আলোকিত করছিল। দরজাটা বন্ধ করে দিতেই চারিদিক
থেকে একরাশ অন্ধকার জড়িয়ে ধরল আমায়। বলছি বটে, তবে ঘরটা পুরোপুরি
অন্ধকার নয়। আমাদের বেডরুমের বন্ধ দরজার তলা দিয়ে কিছুটা আলো এসে পড়ছে
এই ড্রয়িংরুমে। সেই আলোতে সবটা না হলেও, চোখটা সয়ে যাচ্ছে। জুতোটা
খুললাম। অন্ধকারের মধ্যেই গেলাম কিচেনে। ডানদিকে আন্দাজে হাত বাড়াতেই
ফ্রিজের গায়ে হাত ঠেকল। হাতলটা ধরে টানলাম। দরজাটা খুলতেই কিছুটা আলো আর
কিছুটা ঠাণ্ডা বাতাস ধাক্কা মারল বুকে। মনে পড়ে গেল। যতবার আমি বেডরুমে
ঢুকি ততবারই এল.ই.ডি. ল্যাম্পের ফ্যাকাশে আলো আর এ.সি.-র ঠাণ্ডা বাতাস
ঝাপটা মারে সারা শরীরে। আমার এ.সি. লাগেনা। পাখাতেই চলে যায়। তবু বেডরুমে
এ.সি. লাগিয়েছি। না, আমার জন্য নয়। যাতে প্রিয়ার কষ্ট না হয়। ওর কষ্ট
আমি সহ্য করতে পারব না। এখন সারাদিনই ঐ ঘরে এ.সি. চলে। যতবারই বাইরে থেকে
বেডরুমে ঢুকি, ততবারই মনে হয় যেন কোনো মর্গে ঢুকলাম। আগে এমন মনে হত না।
কিন্তু ইদানিং মনে হয়। কোন কোন দিন যখন মাঝরাত্তিরে ঘুম ভেঙ্গে যায়,
প্রিয়ার গায়ে হাত ঠেকাই, মনে হয় শীতল বরফ। নিজের হাতটা শিরশির করে ওঠে
সেই শীতল স্পর্শে। মনে হয় মর্গে শোয়ানো কোনো হিমশীতল মৃতদেহ। চোখ কচলে
ভালো করে লক্ষ্য করি। না, ঐ তো নিঃশ্বাস পড়ছে! আস্তে। কিন্তু পড়ছে তো।
তার মানে বেঁচে আছে প্রিয়া। ঐটুকুই ওর মধ্যে জীবনের চিহ্ন। মনে হয় বন্ধ
করে দিই এ.সি.টা। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবি, না থাক। প্রিয়ার কষ্ট হবে। ওকে
কষ্ট দিতে আমি চাইনা। প্রিয়ার কথা মনে পড়তেই তেষ্টা পেল ভীষণ। ঠোঁটদুটো
যেন সাহারা মরুভূমির তপ্ত বালুচর। নীচু হয়ে দেখতে পেলাম একটা জলের বোতল
আছে। তুলে নিলাম সেটা। তখনই পাশে রাখা দামী হুইস্কির বোতলের অবয়বটা চোখে
এল। সেটাও নিয়ে নিলাম। সাথে কিছু বরফ, আর একটা গ্লাস। সবকিছু এনে রাখলাম
ডাইনিং টেবিলে। চেয়ার টেনে বসলাম। বোতলের ছিপি খুলে গ্লাসে ঢাললাম
হুইস্কি। একটু। বেশী খেলে মাতাল হয়ে পড়ি আমি। সে অভিজ্ঞতাও হয়েছে আমার।
একবারই। সেই যথেষ্ট। জীবনে দ্বিতীয়বার মদিরার গ্লাস ধরলাম আমি। তাতে দিলাম
একখন্ড বরফ। তরল সুধা ঢাললাম গলায়। একবারে সবটা। এই যাঃ! জল মেশাতে ভুলে
গেছি। অভ্যেস না থাকলে যা হয়। সেই গলিত তরল মদিরা খাদ্যনালীটাকে
জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে পাড়ি দিল পাকস্থলির উদ্দেশ্যে। খুব একটা খারাপ লাগল
না। আরেক পেগ তৈরী করলাম। এবার আর তাড়াহুড়ো নয়, বরং ধীরেসুস্থে চুমুক
দিলাম তাতে। এখন নিজেকে অনেকটাই শান্ত লাগছে। মনের অস্থিরতাটা কেটে যাচ্ছে
আস্তে আস্তে। হাতে পায়ে বল ফিরে আসছে। মাথাটাও খেলতে শুরু করেছে। বাঃ, এই
মদিরা তো প্রয়োজনে টনিকের কাজও করে দেখছি। হঠাৎ একটা চাপা শব্দ কানে এল।
অনেক গোঙরানোর মত। “উম্মাহঃ....!” গলাটা আমার চেনা। কারণ গলাটা আমার
প্রিয়ার। কানটাও বেশ সরেস হয়ে উঠছে দেখছি। এতক্ষণ শুনতে পাইনি। কিন্তু
দু’ ঢোঁক পেটে যেতেই সব শুনতে পাচ্ছি। আর তাও বেশ পরিষ্কার। আরোও দু’বার
প্রিয়ার গোঙানির আওয়াজ পেলাম। সেইসাথে ওর দু’হাতে পরে থাকা শাঁখা, পলা আর
চুড়ির মিলিত আওয়াজ। রিন...রিন...রিন...। ঐ শব্দটা আমার খুব প্রিয়। আরেক
ঢোঁক হুইস্কি গলায় ঢেলে কান পাতলাম। চুড়ির শব্দটাকে ছাপিয়ে অন্য একটা
শব্দ আসছে কানে। “থপ্...থপ্...থপ...” আরেক ঢোঁক হুইস্কি। এবার তিনটে শব্দ
মিলেমিশে একাকার। কোনোটা একটু জোরে, কোনোটা একটু আস্তে। কিন্তু তিনটিই আসছে
এক লয়ে। এক ছন্দে। “থপ্...রিন...উম্মাহ...” “থপ্...আহঃ...রিন...”
“থপ্...রিন...ওঁক... মাগো...থপ্” শব্দগুলো মাথার মধ্যে ধাক্কা খেয়ে কেমন
যেন জট পাকিয়ে যাচ্ছে। কেমন যেন নেশাতুর বলে মনে হচ্ছে নিজেকে। কিন্তু
আমাকে এখন মাতাল হয়ে গেলে তো চলবে না। এবার থেকে আমি যা করব, সবই আমাকে
শক্ত হাতে করতে হবে। কোনো বেচাল হলে চলবে না। যে কাজটা আমি করতে চলেছি,
তাতে আমাকে সাফল্য পেতেই হবে। না হলে চিরটাকাল এই নরকে পচে মরতে হবে আমাকে।
আমার প্রিয়াকেও। কিন্তু সারাটা জীবন আমি প্রিয়াকে এইভাবে একটু একটু করে
কষ্ট পেয়ে তিলে তিলে মরতে দিতে পারব না। হাতঘড়িটার দিকে তাকালাম। রাত
সওয়া এগারোটা। সেই ব্রাহ্মমুহুর্ত উপস্থিত। আমাকে হেস্তনেস্ত করতেই হবে।
গ্লাসের রঙিন তরলটাকে সম্পূর্ণ গলায় ঢেলে উঠে দাঁড়ালাম। মাথাটা পাঁই করে
একবার ঘুরে গেল। প্রথম প্রথম ওরকম হয়। পরে সব ঠিক হয়ে যায়। নিজেকে সামলে
এগিয়ে গেলাম বেডরুমের দিকে। বেশ বুঝতে পারছি পা দুটো নিজের বশে নেই।
সামান্য মদিরাতেই আমি মাতাল। শরীরটাকে টেনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালাম
বেডরুমের দরজার সামনে। কানে আসছে প্রিয়ার কাতর গোঙানি, ওর চুড়ির করুণ
আর্তনাদ আর সেই থপ্, থপ্ ভোঁতা শব্দের মিলিত ককটেল। যেটা আমার নেশাটাকে
প্রতি মুহুর্তে করে তুলছে দ্বিগুণ। ঠক্ ঠক্। বেডরুমের দরজায় নক্ করলাম।
দরজার ওপাশ থেকে পুরুষালী গলা এসে এপাশে পৌঁছাল। “কে?”
“আমি পার্থ।”
“কি চাই?”
“কথা আছে, দরজা খুলুন।”
“কি কথা?”
“এখান থেকে বলা যাবে না। দরজাটা খুলুন।”
“যা বলার কাল সকালে বলবে। যাও, এখন শুয়ে পড়।”
“না। আমার এখনই দরকার। দরজাটা খুলুন।”
এই প্রথম আমার গলা দিয়ে অনুনয় নয়, বরং আদেশের সুর বের হল। তাতে কি কাজ হল? মনে তো হয়। কারণ দরজাটা খুলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। কিন্তু সবটা নয়। কিছুটা খোলা দরজার ফাঁক দিয়ে একটা মুখ বেরিয়ে এল। “কি বলার আছে বলো। দেরী হয়ে যাচ্ছে।” রাগটা মাথায় চড়ে বসলেও শান্ত গলায় জবাব দিলাম, “এখানে নয়, যা বলার ভিতরে গিয়ে বলব।” বিরক্তিতে ভরে উঠল মুখটা। “বললাম তো এখন নয়, কাল সকালে কথা হবে।” আমি বললাম, “না, আমি এখনই বলব।” মুখটা আরোও কিছু বলার আগেই ঘরের ভিতর থেকে ফ্রিজের বরফের চেয়েও একটা ঠাণ্ডা কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “ওকে ভিতরে আসতে দাও।” মুখটা পলকের মধ্যে সরে গেল। দরজাটাও খুলে গেল পুরোটা। ঠাণ্ডা হিমঘরে প্রবেশ করলাম আমি। সারা গায়ে একটা শিরশিরানি বয়ে গেল। এতক্ষণ অন্ধকারে থাকার পর হঠাৎ এত আলোতে এসে চোখটা ধাঁধিয়ে গেল। নিজেকে সামলে নিলাম। পাশে দাঁড়ানো লোকটা দাঁত খিঁচিয়ে বলল, “অমন সঙের মতন দাঁড়িয়ে না থেকে, যা বলার তাড়াতাড়ি বলে কেটে পড়ো। আমাদের দেরী হচ্ছে।” ধর্তব্যের আনলাম না ওকে। এগিয়ে গেলাম ঘরের এককোণে। সেখানে রকিং চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে বছর ত্রিশের এক সুদর্শন যুবক। আমার থেকে বয়সে সামান্য বড়। তার দিকে এগিয়ে গেলাম আমি। যুবকটি শান্তভাবে আমার দিকে তাকাল। তারপর পাশের টেবিলে রাখা গ্লাসটা তুলে নিয়ে তার ভিতরে রাখা রঙিন তরলে চুমুক দিল। তারপর জিজ্ঞাসা করল, “কি চাও পার্থ?”
“আপনি তো জানেন, আমি কি চাই।”
“আর তুমিও তো জানো, সেটা আর তুমি কোনোদিন ফেরৎ পাবেনা। ওটা এখন আমার। শুধু আমার।” গ্লাসের তরলে আরেক চুমুক।
“আমি আমার জিনিস ফেরত চাই।”
“সব জিনিস কি চাইলেই পাওয়া যায়?” আরেক চুমুক।
“তাহলে আমাকে ছিনিয়ে নিতে হবে।”
“Then go on.” আরেক চুমুক।
আর সহ্য হলনা। পকেট থেকে ঠাণ্ডা কৃষ্ণকায় পিস্তলটা বের করে ধরলাম তার মুখের কাছে।
“ওসব খেলনা সবার হাতে মানায় না, পার্থ। শুধু ধরতে জানলেই হয়না। চালাবার মত কলজেও থাকা চাই। আর সেটা তোমার মধ্যে নেই। ছেলেমানুষী কোরোনা।”
কয়েকমুহুর্ত চোখ বুজলাম। করিমের গলাটা কানে এল, “সাহস করে যদি একবার ঘোড়াটা টিপে দিতে পারো, ব্যাস আর দেখতে হবে না।” চোখটা খুললাম। মনটাকে স্থির করে টানলাম ট্রিগারটা। ‘দড়াম!’ কানফাটা একটা আওয়াজ। একটা চোখধাঁধানো আলো। আর একটা পোড়া গন্ধ। সামনের চেয়ারে বসে থাকা যুবকটির চোখদুটো বিস্ফারিত। হয়ত আমার স্পর্ধা দেখে। কিম্বা কলজের জোর দেখে। কপালের ঠিক মাঝখানে সদ্য তৈরী হওয়া গোল গর্তটা থেকে ততক্ষণে নেমে আসতে লেগেছে কালচে গরম রক্ত। হাতের গ্লাসটা শক্ত মেঝেতে পড়ে ঝনন্ শব্দ করে ভেঙ্গে গেল। পিছনের লোকটার হুঁশ ততক্ষণে ফিরে এসেছে। “অ্যাই শালা, মাদার**!” বলে ছুটে এল আমার দিকে। “দড়াম!” কাটা কলাগাছের মত লুটিয়ে পড়ল লোকটা। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে ছোঁড়া গুলিটা বোধহয় ওর হৃৎপিণ্ডটাকেই ফুটো করে দিয়েছে। এবার ঘুরে দাঁড়ালাম বিছানার দিকে। তিন নম্বর লোকটা কেবল, “আমি...আমি...” এইটুকুই বলার সুযোগ পেল। কালচে রক্ত সাদা বেডকভারটাকে মুহুর্তে রঙিন করে তুলল। বন্দুকটা নামালাম। গিয়ে বসলাম বিছানার একধারে। আমার ঠিক অপরধারে ভয়ে কাঁপছে প্রিয়া। আমার স্ত্রী। গায়ের জামাটা খুলে বাড়িয়ে দিলাম ওর দিকে। সেটা গায়ে দিয়ে নিজের লজ্জাটাকে কোনোরকমে ঢাকল ও। যদিও আমার জামাটা ওর লজ্জা, ওর মর্যাদা ঢাকার পক্ষে অনেক ছোট। ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কেন পার্থ?” এই প্রথম ওর চোখে চোখ রেখে উত্তর দিলাম, “পাপ করেছিলাম, প্রিয়া। আজ তার প্রায়শ্চিত্ত করলাম।” প্রিয়ার চোখের কোণে চিকচিক করতে থাকা জলগুলো আমার নজর এড়ালো না। ও এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে সশব্দে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। ওকে কাঁদতে দিলাম। কাঁদুক ও। আজ ও যত কাঁদবে, তত পাপের বোঝা কমবে আমার। মনটা পুরোপুরি শান্ত হল এতক্ষণে। আমি পেরেছি। কিন্তু এখনও একটা কাজ বাকী আছে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে নম্বরটা ডায়াল করলাম। আগে থেকেই সেভ করে রেখেছিলাম। কয়েকবার রিং বাজার পর কেউ ফোনটা ধরল। “হ্যালো?” শান্ত গলায় জবাব দিলাম, “হ্যালো! পুলিশস্টেশন?..
সারাদিনের পর প্রাক্তন অ্যাডভোকেট নীলকণ্ঠ বাগচী এইমাত্র টি.ভি.টা খুলে বসলেন। যদিও টিভি দেখতে যে খুব একটা পছন্দ করেন তা ঠিক নয়। তবুও সারাদিনের পর একবার অন্তত টিভিটা খুলে বসেন। সাধারণত নিউজ চ্যানেল দেখেন। দেশের ও রাজ্যের বিভিন্ন খবরাখবরের উপর নজর রাখেন। আজও সেই একই রুটিন মেনে টিভি খুলেছিলেন। পছন্দের নিউজ চ্যানেলটা খুলতেই টিভির পর্দায় খবরের ঝড় যেন আছড়ে পড়ল। একজন রিপোর্টার উত্তেজিত গলায় কারোর খুনের খবর রিপোর্ট করছে। নীলকণ্ঠবাবু খুব একটা আগ্রহ প্রকাশ করলেন না। এরকম মার্ডারের খবর আকছার শুনতে পাওয়া যায়। নিউজ চ্যানেলগুলোর কাজই হল ছোট্ট জিনিসকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে, তিলকে তাল করে তোলা। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই নীলকণ্ঠবাবু নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। কারন খুনের ঘটনাটা মোটেও ‘সামান্য’ নয়। খুন হয়েছে এরাজ্যের সবচেয়ে বড় শিল্পপতি ও মন্ত্রী রাজেশ আগরওয়ালের একমাত্র ছেলে রুলিং পার্টির যুবনেতা ও ভাবী মন্ত্রী রোহন আগরওয়াল। এই অবাঙালী শিল্পপতির পরিচিতি রাজনীতির ময়দানে কেবল এই রাজ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দিল্লী পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই এই তাবড় নেতা ও মন্ত্রীর একমাত্র ছেলের মৃত্যুর ঘটনা ব্রেকিং নিউজ হতে বাধ্য এবং তা হয়েছেও। এবং এই ঘটনা অন্যান্য রাজ্যবাসীর সাথে নীলকণ্ঠবাবুরও মনোযোগ আকর্ষণ করে নিল। উনি বেশ মনোযোগ সহকারে খবরটা শুনতে শুরু করলেন। রিপোর্টারের খবর অনুযায়ী আধঘন্টা আগে একজন যুবক *** থানায় ফোন করে জানায় যে, সে তার নিজের বাড়িতে রোহন আগরওয়াল ও তার দুই বন্ধুকে গুলি করে হত্যা করেছে। এবং বর্তমানে সে পুলিশের কাছে সারেন্ডার করতে চায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সত্যিই রোহন ও তার দুই সঙ্গীর মৃতদেহ পেয়েছে। তিনজনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তলটিকেও পুলিশ সিজ্ করেছে। পুলিশ খুনে অভিযুক্ত যুবককেও গ্রেপ্তার করেছে। খুনের কারণ কি হতে পারে তা পুলিশ এখনোও সঠিকভাবে জানেনা। পুলিশসূত্রে খবর, তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে পুলিশের সন্দেহ কোনো ব্যক্তিগত কারণেই এই খুন। কিন্তু রোহন ও তার সঙ্গীরা অত রাতে ঐ যুবকের বাড়িতে কি করছিল, তা পুলিশ এখনো জানতে পারেনি। তবে তদন্ত জোর কদমে শুরু হয়ে গেছে। কারণ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে জানিয়েছেন তিনি এবং তাঁর দল রাজেশ আগরওয়ালের পরিবারের প্রতি সমব্যথী। তদন্তে কোনোরকম ঢিলেমি তিনি একেবারেই বরদাস্ত করবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি স্বয়ং ডি.সি.পি.কে এই ঘটনার তদন্তে নিযুক্ত করেছেন। টিভি সেটটাকে অফ্ করে নীলকণ্ঠবাবু ভাবতে শুরু করলেন, এই খুনের প্রকৃত কারণটা কি হতে পারে। একজন রুলিং পার্টির মন্ত্রীর ছেলেকে স্রেফ আবেগের বশে বা নিতান্ত ব্যক্তিগত কারণে খুন করতে পারে, তা পুলিশ মনে করলেও অভিজ্ঞ উকিল নীলকণ্ঠবাবু তা একেবারেই তা মনে করেন না। তাঁর ত্রিশ বছরের কেরিয়ারে তিনি এমন অনেক কেসের সঙ্গেই যুক্ত থেকেছেন, যেখানে খুনের পিছনের কারণটা অতি গুরুতর। এক্ষেত্রেও সেইটাই সন্দেহ হচ্ছে নীলকণ্ঠবাবুর। তবে একটা জিনিস পরিষ্কার। ছোকরার কলজের জোর আছে বলতে হবে। নাহলে কেউ রোহন আগরওয়ালকে খুন করার মত বোকামি বা পাগলামি করত না। এবার হয় ওকে মরতে হবে, নাহলে জেলে পচতে হবে। নীলকণ্ঠবাবুর চিন্তাজালটাকে ছিন্ন করে দিয়ে ওনার পাশে রাখা টেলিফোনটা বেজে উঠল। না কোনো মোবাইল বা অত্যাধুনিক স্মার্টফোন নয়। বরং সাবেকী ল্যান্ডলাইন। নীলকণ্ঠবাবুর কোনো মোবাইল ফোন নেই। ইচ্ছা করেই কেনেন নি। এবং ব্যবহারও করেন না। উনি মানুষটাই সেকেলে। আর তাছাড়া রাস্তাঘাটে, বাড়িতে, এবং ওনার অফিসে সর্বত্র ছেলেছোকরাদের এই মোবাইল-জপ দেখলেই ওনার গা-পিত্তি জ্বলে যায়। এখনো উনি সব কাজ ঐ ল্যান্ডফোনের উপর নির্ভর করেই করে থাকেন। দিব্যি কাজ মিটে যায়। আজকালকার ছেলেমেয়েদের কেন যে এই মোবাইল-প্রীতি তা ওনার বোঝার বাইরে। যাই হোক এতরাতে কে ফোন করল, এইকথা ভাবতে ভাবতে নীলকণ্ঠবাবু ফোনটা তুললেন, “হ্যালো!”
“হ্যালো! নীলকণ্ঠ, আমি অবিনাশ বলছি। টিভিতে খবর দেখেছো?” অপরপাশ থেকে জবাব এল। অবিনাশবাবু অর্থাৎ অবিনাশ লাহিড়ী নীলকণ্ঠবাবুর অনেকদিনের বন্ধু এবং পরিচিত। তবে অবিনাশবাবুকে এতরাতে ফোন করতে দেখে নীলকণ্ঠবাবু বেশ অবাকই হলেন। কারণ ওনার কোনো বন্ধুই এতরাতে ওনাকে ফোন করেন না। তাই উনি বেশ কিছুটা অবাক হয়েই উত্তর দিলেন, “কি ব্যাপার বলোতো অবিনাশ? একজন মন্ত্রীপুত্রের মৃত্যুর খবর শুনে তুমি এমন উতলা হয়ে উঠেছো?”
“তোমার পাল্টা প্রশ্ন শুনেই বুঝতে পারছি, খবরটা তুমি শুনেছো।”
“হ্যাঁ, আমি খবরটা দেখেওছি এবং শুনেওছি। কিন্তু তুমি হঠাৎ এতরাতে আমাকে ফোন করে এসব বিষয়ে আলোচনা করছো, কি ব্যাপার বলোতো?”
“সবকথা ফোনে বলা যাবেনা। আমি এক্ষুণি তোমার বাড়ি আসছি। আমার সাথে আরেকজন থাকবে। তোমার ওখানো গিয়ে সব বলব।” ওপার থেকে অবিনাশবাবু বললেন।
বন্ধুর এইকথাটি শুনে নীলকণ্ঠবাবু সত্যিসত্যিই অবাক হলেন। তিনি এতরাতে কারোর সাথে দেখা করেন না জেনেও যখন অবিনাশ তাঁর বাড়িতে আসতে চাইছে, তখন ব্যাপারটা হয়তো সত্যি করেই গুরুতর। নীলকণ্ঠবাবুর গলায় এবার সত্যিকারের বিষ্ময় ঝরে পড়ল, “কি হয়েছে খুলে বলোতো। এতরাতে আমার বাড়িতে আসতে চাইছ, তার উপর আবার একজনকে সঙ্গে করে।”
“বললাম তো, গিয়ে সব বলছি। ততক্ষণ একটু ধৈর্য্য ধরো। আমি আধধন্টার মধ্যেই তোমার বাড়ি পৌছে যাবো। এখন রাখছি।” নীলকণ্ঠবাবু কিছু বলার আগেই ওপাশে অবিনাশবাবু লাইন কেটে দিলেন। ফোনটা যথাস্থানে রেখে নীলকণ্ঠবাবু ভাবনার অতলে তলিয়ে গেলেন। একজন শিল্পপতির ছেলের মৃত্যুর বিষয়ে অবিনাশ এত ইন্টারেস্ট নিচ্ছে কেন? অবিনাশের গলা শুনে মনে হল ব্যাপারটা সত্যিই বেশ গুরুতর। আবার সঙ্গে করে কাউকে নিয়ে আসার কথা বলল। সে কে? তার সঙ্গে এই ঘটনার সম্পর্কই বা কি? উনি কিছুই বুঝতে পারছিলেন না।
নীলকণ্ঠবাবুর মনের মধ্যে তোলপাড় করতে থাকা প্রশ্নের ঝড়টা শান্ত হবার আগেই ওনার বাড়ির কলিং-বেলটা বেজে উঠল দু’বার। আরো বাজার আগেই উনি উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন। দরজাটা খুলতেই সামনে বন্ধু অবিনাশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। আর অবিনাশের ঠিক পিছনে একজন ছায়ামূর্তিও দাঁড়িয়ে আছে। নীলকণ্ঠবাবু কিছুটা অবাক হয়ে বললেন, “এসো অবিনাশ, ভিতরে এসো।” অবিনাশবাবু নিজে ঢুকতে ঢুকতে ওনার পিছনের ছায়ামূর্তিটাকে বললেন, “ভিতরে আয়।” নীলকণ্ঠবাবু দেখলেন অবিনাশের সাথে একটি মেয়ে ঘরে ঢুকল। চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। মেয়েটির মুখের দিকে এক ঝলক তাকিয়েই নিজের অজান্তে নীলকণ্ঠবাবু একবার চমকে উঠলেন. পরক্ষণেই অবশ্য নিজেকে সামলে নিলেন। সেটা অবশ্য অবিনাশবাবুর নজর এড়াল না। উনি চোখের ইশারায় বন্ধুকে শান্ত হতে বললেন। নীলকণ্ঠবাবু নিজেকে সামলে নিয়ে অবিনাশবাবুকে বললেন, “আমার চেম্বারে চলো। ওখানে বসেই কথা হবে।” ওনার পিছন পিছন অবিনাশবাবু এবং মেয়েটি চেম্বারে এল। ওনাদেরকে চেয়ারে বসতে বলে নিজেও স্বস্থানে বসলেন। অবিনাশের পাশে, চেয়ারে বেশ খানিকটা জড়োসড়ো হয়ে বসল মেয়েটি। ওনার দিকে একবার তাকিয়েই মাথাটা নামিয়ে নিল সে। নীলকণ্ঠবাবুর অভিজ্ঞ চোখ পড়ে নিতে লাগল মেয়েটির হাবভাব। মেয়েটি যে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে আছে, সেটা ওর হাবভাবেই স্পষ্ট। আরেকটা জিনিস নীলকণ্ঠবাবু বুঝতে পারলেন যে, মেয়েটি একটি ট্রমার মধ্যে আছে। ওর চোখমুখটাও কেমন যেন ফোলা ফোলা লাগছে। তার মানে মেয়েটি সম্ভবত কান্নাকাটি করছিল। ওর পরনে একটি শাড়ি। তাও যেমন-তেমনভাবে পরা। তার মানে তাড়াতাড়িতে হাতের কাছে যা পেয়েছে, কোনোরকমে পরেছে। পোষাকের দিকে আলাদা করে নজর দেওয়ার সময় বা সুযোগ কোনোটাই তার কাছে ছিল না। এতকিছু বুঝতে পারলেও উনি এটা বুঝতে পারলেন না, মেয়েটি কে। আর এতরাতে অবিনাশই বা ওকে নিয়ে তার কাছে এল কেন। মন্ত্রীপুত্রের হত্যার সঙ্গে এই মেয়েটির সম্পর্কই বা কি। বন্ধুর মুখে প্রশ্নগুলো পড়ে নিয়ে অবিনাশবাবু বলতে শুরু করলেন, “তুমি হয়তো বেশ খানিকটা অবাক হচ্ছো যে, এতরাতে হঠাৎ আমি এখানে এলাম কেন। আর এই মেয়েটিই বা কে। তাইতো?”
“হ্যাঁ, তা বলতে পারো।”
“বেশ, তাহলে তোমাকে সব খুলে বলি। এই মেয়েটি হল প্রিয়া। আমার এক বন্ধুর মেয়ে। প্রায় একবছর হতে চলল ওর বিয়ে হয়েছে। আজ রাতে হঠাৎ ওর বাবা আমাকে ফোন করে জানায় ওর মেয়ে প্রিয়া একটা বড়ো বিপদে পড়েছে।”
“কি বিপদ?”
“বলছি। তুমি একটু আগে টিভিতে রোহন আগরওয়ালের খুনের খবরটাতো দেখেছো, সেটাই আসল বিপদ।”
“বুঝলাম না।”
“খবরে যে খুনীর কথা বলছে, সে প্রিয়ার স্বামী পার্থ। পার্থই রোহন আর ওর দু’জন সঙ্গীকে গুলি করে হত্যা করেছে।”
“কিন্তু রোহন আর ওর বন্ধুরা অতরাতে ওদের বাড়িতে কি করছিল?”
“সেটা আমার থেকে প্রিয়া তোমাকে ভাল করে আর ডিটেলসে বলতে পারবে।”
বন্ধুর কথা শুনে নীলকণ্ঠবাবু প্রিয়ার দিকে তাকালেন। এতক্ষণে উনি বুঝতে পেরেছেন, কেন এতরাতে অবিনাশ মেয়েটিকে সঙ্গে করে তাঁর কাছে নিয়ে এসেছেন। উনি আজ বেশ কয়েক বছর হল প্র্যাকটিস বন্ধ করে দিয়েছেন। যদিও কারণটি একান্ত ব্যক্তিগত, তবুও সেটা অবিনাশের ভালো করেই জানা। ও সেই কারণটার ফায়দা তুলতে চাইছে না তো? কারণ এর আগে অনেকের অনুরোধই তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা ছিল, আর কোনোদিন তিনি কোর্টে পা রাখবেন না। সেই কারণেই কি অবিনাশ আজকে এই মেয়েটিকে তাঁর সামনে শিখন্ডীর মত দাঁড় করিয়ে দিয়ে তাঁকে আবার কোর্টে ফেরত যেতে বাধ্য করছে। যদি তাই হয়, তিনি এই ফাঁদে পা দেবেন না। ওনাকে ওনার প্রতিজ্ঞা থেকে কেউ নড়াতে পারবে না। নীলকণ্ঠবাবু আবার বর্তমানে ফিরে এলেন। দেখলেন মেয়েটি অনুচ্চ কণ্ঠে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে। উনি মেয়েটাকে কিছুটা সময় দিলেন। তারপর নিজের জায়গা থেকে উঠে গিয়ে একগ্লাস জল এনে দিলেন প্রিয়াকে। তারপর নরমস্বরে বললেন, “জলটা খেয়ে নাও, প্রিয়া। কান্নাকাটি বন্ধ করো। এখন ওসবের সময় নয়। ধীরেসুস্থে মাথা ঠাণ্ডা করে বলোতো আসলে কি ঘটেছে? রোহন আর ওর বন্ধুরা অতরাতে তোমাদের বাড়িতে কি করছিল? আর তোমার স্বামী পার্থই বা কেন এমন একটা ব্লান্ডার করল?” প্রিয়া নীলকণ্ঠবাবুর হাত থেকে জলের গ্লাসটা নিয়ে একচুমুক খেয়ে টেবিলের উপর রাখল। তারপর দু’একবার নীলকণ্ঠবাবুর দিকে তাকিয়ে মাথাটা নীচু করে নিল। উনি বুঝতে পারলেন প্রিয়া কিছু বলতে চাইছে, অথচ কোনো কারণে বলতে পারছে না। ওনাকে সেই কারণটাই জানতে হবে। উনি আবার বললেন, “এখন চুপ করে থাকার সময় নয় প্রিয়া। তুমি জানো, রোহন কার ছেলে? রাজেশ আগরওয়ালের ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা নেই। ওরা পার্থর কোনো বড় ধরনের ক্ষতি করে দিতে পারে। এর আগে ও অনেকের অনেক ক্ষতি করেছে। তাই দেরী হয়ে যাওয়ার আগে সবকিছু খুলে বলো, প্রিয়া। তা নাহলে শুধু আমি কেন, কেউই তোমাকে কোনো রকম সাহায্য করতে পারবে না।” ওনার মুখে পার্থর ক্ষতির সম্ভাবনার কথা জেনে প্রিয়া নীলকণ্ঠবাবুর দিকে তাকালো। ওর চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। তবু ও কোনো কথা বলল না। কেবল নিঃশব্দে কেঁদে চলল। চোখ থেকে জলের ধারা গাল বেয়ে নিচের দিকে নেমে চলল। নীলকণ্ঠবাবু বন্ধুর দিকে তাকালেন। অবিনাশবাবু বন্ধুর ইঙ্গিত বুঝতে পেরে বললেন, “আর চুপ করে থাকিস না, প্রিয়া। খুলে বল্, পার্থ কেন এমন কাজ করল।” প্রিয়া একবারের জন্যও নীলকণ্ঠবাবুর দিক থেকে চোখ সরাল না। ওনার দিকে নির্নিমেষ ভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনুচ্চ কণ্ঠে বলল, “কারণ, ওরা আমাকে ধর্ষণ করছিল।”
গাড়িটা চালাতে চালাতে মেয়েটার কথা ভাবছিলেন নীলকণ্ঠবাবু। ওর কথা শুনে শিউড়ে উঠেছিলেন তিনি। যদিও সবকথা ও খুলে বলেনি এবং উনিও জানতে চাননি। তবে যেটুকু শুনেছেন তাতে ওনার মনটা ঘৃণায় ভরে উঠেছে। একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের প্রতি কিভাবে এমন আচরণ করতে পারে, তা ওনার চিন্তার বাইরে। এই কথাটা ভাবার পরক্ষণেই নিজের মনকে মৃদু ধমক দিলেন উনি। কিভাবে ঐ অসভ্য, ইতর, জানোয়ারটাকে ‘মানুষের’ পর্যায়ে ফেলছেন উনি? সে আর যাই হোক, মানুষ কখনই নয়। প্রিয়ার মুখ থেকে ঘটনাগুলো শুনতে শুনতে ওনার মনটা বারবার ফিরে যাচ্ছিল অতীতে। কয়েকবছর আগের সেই ঘটনাটা চোখের সামনে ফিরে ফিরে আসছিল। আর মনে পড়ে যাচ্ছিল ওনার নিজের ব্যর্থতা। মনে হচ্ছিল, পার্থ যেটাই করেছে, ঠিক করেছে। জানোয়ারগুলোর সাথে এমনটাই করা উচিত ছিল। আর পার্থ ঠিক সেটাই করেছে। কিন্তু এটা এখন আর ওনার উপর নির্ভর করছে না। আইনের চোখে পার্থ একজন অপরাধী। এবং তিনি তাকে বাঁচাবার দায়িত্ব নিয়েছেন। উনি প্রিয়াকে কথা দিয়েছেন, যেকোন প্রকারে পার্থকে ওর কাছে ফিরিয়ে দেবেন। কিন্তু কিভাবে? সেটা আপাতত ওনারও জানা নেই। তবে তিনি প্রিয়াকে আশ্বাস দিয়েছেন, উনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। তাঁর কাছে প্রিয়াকে নিয়ে আসার জন্য প্রথমে তিনি অবিনাশের উপর রেগে গিয়েছিলেন। মনে হয়েছিল অবিনাশ প্রিয়াকে ব্যবহার করতে চাইছে তাকে রাজী করাতে। কিন্তু সব কথা শোনার পর মনে হল এটাই ওনার কাছে একটা সুযোগ নিজের ভুলটা শুধরে নেওয়ার। ব্যর্থতাটাকে নিজের জীবন থেকে, নিজের মন থেকে মুছে ফেলার। প্রিয়াকে সবরকম প্রবোধ দেওয়ার পর, তাকে একপ্রকার জোর করেই অবিনাশের সঙ্গে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যেতে চায়নি। কোনোরকমে বুঝিয়ে রাজী করিয়েছেন। ওরা চলে যাবার পরেই উনি তৈরী হয়ে নিয়েছেন। যা করার ওনাকে আজ রাতেই করতে হবে। তা নাহলে আগামীকাল যখন পার্থকে কোর্টে তোলা হবে, তখন খুব সহজেই সরকারী উকিল আর রাজেশ আগরওয়ালের ভাড়াটে উকিলেরা প্রমাণ করে দেবে যে পার্থ ইচ্ছাকৃতভাবে, বিনা প্ররোচনায় রোহন আর তার সঙ্গীদের হত্যা করেছে। আর সেটা আটকানোর একটাই উপায়। পার্থর সঙ্গে কথা বলতে হবে। জানতে হবে এসবের শুরু কবে ও কিভাবে। আর সেটা জানতেই উনি এতরাতে যাচ্ছেন থানায়। পার্থর সাথে ওনাকে কথা বলতেই হবে।
ভাবতে ভাবতে থানার সামনে গাড়িটাকে দাঁড় করালেন নীলকণ্ঠবাবু। গাড়িটাকে পার্ক করে, নেমে এসে হাতঘড়িটার দিকে তাকালেন। ওনার হাতঘড়িটা জানাল মধ্যরাত্রি অনেক আগেই অতিক্রান্ত। অন্যদিন এইসময় তিনি অগাধে ঘুমান। আজ কিন্তু ওনার একদম ঘুম পাচ্ছেনা। বরং অনেকদিন পর মনের মধ্যে একটা নতুন উদ্যম খুঁজে পাচ্ছেন উনি। আর দেরী না করে তাড়াতাড়ি থানার দিকে পা বাড়ালেন। এইসময় একটি থানার দৃশ্য যেমন হওয়া উচিত, ঠিক তেমনটাই দেখা যাচ্ছে। নীলকণ্ঠবাবু ভেবেছিলেন একজন মন্ত্রীপুত্রের হত্যাকারীকে নিয়ে হয়তো বিশেষ ব্যস্ততা ওনার চোখে পড়বে। কিন্তু তেমন কিছুই ওনার নজরে এলো না। গেটের পাশের একটি বেঞ্চিতে বসে একজন কনস্টেবল বসে বসে ঢুলছে। নীলকণ্ঠবাবু গিয়ে তাকে একবার ঠেলা দিয়ে বললেন, “শুনছো?” সে কেবল একবার ভ্রু কুঞ্চন করল মাত্র। উনি আবার তাকে ঠেলা দিয়ে বললেন, “এই যে শুনছো?” এবার তার নিদ্রা পুরোপুরিভাবে সাঙ্গ হল। ধড়মড় করে সোজা হয়ে বসল। তারপর ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “কাকে চাই?” নীলকণ্ঠবাবু বললেন, “থানার ডিউটি অফিসার কোথায় আছে?” কনস্টেবলটি এবার ওনার দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখে বলল, “এতরাতেই দরকার? কাল সকালে আসবেন।” উনি ধীর গলায় জবাব দিলেন, “না। কাল সকালে দেরী হয়ে যাবে। আমার আজ রাতেই ওনাকে দরকার।” ওনার কথা শুনে কনস্টেবলটি আর কথা বাড়াল না। বলল, “বড়বাবু একটু আগে কোয়ার্টারে চলে গেছেন। তবে ছোটবাবু আছেন। ওনার রুমে।” উনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “ওনার নামটা?” কনস্টেবলটি উত্তর দিল, “দেবার্ঘ্য। দেবার্ঘ্য সরকার।” উনি কনস্টেবলটিকে “ধন্যবাদ!” বলে ভিতরে চলে গেলেন। কনস্টেবলটি ওনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখল। একবার মনে হল লোকটাকে কোথায় যেন দেখেছে। কিন্তু মনে করতে পারল না। তারপর আবার নিজের জায়গায় চলে গেল ঘুমানোর জন্য। থানার ছোটবাবুর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে নীলকণ্ঠবাবু কয়েক মুহুর্ত সময় নিয়ে কথাগুলো নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিলেন। তারপর পা বাড়ালেন রুমের দিকে। রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখলেন একজন যুবক মাথা নীচু করে একমনে একটি ফাইল পড়ছে। নীলকণ্ঠবাবু একবার গলাটা খাঁকড়ে নিয়ে বললেন, “ভিতরে আসতে পারি?” ফাইল থেকে মুখ তুলে ওনার দিকে তাকালেন। এতরাতে ওনার মত একজন পৌঢ় থানায় এসেছেন দেখে সে যে যারপরনাই অবাক হয়েছে, সেটা পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছে। কয়েক মুহুর্ত সময় নিয়ে যুবকটি বলল, “আসুন।” নীলকণ্ঠবাবু এগিয়ে গিয়ে একটি চেয়ারে বসলেন। তারপর বললেল, “আপনি এই থানার ডিউটি অফিসার। আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল।” ওনাকে প্রায় চুপ করিয়ে দিয়ে যুবকটি বলল, “যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন। আমি খুব ব্যস্ত আছি।”
“আমি জানি আপনি রোহন আগরওয়ালের খুনী পার্থ সাহাকে নিয়ে ব্যস্ত আছেন। আর আমি এসেছি ওর ব্যাপারেই আপনার সঙ্গে কথা বলতে।”
ওনার কথা শুনে দেবার্ঘ্যবাবু অবাক হয়ে গেলেন। নিজের কৌতুহলকে চাপতে অসমর্থ হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি...!?” নীলকণ্ঠবাবু পকেট থেকে নিজের নামাঙ্কিত কার্ডটি বের করে দেবার্ঘ্যবাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “আমি নীলকণ্ঠ বাগচী। একজন উকিল। আমি পার্থ সাহার হয়ে ওর কেসটা লড়ব। তাই ওর সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই।” ওনার হাত থেকে কার্ডটা নিয়ে দেবার্ঘ্যবাবু একই সঙ্গে আশ্চর্য এবং আনন্দিত হয়ে বললেন, “আপনিই সেই নীলকণ্ঠবাবু? চাকরীতে জয়েন করার পর থেকেই সিনিয়ারদের মুখে আপনার অনেক কথা শুনেছি। আপনি নাকি খুব দুঁদে উকিল। কোনো কেস হারেননি। তারপর হঠাৎ আপনি প্র্যাকটিস ছেড়ে দেন।” নীলকণ্ঠবাবু মৃদু হেসে জবাব দিলেন, “না। সব কেসে জিতিনি। জীবনে একটা কেস হেরে গিয়েছিলাম। সে সব কথা থাক। আজ আমি এসেছি পার্থর উকিল হয়ে। আমি একবার ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই। তবে তার আগে আপনাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করতে চাই। কাইন্ডলি যদি উত্তর দেন, তাহলে খুব ভালো হয়।” দেবার্ঘ্যবাবু বললেন, “প্লিজ এভাবে বলবেন না। আপনি আমার থেকে অনেক সিনিয়ার। আপনি কি জানতে চান বলুন, আমি যতটা সম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে জানেনই তো, খুনের ব্যাপার। তার উপর মন্ত্রীর ছেলে। তদন্তের স্বার্থে আপনাকে সব কথা বলতে পারবো না।” নীলকণ্ঠবাবু বললেন, “সেটা আমি জানি। আমি কেবল এটুকু জানতে চাই, পার্থ কি কিছু কনফেস করেছে? যে ও এই কাজটা কেন করেছে?”
“কিচ্ছু না। ইন ফ্যাক্ট ওকে থানায় আনার পর থেকে ও কারোর সঙ্গে একটা কথাও বলেনি। স্যার নিজে ইন্টারোগেট করছিলেন। ও কোনো কথাই বলেনি। কেবল একবার মাত্র বলেছে যে, ও খুনগুলো নিজেই করেছে। এবং নিজের ইচ্ছাতেই করেছে। আর কিচ্ছু বলেনি। He’s a tough guy. আর সত্যি কথা বলতে কি আমরা এইটাই শুনতে চেয়েছিলাম। আমাদের কাজটা সহজ হয়ে গেল। কাল আদালতে আমরা ওটাকেই ওর বয়ান হিসাবে তুলে ধরব। তাতে সরকারী উকিলেরও সুবিধে। কেসটা ওরা তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারবে। কারণ সব এভিডেন্স ওর বিরুদ্ধে। তার উপর ও নিজেই কনফেস করেছে যে খুনটা ও-ই করেছে। কিন্তু...” দেবার্ঘ্যবাবু হঠাৎ থেমে গেলেন। নীলকণ্ঠবাবু তাড়াতাড়ি বললেন, “কিন্তু কি?” দেবার্ঘ্যবাবু কিছুটা ইতস্তত করে বললেন, “একটা কথা আপনাকে বলতে পারি। তবে আনঅফিসিয়ালি। প্লিজ কাউকে জানাবেন না।”
“কি কথা?”
“পার্থবাবু থানায় ফোন করার পর আমরা স্পটে অর্থাৎ ওনার ফ্ল্যাটে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই পার্থবাবুর বেডরুমে রোহন আর ওর দু’জন বন্ধুর লাশ পড়ে আছে। আর পার্থবাবু বাইরে ডাইনিং রুমে বসেছিলেন। এবং ড্রিঙ্ক করছিলেন।”
“ঐ ফ্ল্যাটে পার্থ ছাড়া আর কেউ ছিল?”
“না। উনি ছাড়া আর কেউই ছিল না।” মাথা নেড়ে জবাব দিলেন দেবার্ঘ্যবাবু।
“আর লাশ তিনটে কিভাবে ছিল?”
“রোহনের লাশটা ছিল রকিং চেয়ারে। He was shot on his forehead. দ্বিতীয় লাশটা ছিল মেঝেতে। তাকে বুকে গুলি করা হয়েছিল। আর থার্ড লাশটা ছিল বিছানার উপর। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, they all three were fully naked. এবং আমরা ঐ ঘর থেকে কিছু ইউজড্ কন্ডোম, কন্ডোমের প্যাকেট, কন্ট্রাসেপটিভ পিল আর কিছু sex toy পেয়েছি। আমার মনে হয়েছিল ঐ ঘরে কিছু গুরুতর আর কিছু ইললিগাল হচ্ছিল। আর সেটা বুঝতে পেরেই স্যার ওখানে আমাদের বেশীক্ষণ ইনভেস্টিগেট করতে দেননি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে পার্থবাবু কিছু লুকিয়ে যাচ্ছেন। There’s something very serious matter in this case. আর আমার ভয় হচ্ছে আসল সত্যিটা কেউ জানতে পারবে না। সত্যিটা আড়ালেই থেকে যাবে। রাজেশ আগরওয়াল কোনো মতেই ঐ সত্যিটা সামনে আসতে দেবে না। উল্টে পার্থবাবুকে দোষী প্রমাণ করে, নিজের ছেলের মৃত্যুর রিভেঞ্জ নেবে। আমাদেরও বলা হয়েছে পার্থবাবুকে বেশী কিছু জিজ্ঞাসা না করতে, যাতে উনি নিজের বয়ান বদলাবার সুযোগ না পান। রাজেশ আগরওয়াল থেকে শুরু করে পুলিশের ওপর মহল পর্যন্ত সবাই চায় ব্যাপারটা এখানেই ধামাচাপা পড়ে যাক। কিন্তু আমি চাই সবাই জানতে পাক সত্যিটা কি।” একটানা কথা বলে চুপ করলেন দেবার্ঘ্যবাবু। নীলকণ্ঠবাবু বললেন, “ধন্যবাদ দেবার্ঘ্যবাবু। আমি একটু পার্থর সাথে কথা বলতে চাই। একা হলে ভাল হয়।”
“ওনাকে আলাদা সেলে রাখা হয়েছে। আপনি ওখানেই ওনার সঙ্গে কথা বলুন।”
“ঠিক আছে। সেই ভাল।”
দেবার্ঘ্যবাবু একজন কনস্টেবলকে ডেকে উপযুক্ত নির্দেশ দিলেন। নীলকণ্ঠবাবু দেবার্ঘ্যবাবুকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার সঙ্গে চলে গেলেন। কনস্টেবলটি ওনাকে একটা সেলের কাছে নিয়ে এল। তারপর দরজা খুলে ওনাকে ভিতরে যেতে বলল। উনি ভিতরে ঢুকে গেলে সে আবার দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেল। নীলকণ্ঠবাবু দেখলেন একটি বছর তেত্রিশের যুবক মেঝেতে হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে আছে। ঘুমাচ্ছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। উনি এগিয়ে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখলেন। যুবকটি ধীরে ধীরে মাথা তুলল। সামনে ওনাকে দেখে বেশ কিছুটা অবাক হয়েছে, সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝতে পারলেন নীলকণ্ঠবাবু। কিন্তু সে মুখে কিছুই বলল না। উনি লক্ষ্য করলেন ওর চোখদু’টো বেশ লাল। তার মানে নেশাটা বেশ ভালমতোই করেছে। উনিই প্রথম কথা বললেন, “আমি নীলকণ্ঠ বাগচী। তোমার উকিল। আমি জানতে চাই এই খুনগুলো কেন করলে?” পার্থ কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে ওনার দিকে তাকিয়ে রইল। কিন্তু কোনো কথা বলল না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আবার উনি জিজ্ঞাসা করলেন, “পার্থ, চুপ করে থেকো না। যা জিজ্ঞাসা করছি, তার উত্তর দাও।” আবার কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর পার্থ স্খলিত গলায় বলল, “আমি কিছু বলব না। আমার উকিলের দরকার নেই।” নীলকণ্ঠবাবু সেলের কোণা থেকে জলের কুঁজোটা তুলে এনে সব জলটা পার্থর মাথায় ঢেলে দিলেন। এই আকস্মিক আক্রমণে ও কিছুটা হকচকিয়ে গেল। তারপর রাগত স্বরে বলল, “এটা আপনি কি করলেন?” কুঁজোটা যথাস্থানে রেখে ওর দিকে চেয়ে শান্তস্বরে বললেন, “তোমার নেশাটা কাটালাম। এবার বলো খুনগুলো কেন করলে?” আগের মতোই জেদী কণ্ঠে পার্থ বলল, “বললাম তো, আমি কিচ্ছু বলব না। আমার কিছু বলার নেই।” নীলকণ্ঠবাবু মেঝেতেই ওর পাশে বসে আবার শান্তস্বরে বললেন, “বলতে তো তোমায় হবেই। নিজের জন্য না হলেও, প্রিয়ার জন্য।” কথাটা শুনে ওনার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকালো পার্থ।
“আপনি প্রিয়াকে চেনেন?” নীলকণ্ঠবাবুর মুখে প্রিয়ার নামটা শুনে একমুহুর্তের জন্য থমকে গেল পার্থ। উনি বললেন, “না। অন্তত আজকের আগে তো চিনতাম না।”
“তাহলে আপনি প্রিয়ার কথা বললেন যে!”
“তার কারণ, একটু আগে প্রিয়া আমার কাছে এসেছিল। সাহায্য চাইতে। তোমাকে বাঁচাতে। আর আমি তাকে কথা দিয়েছি, যেকোনো প্রকারে আমি তোমাকে ওর কাছে ফিরিয়ে দেবো।”
“সেটা সম্ভব নয় নীলকণ্ঠবাবু। আপনি রোহন আগরওয়ালকে চেনেন না। ওর বাবা রাজেশ আগরওয়ালকেও চেনেন না। ও আমাকে কোনমতেই বাঁচিয়ে রাখবে না।”
“তুমি ওদের যতটা চেনো, আমি তার থেকে কয়েকগুণ বেশী চিনি।”
“কিভাবে?”
“সে কথা এখন থাক। তুমি বলোতো, এই খুনগুলো কেন করলে? কি এমন কারণ ছিল যাতে এতবড় কাণ্ডটা ঘটালে?”
নীলকণ্ঠবাবুর প্রশ্নটা শুনে পার্থ কেমন যেন আনমনা হয়ে গেল। তারপর ঘোর লাগা গলায় বলল, “প্রায়শ্চিত্ত কাকে বলে জানেন? যখন কোনো মানুষ জীবনে কোনো ভুল করে... উঁহু! ভুল নয় পাপ করে, তখন তার জীবনটাই নরক হয়ে ওঠে। আর সেই মানুষটা ঐ নরকের আগুনে পুড়তে থাকে। প্রতিদিন। প্রতিমুহুর্ত। প্রতিপল। আপনি ভাবছেন, আমি হঠাৎ বড় বড় জ্ঞানের কথা বলছি। তা নয়। ঐ ভুল বলুন বা পাপ, আমিও করেছিলাম। তার মূল্য চোকাতে হচ্ছিল আমাকে। তার থেকেও বেশী প্রিয়াকে। অথচ ও কোনো ভুল করেনি। ও নিষ্পাপ। তা সত্ত্বেও আমার ভুলের মাশুল দিচ্ছিল ও। নিজের শরীরটা দিয়ে। আমার চোখের সামনে একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছিল প্রিয়া। কয়েকটা নোংরা হাত ওকে টেনে হিঁচড়ে আমার কাছ থেকে দূরে নিয়ে চলে যাচ্ছিল। আর আমি, একটা অপদার্থ, একটা কাপুরুষ সেটা কেবল দেখে যাচ্ছিলাম। কিছু করতে পারিনি। আমার কলজের জোর ছিলনা। আর আমার এই কিছু না করাটাই আমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছিল না। আমার মন, আমার আত্মা, আমার বিবেক আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। আমাকে প্রতিনিয়ত ওরা জিজ্ঞাসা করত কেন আমি কিছু করছি না। আমার কাছে কোনো জবাব ছিলনা। আর পারিনি। ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই এই পাপের হাত থেকে বাঁচার জন্য এটা করেছি। আমি প্রায়শ্চিত্ত করেছি।”
“তোমার কি ধারণা তুমি প্রায়শ্চিত্ত করেছো?”
“হ্যাঁ।”
“বেশ। তাহলে বলোতো, এবার প্রিয়ার কি হবে? আজকের পর তুমি বেঁচে থাকবে নাকি মারা যাবে তার কোনোও ঠিক নেই। আর বাইরের পৃথিবীতে সে একা। তোমাকে ছাড়া অসহায়। সেই পৃথিবীতে, যেখানে একটা নয়, অনেক অনেক রোহন আগরওয়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের থেকে তোমার প্রিয়াকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। কেউ না। তুমি প্রায়শ্চিত্ত নয়, ভুল করেছো। আর এই ভুলটাকে শোধরাবার একটাই সুযোগ রয়েছে তোমার সামনে। আমি। একমাত্র আমিই পারি তোমাকে এখান থেকে তোমার প্রিয়ার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। তার জন্য তোমাকে আমায় সাহায্য করতে হবে। তোমাকে খুলে বলতে হবে সবকিছু। প্রথম থেকে।”
কয়েক মুহুর্ত চুপ করে থাকার পর পার্থ বলতে শুরু করল, “আপনি ঠিক বলেছেন। আর চুপ করে থাকা অর্থহীন। আপনাকে সব খুলে বলব। আমার আর প্রিয়ার আলাপ ইউনিভার্সিটি থেকে। একই ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম আমরা। তবে ডিপার্টমেন্ট আলাদা। আমি Commerce আর ও science. যে সময়ের কথা বলছি, তখন আমরা সদ্য পাশ করে বেরিয়েছি। আমি তখন নিজের ডিগ্রীর ফাইল নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির দরজায় দরজায় ঘুরছি চাকরির ব্যর্থ আশায়।.....”
একটা অলস বিকেল। আকাশে ফুরিয়ে আসা আলো। আর রাস্তার ধারে একটা একটা করে জ্বলতে থাকা ল্যাম্পপোস্ট। আর এসবের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে পার্থ। আজকাল নিজেকে এত ব্যর্থ মনে হয় কেন কে জানে। সঙ্গের ফাইলে কেবলই জমতে থাকা ডিগ্রীর পেপারগুলেো। যেগুলো ছাইচাপা আগুনের মত বন্দী আছে ফাইলের ভিতর। আজও দু’ জায়গায় চাকরীর ইন্টারভিউ দিয়েছে। কিন্তু ফল শূ্ণ্য। মনের ভিতর আশাটাও দিনের আলোর মত কমে আসছে। নিভে আসছে। বড্ড ক্লান্ত লাগছে। কিন্তু এখনই মেসে ফিরতে ইচ্ছা করছে না। কোথাও গিয়ে বসতে পারলে ভাল হত। মনটাকে রিফ্রেশ করার প্রয়োজনটা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এমন সময় হঠাৎ পকেটে থাকা সস্তা মোবাইলটা বেজে উঠল। হয়তো দীপক, কিম্বা শান্তনু। ভাল লাগছে না। কথা বলার মরা ইচ্ছেটা আরোও ফিকে হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। কয়েকবার বাজার পর ব্যর্থমনস্ক হয়ে থেমে গেল ফোনটা। যাক, বাঁচা গেল! কিন্তু আবার! আর থাকা গেল না। সুইচড্ অফ্ করার ইচ্ছা নিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই চোখটা চুম্বকের মত আটকে গেল স্ক্রিণে। না, দীপক বা শান্তনু নয়। ওরা ছাড়াও আর একজন আছে যে ওকে ফোন করতে পারে, সেটা ওর খেয়ালই ছিল না। প্রিয়া। প্রিয়া ওর বন্ধু। শুধুই কি বন্ধু? হ্যাঁ, আবার না। ওদের প্রথম আলাপ ইউনিভার্সিটির একটা সেমিনারে। হালকা গোলাপী শাড়ি আর ম্যাচিং ব্লাউজ পরিহিতা ফর্সা, দীর্ঘাঙ্গী, ছিপছিপে চেহারার মেয়েটাকে দেখে বেশ ভালো লেগেছিল পার্থর। কিন্তু এগিয়ে গিয়ে কথা বলা বা আলাপ করার মত সাহস পায়নি ও। কেবলই তাকিয়ে ছিল ওর দিকে। নিষ্পলক। সারাক্ষণ। সেমিনার তিন দিন চলেছিল। শেষদিন দেড়টার মধ্যে সেমিনারের পাট চুকিয়ে ও গেছিল ক্যান্টিনে। খাবারের অর্ডার দেওয়ার পর দেখল ক্যান্টিন প্রায় কানায় কানায় ভর্তি। বসার জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে। হঠাৎ নজরে এল এককোণে একটা টেবিলে কেবল একজনই বসে আছে। একটি মেয়ে। সেই মেয়েটি। যাকে দেখে ওর ভালো লেগেছিল। ইচ্ছা হয়েছিল কথা বলার। কিন্তু পারেনি। ভয় পেয়েছিল। যদি মেয়েটি রেগে যায়? যদি ওকে অপমান করে? তাই ভীতু স্বভাবের পার্থ এগোয়নি। তবে সেদিন মেয়েটার সাথে কথা বলতে না পারার একটা কষ্ট ও বারবার নিজের মনের মধ্যে টের পাচ্ছিল। তাই আজ আবার তাকে চোখের সামনে বসে থাকতে দেখে, তার সঙ্গে কথা বলার অদম্য ইচ্ছাটা আবার মনের মধ্যে পাক খেতে শুরু করেছে। যাকে নতুন করে দমিয়ে রাখা পার্থর অসাধ্য। আর সত্যি কথা বলতে কি, পার্থরও ইচ্ছা একপ্রকার নেই নিজের ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রাখার। মনের কোণে ইতিউতি উঁকি মারতে থাকা সাহসগুলোকে জড়ো করে টেবিলটার দিকে এগিয়ে গেল ও। মেয়েটি মাথা নীচু করে নিজের মোবাইলটা ঘাঁটছিল। ও গিয়ে দাঁড়াতেই মেয়েটি মুখ তুলে ওর দিকে চাইল। চোখের তারায় জিজ্ঞাসাটা অতি সহজেই পড়ে ফেলা যায়। পার্থ কিছুটা ইতস্তত করে বলল, “আমি কি এখানে বসতে পারি? আসলে আর কোন টেবিল ফাঁকা নেই।” গলায় সেতারের সপ্তসুর তুলে উত্তর এল, “বসুন।” চেয়ার টেনে পার্থ বসতেই সে আবার হাতে ধরা মোবাইলটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অল্পক্ষণ চুপ করে থাকার পর পার্থ আবার বলল, “গত পরশু আপনাকে সেমিনারে দেখেছিলাম মনে হচ্ছে।” চোখটা এখনও মোবাইলের দিকে। তবুও উত্তর এল, “এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন! প্রায় সারাক্ষণই তো আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তাও আবার হাঁ করে।” উত্তরটা শুনে লজ্জা পেয়ে গেল ও। তবে ভাল লাগল এটা ভেবে যে এই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখাটা কেবল একপক্ষেই সীমাবদ্ধ নয়। তাই কিছুটা সাহসী হয়েই ও প্রশ্নটা করে ফেলল, “আপনি জানলেন কি করে যে, আমি আপনার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম?”
“তার জন্য জ্যোতিষ জানতে হয়না। যেভাবে তাকিয়ে ছিলেন তাতেই বোঝা যাচ্ছিল। আচ্ছা, আপনি কি সবসময় মেয়েদের দিকে ওভাবেই তাকিয়ে থাকেন?” মেয়েটি এবার মুখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলল।
“না। আসলে সেদিন আপনাকে সত্যিই খুব সুন্দর দেখতে লাগছিল। তবে sorry. আমার ওভাবে তাকিয়ে থাকা উচিত হয়নি। আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।” লাজুক হেসে পার্থ জবাব দিল।
“It’s ok. And thanks for the complement. তা আমার নাম প্রিয়া। আপনি?”
“আমি পার্থ।”
এইভাবে ওদের দুজনের আলাপ শুরু। ধীরে ধীরে ক্যান্টিন, ইউনিভার্সিটি গেট পেরিয়ে নন্দন কিম্বা কফি হাউস - ওদের বন্ধুত্বটা বাড়ছিল। কিন্তু ঐ যে বলে না, এক লড়কা ঔর লড়কী কভী দোস্ত নহী হো সাকতা, সেটাই ঘটছিল ওদের সঙ্গে। সময়ের চাকার সাথে পাল্লা দিতে দিতে ‘আপনি’ এসে পৌঁছেছিল ‘তুমি’তে। আর বন্ধুত্বের বেড়াজালটা ভেদ করে নিজেদের অজান্তে ওরা এসে পৌঁছেছিল প্রেমের দোরগোড়ায়। হয়তো সেই চৌকাঠটাও একদিন ওরা পেরিয়ে যাবে নির্দ্ধিধায়। এদিকে বর্তমানে পার্থর হাতে ধরা মোবাইলটা বাজতে বাজতে ক্লান্ত হয়ে চুপ করে গেছে। তৃতীয়বার আবার সেটা বাজার আগেই পার্থ ফোনটা করল। দু’বার বাজার পরেই ওপাশ থেকে রাগত কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “কি ব্যাপার, তখন থেকে রিং বেজে যাচ্ছে, ফোনটা ধরছ না কেন?” বিপদের আভাস বুঝে পার্থ সতর্ক হয়ে বলল, “বাসে ছিলাম, শুনতে পাইনি। বলো। কি বলছ?”
“কোথায় আছো তুমি?”
“বৌবাজার। কেন?”
“ভালো। আমি কফি হাউসে আছি। চলে এসো।”
“এখনই?”
“হ্যাঁ। আমি ওয়েট করছি।”
কথা না বাড়িয়ে পার্থ বলে, “ঠিক আছে আমি আসছি।” লাইনটা কেটে হাঁটতে শুরু করে ও। ফুটপাথ ধরে চলতে চলতে ফেলে আসা অতীতের অন্ধগলিগুলোতে একবার করে উঁকি মারতে থাকে ওর মন। সে প্রায় আজ বছর তিনেক হতে চলল। ইউনিভার্সিটি ফেরত ওরা দুজন একবার কফি হাউস যেত। প্রথম যখন প্রিয়া কফি হাউসে যাওয়ার কথা বলেছিল, তখন অজানা একটা আনন্দে ওর মনটা নেচে উঠেছিল। পুরানো বাংলা সিনেমায় দেখা আর মান্না দে-র গানে শোনা সেই কফি হাউসের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে একটা আলাদা এক্সসাইটমেন্ট টের পাচ্ছিল মনে মনে। মফস্বলের ছেলে বলে ছোট ছোট জিনিসে আনন্দ খুঁজে নেওয়া ওর স্বভাব। তাই তিন বছর আগের সেই সন্ধ্যা আজও ওর মনের মণিকোঠায় সমানভাবে উজ্জ্বল হয়ে আছে। এরপর আরোও অনেকবার ও প্রিয়াকে সঙ্গে করে কফি হাউস গেছে। কিন্তু তারপর আস্তে আস্তে সেসব কমে এসেছে আগের থেকে। তবে এখনও ওদের দুজনের দেখা করার মুখ্য জায়গা হচ্ছে সেই চিরপরিচিত কফি হাউস। চেনা টেবিলে কফির কাপে চুমুক দিতে প্রিয়ার খুব পছন্দ। ওরও পছন্দ, তবে ওর আরো ভাল লাগে প্রিয়ার সামনে গিয়ে বসতে। ওর চোখে চোখ রাখতে। ওর মুচকি হাসিতে গা ভাসাতে। ওর নরম হাতে নিজে হাত রাখতে। আর সবচেয়ে বেশী ভাল লাগে প্রিয়াকে নিজের মনের সবকথা খুলে বলতে। নিজের উজ্জ্বল আনন্দ, ধূসর মন খারাপ, ভাললাগা, মন্দলাগা সবকিছু ওকে বলতে। ধীরস্থির হয়ে ওর কথা শুনতে। আলগা হাসি, মজা, খুনসুটিতে ওকে রাগাতে। এককথায় ওর ভাল লাগে প্রিয়ার সঙ্গ পেতে। প্রিয়াই ওর বন্ধু। ওর সাথী। ওর হাসি। ওর কান্না। ওর সবকিছু। লাজুক আর ভীতু স্বভাবের কারণে চিরকালই ওর বন্ধু-বান্ধব কম। আর মেয়েবন্ধু? সেটা ওর কাছে ছিল দুর্লভ কোনো বস্তু। ও কারোর কাছেই কোনোদিন সহজ হতে পারেনি। কিন্তু প্রিয়াকে দেখে ওর মনে হয়, ওকে সবকথা বলা যায়, ওর সাথে সহজ হয়ে মেশা যায়। সবচেয়ে বড় কথা ওকে ভালবাসা যায়। ভাবনার মাঝেই পার্থ কফি হাউসে পৌঁছে গেল। ভিতরে ঢুকে দেখল কোণের এক টেবিলে ওর মনের আকাঙ্ক্ষা বসে আছে। ধীরপায়ে সেদিকে এগিয়ে গেল ও।পার্থ চেয়ারে গিয়ে বসতেই কফির অর্ডার দিল প্রিয়া। তারপর কফি আসতে কাপে চুমুক দিয়ে বলল, “এবার সত্যি করে বলোতো, আমার ফোনটা ধরছিলে না কেন?” বিপদ বুঝে পার্থ নিজের কাপে চুমুক দিল। তারপর বলল, “তখন বললাম তো বাসে ছিলাম, রিং শুনতে পাইনি।” প্রিয়া কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে পার্থর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “পার্থ, তোমার একটা অদ্ভুত অভ্যাস আছে, তুমি হয়তো জানো না।”
“সেটা কি?”
“তুমি যখন কারোকে কোনো মিথ্যা কথা বলো, বা কারোর থেকে কোনো কথা লুকিয়ে যাও, তখন তার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারো না। আমার দিকে তো একেবারেই নয়।” তারপর কফির কাপে চুমুক দিয়ে অত্যন্ত শান্তস্বরে বলল, “এবার সত্যি করে বলো, ফোনটা ধরছিলে না কেন?” ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পার্থ বলল, “আসলে আর ভালো লাগছে না, প্রিয়া। আর পারছি না। নিজেকে কেমন যেন ব্যর্থ বলে মনে হচ্ছে। আজ প্রায় তিন বছর হতে চলেছে, কিন্তু আজও একটা রোজগারের উপায় খুঁজে উঠতে পারলাম না।” পার্থর দীর্ঘশ্বাসের জবাবে ওর হাতের উপর হাত রেখে প্রিয়া বলল, “চিন্তা কোরো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আজ নাহয় কাল একটা ঠিক ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”
“মাঝে মাঝে মনে হয়, তোমাকে ঠকাচ্ছি না তো? আর কতদিন তুমি আমার জন্য এভাবে অপেক্ষা করে থাকবে? আর আমিই বা কতদিন এভাবে তোমাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখব?”
“তুমি ভুলে যেতে পারো, পার্থ। কিন্তু আমি ভুলিনি। আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম, তুমি যত খুশী তত সময় নিতে পারো। আমি তোমার জন্য এভাবেই অপেক্ষা করে থাকব।”
“কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি হেরে যাচ্ছি। ফুরিয়ে যাচ্ছি। কখনও মনে হয় আমি তোমাকে ঠকাচ্ছি। তোমার ভালবাসার সঠিক প্রতিদান আমি তোমাকে আগেও দিতে পারিনি, আর এখনও তোমাকে দিতে পারছি না।”
“তুমি জানো কেন আমি তোমায় এত ভালবাসি?”
“কেন?”
“কেননা তুমি একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ। তোমার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা আজ থেকে তিন বছর আগে। এই তিন বছরে তোমাকে আমি যতবার দেখেছি, যতবার তোমার কথা শুনেছি, আমার মনে হয়েছে, এই মানুষটাকে বিশ্বাস করা যায়। ভালবাসা যায়। আমার মনে হয়েছে, তুমি আর যাই করো, আমাকে কোনোদিন ঠকাবে না। সেই বিশ্বাসটার উপর ভরসা রেখে আমি তোমাকে ভালবেসেছি। তোমার থেকেও আমার নিজের বিশ্বাসের উপর ভরসা বেশী আছে। প্রমিস করো পার্থ, তুমি আমার এই বিশ্বাসটাকে কোনোদিনও ভাঙবে না। বলো, প্রমিস করো।”
নিজের হাতের উপর প্রিয়ার হাত রেখে পার্থ বলল, “আমি তোমাকে ছুঁয়ে প্রমিস করছি প্রিয়া, তোমার বিশ্বাসের গুরুভার আমি সারাজীবন বয়ে যাবো।” ওর কথা শুনে প্রিয়া মুচকি হেসে বলল, “That’s like a good boy. এবার কফিটা তাড়াতাড়ি শেষ করে নাও, আমরা এক জায়গায় যাবো।” অবাক হয়ে পার্থ জিজ্ঞাসা করল, “কোথায় যাবো?” সামান্য বিরক্তি প্রকাশ করে প্রিয়া বলল, “আঃ, চলোই না।”
“আর আমার সন্ধ্যের টিউশনিগুলো?”
“আজ তোমার ছুটি। আজকে সন্ধ্যেটা তুমি আমার সঙ্গে থাকবে।”
“কালকে গিয়ে কি বলব?”
“যাহোক কিছু একটা বাহানা করে দেবে।”
ওর কথা শুনে পার্থ মুচকি হেসে বলল, “উফ্, তুমি পারোও বটে! মাঝে মাঝে তোমার মাথায় যে কিসব ভূত চাপে, বুঝতে পারিনা।” উত্তরে প্রিয়াও মুচকি হেসে বলল, “আর বুঝে কাজ নেই। তাড়াতাড়ি করো, নাহলে দেরী হয়ে যাবে। আর ভরসা নেই ভূতটা হয়তো তোমার ঘাড় মটকাতে চলে আসবে।” বলে নিজের রসিকতায় নিজেই হাসল প্রিয়া। ওর সাথে সেই হাসিতে যোগ দিল পার্থও। সুনিপুণ প্রয়াসে মুহুর্তের মধ্যে পার্থর মনের সমস্ত গ্লানিগুলোকে একটানে ছুঁড়ে ফেলে দিল প্রিয়া। তাও পার্থর অগোচরে।
ট্যাক্সির খোলা জানালা দিয়ে একরাশ ঠাণ্ডা হাওয়া ক্রমাগত আছড়ে পড়ছিল ওদের উপর। কফি হাউস থেকে বেরোবার পর প্রিয়াই ট্যাক্সি ডেকে এনেছিল। ট্যাক্সি দেখে পার্থ জিজ্ঞাসা করল, “ট্যাক্সি নিয়ে কোথায় যাবো?”
“উফ্, চলোতো! তুমি বড্ড কথা বলো।”
আর কথা না বাড়িয়ে ওরা ট্যাক্সিতে চড়ে বসল। ওদেরকে নিয়ে ট্যাক্সি রওনা দিল এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। জানালার ধারে বসা প্রিয়ার নজর আছে বাইরের দৃশ্যের দিকে। আর পার্থ? ওর দৃষ্টি বারবার খুঁজে নিচ্ছে নিজের চাহিদাকে। সেই চাহিদার রূপধারী এক নারীকে। যার অবিন্যস্ত চুল শ্রাবণের মেঘরাশিকে টেক্কা দিয়ে খোলা হাওয়ায় ভাসছে। সেই নারীর হাত নিজের অবাধ্য চুলগুলোকে ব্যর্থ শাসনের প্রচেষ্টার রত। তার ঠোঁটে লেগে থাকা আলগা হাসি শুনিয়ে যাচ্ছে অনেক না বলা কথা। তার চোখের অন্তর্নিহিত দৃষ্টি পাল্লা দেয় রহস্যোপন্যাসকে। সব মিলিয়ে মোহময়ী এক নারী। সেই নারী, যে তার চাহিদা। তার আকাঙ্ক্ষা। তার লুকানো ভালবাসা। কিন্তু লুকানো কেন? অনেকবার প্রিয়া তার কাছে নিজের ভালবাসার কথা জাহির করলেও, সে ওর মনের কথা চেপে গেছে সুকৌশলে। কতকটা ভয়ে। আর অনেকটা সঙ্কোচে। অনেকবার ও ভেবেছে সে-ও নিজের মনের সুপ্ত ইচ্ছাটা প্রিয়াকে জানিয়ে দেবে। কিন্তু পারেনি। এগিয়ে গিয়েও বারবার পিছু হটেছে ওর একগুঁয়ে মন। আর যতবার ও এইভাবে ব্যর্থ হয়েছে, ততবারই নিজের মনকে প্রবোধ দিয়েছে, কোনো না কোনোদিন প্রিয়া নিজে থেকেই ওর মনের কথা বুঝতে পারবে। ওকে একটা কথাও বলতে হবে না। ও স্বপ্ন দেখে সেই দিনটার। আশা করে ও একদিন প্রিয়াকে খুলে বলতে পারবে নিজের মনের সুপ্ত কথা। নিজের চাহিদার কথা। নিজের লুকানো ভালবাসার কথা।
ভাবনার মাঝেই ট্যাক্সিটা থেমে গেল। দরজা খুলে নেমে গেল প্রিয়া। ওর দেখাদেখি নামল পার্থও। নেমে দেখল প্রিয়া ওকে প্রিন্সেপ ঘাটে নিয়ে এসেছে। ট্যাক্সির ভাড়াটা মিটিয়ে প্রিয়া ওর পাশে এসে দাঁড়াল। ওর দিকে তাকিয়ে এবাক হয়ে পার্থ বলল, “হঠাৎ এখানে এলে যে?”
“আঃ, চলোই না। ভিতরে গিয়ে যা জিজ্ঞাসা করার কোরো।” বলে পার্থর হাত ধরে একপ্রকার টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গেল প্রিয়া। তারপর ভিতরে ফাঁকা দেখে একটা বেঞ্চিতে পাশাপাশি বসল দু’জন। অন্ধকারের মাঝে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে থাকা প্রেমিক-যুগলদের মতো ওরাও বসে আছে। ওদের সামনে বিস্তৃত গঙ্গা নদী। আর তার বুকে ইতিউতি নৌকার ভেসে চলা। অনতিদূরে দীর্ঘছায়াধারী রঙবেরঙের বিদ্যাসাগর সেতু। চারিদিক থেকে বইতে থাকা মৃদুমন্দ বায়ু। আর আকাশের বুকে ত্রয়োদশীর ক্ষয়াটে চাঁদ হাজির তার ফ্যাকাশে জ্যোৎস্না নিয়ে। এগুলো মিলেমিশে তৈরী হয়েছে আলাদা একটা জগৎ। মাতাল করা একটা পরিবেশ। যেখানে কোনো চিন্তা নেই। কোনো ভাবনা নেই। কোনো পিছুটান নেই। আছে কেবল দুজন মানুষ। যারা একে অপরের কাছে দায়বদ্ধ। তাদের ভালবাসার কাছে দায়বদ্ধ। বিশ্বাসের কাছে দায়বদ্ধ। এই অন্য জগতে হারিয়ে যাওয়া দুটো মানুষ। পাশাপাশি দুটো শরীর। হাতে হাত ধরা। দৃষ্টি সামনের দিকে নিবদ্ধ। লঘু শ্বাসের আওয়াজ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ নেই। সমস্ত পরিবেশটা যেন চুপ করে সাক্ষী থাকছে ওদের নীরবতার। প্রথম কথা বলল প্রিয়া, “আজ খুব ইচ্ছা করছিল তোমার সঙ্গে এখানে আসার। বসার। তোমার সাথে কিছু কথা বলার। আর তোমার কথা শোনার।”
“কি শুনবে বলো?”
“একটা কবিতা।”
“ঠিক আছে।”
আকাশে করুণ ভাঙা চাঁদ,
আকাশে ধোঁয়ার ফাঁকে মরে যাওয়া চাঁদ;
ফ্যাকাশে চাঁদের এই ঘোলাটে আলোয়
সব-ই কেমন যেন ভাঙা-ভাঙা লাগে।
মনে হয় ভেঙে গেছে উঁচু ছাদগুলো
ভেঙে গেছে মনুমেল্ট গির্জের চুড়ো
ভাঙাচোড়া গোটা পৃথিবীটা।
নতুন কুয়াশা ওড়ে...
“বাঃ, কার কবিতা এটা?”
“কবি দিনেশ দাসের।”
“তুমি সত্যিই খুব ভালো আবৃত্তি করো।”
“তেমন কিছু না। মাঝে মাঝে আওড়াই আর কি।”
দুজনের লঘু বার্তালাপ চাপা পড়ে যায় এই মনোরম পরিবেশের আতিশয্যে। কিন্তু একটা কথা বারবার পার্থর মনে হতে লাগল। এই যে অচল সময়, সামনে দিগন্তবিস্তৃত নদী, বয়ে চলা মৃদুমন্দ বাতাস আর আকাশে কোলে থাকা ত্রয়োদশী চাঁদ ওকে যেন কিছু বলছে। বলছে আজই সেইদিন। আজই প্রিয়াকে বলা উচিত ওর মনের কথা। সুপ্ত চাহিদার কথা। আর ওর লুকানো ভালবাসার কথা। পার্থ মনে মনে ঠিক করে নেয় আজই ও প্রিয়াকে নিজের ভালবাসার কথা জানাবে। সাহসে ভর করে, কিছুটা ইতস্তত করে পার্থ লঘুস্বরে বলল, “প্রিয়া, আজ তোমায় একটা কথা বলতে চাই। যেটা আজ পর্যন্ত তোমাকে বলে উঠতে পারিনি। আসলে সাহস করে উঠতে পারিনি। কিন্তু আজ তোমায় সে কথা জানাতে চাই।”
“কি কথা?”
“আজ আমি তোমাকে বলতে চাই, এই পৃথিবীতে যদি সবচেয়ে বেশী কাউকে ভালোবেসে থাকি, সে হলে তুমি। আমি তোমাকে ভালবাসি প্রিয়া। আমি তোমাকে খুশী রাখতে চাই। তোমার মুখে হাসি হয়ে ফুটে উঠতে চাই। তোমার সঙ্গে এইভাবে জীবনের প্রত্যেকটা মুহুর্ত ভাগ করে নিতে চাই। তোমার সঙ্গে....” অর্ধোচ্চারিত শব্দগুলো ঠোঁটেই আটকে গেল। কারণ নরম একটা আঙ্গুল ওর ঠোঁটের উপর এসে পড়ে ওর বাক্যস্ফুর্তিতে লাগাম টেনে দিয়েছে। “শশশশ...!” সামনের নারীমূর্তিটা ওর সম্পূর্ণ অচেনা। একটা নতুন রূপ ধরা দিতে চাইছে ওর কাছে। ওর কাঁধের উপর রাখা পেলব হাতদুটো অচেনা। ওর দিকে ক্রমশ অগ্রগামী দুটো ঠোঁট অচেনা। আবেশে বন্ধ চোখদুটো অচেনা। এসবের মাঝে সে নিজেও অচেনা। নিজের কাছে। ওর প্রিয়ার কাছে। অন্ধকারের মাঝে দুটো শরীর একে অন্যের দিকে এগিয়ে গেল। পার্থ নিজের কাঁপতে থাকা ঠোঁটদুটো স্থাপন করল প্রিয়ার নরম ঠোঁটদুটোর উপর। সাথে সাথে সারা দেহে যেন বিদ্যুৎ-তরঙ্গ খেলে গেল। প্রিয়ার চোখদুটো বন্ধ। কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা। কিন্তু অনুভব করছে। সে যেন হারিয়ে যাচ্ছে অন্য একটা জগতে। তার নরম ঠোঁটের উপর বলিষ্ঠ ঠোঁটের চাপ, ওর পাতলা কোমরে পার্থর কাঁপতে থাকা হাত, আর মুখের উপর ক্রমাগত পড়তে থাকা তার গরম নিশ্বাস ওকে করে তুলছে পরিণত। দীর্ঘ চুম্বন শেযে আলাদা হল শরীর দুটো। ওরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে নিষ্পলক। ওরা দুজন নিরুত্তর। ওদের পরিবর্তে কথা বলছে নিস্তব্ধতা। কথা বলছে ওদের চোখ। একজোড়া চোথ বক্তা। অন্যজোড়া বাধ্য শ্রোতা। মাঝখানে সময় নিজের তালে বয়ে চলেছে। প্রিয়া মাথা রাখল পার্থর চওড়া বুকে। যেন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিতে চাইছে সেখানে। যেমন ত্রয়োদশী চাঁদ আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে দিগন্তবিস্তৃত আকাশের চওড়া বুকের মাঝে।একটা ঘর। চার দেওয়ালের একটা ঘর। মাথার উপরে একটা বেশী পাওয়ারের এল.ই.ডি. ল্যাম্প জ্বলছে। এ.সি.-র ঠাণ্ডা বাতাসে কেমন যেন শীত শীত করছে। কিন্তু সেটা বন্ধ করার উপায় নেই। কারণ আমার হাত-পা বাঁধা। আক্ষরিক অর্থেই বাঁধা। আমার হাতদুটো হ্যাণ্ডকাফ দিয়ে বিছানার সাথে বাঁধা। হ্যাণ্ডকাফটা নরম অথচ বেশ মজবুত। চেষ্টা করলেও সেটা খোলার সাধ্য আমার নেই। বড়জোর হাটদুটোকে অল্প অল্প নাড়াতে পারি। আর পা দুটো Ankle Restraints দিয়ে বাঁধা। এবং সেদুটো একে অপরের থেকে অনেকটাই সরানো। সৌজন্যে Spread Bar। নামগুলো আগে জানতাম না। এখন জানি। মানে জানতে হয়েছে। নিত্যদিনের এই খেলাটা খেলতে খেলতে বাধ্য হয়েই শিখে গেছি। আজ আমি বন্দিনী। Bondage. এ আর নতুন কথা কি! আজ কয়েকমাস যাবৎ আমি সত্যিসত্যিই বন্দিনী। একজন দাসী। Slave, Sex Slave. তাই আমার প্রভুর ইচ্ছানুযায়ী আজ আমি তাঁর Bondage girl. একটু আগে তিনিই আমার হাতদুটো মাথার উপর তুলে বিছানার সাথে হ্যাণ্ডকাফ দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন। পা দুটোও তিনিই বেঁধে দিয়েছেন। এখন আমি বিছানার উপর চিৎ হয়ে শুয়ে আছি। আলোটা সরাসরি চোখে এসে পড়ছে। টনটন করছে চোখদুটো। তবুও বুজতে পারবো না। কারণ প্রভুর আদেশ নেই। আর যদি তাঁর আদেশ অমান্য করে চোখদুটো ক্ষণেকের জন্যও বুজে ফেলি, তাহলে আমার কপালে অশেষ দুঃখ আছে। আমাকে চরম শাস্তি দেবেন আমার প্রভু। আর সেই শাস্তি যে কত ভয়ংকর হয় তা জানি। গতবারের শাস্তিটা মনে পড়তেই গা’টা শিউড়ে উঠল। সামলে নিলাম। কিন্তু প্রভুর নজর এড়াতে পারলাম না। “উঁহু, Don’t move. Lie down still, like a doll. Sex doll, you know.” প্রভুর স্বর গলিত সীসার মত আমার কানে এল। ওনাকে দেখতে পেলাম না। কারণ উনি আমার পায়ের দিকে একটি রকিং চেয়ারে বসে আছেন। আমি জানি ওনার দৃষ্টি সরাসরি আমার ঊরুসন্ধির দিকে। Spread Bar-এর কারণে আমার পা গুলো বেশ খানিকটা ছড়ানো। ফলে ওনার বিন্দুমাত্র অসুবিধা হচ্ছেনা আমার নির্লোম যৌনাঙ্গের দিকে তাকিয়ে থাকতে। উনি এমনটাই করেন। ঘন্টার পর ঘন্টার আমার নগ্ন শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ওনার মতে এই দৃশ্য অদ্ভুত এক মাদকতার সৃষ্টি করে, যা পৃথিবীর কোনো মদিরাই তৈরী করতে পারেনা। অদ্ভুত মানসিকতা আমার প্রভুর। আমাকে ভোগ করার চেয়ে, আমার নগ্ন সৌন্দর্ষ দেখাই বেশী পছন্দ করেন ওনার। তা বলে কেউ যেন এটা না ভাবে যে, উনি আমাকে একদমই ভোগ করেন না। করেন। এবং ভরপুর ভাবেই করেন। আসলে উনি আমার সঙ্গে নানান উত্তেজক খেলা করেন। আর সেই খেলাতে আমাকে নিতে হয় একটা ভাগ। ইচ্ছা বা অনিচ্ছাতে। আসলে এতে আমার ইচ্ছা বলে কিছুই নেই। আছে কেবল আমার প্রভুর ইচ্ছা। আজ যেমন তাঁর ইচ্ছা হয়েছে আমাকে Bondage হিসাবে দেখার। আমাকে তাই-ই সাজতে হয়েছে। প্রায় আধঘন্টা একই ভাবে শুয়ে আছি। হাতদুটো একভাবে মাথার উপর বেঁধে রাখার কারণে সামান্য যন্ত্রণা হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো নাড়াবার আদেশ নেই। এ.সি.-র ঠাণ্ডা বাতাসটা সারা গায়ে ধাক্কা মারছে। সারা গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। বিশেষ করে আমার স্তনবৃন্তদুটো। ঠা্ণ্ডা বাতাসে সেগুলো কেবলই খাড়া হয়ে উঠছে। আর তাদের চারপাশে ঘিরে থাকা বাদামী বলয় এবং সেখানের সমস্ত লোমবৃন্তগুলো খাড়া হয়ে উঠেছে। হাতে মদের গ্লাস নিয়ে প্রভু আমার পাশে এসে বসলেন। ওনার দৃষ্টিও আমার মত আমার স্তনবৃন্তগুলোর দিকে। সেইদিকে ইশারা করে ছোটছেলের মত উচ্ছসিত গলায় বলে উঠলেন, “Look at you arousal, baby. It looks awesome.” ওনার কথা শুনে আমার সত্যি করেই খুব লজ্জা পেল। এবার উনি যেটা করলেন সেটা আমি ভাবতেই পারিনি। উনি একটা বরফের টুকরো নিয়ে সেটাকে আমার বাম স্তনবৃন্তের উপর আলতো করে ছোঁয়ালেন। ঠাণ্ডা সেই স্পর্শটা আমি যেন সারা শরীর দিয়ে টের পাচ্ছিলাম। এবার উনি বরফটাকে আমার স্তনবৃন্তের উপর গোলাকারে বোলাতে লাগলেন। একে এ.সি.-র ঠাণ্ডা হাওয়া তার উপর বরফের ঠাণ্ডা স্পর্শ আমি আর সোজা হয়ে শুয়ে থাকতে পারছি না। “উমমমহহহ...” অস্ফুট একটা গোঙানি আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এল। আমার গোঙানির শব্দে উনি আরো আনন্দ পেলেন। এবার উনি বরফটাকে আমার খাড়া স্তনবৃন্তের উপর শক্ত করে চেপে ধরলেন। জায়গাটা কনকন করে উঠল। কিন্তু ওনার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। উনি ব্যস্ত নিজের খেলা নিয়ে। খেলাই বটে। আমার শরীরটা ওনার কাছে কেবল একটা খেলনা। যেটা নিয়ে উনি যখন খুশী, যেভাবে খুশী খেলেন। যেমন আজ খেলছেন। কিন্তু ওনার খেলা ক্রমশ আমার সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। হাতদুটো বাঁধা থাকার কারণে ওনার হাতটা সরিয়েও দিতে পারছি না, আবার নিজের সংবেদনশীল অঙ্গে এভাবে অত্যাচারও সহ্য করতে পারছি না। শরীরটা কেঁপে উঠল একবার। চটাস্! ওনার হাতের বিরাশি শিক্কার চড় নেমে এল আমার নগ্ন পাছায়। “তোমাকে কতবার স্থির হয়ে থাকতে বলেছি না?” আমার ফর্সা পাছাটা লাল হয়ে গেছে বোধহয়। প্রচণ্ড জ্বলছে। একটু হাত বোলাবো, সে সুযোগও নেই। চোখ ফেটে জল বেরোতে চাইছে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। প্রায় পাঁচমিনিট ধরে লাগাতার বরফ চেপে রাখার পর যখন উনি স্তনবৃন্তটা থেকে হাতটা সরালেন, আড়চোখে চেয়ে দেখলাম সেটার সাথে শুকনো কিসমিসের ফারাক বেশী কিছু নেই। এবার উনি নিজের মুখটা বাড়িয়ে আমার স্তনবৃন্তের কাছে নিয়ে এলেন। নিজের ঠাণ্ডা স্তনবৃন্তের উপর ওনার গরম নিঃশ্বাসটা অনুভব করতে পেরে সারা শরীরে যেন কেমন একটা শিরশিরানি বয়ে গেল। আমি জানি এবার উনি কি করবেন। আমার ভাবনাটাকে সত্যি করে উনি মুখ খুলে আমার ঠাণ্ডা স্তনবৃন্তটাকে নিজের মুখে ঢুকিয়ে নিলেন। তারপর একটি বাচ্চাছেলে যেমন তার মায়ের স্তন মুখে পুড়ে চুষতে থাকে, ঠিক তেমন ভাবেই তিনিও আমার স্তনবৃন্তটা চুষতে শুরু করলেন। কখনও চুষছেন, কখনও দাঁতের ফাঁকে রেখে আলতো করে কামড়াচ্ছেন। হঠাৎ কি খেয়াল হতে আমার ডান স্তনটাকে নিজের মুঠোয় পুরে নিলেন। তারপর আস্তে আস্তে সেটাকে পাম্প করতে লাগলেন। একই সঙ্গে দুটি স্তনেই ওনার আক্রমণে আমি হকচকিয়ে গেলাম। একদিকে ওনার দাঁতের কামড়, উল্টোদিকে ওনার হাতের টিপুনি। আমি আর পারছি না। শরীরটাকে ক্রমাগত নাড়িয়ে ওনার হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছি। তাতে ফল হচ্ছে উল্টো। ওনার আক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে। অবশেষে উনি থামলেন। আমার স্তনবৃন্তকে দলিত মথিত করে আমার পাশ থেকে উঠে গেলেন। আমি ভাবলাম, আজ বুঝি এখানেই ইতি। পরক্ষণেই ভুলটা টের পেলাম নিজের শরীরেই। এত তাড়াতাড়ি ছুটি নেই আমার। নিজের ঊরুতে বরফের ঠাণ্ডা স্পর্শ টের পেতেই ওনার মতলবটা বুঝতে পারলাম। একবার মাথাটা তুলে দেখার চেষ্টা করলাম। পারলাম না। উনি আমার পায়ের গোড়ালি থেকে শুরু করে বরফটাকে ক্রমশ উপরের দিকে তুলতে লাগলেন। যত উপরের দিকে উঠছেন আমার ছটফটানি বাড়ছে। ক্রমশ হাঁটু বেয়ে নিষিদ্ধ এলাকার দিকে পাড়ি দিয়েছেন উনি। আমার ভাগ্যে আজ সত্যিই কষ্ট আছে। অবশেষে ঊরুতে এসে থামলেন। তারপর নিজের অবস্থান পালটে চলে এলেন আমার নাভিমূলে। নাভির চারিদিকে জলের বৃত্ত রচনা করে ওনার হাত ক্রমশ নিম্নগামী। নির্লোম উপত্যকায় ক্রমাগত বরফটাকে ঘষছেন। আর পারলাম না। পাদুটোকে জড়ো করে ফেললাম। পরক্ষণেই নিজের পাছায় দ্বিতীয় শাস্তিটা পেলাম। এবার আরোও জোরে। আর তারপর আমার পাদুটো সরিয়ে দিলেন। যৌনাঙ্গের উপর বারকয়েক বরফ ঘষে একমুহুর্ত থামলেন। তারপর বাঁ হাতের তর্জনী, মধ্যমা আর বৃদ্ধাঙ্গুলির সাহায্যে আমার যৌনাঙ্গটাকে সামান্য ফাঁক করে বিনা প্ররোচনায় গোটা বরফটাকে ভিতরে ঠেলে ঢুকিয়ে দিলেন। আমার গোটা শরীরটা খাবি খেয়ে উঠল। বিছানা থেকে পিঠটা উপরে উঠে গেল। উনি শক্ত করে আমার কোমরটা ধরে আমাকে আবার বিছানায় শুইয়ে দিলেন। আমার নড়াচড়ার কারণে বরফটা বেরিয়ে এল। উনি সেটাকে আবার গুঁজে দিলেন ভিতরে। এখানেই শেষ নয়। অন্য একটা বরফ নিয়ে সেটাকে চেপে ধরলেন আমার খাড়াই ভগাঙ্কুরটার উপর। আজ আমি মরেই যাবো। চোখদুটো শক্ত করে বুজে ফেললাম। কিন্ত তাতে সুরাহা কিছু হওয়ার নয়। উনি ভিতরের বরফটাকে বের করে আনলেন। তারপর আস্তে আস্তে ঢোকাতে আর বের করতে লাগলেন। আমার সবচেয়ে সংবেদনশীল অঙ্গটা ক্রমশ অবশ হয়ে আসছে সেই ঠাণ্ডা আবেশে। আমার গোটা শরীরটা নিস্ফল উত্তেজনায় কাঁপছে থরথর করে। উনি এখনও আমাকে ধরে আছেন শক্ত করে। আর একই সঙ্গে আমার যৌনাঙ্গ আর ভগাঙ্কুরের উপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। অবশেষে আমাকে ক্নান্ত করে থামলেন উনি। তারপর ধীরে ধীরে আমার উপর উঠে এলেন। নিজের ঠোঁটদুটো রাখলেন আমার নরম ঠোঁটদুটোর উপর। আর শুরু করলেন ওনার কর্কশ চুম্বন। নিজের জিভটাকে ঠেলে গুঁজে ঢুকিয়ে দিলেন আমার মুখের ভিতর। তারপর আমার জিভের সাথে খেলা শুরু করলেন। নিজের পেটের উপর শক্ত কিছু একটার খোঁচা টের পেলাম। আর আন্দাজেই বুঝতে পারলাম ওনার অস্ত্রটি যুদ্ধের জন্য পুরোপুরিভাবে তৈরী। আমাকে বিন্দুমাত্র সামলাবার সুযোগ না দিয়ে উনি শেষ আঘাতটা করে দিলেন। চুম্বনরত অবস্থাতেই নিজের শিশ্নটিকে ধরে রাখলেন আমার যৌনাঙ্গের ঠিক মুখে। আর সাথে একটি জোর ধাক্কা। আর সঙ্গে সঙ্গে...
এক ঝটকায় ঘুমটা ভেঙ্গে গেল প্রিয়ার। দুঃস্বপ্ন দেখছিল সে। আস্তে আস্তে বিছানায় উঠে বসল ও। গোটা শরীরটা ঘামে ভিজে গেছে। হাত দিয়ে গলা আর ঘাড়ের ঘামগুলো মুছল। তারপর বিছানা থেকে উঠে বাইরের ব্যলকনিতে এসে দাঁড়াল। বাইরে বইতে থাকা মৃদুমন্দ বাতাস ওকে আরাম দিল। গোটা স্বপ্নটা আবার ফিরে এল ওর মনে। সামান্য একটা দুঃস্বপ্ন। অন্য কেউ হলে এটাকে উড়িয়ে দিত। কিন্তু ও সেটা পারল না। কারণ প্রিয়া জানে আজকের এই দুঃস্বপ্নটাই ওর জীবনে চরম বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছে।একেকটা সকাল দিয়ে কেবল সেই দিনেরই নয়, একটা মানুষের জীবনও নতুন করে শুরু হয়। সেই রকমই একটা সকাল আজ প্রিয়ার জীবনে এসে উপস্থিত হয়েছে। জানালা দিয়ে কাঁচা সোনালী রঙের রোদটা ঘরে ঢুকে ওর সারা দেহে যেন আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে গেল। ঘুমটা একটু আগেই ভেঙ্গেছিল ওর। মুখে রোদটা এসে পড়তে ও বিছানায় উঠে বসল। তারপর দুটো হাত ছড়িয়ে আলমোড়া ভাঙ্গল। ঘুমের রেশটা একটু একটু করে চোখ থেকে বিদায় নিচ্ছে। জানালার দিকে চোখ পড়তে দেখল বাইরে রোদে মোড়া একটা ঝকঝকে দিন উপস্থিত হয়েছে। বিছানা থেকে নেমে ও জানালার কাছে হাজির হল। কাচের ওপাশে কিছুটা হাইরাইজ, কিছুটা সবুজ ছোপ আর কিছুটা ব্যস্ত রাস্তাকে সঙ্গী করে তিলোত্তমা জেগে উঠছে একটু একটু করে। রোদ ঝলমলে দিনটা দেখে ওর মনটা খুশীতে ভরে উঠল। আনন্দ তার এমনিই হচ্ছে। আজ থেকে তার একটা নতুন পরিচয় এই পৃথিবীতে। সে পার্থ সাহার স্ত্রী। পার্থর সঙ্গে ওর বিয়েটা কেমন যেন একটা স্বপ্নের মত বলে মনে হচ্ছে। বিগত কয়েকটা মাসে ওদের দুজনের জীবনেই একটা আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। একটা সময় পর্যন্ত ওরা একটা অনিশ্চিত জীবনের অধিকারী ছিল। পার্থর কোনো চাকরী ছিলনা। ছিলনা কোনো রোজগারের পন্থা। তাই প্রিয়ার শত অনুরোধ, উপরোধ সত্ত্বেও ও বিয়েটা সেরে ফেলতে রাজী ছিলনা। একই কথা ও প্রিয়ার বাবা-মাকেও জানিয়েছিল। আগে চাকরী করে একটা রোজগারের ব্যবস্থা করব, তারপর বিয়ে, এই ছিল ওর ধনুকভাঙ্গা পণ। তাতে অবশ্য প্রিয়ার খারাপ লাগেনি। উল্টে গর্ব বোধ করেছে, পার্থর মত একটা Self-respected মানুষকে নিজের বন্ধু, নিজের সঙ্গী হিসাবে পাওয়ার কারণে। এই একটা কারণেই ওর পার্থকে এত ভাল লাগে। নিজের আত্ম-সম্মানের থেকে এই পৃথিবীতে আর কিছু এতটা আপন নয় পার্থর কাছে। তাই ও আর জোর করেনি। বরং অপেক্ষা করে গেছে পার্থর জন্য। তারপর হঠাৎ মাস তিনেক আগে পার্থ ওকে ফোন করে। ফোনটা ধরতেই ইথার-তরঙ্গ বেয়ে অনেকটা আনন্দ এসে পৌঁছায় ওর কাছে। এতটা আনন্দের কারণ প্রিয়া বুঝতে পারেনি। অবশেষে পার্থ বলে, “আমি একটা চাকরি পেয়ে গেছি, প্রিয়া।” কথাটা শুনে মনটা পাখির পালকের মত উড়ে গেল নিমেষে। “ওমা! কবে? কোথায়?”
“উফ্ তুমি তো দেখছি নিঃশ্বাস ফেলারও সুযোগ দেবে না। বলব। সব বলব। তবে ফোনে নয়। সামনাসামনি।”
“কোথায় যাবে? কফিহাউস?”
“নাঃ। এবার কফিহাউস নয়। অন্যকোথাও।”
“কোথায় তো সেটা বলো।”
“তোমাকে সে বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না। তুমি ড্রেস পরে রেডি থাকো। আমি তোমাদের বাড়ি থেকে পিক-আপ করে নেবো।”
প্রিয়ার কোনো কথা বলার আগেই পার্থ ফোন কেটে দিয়েছিল। মনটা আনন্দে ভরে উঠেছিল। একদৌড়ে মাকে জানিয়েছিল সুখবরটা। মা কপালে হাত ঠেকিয়ে ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে বলেছিল, “ঈশ্বর মঙ্গলময়।” যতটা দ্রত সম্ভব ও তৈরী হয়ে গিয়েছিল সেদিন। তারপর অপেক্ষা। এক একটা মিনিট যেন এক একটা যুগের সমান। এতদিনের অপার অপেক্ষা শেষ হওয়ার এক নতুন অপেক্ষা। এই অপেক্ষায় কোনো বিরক্তি নেই। আছে অগুন্তি খুশী। অবশেষে আধঘন্টা পর ঘরের সামনে গাড়ির হর্ণ শুনে ছুটে গিয়ে দরজা খুলেছিল। অনলাইনে ভাড়া করা ক্যাবে বসে থাকা পার্থ বলে, “চলো।” দ্বিতীয় কোনো প্রশ্ন না করে প্রিয়া গাড়িতে এসে বসে। ক্যাবের পিছনের সিটে ওরা দুজন পাশাপাশি বসে। ক্যাব ছাড়তেই প্রিয়ার আগ্রহের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। সাথেসাথে প্রশ্নের ঝড় আছড়ে পড়ে পার্থর উপরে। মুচকি হেসে পার্থ বলে, “এত অস্থির হয়োনা। এতদিন যখন অপেক্ষা করে এলে, তখন আর কিছুটা সময়। জানোই তো সবুরে মেওয়া ফলে।” আর কোনো কথা বলেনি প্রিয়া। ও ভালমতই জানে যে পার্থ ওকে কথাটা এখানে বলবে না। তাই ও চুপ করে বসে রইল। একসময় ক্যাব তার নিজস্ব গন্তব্যে এসে পৌঁছাল। পার্থকে নামতে দেখে প্রিয়াও গাড়ি থেকে নামল। আর নেমেই অবাক হয়ে গেল। ও পার্থকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি আমাকে প্রিন্সেপ ঘাটে নিয়ে এলে কেন?” পার্থ ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “এখান থেকেই তোমার আর আমার প্রেমের আসল যাত্রা শুরু হয়েছিল। তাই ভাবলাম এখানেই তোমাকে সুখবরটা জানাই। চলো। ভিতরে বসে তোমাকে সবকথা বলব।” ওরা দুজনে ভিতরে ঢুকে বেঞ্চিতে গিয়ে বসল। প্রিয়া বলল, “এবার সব খুলে বলো। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। কোথায় চাকরী পেলে? স্যালারি কত?”
“বলছি। বলছি। চাকরীটা আমি পেয়েছি Tech-India Pvt. Ltd. কোম্পানীতে।”
“সেতো কলকাতার নাম করা বেসরকারী কোম্পানী!”
“জানি। কয়েকদিন আগে ওরা কাগজে অ্যাড দিয়েছিল। জুনিয়র অ্যাকাউন্টেটের পোস্টের জন্য। আমি অ্যাপ্লিকেশন করেছিলাম। আজকে ইন্টারভিউ ছিল। And you know, I get the job. একবছর অ্যাপ্রেনটিশ হিসাবে কাজ করতে হবে। ঠিকঠাক কাজ করতে পারলে এক বছরের মধ্যেই প্রমোশন। আর স্যালারী এখন মাসে হাজার বারো। পরে আরো বাড়বে।”
কথাটা শুনে আনন্দে লাফিয়ে উঠে দুহাতে পার্থর গলা জড়িয়ে ধরে ওর গালে চুমু খেল প্রিয়া। “I’m very very happy. I love you.”
“I love you too.”
এরপর একটা একটা দিন যেন স্বপ্নের মত করে কেটে যেতে লাগল। পরের সপ্তাহেই নতুন কাজে পার্থ জয়েন। মেস ছেড়ে দিয়ে দু’কামরার ঘরভাড়া। আর প্রিয়ার নতুন অপেক্ষা। অবশেষে পার্থ রাজী হল বিয়ের পিঁড়িতে বসার জন্য। গ্রামের বাড়ি থেকে পার্থর বাবা-মা কলকাতায় এসেছিলেন। বিয়েটা কলকাতাতেই হয়েছে। পরের দিন পার্থর বাবা-মা আর অন্যান্য আত্মীয়েরা ফিরে গেছেন। পার্থ আর প্রিয়া এসে উঠেছে ওদের নতুন ঘরে। গতকাল ছিল ওদের কালরাত্রি। তাই ওরা দুজন আলাদা আলাদা ঘরে ঘুমিয়েছিল। আজকে ওদের ফুলশয্যা। কথাটা ভাবতেই মনের মধ্যে একটা লজ্জা পাক খেয়ে উঠল। সময় যেন কত তাড়াতাড়ি বয়ে যায়! এই ক’দিন আগে পর্যন্তও ওরা ছিল একে অপরের বন্ধু। আর আজ সেই পরিচয়টাই পাল্টে গিয়ে হয়ে গেছে স্বামী-স্ত্রী।
“Good morning ma’am. আশা করি রাতে ঘুম হয়েছে। আজকে আমার মুখ দেখতে কোনো অসুবিধা নেইতো?”
প্রিয়া ঘুরে দেখল ওর পিছনে পার্থ হাতে দুটো চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর কথা শুনে প্রিয়া হেসে ফেলল। আসলে ওর মা বলে গিয়েছিলেন যে কালরাত্রির দিন ওর দুজন যেন একে অপরের মুখ না দেখে। সংস্কার বশে কালকে ওকে নিজের কাছে ঘেঁষতে দেয়নি প্রিয়া। তাই আজকে ওর এই প্রশ্ন। ও মুচকি হেসে জবাব দিল, “নাঃ, আজকে আর কোনো অসুবিধা নেই।” পার্থ এগিয়ে এসে ওর হাতে চায়ের কাপটা দিয়ে বলল, “বাঁচালে।”
“কিন্তু তুমি চা করতে গেলে কেন? আমি তো যাচ্ছিলাম।”
“আমি ভাবলাম তুমি চা করতে পারো কিনা। বাপ-মায়ের একমাত্র মেয়ে হয়তো কোনোদিন রান্নাঘরেই ঢোকোইনি।”
“মোটেও না। আমি সবকাজ করতে পারি। বাপ-মায়ের একটা মেয়ে হতে পারি, তবে বাকীদের মত আদুরী নই। মা আমাকে সব কাজ শিখিয়ে দিয়েছে।”
“ঠিক আছে। কাল থেকে তুমিই চা করবে। এখন চা-টা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। আর আমাকে কিছু একটা রেডি করে দাও, খেয়ে আমি অফিস যাবো।”
পার্থর কথা শুনে প্রিয়া অবাক হয়ে বলল, “সে কি! তুমি তো ক’দিনের ছুটি নিয়েছিলে? আর কথা ছিল আমরা আজকে দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিতে যাবো। তাছাড়া ঘরে হাজার একটা কাজ পড়ে আছে, আর তুমি বলছো অফিস যাবে।”
“আরে কি করি বলোতো। বেসরকারী অফিসে চাকরী করি। নতুন জয়েন করেছি। বসের মুখের উপর কথা বলি কি করে? কাল রাতে স্যার ফোন করেছিলেন। আজ থেকে কোম্পানীর অডিট শুরু হচ্ছে। জুনিয়র অ্যাকাউন্ট্যাট হিসাবে আমাকে থাকতেই হবে। বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে। না গেলে চাকরী নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। তখন তোমায় কি খাওয়াবো, প্রিয়া সুন্দরী?” রসিকতা করে বলল পার্থ।
ওর কথা শুনে প্রিয়া লজ্জা পেয়ে বলল, “ঠিক আছে। তুমি কাজে যাও। আমি এইদিকটা সামলে নেবো।”
“ঠিক তো?”
ঘাড় নেড়ে নিজের সম্মতি জানাল প্রিয়া। পার্থ বলল, “ঠিক আছে আমি ততক্ষণে বাজার থেকে ঘুরে আসি। তুমি ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে নাও।”
পার্থ অফিস বেরিয়ে যাওয়ার পর নিজের সংসারের দিকে নজর দিল প্রিয়া। আজ নিজেকে কেমন যেন অন্য মানুষ বলে মনে হচ্ছে। হঠাৎ করে এত দায়িত্ব এসে পড়াতে নিজেকে কেমন যেন পরিণত বলে মনে হচ্ছে। এই ছোট্ট ঘরটা নিজের। এই ছোট্ট সংসারটা নিজের। আর? আর পার্থও তার নিজের। একান্ত নিজের। এক চমকে নিজেকে চিন্তার জগৎ থেকে বের করে নিয়ে এল প্রিয়া। এখন অত বিলাসিতা করে সময় নষ্ট করার মত পর্যাপ্ত সময় তার হাতে নেই। এই অগোছালো ঘরটাকে সাজিয়ে তুলতে হবে। বাজার থেকে কিছু কিনে আনতে হবে। সন্ধ্যেবেলা ওরা নিজেদের কিছু বন্ধুদেরকে নিমন্ত্রণ করেছে। তার আগে সব কাজ একা হাতে শেষ করে তারপর নিজেকে তৈরী হতে হবে। নিজের জন্য। পার্থর জন্য। আজকের রাতের জন্য। তাদের ফুলশয্যার জন্য।সন্ধ্যে থেকে বন্ধুরা একে একে সবাই এসেছিল। সবাই বসে একসাথে আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, হাসি-গল্প, একে অন্যের লেগপুলিং শেষ করে সবাই বিদায় নিল অবশেষে। বন্ধুদের বাইরে পর্যন্ত দাঁড়িয়ে এসে দরজা বন্ধ করে ভিতরে এল পার্থ। অফিস থেকে আজ বিকালেই ফিরে এসেছিল ও। আর বেল বাজানোর সাথে সাথেই প্রিয়া হাসিমুখে দরজা খুলে বলেছিল, “Welcome back Mr. husband. How is it looking?” ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে গেছিল ও। যদিও মেস ছেড়ে এই ভাড়াবাড়িতে ও এসেছে মাস দুয়েক, তবুও বেশ খানিকটা অগোছালো হয়েই পড়েছিল সারাবাড়িটা। কিন্তু মাত্র একবেলাতেই প্রিয়ার হাতের ছোঁয়ায় সেই ঘরটাই যেন অচেনা লাগছে। সেইসাথে অচেনা লাগছে তার প্রিয়াকেও। কোমরে আঁচলটা গাছকোমর করে গোঁজা আর ঘাড়ের উপর আলগা খোঁপা। কপালে মাঝারী একটা টিপ আর সিঁথিতে গাঢ় করে লাগানো সিঁদুর। সবমিলিয়ে আর প্রিয়াকে একদম অন্যরকম লাগছে। মনে হচ্ছে কদিন আগেও প্রিয়া বলে যে মেয়েটাকে সে চিনত, এ যেন সে নয়। এ অন্য কোনো একজন। সে ছিল তার প্রেমিকা, আর এ হচ্ছে তার স্ত্রী। তার অর্ধাঙ্গিনী। তার সারা জীবনের সাথী। “তোমার আর অভ্যাস বদলালো না। প্রথম দিনেও ওরকম ক্যাবলা হয়ে তাকিয়ে ছিলে, আজও একইভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছো। কি দেখছো অমন করে?” প্রিয়ার প্রশ্ন ওকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনে।
“আমার নতুন বউকে।” মুচকি হেসে পার্থ জানায়।
“থাক, আর কথা বলতে হবেনা। সবাই এখনই চলে আসবে। তৈরী হয়ে নাও। তোমার জামাকাপড় বের করে ইস্ত্রি করে রেখেছি।”
“বাব্বা, একদিনেই তো পুরো গিন্নী হয়ে উঠেছো দেখছি।”
“উফ্, তোমার সাথে কথায় পেরে ওঠা আমার কম্মো নয়। এখন চলো।”
বিকালের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে পার্থ বেডরুমের দিকে পা বাড়াল। যেখানে তার জন্য অপেক্ষা করে আছে ওর প্রিয়া।
ঘরের ভিতর ঢুকে এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেল পার্থ। দরজাটা বন্ধ করে বিছানায় গিয়ে বসল। ওর সামনে মাথা নীচু করে বসে আছে প্রিয়া। পরণে ওরই পছন্দ করে কেনা গোলাপী বেনারসী। সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ। ও খুঁজে খুঁজে গোলাপী রঙের শাড়িটাই কিনেছিল। একটু বেশী দাম হওয়া সত্ত্বেও। ও চেয়েছিল প্রিয়া ঐ রঙেরই শাড়ি পরুক, যে রঙের শাড়িতে ও প্রথমবার প্রিয়াকে দেখেছিল। গোলাপী। ওর প্রিয় রঙ। ভালবাসার রঙ। ওর থেকে একটু দূরে বসে আছে প্রিয়া। কিন্তু কেমন যেন একটু জড়োসড়ো ভাব। সেটা কি আসন্ন মিলনের ভয়ে? নাকি স্বাভাবিক লজ্জাবশত? পার্থ জানে না। ও শুধু জানে আজকের রাত কেবল ওদের দুজনের রাত। আজকের রাত ভালবাসার রাত। আজকের রাত মিলনের রাত। আজকের রাত সবকিছু ভুলে একে অন্যের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার রাত। প্রায় ফিসফিসিয়ে ডাকল পার্থ, “প্রিয়া...” প্রিয়া ওর মুখের দিকে তাকাল। চোখের তারায় সঙ্কোচ স্পষ্ট। যেটাকে কাটাতেই হবে। নিজেরই কাঁপতে থাকা হাতটা শক্ত করে রাখল ওর নরম হাতের উপর। মুখে কিছু বলল না। কিন্তু চোখের ভাষায় জানালো সঙ্কোচের কোনো কারণ নেই। প্রিয়ার দিকে আরোও কিছুটা এগিয়ে গেল ও। ঘন হয়ে বসল ওর শরীর ছুঁয়ে। হাত বাড়িয়ে খোঁপাটাকে খুলে ছড়িয়ে দিল ওর চুলগুলোকে। একরাশ চুল এসে পড়ল প্রিয়ার কাঁধে। পার্থ শরীরটাকে আরোও এগিয়ে নিয়ে গিয়ে মুখোমুখি হল প্রিয়ার। ঠোঁটদুটোর মধ্যে তফাত কেবল কয়েক ইঞ্চি। কয়েক মুহুর্ত সময় নিল পার্থ। ততক্ষণে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে প্রিয়া। অনুভব করছে নিজের মুখের উপর ক্রমাগত পড়তে থাকা পার্থর গরম শ্বাস। আর কল্পনা করে নিচ্ছে বহির্জগতে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলোকে। আজ ওর ভয় পাচ্ছে। সঙ্কোচ হচ্ছে। যে পুরুষটাকে ও এতদিন ভালবেসে এসেছে, আজ তারই স্ত্রী হয়ে, তার অঙ্কশায়িনী হতে যেন কুণ্ঠা বোধ হচ্ছে। নিজের মনকে কষে ধমক লাগাল প্রিয়া। সামনে বসে থাকা পুরুষটা কোনো অচেনা মানুষ নয়, বরং ওর স্বামী। তাকে কোনোভাবেই নিরাশ সে করবে না। করতে পারে না। সমস্ত কুণ্ঠাগুলোকে মন থেকে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দৃঢ়ভাবে চোখ খুলল প্রিয়া। যে অন্য কেউ নয়, পার্থর স্ত্রী। প্রিয়া নিজেই নিজের শরীরটাকে এগিয়ে নিয়ে গেল। নিজের ঠোঁটদুটোকে রাখল পার্থর ঠোঁটের উপর। ভরপুরভাবে চুম্বনের স্বাদ পাওয়ার আশায়। স্ত্রীর মনের কুণ্ঠার বালির বাঁধটা সরে গেছে বুঝতে পেরে আরও সচেষ্ট হল পার্থ। একটা হাত রাখল প্রিয়ার কাঁধে। আর ঠোঁটদুটোকে মিশিয়ে দিতে লাগল ওর নরম ঠোঁটদুটোতে। প্রিয়ার গরম ঘন হয়ে আসা শ্বাস ওকে যেন গলিয়ে দিচ্ছে। ও আলতো করে প্রিয়ার নিচের ঠোঁটটাকে নিজের মুখে পুরে চুষতে লাগল। এবং সেই সাথে নিজের জিভটাকে ঢুকিয়ে দিল ওর মুখে। সামান্য হাঁ করে নিজের মুখের ভিতর প্রিয়া ঢুকিয়ে নিল পার্থর জিভটাকে। পরের কিছুটা সময়ে ওর মুখের ভিতর ঝড় তুলল জিভদুটো। তারা এখন নিজেদের মধ্যে ক্রীড়ামত্ত। বেশ কিছুটা সময় পরে ওদের চুম্বন পর্ব শেষ হল। প্রিয়ার মুখ থেকে নিজের মুখটা সরিয়ে নিয়ে দেখল প্রিয়া একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। পার্থ ভালো করে লক্ষ্য করে দেখল। প্রিয়ার চোখে কোথাও আর সঙ্কোচ আর কুণ্ঠা নেই। তার জায়গা নিয়েছে একটুখানি লজ্জা আর অনেকটা দুষ্টুমি। পার্থ বুঝতে পারল প্রিয়া আস্তে আস্তে নিজেকে তৈরী করে তুলছে আজকের রাতের জন্য। ওকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য।
পার্থ হাত বাড়িয়ে প্রিয়ার কাঁধ থেকে শাড়ির আঁচলটা সরাতে যেতেই প্রিয়াকে ওকে ইশারায় বারণ করল। সাথেসাথে থেমে গেল ও। প্রিয়া মুচকি হেসে ঘরের আলোর দিকে ইশারা করল। পার্থ বুঝতে পারল প্রিয়া আগের থেকে অনেক সহজ হলেও আলোতে তার সামনে নগ্ন হতে ওর সম্ভ্রমে বাধছে। ও জোর করল না। বিছানা থেকে উঠে আলোটা নিভিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে একরাশ অন্ধকারের মাঝে হারিয়ে গেল ওরা দুজন। তবে পুরোপুরি নয়। খোলা জানালার ফাঁক দিয়ে চাঁদের নরম আলো ঢুকতে লাগল ঘরের মধ্যে। তাতে পুরোপুরি অন্ধকারটা না কাটলেও আবছা ভাবে সবকিছুই দেখা যাচ্ছে। সেই আবছায়াতে পার্থর চোখদুটো খুঁজে নিল ওর প্রিয়াকে। ও আবার ওর পাশে গিয়ে বসল। ও কিছু করার আগেই প্রিয়া নিজেই ব্লাউজ আর শাড়ি পিন-আপটা খুলে দিল। ভারী আঁচলটা অভিকর্ষের টানে নেমে এল কাঁধ থেকে। অন্ধকারে চোখদুটো অনেকটাই সয়ে গেছে। দেখতে কোনোরকম অসুবিধা হচ্ছেনা। আঁচলটা নিচে পড়ে যাওয়াতে শাড়িটা ওর বুক থেকে অনেকটাই সরে গেছিল। বাকিটা সরিয়ে দিল পার্থ। ব্লাউজে ঢাকা বুকটা শ্বাসের তালে তালে উঠছে আর নামছে। পার্থ চেয়ে দেখল প্রিয়া আবার নিজের চোখদুটো বুজে ফেলেছে। তবে এবার সঙ্কোচে নয় বরং লজ্জায়। পার্থ হাতদুটো এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ব্লাউজের প্রথম হুকটা খুলল। কিছুটা উন্মোচন হল নিষিদ্ধ রহস্যের। তারপর দ্বিতীয় হুক। আরোও কিছুটা উন্মোচন। তারপর একে একে ব্লাউজের সব হুকগুলো খুলে ফেলতেই গোলাপী অন্তর্বাসে ঢাকা বুকটা সামনে এল। প্রিয়ার গা থেকে ব্লাউজটা খুলে মেঝেতে রাখল পার্থ। মুখটা এগিয়ে নিয়ে গেল ওর বুকের কাছে। শাওয়ার জেল, পাউডার আর ডিওড্রেন্টের মিশ্র গন্ধ ঝাপটা মারল নাকে। তার সাথে মিশে আছে প্রিয়া শরীরের নিজস্ব মিষ্টি একটা গন্ধ। উত্তেজনায় ঘেমে ওঠা বুকটার আরো কাছে মুখটা নিয়ে গেল পার্থ। জোরে জোরে দামামা বাজাতে থাকা হৃৎপিণ্ডটার আওয়াজ পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে। পার্থ নিজের ঠোঁট রাখল প্রিয়ার গলায়। কণ্ঠমণিটা নড়ে উঠল দু’বার। উত্তেজনায় বিছানার চাদরটাকে খামচে ধরল দু’হাতে। পার্থর ঠোঁট বিভাজিকা ছুঁই ছুঁই। অন্ধকারে আন্দাজে হাত বাড়িয়ে খুঁজতে লাগল অন্তর্বাসের হুক। কিন্তু অনভ্যাসে ব্যর্থ হল সে। একবার। দু’বার। অবশেষে নিজেই সেটা খুলে দিল প্রিয়া। দায়িত্ব ভাগ করে নিল পার্থও। সযত্নে সেটাকে ওর বুক থেকে সরিয়ে রাখল মেঝেতে। অন্তর্বাসের আড়াল সরে যেতেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল ফর্সা স্তনদুটো। সেই সাথে ওরা দুজনেও। একটা নিষিদ্ধ আকর্ষণে ভারী স্তনদুটোর উপরে হাত রাখল পার্থ। অভিকর্ষকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মাথা উঁচু করে আছে অহংকারী স্তনযুগল। সৃষ্টিকর্তার অমোঘ সৃষ্টিতে যেন তারা অভিমানী। পৃথিবীর সব বাধা ভেদ করে মাথা তুলে আছে তারা। হাত রাখল পার্থ। অষ্টাদশী কন্যার পীণোদ্ধত কুচযুগলে হাত রাখল পুরুষ। সৃষ্টিকর্তার কি অমোঘ সৃষ্টি! একইসাথে তারা কঠিন আবার নরমও। একইসাথে তারা পেলব আবার কাঠিন্য তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। অপলক দৃষ্টিতে নিজের স্ত্রীর নগ্ন সৌন্দর্য্য দর্শন করতে লাগল পার্থ। নিষিদ্ধ রূপসুধা পান করতে লাগল নিজের তৃষ্ণার্ত চোখ দিয়ে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ওর মনে হল তার সামনে বসে থাকা নারীমূর্তিটি কোনো মানবীর নয়। স্বর্গের কোনো যক্ষকন্যা বসে আছে তার নগ্নতা নিয়ে। কিম্বা কোনো দক্ষ কারিগরের হাতে তৈরী জীবন্ত কোনো নারীমূর্তি। পার্থ আলোটা নিভিয়ে দিতেই লজ্জায় চোখ বুজে ফেলেছিল প্রিয়া। তারপর কেবল অনুভব করে গেছে পার্থর প্রতিটা পদক্ষেপের। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ কোনো সাড়া না পেয়ে ধীরে ধীরে চোখ খুলল সে। সামনে তাকিয়ে দেখল পার্থ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। বিশেষত তার নগ্ন স্তনযুগলের দিকে। আবছা আলোতে তার চোখের তারায় খুঁজে পেল নতুন এক ভাষা। কামনার ভাষা। তার কামনার উৎস যে সে নিজেই, এটা বেশ বুঝতে পারল সে। এতে তো তার লজ্জা পাওয়ার কথা। কিন্তু না। সে লজ্জা পেল না। বরং সেই কামনার ভাগীদার হল সে নিজেও। পার্থর মাথাটাকে দু’হাতে ধরে আস্তে আস্তে রাখল নিজের বুকের উপর। বাকী দায়িত্ব তার।
প্রিয়া ওর মাথাটাকে নিজের বুকের উপর রাখতেই, পার্থ ঠোঁট রাথল সেই নরম মাংসপিণ্ডগুলোর উপর। বাদামী বলয়ে ঘেরা লোভনীয় চোরীর মত বৃন্তদুটো যেন ওকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। অমোঘ সেই হাতছানি এড়াবার ক্ষমতা এই ধরাধামে কারোর নেই। পার্থর তো নেই-ই। কালবিলম্ব না করে ও সেই বৃন্তগুলোর একটায় নিজের জিভ দিয়ে স্পর্শ করল। সেই স্পর্শ সমস্ত রোমকূপ বেয়ে ছড়িয়ে পড়ল সারা শরীরে। শরীরে যেন বান ডেকেছে। কামনার বান। তাকে আটকানোর ক্ষমতা কারোর নেই। প্রিয়ারও নেই। সে চেষ্টা ও করলোও না। উল্টে নিজেকে ভেসে যেতে দিল কামনার সাগরে। নিজের স্তনবৃন্তের উপর পার্থর জিভের ভেজা স্পর্শ ওকে যেন ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্য এক জগতে। ও আর পারল না। ধৈর্যের বাঁধ অনেক আগেই ভেঙ্গে গিয়েছিল। এবার ও নিজের স্তনবৃন্তটাকে ঠেলে ঢুকিয়ে দিল পার্থ মুখের ভিতরে। মুহুর্তেই ওর মনের কথা টের পেয়ে বৃন্তটাকে নিজের মুখের ভিতর ঢুকিয়ে নিল পার্থ। শুরু করল লেহন। “আআআহহহ...” অসহ্য আরাম অস্ফুট গোঙানির আকার নিয়ে বের হয়ে এল মুখ থেকে। বাস্তবজ্ঞান লোপ পাচ্ছে আস্তে আস্তে। জাগছে শরীর। জাগছে কামনা। দাঁতের আলগা কামড় বসছে বৃন্তে। নখের আঁচড় পিঠে। শরীরী যন্ত্রণা পিছু হঠছে। শরীরে থাবা বসাচ্ছে অসহ্য সুখ। মনের খিদে দাগ ফেলছে শরীরে। হার মানছে লজ্জা। জয়ী হচ্ছে ভালবাসা। সময় এখন নিথর। পরিবেশ নিস্তব্ধ। জানালার বাইরে আধখাওয়া চাঁদ। সাথে তার ফ্যাকাশে জ্যোৎস্না। নিশাচর পাখির ডানার আওয়াজ। রাত-পাহারাদারের বাঁশির স্বর। একটা অন্ধকার ঘর। বিছানায় শরীরী সুখের জালে আটকে পড়ে ছটফট করতে থাকা দুটো শরীর। একজন পুরুষ। একজন নারী। একজন স্বামী। অন্যজন স্ত্রী। একজন সুখ দিতে ব্যস্ত। আর অন্যজন তার সমস্ত শরীর দিয়ে সেই সুখ নিতে ব্যস্ত। শরীরদুটো একে অন্যের দিকে আরো আরোও ঘন হয়ে এল।ঝড়ের মুখে শুকনো পাতার মত থরথর করে কাঁপতে থাকা প্রিয়ার শরীরটাকে ধীরে ধীরে বিছানায় শুইয়ে দিল পার্থ। শরীরের সাথে কোনোরকমে আটকে থাকা শাড়িটাকে খুলে সেটাকেও মেঝেতে ফেলে দিল ও। তারপর ঊর্দ্ধাঙ্গে নিরভরণা স্ত্রীর দিকে কয়েক মুহুর্ত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল পার্থ। ছোট্ট পাখির ছানার মত কাঁপছে প্রিয়ার নগ্ন দেহটা। হয়তো কতকটা লজ্জায়। আবার কতকটা উত্তেজনায়। পার্থ মাথা গলিয়ে নিজের পাঞ্জাবী আর গেঞ্জিটা খুলে ফেলল। স্ত্রীর মত সেও হল নগ্ন। তারপর নিজের শরীরটাকে ভাঁজ করে এগিয়ে নিয়ে গেল প্রিয়ার দিকে। ওর মুখের কাছে নিজের মুখটাকে নিয়ে গিয়ে থমকে দাঁড়াল কয়েক মুহুর্ত। সোজাসুজি তাকাল চোখের দিকে। বুঝে নিতে চাইল তার মনের ইচ্ছাটাকে। প্রিয়াও তাকাল ওর চোখের দিকে। সোজাসুজি। পার্থর চোখে প্রশ্ন। প্রিয়ার চোখে তার স্পষ্ট উত্তর। সেটা বুঝে নিতে বেশী সময় লাগল না পার্থর। স্ত্রীর ইচ্ছাটা জানার পর আর একমুহুর্ত সময়ও নষ্ট করতে চাইল না ও। নিজের সন্ধানী ঠোঁটজোড়াকে সঙ্গী করে আবিষ্কার করতে শুরু করে দিল স্ত্রীর শরীরের সমস্ত অচেনা গলিঘুঁজিগুলোকে। যার প্রতিটা মোড়ে মোড়ে লুকিয়ে আছে অজানা রহস্যের হাতছানি। পার্থ সচেষ্ট হল সেই সব রহস্যের মুখোমুখি হতে। পার্থর ঠোঁট ক্রমশ নিম্নগামী। স্পর্শ করল প্রিয়ার গালকে। সেখান থেকে ঠোঁট ছুঁয়ে চিবুক অতিক্রান্ত হয়ে গলা। সেখান থেকে কাঁধ। এবং হাত। নির্লোম বাহুমূলে জমে ওঠা ঘাম যেন এক একটা বহুমূল্য মুক্তোবিন্দু। সেখানে পারফিউম, পাউডার আর জমে ওঠা ঘামের সোঁদা গন্ধে ভরপুর। নাক ঢুকিয়ে লম্বা শ্বাস নিল পার্থ। ফুসফুসে ভরে নিতে লাগল স্ত্রীর নগ্ন বগলের সেই সুগন্ধ। ওর ক্রিয়াকলাপে প্রিয়া কিছুটা অবাকই হয়ে গেল। কিন্তু তার পরের পদক্ষেপই ওকে করে দিল হতচকিত। পার্থ জিভ ঠেকাল প্রিয়ার নগ্ন নির্লোম বগলে। একটু একটু করে চেটে নিতে লাগল প্রতিটা স্বেদবিন্দুকে। এতে প্রিয়া আরোও উত্তেজিত হয়ে পড়তে লাগল। পার্থর ভেজা জিভ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘুরছে তার বগলে। চেটে নিচ্ছে সেখানে জমে ওঠা ঘামগুলোকে। এই চিন্তাটাই ওকে আরোও পাগল করে দিচ্ছে। ফলতঃ আরোও ঘেমে উঠছে ও। আর পার্থর জিভ আরোও খোলামেলাভাবে ঘুরছে তার বগলে। অনেকটা সময় নিয়ে প্রিয়ার নির্লোম বগল পরিক্রমা করার পর থামল ওর জিভ। তারপর জায়গা পালটে চলে এল অপর বগলে। এতক্ষণ ওর হাতদুটো ছিল শান্ত। কিন্তু ধীরে ধীরে সে দুটোতেও ছড়িয়ে পড়ল অশান্তির বীজ। পার্থ একটা হাত রাখল নিজের স্ত্রীর গগণচুম্বী স্তনে। ছোটখাটো পর্বতস্তূপটাকে মুঠোবন্দী করে ফেলল ও। অস্ফুট গোঙানিটাকে অনেক কষ্ট করেও চেপে রাখতে পারল না প্রিয়া। “উউমমহ...” বিছানার চাদরটাকে দুহাতে খামচে ধরা ছাড়া আর বিশেষ কিছুই করার ছিল না প্রিয়ার। তার শরীরে এই প্রথমবার হাত পড়ল কোনো পুরুষের। এ এক অন্য অভিজ্ঞতা। এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে তার গোটা শরীর। পার্থর গরম শ্বাস খেলা করছে তার শরীরের যত্রতত্রে। পার্থর মুঠোবন্দী স্তন তাকে পাগল করে তুলছে। আর শরীরের প্রতিটা স্থানে পার্থর করা চুম্বন করে তুলছে মাতোয়ারা। ছোটবেলার রূপকথার গল্পের সাথে মিলে যাচ্ছে বাস্তব। সেখানে রাজকুমার সোনার কাঠি স্পর্শ করিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলত ঘুমন্ত রাজকুমারীকে। আর আজ বাস্তবে পার্থ জাগিয়ে তুলছে তাকে। ঘুম ভাঙ্গছে তার। সেই সাথে ঘুম ভাঙ্গছে তার মনের। আর অবশ্যই তার শরীরের। পার্থ ওর হাতের চাপ ক্রমশ বাড়াতে লাগল। একতাল মাখনের মত ওর আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে গলে পড়তে লাগল প্রিয়ার স্তন। ভালবাসার এই অত্যাচারে ফর্সা স্তনযুগল হয়ে উঠল রাঙা। তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই কারোর। পার্থিব ব্যথা, বেদনা এই মুহুর্তে শরীরে ঘেঁষতে ভয় পাচ্ছে। অনাবিল আনন্দে মাতোয়ারা শরীরদুটো আটকে পড়েছে সুখের খাঁচায়। যাতে প্রবেশের পথ অতি সুগম, কিন্তু প্রস্থান অতি দুরুহ। এই শরীরী খেলায় কোনো হারজিত নেই। আছে কেবল তীব্র সুখ। আর সেই সুখই ক্রমশ চেপে বসছে শরীর দুটোতে।
দুহাতে নির্দয়ভাবে স্ত্রীর পেলব স্তনদ্বয়কে পেষণ করতে করতে পার্থর ঠোঁট এসে পৌঁছাল প্রিয়ার বুকে। ও একটি স্তনের বৃন্ত মুখে নিয়ে চুষতে শুরু করল। মাঝে মাঝে দাঁতের ফাঁকে রেখে দিতে লাগল আলতো কামড়। সেই আলতো কামড়ে প্রিয়ার শরীরে যেন বিদ্যুৎতরঙ্গ খেলে যাচ্ছিল। পার্থর মাথাটা ধরে ও সজোরে চেপে ধরল নিজের স্তনজোড়ার উপর। ও এই অসহ্য শরীরী সুখ থেকে বেরিয়ে আসবার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই চেষ্টা ওকে আরোও বেশী করে সুখের চোরাবালিতে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। পার্থ স্তনগুলোতে জিভ দিয়ে বৃত্তাকারে ঘোরাতে লাগল। বাদামী বলয়টাকে লালা দিয়ে চাটতে লাগল। একে একে দুটো স্তনকেই পর্যায়ক্রমে পেষণ, লেহণ ও চর্বণ করার পর কিছুটা শান্ত হল পার্থ। কিন্তু ততক্ষণে অশান্ত হয়ে পড়েছে প্রিয়ার শরীরটা। ও চাইছে আরোও, আরোও কিছু। কার্পন্য নেই পার্থরও। স্তন অতিক্রম করে ওর ঠোঁট এখন প্রিয়ার বর্মের মত ফর্সা পেটে। আর তার মাঝে সুগভীর নাভি। জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলোতে পেটে লেগে থাকা ঘামগুলো চকচক করছে। পার্থ জিভ দিয়ে সেই নাভির গভীরতা মাপতে সচেষ্ট হল। জিভ দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নাভিমূলে জমে ওঠা স্বেদবিন্দুগুলোকে পরিষ্কার করল। প্রিয়ার শরীরের ঊর্দ্ধাঙ্গ নগ্ন হলেও নিম্নাঙ্গে এখনও বস্ত্রখণ্ড হিসাবে একটা মামুলি সায়া বর্তমান। পার্থ উঠে গিয়ে প্রিয়ার পায়ের কাছে বসল। তারপর ওর ডান পাটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে মুখের কাছে নিয়ে এল। আর প্রত্যেকটা আঙ্গুল এক এক মুখে পুরে ধীরে ধীরে চুষতে শুরু করল। পার্থর কাণ্ড দেখে প্রিয়া প্রথমে বেশ খানিকটা অবাক হয়ে গেল। তারপর ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসে পার্থকে বারণ করতে গেল। কিন্তু তার আগেই পার্থ ওকে ইশারায় বিছানায় শান্ত হয়ে শুয়ে থাকতে বলল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রিয়া আবার শুয়ে পড়ল। আর পার্থ নিজের কাজে মন দিল। পাটা হাতে নিয়ে নূপুর পরা গোড়লিতে চুম্বন করল। তারপর ধীরে ধীরে প্রিয়া পা বেয়ে চুম্বন করতে করতে ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে শুরু করল। ক্রমে ক্রমে গোড়ালি, পা, হাঁটু প্রিয়ার প্রত্যেকটা অঙ্গ হয়ে রইল পার্থর চুম্বনের সাক্ষী। অন্যদিকে প্রিয়া চোখ বুজে এই অনুভূতিটাকে গ্রহণ করছিল। পার্থ যত উপরের দিকে উঠে আসছে, ওর শরীরে কেমন যেন একটা অন্যরকম অনুভূতির জন্ম হচ্ছে। মনে হচ্ছে পার্থ যেটা করছে ঠিক করছে। আর ভালভাবেই করছে। নিজের ঊরুতে পার্থর চুম্বন যেন ওকে গলিয়ে দিচ্ছে। তোলপাড় করছে সারা শরীর। নিজেকে স্থির রাখা খুবই কষ্টকর। অবশেষে থামল পার্থ। তার অবিরত চুম্বনের কারণে প্রিয়ার পরণের সায়াটা গুঁটিয়ে কোমরের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। ওকে যথাস্থানে রাখা নিরর্খক। তাই পরক্ষণেই সেটারও স্থান হল মেঝেতে। শাড়ি, ব্লাউজের পাশে। প্রিয়ার পরণে এখন কেবলই একটি অন্তর্বাস। যেটি সযত্নে রক্ষা করে চলেছে তার সম্ভ্রমকে। তার নারীত্বের প্রতীককে একজন পুরুষের দৃষ্টির অগোচরে রাখার অন্তিম চেষ্টা। প্রিয়া চোখ মেলে চাইল। দেখল পার্থকে। তার দৃষ্টি আটকে রয়েছে ওর দু পায়ের মাঝখানে। নারী আর পুরুষের মাঝখানে কেবল একখণ্ড বস্ত্র। যেটা সরে গেলে স্ত্রী প্রিয়া পার্থর চোখে হয়ে উঠবে সম্পূর্ণা। কিম্তু ওটা তো কেবল একটা বস্ত্রখণ্ড নয়। ওটা একটা প্রাচীর। লজ্জার। সঙ্কোচের। সম্ভ্রমের। এতদিনের সংস্কারের। আজ যদি ঐ প্রাচীরটা সরে যায়, তাহলে এই রাত হয়ে উঠবে স্ময়ংসম্পূর্ণ। এতদিনের প্রাচীরটাকে সরানোর আগে দরকার মনের আগলটাকে সরানোর। সামনে বসে থাকা পুরুষটা অন্য কেউ নয়, আমার স্বামী। আমি নিজেও তার কাছে অপরিচিতা নই, তার স্ত্রী। আমাদের সম্পর্কটা ভালবাসার। বিশ্বাসের। আর এই ভালবাসা আর বিশ্বাসের মাঝে এতদিনের লজ্জা, সঙ্কোচ আর দ্বিধা ব্রাত্য। আজকের রাত একে অন্যকে চেনার রাত। নিজেকে অন্যের কাছে তুলে ধরার রাত। ভালবাসার রাত। মিলনের রাত। আর সেই মিলন হবে অবাধে। নিসঙ্কোচে। নির্দ্বিধায়। তাই লজ্জার আলগা প্রাচীরটা যত তাড়াতাড়ি সরে যায় ততই ভালো। পার্থ নিজে কাজটা করল। ধীরে ধীরে সরিয়ে দিল এতদিনের সংস্কারের সেই আলগা প্রাচীরটাকে। ধীরে ধীরে প্রকাশিত হতে লাগল নারীত্বের গোপনতম প্রতীক। পৃথিবীর নিষিদ্ধতম রহস্য। আজকের রাতে নারী প্রথম বারের জন্য সম্পূর্ণরূপে নগ্ন হল। একজন পুরুষের সামনে। তার স্বামীর সামনে। লজ্জায় প্রিয়া নিজের পা দুটোকে একসাথে জড়ো করে ফেলল। পার্থ সযত্নে পা দুটোকে সরিয়ে দিল। এবং প্রথম বারের জন্য দর্শন করল প্রিয়ার নগ্ন যৌবন। ওর যৌনাঙ্গ।
নাভির নীচেই নির্লোম উপত্যকা শুরু। ক্রমশ ঢালু হতে হতে গুহামুখে এসে শেষ। দুটো নরম মাংসের পাপড়ি দিয়ে সযত্নে ঢাকা সেই গুহামুখ। আর তার একটু উপরেই ফুলো শিম বীজের মত নারীর শরীরের সবচেয়ে সংবেদনশীল অঙ্গ। ভগাঙ্কুর। পার্থ আলতো করে সেই গুহামুখে হাত বোলাল। প্রিয়ার শরীরে যেন নতুন করে বিদ্যুৎতরঙ্গ খেলে গেল। শরীরে নতুন করে অস্বস্তি ফিরে এল। নিজের দু পায়ের মাঝখানে ক্রমশ ভিজে ভাবটা ও টের পাচ্ছিল। আর পাচ্ছিল পার্থ। প্রিয়ার যৌনাঙ্গটা যে ক্রমশ কামরসে ভেসে যাচ্ছে, সেটা ও ভালো করেই বুঝতে পাচ্ছিল। ও বুঝতে পারছিল প্রিয়ার অনভ্যস্ত শরীরের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। সেটা ওর ছটফটানিই বলে দিচ্ছে। পার্থ ওর অঙ্গুলিহেলন চালু রাখল। তার অঙ্গুলিহেলনের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রিয়ার ছটফটানি। কখনও বিছানার চাদর খামচে ধরছে, তো কখনও পার্থর হাত। কথনও বা পা দুটো দিয়ে চেপে ধরছে পার্থর হাত। গুহামুখ থেকে বের হতে থাকা সরু জলের স্রোত আঙ্গুল ভিজিয়ে দিচ্ছে। পিচ্ছিল হয়ে যাচ্ছে রাস্তা। পার্থ আঙুল রাখল ফুলে ওঠা ভগাঙ্কুরের উপর। তর্জনী, আর বৃদ্ধাঙ্গুলির মাঝে রেখে আলতো করে চাপ দিল পার্থ। সারা শরীর বেয়ে একটা শিরশিরানি ভাব বয়ে গেল প্রিয়ার। বাস্তবজ্ঞানশূণ্য হয়ে পড়ল সে। স্থান-কাল-পাত্র ভুলে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল ও। এই অপরিসীম সুখ আর সহ্য হচ্ছে না। সারা শরীর তোলপাড় করছে। কিছু একটা ধরে রাখতে চাইছে। কিন্তু পারছে না। নিজের শরীরটার উপর ক্রমশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে সে। সময় বয়ে চলেছে নিরন্তর। সময়ের সাইকেলে চড়ে রাত এগিয়ে চলছে নিজের গতিতে। কিন্তু হুঁশ নেই দুটো শরীরের। ফ্যাকাশে চাঁদের আলোয় ঘামে ভেজা দুটো শরীর। পুরুষ ধীরে ধীরে মাথা নীচু করে ঠোঁট রাথল নারীত্বের বেদীতে। এটাই সেই বিলম্বিত সময়। মুহুর্তের মধ্যের বিস্ফোরণ ঘটল নারী শরীরে। প্রথমবার। গরম, নোনতা জলের স্রোত বের হয়ে এল বন্ধ গুহামুখের ভিতর থেকে। ভিজিয়ে তুলল পুরুষের মুথমন্ডল।আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পায়ে যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেছে। প্রায় আধঘন্টা হতে চলল আমি একই জায়গায়, একইভাবে দাঁড়িয়ে আছি। পায়ের সাথে সাথে হাতদুটোতেও যন্ত্রণা হতে শুরু করে দিয়েছে। আমার হাতদুটো একটা হ্যাণ্ডকাফ দিয়ে বাঁধা। আর হাতদুটো মাথার উপর উঁচু করে সিলিং-র সাথে দড়ি দিয়ে বাঁধা। একইভাবে অনেকক্ষণ ধরে হাতদুটো মাথার উপর বাঁধা থাকার কারণে কাঁধে ব্যখা করছে। কিন্তু মুখে কোনো শব্দ করতে পারব না। তার কারণ আছে। আমার মুখের ভিতর একটি মাঝারী আকারে বল ঢোকানো আছে। যেটি একটি পাতলা অথচ শক্ত চামড়ার ফিতের সাহায্যে মাথার পিছনে বাঁধা আছে। অর্থাৎ আমি এখন Tied up এবং ball gagged দুইয়ের মিলিত অবস্থার মাঝে দোদুল্যমান অবস্থায় আছি। এর সাথে যোগ হয়েছে blind fold. অর্থাৎ আমার দুটো চোখই বাঁধা। আমি বাইরের দুনিয়ার কি হচ্ছে, বা আমার সাথে কি ঘটছে বা ঘটতে চলেছে, তার আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। আমার প্রভু আমায় বলেছেন আজ আমার চোখ দুটোর ছুটি। তার বদলে আমাকে কানে শুনে আর অনুভব করে নিজে মজা নিতে হবে, সাথে ওনাকেও আনন্দ দিতে হবে। আমার মজার কথা জানি না, কিন্তু আমার প্রভু যে আমার এই বন্দীদশার প্রত্যেকটা মুহুর্ত উপভোগ করছেন এবং এর পরেও উপভোগ করবেন, তাতে আমি একশো শতাংশ নিশ্চিত। আমাকে প্রতিবার ভোগ করার আগে আমার শরীরটাকে নিয়ে খেলা করতে ওনার খুব ভালো লাগে। উনি বলেন এই যে আমার অসহায়ত্ব, মুক্তি পাওয়ার আকুতি - এসব দেখতে ওনার খুব ভালো লাগে। আসলে উনি প্রতিবার এটা প্রমাণ করার জন্য উন্মুখ থাকেন যে, উনি আমার প্রভু। আর আমি ওনার কেনা দাসী। ওনার কথায় ওনার নিজস্ব Brothel-র slave, একজন sex-slave. যার শরীরটাকে উনি যেমনভাবে চাইবেন ব্যবহার করবেন। আমার শরীরটার উপর, আমার মনটার উপর, আমার আত্মাটার উপর কেবল, কেবল ওনারই রাজত্ব থাকবে। এখানে আমার ইচ্ছার কোনো দাম নেই। সত্যি বলতে কি আমার ইচ্ছা বা অনিচ্ছা বলে কোনো বস্তু থাকতে পারে, সেটা উনি মনেই করেন না। একজন যৌন-দাসীর ইচ্ছা বলে কিছু থাকতেই পারেনা। আর অনিচ্ছার কথা তো বাদই দিলাম। আমার কাজই হল আমার প্রভুকে আনন্দ দিয়ে যাওয়া। ব্যাস, এইটুকুই। আজকে আমার প্রভুর ইচ্ছা হয়েছে আমার শরীরটাকে একটু tease করার। তাই এইসব ব্যবস্থা। আমার হাতদুটো হ্যান্ডকাফ দিয়ে বেঁধে দড়ির সাথে বেঁধে দিয়েছেন। মুখের ভিতর বলটা ঢুকিয়ে চামড়ার ফিতেটা আটকে দিয়েছেন। আর তারপর আমার চোখদুটোকে blind fold করে বেঁধে দিয়ে বললেন, “Enjoy my teasing, baby. It would be awesome. Have fun.” প্রায় ফিসফিসিয়ে বলা কথাগুলো আমার কানে যেন তরল সীসা ঢেলে দিল। ঘরের ভিতর এতক্ষণ পাখা চলছিল। আমার চোখদুটো বাঁধার কিছুক্ষণ পরেই বেশ ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করে দিল। বুঝতে পারলাম উনি এ.সি. চালিয়ে দিয়েছেন। ধীরে ধীরে ঘরটার পরিবেশটা কেমন যেন ঠান্ডা হয়ে এল।
আমি এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে শোনার চেষ্টা করছি যে ঘরের ভিতর ঠিক কি হচ্ছে। কান খাড়া করেও আমার প্রভুর কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না। সারা ঘর জুড়ে এ.সি.-র ঠাণ্ডা শোঁ শোঁ আওয়াজ। ঘড়ির টিক টিক। আর বাইরে ব্যস্ত গাড়ির হর্ণ। সময়টাও মনে হচ্ছে আমারই মত একজায়গায় নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার প্রভুর সঙ্গে যখন ওনার এই personal brothel-এ ঢুকেছিলাম, তখন শেষ দুপুর। এতক্ষণে নিশ্চয় বিকেল। আকাশের বুকে রঙের আলপনা। পাখিদের ঘরে ফেরার ডাক। কিছু কিছু মানুষেরও। তার মধ্যে আমি নেই। আমি নিশ্চল। নিথর। এককালে হয়তো ছিল কিছু ফেলে আসা অতীত। কিন্তু বর্তমান আর ভবিষ্যৎ? উঁহু। নৈব নৈব চ। আকাশের বুকে হারিয়ে যাওয়া রঙটা আমার জন্য নয়। পাখিদের ঘরে ফেরার ডাকটাও আমার জন্য নয়। আমার জন্য আছে কেবল একরাশ থিকথিকে অন্ধকার। আর একজন প্রভু। যাঁর কাছে আমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ বাঁধা পড়ে আছে। আর বাঁধা পড়ে আছি আমি। ওনার যৌনদাসী। খেলার পুতুল। হাতটা যন্ত্রণা হচ্ছে। একটু নাড়ালাম। সপাত্! প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বেতের লাঠির তীব্র পুরষ্কার আছড়ে পড়ল আমার পাছায়। “উমমগগগ...” একটা অস্ফুট গোঙানি। আর কিছু নয়। “Don’t make noises. Stay calm. And feel the pain with pleasure.” আবার সেই সাপের হিসহিসানি আওয়াজ। মনের মধ্যে ভয়টাও যেন ভয় পেয়ে গুঁটিয়ে গেল। তার কারণটাও বেশ স্পষ্ট। বেশ বুঝতে পারছি আজ প্রভুর হাতে ওনার প্রিয় খেলনাটা আছে। ওনার পাতলা লিকলিকে বেতের লাঠি। তেল চুকচুকে কালো লাঠিটা যতবারই দেখি ততবারই গোটা শরীরটা শিরশির করে ওঠে। কারণ যতবার প্রভু ওনার ঐ প্রিয় খেলনাটা নিয়ে আমার সাথে খেলেছেন, ততবারই আমার সারা শরীরে সাপের মত আঁকাবাঁকা দাগ তৈরী হয়েছে। আমার ফর্সা শরীরে লাল দাগ তৈরী করার জন্যই ওর অত কদর। অনেকবার ভেবেছি সাহস করে লাঠিটাকে ভেঙে দেব। কিন্তু শেষ মুহুর্তে সেই সাহসটাকে নিজের সঙ্গে পাইনি। বরং ভয়টা মনের মধ্যে জাঁকিয়ে বসে। প্রভু যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে। এই ভয়টাকেই পুঁজি করেই আমার প্রভু আমার শরীরের উপর রাজত্ব করছেন। আমার মনের উপর রাজত্ব করছেন। আমার আত্মার উপর রাজত্ব করছেন। আর আমি ঐ ভয়টাকেই একমাত্র সঙ্গী করে ওনার যৌন-দাসী হয়ে আছি।
সপাত্! চিন্তার জালটাকে নির্মমভাবে ছিঁড়ে দিয়ে বেতের লিকলিকে লাঠিটা আমার শরীরে নতুন ছাপ ফেলল। “উমমগগ...” তীব্র যন্ত্রণা গোঙানির আকার নিল। কিন্তু আমার অর্ধোচ্চারিত গোঙানিটাকে মাধপথেই থেমে গেল। সৌজন্যে আমার প্রভু এবং ওনার প্রিয় খেলনা। মাঝে মাঝে যন্ত্রণার ভয় যে তীব্র যম্ত্রণাকে ভুলিয়ে দিতে পারে আর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়তো আমি। আবার প্রভুর হাতের ঐ বেতের লাঠি সাপের মত আমার ছোবল দিতেই আমার গোঙানি নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে গেল। নতুন করে গুঙিয়ে ওঠার ভুল করলাম না। তবুও জানি প্রভুর হাতের ঐ লাঠি এখানেই থেমে থাকবে না। আরোও, আরোও অনেকবার সে ছাপ ফেলবে আমার শরীরে। তার থেকে অনেক বেশী আমার মনে। “That’s like a good girl. Relax your body. Enjoy the pain.” প্রভুর কণ্ঠস্বরের সাথে সাথেই আরোও কিছু অনুভব করলাম নিজের শরীরে। একটা ভেজা ভেজা স্পর্শ অনুভব করলাম নিজের বাঁ বগলের উপর। প্রভু আজ আবার আমার বাহুমূল লেহন করছেন। আমার শরীরের নানা স্থান নানা উপায়ে লেহন করা ওনার সবথেকে পছন্দের। আমার শরীরের কোথাও একবিন্দু লোম থাকা উনি একেবারেই পছন্দ করেন না। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে আমাকে স্নানের সময় আমার বগল ও যৌনাঙ্গের লোম পরিষ্কার করতে হয়। বাঁ বগলটা ক্রমেই ওনার লালায় ভিজে যাচ্ছে। এতক্ষণ উনি কেবল চাটছিলেন, এবার তার সাথে যোগ হল ওনার দাঁতের কামড়। তার সাথে একটা বলিষ্ঠ হাতের মুঠো শক্ত করে ধরল আমার নরম স্তনটাকে। আমার পরণে কেবল একটি অন্তর্বাস। উনি তার উপর দিয়েই স্তনটাকে টিপছেন, মোচড়াচ্ছেন। “I like to lick you underarm very much. It’s very smooth and sweaty.” এবার উনি আমার স্তনটাকে ঠেলে অন্তর্বাসের উপর তুলে আনলেন। এবং স্তনবৃন্তটাকে দু আঙ্গুলের মাঝে রেখে নির্দয়ভাবে সেটাকে মোচড়াতে লাগলেন, এবং নিজের দিকে টান দিয়ে পাক দিতে লাগলেন। যন্ত্রণায় চোথে জল চলে এসেছিল বোধহয়। পরক্ষনেই আমার শরীরে তৃতীয়বারের জন্য তার ছাপ ফেলল লাঠিটা। সামলে নিলাম নিজেকে। কারণ এর বেশী নিজেকে আর নিজের শরীরটাকে কষ্ট দিতে চাইনা। কিন্তু আমি না চাইলেও আমার প্রভু চান। আর তাই স্তনবৃন্তের পাক বেড়েই চলল। সাথে বেড়ে চলল আমার যন্ত্রণা। এবার এর সাথে হঠাৎ অন্তর্বাসের উপর দিয়েই আমার যৌনাঙ্গের উপর দিয়ে হাত বোলাতে শুরু করলেন। ঊরুসন্ধির ভিজে ভাব আমি নিজেও টের পাচ্ছি। স্তনবৃন্তটাকে আরাম দিয়ে উনি এবার আমার যৌনাঙ্গের সাথে খেলায় মেতে উঠলেন। ভেজা প্যান্টিটার উপর দিয়ে বারকয়েক আঙুল চালিয়ে বললেন, “Baby, your pussy is damn wet. And it smells good, like a rose. I like it.” বলে আমার ভেজা যৌনাঙ্গের উপর নিজের নাক ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলেন। সেই অদ্ভুত ভেজা আর শ্বাসের গরম একটা মিলিত অনুভবে শরীরে একটা শিরশিরানি বয়ে গেল। উনি প্যান্টির উপর দিয়েই আমার ফুলে ওঠা ভগাঙ্কুরটাকে দু আঙুলে চেপে ধরলেন। সমস্ত ভয়কে উপেক্ষা করে সারা শরীরটা থরথর করে কেঁপে উঠল। আর তারপরেই আসন্ন শাস্তির ভয়ে গোটা শরীরটা গুঁটিয়ে গেল। কিন্তু না। এবার ওনার লাঠি আমার শরীরে নতুন কোনো ছাপ ফেলল না। তার বদলে উনি আমার প্যান্টিটাকে দুহাতে ধরে হাঁটু পর্যন্ত নামিয়ে আনলেন। তারপর আমার ভেজা যৌনাঙ্গের উপর আঙুল বোলাতে লাগলেন। আর অন্য হাতে ভগাঙ্কুরটাকে চটকাতে লাগলেন। এই দুইয়ের মিলিত আক্রমণে আমি একপ্রকার দিশেহারা হয়ে পড়লাম। নিজের শরীরটাকে, বিশেষ করে যৌনাঙ্গটাকে ওনার হাত থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু পারলাম না। অবশেষে হাল ছেড়ে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে উনি একটা আঙুল এক ঝটকায় ঢুকিয়ে দিলেন আমার কোমল যৌনাঙ্গে। সমস্ত বাধাকে উপেক্ষা করে আঙুলটাকে বারবার বের করতে লাগলেন, আবার ভিতরে ঢোকাতে লাগলেন। সেই সাথে অন্য হাতের আঙুল দিয়ে আঁচড় কাটছেন আমার ভগাঙ্কুরে। আর পারছি না। তীব্র যৌনসুখ ঘন কামরসের রূপ ধরে ভিজিয়ে তুলছে আমার ঊরুসন্ধি। আর সেই নোনতা জলের ধারা গড়িয়ে নেমে আসছে আমার গোড়ালি অবধি। কিন্তু বিরাম নেই প্রভুর আঙুল চালনা। শেষ নেই তীব্র কামসুখের। আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। ছোটথাটো বিস্ফোরণ ঘটল আমার শরীরে। পা সহ গোটা শরীরটা কাঁপছে। স্থির হয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। শরীরটা আবেগের বশে বারবার আগুপিছু করছে। সবচেয়ে করুণ অবস্থা কোমরের নিচে খেকে যৌনাঙ্গ অবধি। তলপেটের পর থেকে বাকী শরীরটা যেন অবশ হয়ে গেছে। দু পা দিয়ে প্রভুর হাতটাকে চেপে ধরলাম। একটা মোটা জলের ধারা আমার পা দুটোকে ভিজিয়ে দিল। নিজের যৌনাঙ্গে প্রভুর আঙুল চেপে ধরে orgasm-টা শেষ করলাম আমি। Orgasm শেষ হতেই প্রভু ধীরে ধীরে নিজের আঙুলটা বের করে আনলেন আমার যৌনাঙ্গ থেকে। তারপর আমারই কামরসে ভেজা আঙুলটা মাথাতে লাগলেন আমার দুই স্তন ও স্তনবৃন্তে। তারপর একই সঙ্গে যন্ত্রণা আর আবেশের কারণে আমার ক্লান্ত শরীরটাকে একলা ফেলে রেখে চলে গেলেন আমার প্রভু।প্রিয়ার কামোত্তেজনা কয়েক মুহুর্ত স্থায়ী হল। কিন্তু শরীরের কাঁপুনি এখনও হয়ে যাচ্ছে। সেই কাঁপুনির মাঝেই পার্থ ঠোঁট ছোঁয়াল স্ত্রীর নির্লোম যৌনাঙ্গের কোমল বেদীতে। নিজের যৌনাঙ্গে প্রথমবার পার্থর আঙুল পেয়ে প্রিয়া নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। মুহুর্তের উত্তেজনায় নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছিল। তারপর সেই ক্ষণস্থায়ী উত্তেজনার রেশ ধীরে ধীরে কেটে যাওয়াতে ওর শরীরটা স্থির হয়ে আসছিল। নিজের শরীরের উপর কাবু পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টার মাঝেই নিজের যৌনাঙ্গে পার্থর গরম জিভের ভেজা অনুভূতি টের পেতেই আবার অস্থির হয়ে উঠতে লাগল শরীরটা। পার্থর গরম শ্বাস ওকে যেন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিচ্ছে। তবু এই অস্থিরতার মাঝে ওর মনে হল এই অস্থিরতাতেই যেন ওর শরীর পূর্ণতা পাচ্ছে। আজকের রাত পরিবর্তনের রাত। এই পরিবর্তন কেবল শরীরেরই নয়, মনেরও। এই পরিবর্তন ক্ষণস্থায়ী নয়, চিরস্থায়ী। আজকের রাতের পর সে আর কুমারী কন্যা থাকবে না। সে হয়ে উঠবে পরিপূর্ণ এক নারী। সে হয়ে উঠবে এক স্ত্রী। তার নতুন পরিচয়ে পরিচিত হবে সে। তার মন চাইল সেই পরিপূর্ণতার স্বাদ পেতে। তার স্বামী পার্থ তাকে দেবে নারীত্বের নতুন আস্বাদ। পার্থ নিজের ঠোঁট ছোঁয়াল স্ত্রীর যৌনাঙ্গে। কিছুটা উত্তপ্ত গরম ঘন রস ভিজিয়ে তুলছে তার ঠোঁট। গরম নোনতা স্বাদে জিভ বিদ্রোহ করলেও মন একেবারেই তা চাইছে না। তাই শত অসুবিধা সত্ত্বেও ও নিজের জিভ ঠেকাল গরম পিচ্ছিল ঐ জায়গাটায়। তারপর ধীরে ধীরে জিভটা ঠেলে ঢোকাতে লাগল কৃষ্ণগহ্বরের অন্ধকার গুহায়। চারপাশের চাপ চাপ মাংসপেশীগুলো ওর জিভটাকে ভিতরে ঢুকছে। কিন্তু ওর জিভ সেই সব বাধা ঠেলে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। বড়ই পিচ্ছিল সেই পথ। সেই সাথে বন্ধুরও বটে। প্রতি মহুর্তেই অজানা কিছুর আশঙ্কা থেকেই থাকে। পার্থর মনে হল ও কোনো জ্বলন্ত উনুনের মধ্যে নিজের জিভটা ঢুকিয়ে দিয়েছে। তেতে পুড়ে যাচ্ছে ওর জিভটা। তবুও ও নিজের কাজ জারি রাখল। জিভটাকে টেনে বের করে আনল সেই উত্তপ্ত কৃষ্ণগহ্বর থেকে। তারপর ক্ষণেক থেমে আবার জিভটাকে ঢুকিয়ে দিল ভিতরে। এবার আরো একটু বেশী ভিতরে। এইভাবে একটু একটু করে ও নিজের জিভটা একসময় গোটাটাই ঢুকিয়ে দিল ভিতরে। তারপর আলতো করে চুষতে শুরু করল। একটু একটু করে জলস্রোত বাড়ছে। বাড়ছে প্রিয়ার শরীরের অস্থিরতাও। শরীরটা ক্রমাগত মোচড় খাচ্ছে। কোমরটা বারবার বিছানা থেকে উপরে উঠে যাচ্ছে, আবার পরক্ষণেই বিছানায় পড়ে যাচ্ছে। ও একটা হাত পার্থর মাথায় রাখল। আর পার্থর মাথাটাকে সজোরে টিপে ধরল নিজের যৌনাঙ্গের উপর। আর দ্বিতীয়বারের জন্য নিজের কামরস স্খালন করল পার্থর মুখে। পার্থ স্ত্রীর সেই নোনতা গরম রসের প্রসাদ গ্রহণ করল সাগ্রহে। অসহ্য কামোত্তেজনায় প্রিয়ার তলপেটটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। আর ঘন কামরসের চোরা স্রোত ওর যৌনাঙ্গ থেকে বেরিয়ে এসে পড়ছে পার্থর মুথে। কয়েক মুহুর্ত প্রিয়ার ঐ উত্তেজনা স্থায়ী হল। তারপর ওর শ্রান্ত দেহটা বিছানায় আছড়ে পড়ল। পার্থ ধীরে ধীরে ওর যৌনাঙ্গ থেকে নিজের মুখটা বের করে আনল। তখনও তার মুখে লেগে আছে প্রিয়ার চরম কামোত্তেজনার কিছু অংশ। ও দেখল প্রিয়া চোখ বুজে হাঁফাচ্ছে। পার্থ বুঝতে পারল প্রথমবার এই উত্তেজনার কারণে প্রিয়া ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ওর নিজের শরীরটাও ততক্ষণে জেগে উঠেছে। সেও চাইছে প্রিয়াও স্পর্শ করুক ওর শরীরটাকে। নরম হাতে ঘুম ভাঙাক তার দস্যি যৌনাঙ্গের। সেই ইচ্ছাতেই ও নিজের শরীর থেকে পাজামা আর জাঙ্গিয়াটা খুলে ফেলল। আদিম পুরুষের মত হল নগ্ন। প্রিয়ার সামনে প্রথমবারের জন্য নগ্ন হতে কেমন যেন অদ্ভুত লাগছিল। কিন্তু মনের সমস্ত দ্বিধা দ্বন্দ্বকে পিছনে ফেলে নতুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকতে সে উদ্যত হল।
নগ্নদেহী পুরুষ ধীরে ধীরে বসল নগ্ন নারীর পাশে। ওর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে রাখল নিজের উত্তুঙ্গ পুরুষাকারের উপর। নারীর নরম হাতের স্পর্শে মাথা তুলে দাঁড়াতে লাগল ওর পুরুষাকার। চোখ খুলে আচমকা এবাক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকাল প্রিয়া। জীবনে সে প্রথমবার এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে সে। এর আগে ও কোনোদিন কোনো পুরুষের য়ৌনাঙ্গকে ছুঁয়ে দেখেনি। হাতে নেওয়া তো আনেক দূরের কথা। পার্থ তার প্রেমিক ছিল ঠিক কাথা। কিন্তু বিয়ের আগে ওরা কখনই নিজেদের মধ্যে কোনোরকম শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেনি। এ সম্পর্কে শিথিলতা ছিল দু পক্ষেরই। তাই এক অর্থে দুজনের শরীরই একে অপরের কাছে এতদিন ছিল অচেনা। অনেক কিছুই রয়ে গেছিল অজানায আজকের রাত হল সেইসব কিছু অচেনাকে চেনার রাত। অজানাকে জানার রাত। একে অপরের সমস্ত গোপনীয়তাকে প্রত্যক্ষ করার রাত। আর সেই কাজেই উদ্যত ওরা দুজন। নিজের হাতের তালুবন্দী পার্থর যৌনাঙ্গটাকে অবাক দৃষ্টিতে দেখছিল প্রিয়া। দেখছিল কিভাবে, কোন জাদুবলে একটু একটু করে আকারে ও আকৃতিতে বড় হচ্ছে সেটি। দেখতেই দেখতে আকারে দ্বিগুণ হয়ে একটি আস্ত ময়াল সাপের আকার ধারণ করল সেটা। একহাতে ধরতে অসুবিধা হচ্ছে। বিছানায় উঠে বসে দু হাতে শক্ত করে ধরল প্রিয়া। কিন্তু এরপর কি করতে হবে তা বুঝে উঠতে পারছিল না। পার্থ ওকে ইশারা করল ওর চামড়াটাকে ধরে নিচের দিকে নামাতে। ওর কথামত তেমনটাই করল প্রিয়া। চামড়াটা একটু নামাতেই ফটাস্ করে লালরঙের ডিমের আকারের মুণ্ডিটা খুলে গেল। আর তার উপরের দিকে একটা ছোট্ট ফুটো। আর সেই ফুটো থেকে বেরিয়ে আসা এক বিন্দু জল। পার্থ আঙুলের ডগায় সেই বিন্দুটাকে আলগোছে তুলে নিয়ে গেল প্রিয়ার মুখের কাছে। অনভ্যস্ত প্রিয়ার মন চাইছে না সেটাকে নিজের মুখে নেওয়ার। কিন্তু স্ত্রীর মন থেকে ঘেন্নার ভাবটা সরানোর কারণেই পার্থ কতকটা জোর করেই সেই আঙুলটা ঢুকিয়ে দিল প্রিয়ার মুখে। ঘেন্নার প্রাথমিক ধাক্কাটা বেশ সহজেই কাটিয়ে উঠল প্রিয়া। নিজের মুখে ঢোকানে পার্থর আঙুলটা চাটতে শুরু করল। তারপর দু হাতে পার্থর পুরুষাঙ্গটা ধরে তার চামড়াটা আস্তে আস্তে ওঠাতে আর নামাতে লাগল। ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল ওর হাতের গতি। একটু আগে প্রিয়ার শরীর যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, এখন সেই একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে পার্থ। প্রিয়ার অনভ্যস্ত হাত ঝড় তুলেছে ওর শান্ত শরীরে। আর সেই ঝড় একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ছে ওর গোটা শরীরে। পার্থর মন চাইছে আরো কিছু। আর ওর মনের সুপ্ত ইচ্ছাটা টের পেয়ে প্রিয়া নিজের মুখটা এগিয়ে নিয়ে এল হাতে ধরা পার্থর পুরুষাঙ্গের কাছে। নাকটা আরো কাছে নিয়ে গিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নিল। ভিজে, সোঁদা একটা গন্ধ ঝাপটা মারল নাকে। অনভ্যস্ত মন বারণ করছে ওকে। কিন্তু স্বামীকে নিরাশ ইচ্ছাটাও যেন মরে গেছে অনেক কাজে। এখন ইচ্ছা করছে ওর সবকিছুতেই নিজের নীরব ও সরব ছাপ ফেলে যেতে। তাইতো অনিচ্ছা সত্ত্বেও পার্থকে নিজের যৌনাঙ্গ চাটতে ও চুষতে দিয়েছে। ওর মুখে নিজের তীব্র কামোত্তেজনার ছাপ ফেলেছে ফলস্বরূপ। আর এখন মনের মরা অনিচ্ছাটাকে দূরে সরিয়ে রেখে ও উদ্যত হয়েছে স্বামীকে শরীরী সুখ দিতে। নিজের মনকে এর বেশী চিন্তা করার অবকাশ না দিয়ে, নিজের কাজে মন দিল। পার্থ স্বপ্নেও ভাবেনি প্রিয়া নিজে থেকে এই কাজটা করতে ইচ্ছুক হবে বলে। ও ভেবেছিল প্রিয়াকে বলেকয়ে রাজী করাতে হবে। কিন্তু প্রিয়া নিজে থেকেই কাজটা করতে শুরু করল দেখে ও খুশী হল মনে মনে। প্রিয়া ধীরে ধীরে মাথা নীচু করে নিজের ঠোঁটদুটো রাখল পার্থর পুরুষাঙ্গের মাথায়। তারপর ধীরে ধীরে মাথা আরো নীচু করতে লাগল। ফলস্বরূপ পার্থর উত্তুঙ্গ পুরুষাঙ্গটি একটু একটু করে প্রবেশ করতে লাগল ওর উষ্ণ মুখগহ্বরে। ওর মুখের গরম শ্বাস, ভেজা জিভের স্পর্শ আর নরম ঠোটের আদর - সবকিছু মিলেমিশে পার্থকে নিয়ে যেতে লাগল অন্য একটা জগতে। তীব্র সুখের আবেশে ছটফট করতে লাগল ওর শরীরটা। প্রিয়া মাথা উপর নীচু করে ওকে মুখমৈথুনেক চরম সুখ দিচ্ছে। সাথে সাথে নোনতা জলের চোরাস্রোতটাকেও জিভ দিয়ে চেটে নিচ্ছে। পার্থ দুটো হাত রাখল প্রিয়ার মাথার উপর। তারপর একটু একটু করে চাপ দিতে লাগল। একটু একটু করে সমস্ত পুরুষাঙ্গটাই অদৃশ্য হয়ে গেল প্রিয়ার মুখের অন্তরালে। তারপর মাথার উপর চাপ কমাতেই, প্রিয়া মাথাটা উপরে তুলে আনল। একটু একটু করে প্রিয়ার লালামিশ্রিত পুরুষাঙ্গটি বেরিয়ে এল। এইভাবে বারবার পার্থ নিজের পুরুষাঙ্গটিকে ঢুকিয়ে আর বের করতে লাগল। সাথে সাথে প্রিয়ার মুখ-রমণের নতুন অভিজ্ঞতা পেতে লাগল। এটা ওদের কাছে একটা খেলার মত। নতুন এক প্রকারের খেলা। যে খেলার নেশায় মাতাল ওরা দুজন। অনেকটা সময় ধরে খেলাটা খেলল ওরা দুজন। অবশেষে হার মানল অকপক্ষ। পার্থ আর ধরে রাখতে পারল না নিজেকে। প্রিয়ার মুখ থেকে নিজের পুরুষাঙ্গটিকে বের করে এনে রাখল প্রিয়ার বুকের উপর। ওকে সাহায্য করল প্রিয়া। দুহাতে শক্ত করে নিজের স্তনদ্বয়ের উপর রাখল স্বামীর উত্তুঙ্গ পুরুষাকারকে। কয়েক মুহুর্তের অপেক্ষা। তারপর প্রিয়ার হাতে ধরা অশান্ত ময়াল সাপটি নাচতে নাচতে ওগড়াতে লাগল গরম, ঘন গরল। আর সেই গরম তরলগুলোকে নিজের স্তনের উপর নিতে লাগল প্রিয়া। মিনিট খানেক ধরে নিজের তরল বমি করার পর শান্ত হল পার্থর পুরুষাঙ্গ। ততক্ষণে প্রিয়ার বুক ঢেকে গেছে চ্যাটচ্যাটে তরলে। তবে তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই কারোর। ওরা এখন আসল মুহুর্তের জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছে। বিশেষ করে প্রিয়া। ওর মত প্রতিটা মেয়েই অপেক্ষা করে এই সময়টার জন্য। বিশেষ একটা মুহুর্ত। যখন একজন কুমারী পরিণত হয় একজন নারীতে। তার পবিত্র কুমারীত্ব হয় বিলুপ্ত। একজন নারীর পরিচয়ে, একজন স্ত্রীর পরিচয়ে পরিচিত হতে থাকে সে। আজ, এখন প্রিয়ার জীবনেও সেই সময়টা এসে হাজির হয়েছে। যখন কৌমার্য্যের চৌকাঠ পেরিয়ে, সে পা রাখবে নারীত্বের দুনিয়ায়। মনে মনে নিজেকে সেই সময়টার জন্য তৈরী করল সে। মনের ভয় আর বুকের ধুকপুকুনিটাকে বুকেই আটকে রাখার নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যেতে লাগল ও।প্রিয়ার মুখ দেখে পার্থ বুঝতে পারল ও ভয় পাচ্ছে। ও প্রিয়াকে ধীরে ধীরে বিছানায় শুইয়ে দিল। প্রিয়া ওর চোখের দিকে তাকাল। পার্থ বলল, “ভয় পাচ্ছো?” প্রিয়া কোনো উত্তর দিল না। কেবল ঘাড় নেড়ে সায় দিল। পার্থ মুচকি হেসে বলল, “ভয় পেয়ো না। প্রথমে হয়তো একটু লাগবে, যন্ত্রণা হবে। তারপরে সব ঠিক হয়ে যাবে।” নার্ভাস ভাবে ঘাড় নাড়ল প্রিয়া। পার্থ প্রিয়ার কোমরের তলায় একটা বালিশ রাখল। যাতে ওর কোমর আর তলপেটটা উঁচু হয়ে যায়। তারপর ওর দু পায়ের মাঝখানে উবু হয়ে বসল। আর নিজের পুরুষাঙ্গটাকে আলতো করে ঠেকাল প্রিয়ার যৌনাঙ্গের ঠিক মুথে। প্রিয়ার শরীরটা বার দুয়েক কেঁপে উঠল শুধু। পার্থ ঐ অবস্থাতেই প্রিয়ার শরীরের উপর উঠে এল। তারপর নিজের ঠোঁটদুটো ওর ঠোঁটের উপর রেখে গাঢ় চুম্বন করতে লাগল। প্রিয়া ভয়ে চোখ বুজে ফেলেছিল। কিন্তু পার্থ চুম্বন শুরু করতেই, ও-ও সঙ্গ দিতে শুরু করল। পার্থ প্রিয়ার সাথে চুম্বনরত অবস্থাতেই কোমর দুলিয়ে নিজের পুরুষাঙ্গটিকে ওর যৌনাঙ্গের ভিতরে ঢোকাতে চেষ্টা করল। শুনতে যতটা সহজ, কাজটা পার্থর মত একজন অনভিজ্ঞের পক্ষে আর প্পথমবারের জন্য বেশ কঠিন বৈকি। প্রিয়ার কুমারী যৌনাঙ্গের আঁটো মাংসপেশীগুলো পার্থর পুরুষাঙ্গটিকে ভিতরে ঢুকতে বাধা দিতে লাগল। হাল ছাড়ল না পার্থ। প্রিয়াও ছাড়ল না। তীব্র ব্যথা সত্ত্বেও ওকে ওর কাজ করে যেতে দিল। কয়েকবারের চেষ্টায় পার্থ নিজের পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগটা ঢোকাতে সক্ষম হল। প্রিয়া যন্ত্রণা মাত্রাছাড়া মনে হচ্ছে। পার্থ এবার বলপ্রয়োগ করে পুরুষাঙ্গটিকে ভিতরে ঢোকাতে লাগল। ওর মনে হল কোনো জ্বলন্ত উনুনের মধ্যে নিজের পুরুষাঙ্গটিকে ঢোকাচ্ছে। উল্টো দিকে প্রিয়ার মনে হচ্ছে কোনো ধারালো ছুরি ওর যৌনাঙ্গের নরম মাংসপেশীগুলোকে কেটে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। তীব্র যন্ত্রণায় ওর চোখ দিয়ে জল গড়াতে লাগল। কিন্তু কোনো আওয়াজ করল না। পার্থর পুরুষাঙ্গ ভিতরে ঢুকে কিছুটা গিয়ে আটকে গেল। পার্থ বুঝতে পারল সময় উপস্থিত। প্রিয়াও বুঝতে পারল। ও চোখদুটো বুজে ফেলল। ওর যৌনাঙ্গের ভিতর ঢুকে থাকা পুরুষাঙ্গটা একটু একটু করে বেরিয়ে আসছে। ও অবাক হয়ে গেল এত সহজে পার্থকে হার মানতে দেখে। কিন্তু না পার্থ নিজের পুরুষাঙ্গটাকে অগ্রভাগ পর্যন্ত টেনে বের করে আনল। প্রিয়ার কাঁধদুটো শক্ত করে ধরে বিছানায় শুইয়ে রেখে কোমরের এক ধাক্কায় পুরুষাঙ্গটাকে ভিতরে ঢুকিয়ে দিল। প্রিয়া বুঝতে পারল না কি হল। কেবল অনুভব করল পার্থর পুরুষাঙ্গটা তীরের ফলার মতো কিছু একটা ফাটিয়ে দিয়ে, ওর যৌনাঙ্গের অনেকটা ভিতর পর্যন্ত ঢুকে গেল। সাথে সাথে অসহ্য যন্ত্রণা। “উফ্ মাগো!” এর বেশী কিছু বলতে পারল না ও। কথায় বলে কিছু পেতে গেলে, কিছু দিতে হয়। এই যন্ত্রণার আহুতি দিয়ে প্রিয়া নিজের দেহে নারীত্বকে বরণ করে নিল। পার্থ কয়েক মুহুর্ত সময় নিল। তারপর নিজের পুরুষাঙ্গটাকে টেনে বের করে আনল। সাথে সাথে আবার যন্ত্রণা হতে শুরু করে দিল। প্রিয়া অনুভব করল পার্থ নিজের পুরুষাঙ্গটাকে বের করে নিতেই কিছু ঠাণ্ডা ভিজে ওর যৌনাঙ্গ থেকে বেরিয়ে এল। ও নিচে হাত নিয়ে গিয়ে ভিজে বস্তুটায় হাত ছোঁয়াল। তারপর সেটাকে চোখের কাছে নিয়ে এসে দেখল। আবছা আলোতেও কাঁচা রক্ত চিনতে ভুল করল না ও। বুঝতে পারল ওর সতীচ্ছদটা ছিঁড়ে যাওয়ার কারণেই এই রক্ত। ধীরে ধীরে যন্ত্রণাটাও কমে আসছে আগের থেকে। পার্থ আবার ওর কোমর নাড়াতে শুরু করল। ওর পুরুষাঙ্গটা আস্তে আস্তে আবার ভিতরে ঢুকতে লাগল। প্রিয়ার যৌনাঙ্গটা অসম্ভব টাইট। তাই ভিতরে ঢোকাতে অসুবিধা হচ্ছে। প্রিয়ার কথা চিন্তা করে ধীরে ধীরে রমণ করতে লাগল ও। পার্থ ঠিকই বলেছিল। প্রথমে ব্যথা লাগবে ঠিকই, কিন্তু আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করবে। ঠিক সেটাই হচ্ছে। ওর যৌনাঙ্গ থেকে ক্রমাগত আসা যাওয়া করতে থাকা পুরুষাঙ্গটা ওকে আর ব্যথা নয়, বরং শরীরী সুখ দিচ্ছে। সেই সুখের সাগরে নিজের শরীরটাকে ভাসিয়ে দিল প্রিয়া। ওর শরীরের উপর ক্রমাগত আগু-পিছু করতে থাকা শরীরটার সাথে তাল রেখে ও-ও নিজের কোমরটাকে উপর-নীচ করতে শুরু করল। স্ত্রীর শরীরের স্পন্দন পার্থকে বুঝিয়ে দিল যে, সে-ও এই উত্তেজক খেলায় অংশ নিতে তৈরী। পার্থ নতুন ছন্দে শুরু করল এই খেলা। আগের থেকে অনেক স্বতস্ফূর্ত। অনেক সাবলীল। সঙ্গিনী প্রিয়াও অনেক সাবলীল। দুটো শরীরই একই লয়ে, একই ছন্দে নিজেদের খেলায় মত্ত। নারীর শরীরের উপর আগুপিছু করতে থাকা পুরুষ। আর তার কোমর ধরে তার পুরুষাঙ্গটাকে নিজের শরীরের গভীরে, আরোও গভীরে পৌঁছে দিতে সাগ্রহী নারী। ভারী পুরুষাঙ্গ ভিতরে ঢুকছে সব বাধাকে তুচ্ছ করে। আর নারী শরীরটাকে করে তুলছে পিচ্ছিল। আর সেই পিচ্ছিল পথ বেয়ে আরো দূরে পাড়ি দিচ্ছে পুরুষ। প্রতিটা ধাক্কায় নারী শরীর যেন নাচছে। তার থেকে নাচছে, তার নারী শরীরের প্রতীকি অঙ্গ। তার নরম স্তনযুগল। সেই নাচতে থাকা স্তনযুগলকে সজোরে খামচে ধরে আরো সচল হচ্ছে পুরুষ। গতি এখন মধ্যম। তাতেই নারী শরীর পৌঁছে গেল গন্তব্যে। কোমরটাকে উপরের দিকে উঁচু করে তুলে ধরে সে ছেড়ে দিল, তার মিলনের প্রথম কামরস। পুরুষের পুরুষাঙ্গের গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে সেই রস। ভিজিয়ে তুলছে নারীর ঊরু। আর সেই সাথে বিছানাও। সুখের আবেশে চোখ বুজল নারী। কান্ত শরীরটা নামিয়ে রাখল বিছানাতে। শরীর ক্লান্ত, মন নয়। সে চাইছে আরো আরাম, আরো সুখ। ক্লান্তি নেই পুরুষেরও। পিচ্ছিল যৌনাঙ্গকে উপেক্ষা করে সে লাগাতার ঠেলে দিচ্ছে তার পুরুষাঙ্গটাকে। ক্লান্তি শেষে আবার জাগছে নারী শরীর। পুরুষের কোমর পায়ে করে আঁকড়ে ধরে পুরুষের পুরুষাঙ্গটাকে ঢুকতে দিচ্ছে নিজের ভিতরে। পুরুষের গতি এখন সম্পূর্ণ। দুরন্ত গতিতে সে নিজের পুরুষাঙ্গটাকে ভিতরে ঢোকাচ্ছে, আবার পরক্ষণেই টেনে বের করে আনছে। পিচ্ছিল যৌনাঙ্গে বারংবার পুরুষাঙ্গ যাওয়ার কারণে অন্ধকার ঘরটাতে অদ্ভুত একটা আওয়াজ বের হচ্ছে। “ফচ্...ফচ্...ফচ্...” সম্প্রতি তার সাথে যোগ হয়েছে নারীর তীব্র যৌন শীৎকার। “আআহহহ...ওওওহহ...উউউফফফ....” এই দুই শব্দের মিলিত ককটেলে পরিবেশটা মাদকীয় করে তুলেছে। অবশেষে শেষ হল এই উত্তেজক খেলার। পুরুষ স্তব্ধ করল তার গতি। তারপর নারীর শরীরের গভীরতম প্রান্তে তীব্র বেগে ফেলতে লাগল তার পৌরুষের বীজ। আর নারী প্রথমবারের জন্য সেই বীজকে সযত্নে গ্রহণ করল নিজের মধ্যে। নারী শরীরটা বিছানায় পড়ে গেল। আর রমণক্লান্ত পুরুষশরীরটা এলিয়ে পড়ল নারী উপর। পুরুষ মাথা রাখল নারীর বুকে। নারী সযত্নে আলিঙ্গন করে তাকে টেনে নিল নিজের বুকে। রাত্রি শেষের পথে। নীল আকাশে আবছা রঙের খেলা। একটা আলো আঁধারী ঘর। সেই ঘরে একটা বিছানা। আর সেই বিছানায় পরিপূর্ণ মিলনের পর একে অপরের বাহুবন্দী দুটো শরীর নিশ্চিন্তে নিদ্রামগ্ন। একটা পুরুষ, একটা নারী। একজন স্বামী, অন্যজন স্ত্রী।
বেশ বেলাতেই ঘুম ভাঙল প্রিয়ার। গোটা শরীরটা ব্যথায় ভর্তি। বিশেষ করে তলপেটের নীচে থেকে। খোলা জানালা দিয়ে একগোছা নরম আলো ঘরে ঢুকে মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেকটাই বেলা হয়ে গেছে। দেওয়াল ঘড়ির দিকে চোখ পড়তে দেখল ঘন্টার কাঁটা নটার ঘরে ধাক্কা মারছে। যদিও পার্থর আজ অফিস নেই, তবুও আর শুয়ে থাকা যায়না। ব্যথায় মোড়া শরীরটাকে বিছানা থেকে তুলতে যেতেই বাধা পেল। পার্থর একটা হাত ওর শরীরের উপর রাখা। ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুমন্ত স্বামীর দিকে চেয়ে মুচকি হাসল প্রিয়া। তারপর নিজের শরীর থেকে ওর হাত সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে এল। মেঝে থেকে নিজের শাড়ি-ব্লাউজ ইত্যাদিগুলো তুলে নিয়ে পরে ফেলল। তারপর পার্থর কপালে একটা আলতো করে চুমু দিয়ে বাথরুমের দিকে চলে গেল। বাথরুমের দেওয়ালে লাগানো ছোট্ট আয়নাতে নিজের প্রতিচ্ছবির সামনে দাঁড়াল প্রিয়া। কপালের সিঁদুরের টিপটা ধেবড়ে ঘেঁটে গিয়েছে। সেটা দেখেই গতরাত্রের সবকথা মনে পড়ে গেল। কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে নিজের মনে। পরক্ষণেই মনে হল এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে। পার্থ এখন আর তার প্রেমিক নয়, তার স্বামী। আর সে তার প্রেমিকা নয়, তার স্ত্রী। আর গতকাল রাত্রে ওর আর পার্থ মধ্যে যা কিছু হয়েছে, সবই আর পাঁচটা স্বামী-স্ত্রীর মতোই স্বাভাবিক, জৈবিক ঘটনা। এতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। তারপর এই সব কথা ভুলে শাওয়ার চালিয়ে স্নান করতে লাগল প্রিয়া।
স্নান সেরে ভিজে কাপড়টা গায়ে জড়িয়ে শোওয়ার ঘরে এল ও। চেয়ে দেখল পার্থ এখনও অগাধে ঘুমাচ্ছে। ঘরের জানালাগুলোর পর্দা টেনে দিয়ে ও নতুন শাড়ি পরল। কিছুক্ষণ পর ঘুম ভাঙল পার্থ। পাশে হাত বাড়িয়ে দেখল প্রিয়া নেই। বিছানায় উঠে বসে দেখল ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে বসে প্রিয়া চুল আঁচড়াচ্ছে। সদ্য স্নান করে এসেছে ও। বিছানা থেকে নেমে মেঝে থেকে পাজামাটা তুলে পড়ল ও। ওকে উঠতে দেখে প্রিয়া মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করল, “ঘুম হল?” পার্থ ছোট্ট একটা আলমোড়া ভেঙে বলল, “হুম্। তোমার তো স্নান হয়ে গেছে দেখছি।” “এইমাত্র করে এলাম। তুমি যাও, ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি জলখাবার করছি।” কোনো উত্তর না দিয়ে প্রিয়ার পিছনে এসে দাঁড়াল পার্থ। আয়নায় প্রিয়ার প্রতিচ্ছবির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ও। প্রিয়া বলল, “কি দেখছো?” পার্থ উত্তর দিল, “তোমাকে। এই নতুন রূপে তোমাকে খুব ভালো দেখাচ্ছে।” প্রিয়া মুচকি হেসে বলল, “সকাল থেকেই ফ্লাটিং শুরু করে দিলে বউয়ের সাথে?” পার্থও মুচকি হেসে জবাব দিল, “একে ফ্লাটিং বলে না, সুন্দরী। গোদা বাংলায় একে বলে ভালোবাসা। বুঝলে? নির্ভেজাল ভালোবাসা।” প্রিয়া বলল, “বাব্বা, সকাল থেকেই একদম কবিদের মত কথা বলছ দেখছি।”
“বিয়ের পর সব ছেলেরাই একটু আধটু কবি হয়। আর মেয়েরা কি হয় জানো?”
“কি?”
“একেকটা পাকা গিন্নী। ঠিক তোমার মত।”
ওর রসিকতায় দুজনেই হাসতে লাগল। পার্থ শরীরটা ভাঁজ করে মাথাটা এগিয়ে নিয়ে গেল বসে থাকা প্রিয়ার কাঁধের কাছে। সদ্যস্নাত প্রিয়ার শরীর থেকে সাবান আর পারফিউমের মিলিত একটা স্নিগ্ধ একটা গন্ধ আসছে। ওর ফর্সা চওড়া পিঠ আর কাঁধে লেগে থাকা ইতিউতি জলবিন্দু। ঘাড়ের উপর ভিজে চুলের আলগা খোঁপা। কপালে পরা সিঁদুরের টিপ, আর সিঁথির গাঢ় সিঁদুরের দাগ। সবমিলিয়ে পরিপূর্ণ এক নারী। সম্পূর্ণা এক স্ত্রী। এক প্রেমিকা। এক বন্ধু। এক সাথী। একজন নারী। অনেকগুলো পরিচয়। পার্থর ঘোর কাটল প্রিয়ার কথায়। “তোমার সাথে কাব্য করলে বেলা বয়ে যাবে। আমি চললাম রান্নাঘরে। তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাব্য করো।” টুল থেকে উঠে পড়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে লাগল প্রিয়া। তখনই ওর চোখ পড়ল বিছানার উপর। চাদরটা কুঁচকে একশা হয়ে আছে। তার চেয়েও বড় কথা মাঝখানে কিছুটা অংশ জুড়ে রক্তের কালো ছাপ। তার কৌমার্য্য ভঙ্গের প্রমাণ। তার কুমারী থেকে নারী হওয়ার প্রমাণ। প্রিয়া চাইল না জিনিসটা পার্থর চোখে পড়ুক। তাই ওর নজর এড়িয়ে বিছানার চাদরটা নিয়ে চলে গেল। ব্যাপারটা পার্থ ঠিক লক্ষ্য করল। মনে মনে হাসল ও। প্রিয়া একবিংশ শতাব্দীর মেয়ে হয়েও, তার ধ্যানধারণা এখনও সেই পুরানো যুগের। তাই ও ওকে লুকিয়ে চাদরটা নিয়ে চলে গেল। ও চাইলে এ বিষয়ে প্রিয়ার সাথে কথা বলতে পারে। কিন্তু পার্থ ওর মনের সংস্কার, চিন্তা-ভাবনা, ইচ্ছা কোনোটাকেই জোর করে বদলাবে না। ওর প্রিয়া যেমন, ওকে ও ঠিক তেমনভাবেই আপন করে নেবে। মনে মনে মুচকি হেসে তোয়ালেটা নিয়ে বাথরুমের দিকে পা বাড়াল পার্থ।একটা গোটা ঘটনাবহুল দিনের শেষে নীলকণ্ঠবাবু নিজের চেম্বারে এসে বসলেন। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এটাই তাঁর ব্যস্ততম দিন। আজ অনেক দিন পর কালো কোট গায়ে দিয়ে কোর্টরুমে ধর্মাবতারের সামনে দাঁড়ালেন উনি। নিজের করা প্রতিজ্ঞাটা ভেঙ্গে দিয়ে আবার নিজের মক্কেলের হয়ে সওয়াল করলেন। তাকে নির্দোশ প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন। এতদিন পর আবার তাঁকে সওয়াল করতে দেখে কোর্টরুমে ছোটখাটো ভীড় জমে গিয়েছিল বলা যেতে পারে। কারণ এটা সবাই বিশ্বাস করে উঠতে পারছিল না যে, অ্যাডভোকেট নীলকণ্ঠ বাগচী আবার কোর্টে ফিরে এসেছে। সেই পুরানো নীলকণ্ঠ বাগচী, যার সওয়ালের কাছে হার মেনেছে কত বিপক্ষের উকিল। কত যে প্রায় হেরে যাওয়া কেস কেবল নিজের সওয়াল আর প্রমাণের ভিত্তিতে জিতেছেন তার শেষ নেই। একটা সময় লোকে ভাবত, কেস জিততে গেলে নীলকণ্ঠ উকিলকে ধরো, চোখ বুজে কেস জিতে যাবে। কিন্তু উনি সব কেস নিজের হাতে নিতেন না। ওনার মতে উনি এমন কেস নিতেন যার মধ্যে সত্যতা আছে। উনি কোনোদিন এমন কোনো ব্যক্তির হয়ে কেস লড়েন নি, যে সত্যি করেই কোনো অপরাধ করেছে। উনি কোনোদিন কোনো অপরাধীর হয়ে কেস লড়েন নি। তারপর হঠাৎ করেই সবাই জানতে পারল নীলকণ্ঠ উকিল আর কারো কেস লড়বে না। সে ওকালতি ছেড়ে দিয়েছে। কেন ছেড়েছে তা নিয়েও এক একজনের এক একরকম মত। তবে তার মধ্যে কোনটা সত্যি তা কেউ জানে না। তার কারণ উনি কেন ওকালতি ছেড়েছেন, তা কাউকেই বলেন নি।
মাথাটা প্রচণ্ড ধরে আছে। কাল সারারাত ঘুমান নি। এখন একবার কফি খেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু কফি খেলে ঘুমের রেশটা কেটে যাবে। তা সত্ত্বেও কিচেনে গিয়ে নিজের পছন্দের ব্ল্যাক কফি বানিয়ে নিয়ে এসে আবার চেম্বারে বসলেন। চেয়ারে পিঠটা ঠেকিয়ে কফির কাপে আলতো করে চুমুক দিলেন। তারপর এক এক করে সারাদিনের ঘটনাগুলোকে মনের মধ্যে সাজিয়ে নিতে লাগলেন। গতকাল রাতে যখন উনি থানায় যান, তখন প্রায় শেষ রাত্রি। থানার ডিউটি অফিসার দেবার্ঘ্যবাবুর সাথে দেখা করার পর উনি পার্থর সেলে যান। সেখানে ওর কাছে ওর জীবনের কথা শুনছিলেন। ছেলেটার কথা শুনতে শুনতে ওনার বারবার মনে হচ্ছিল, এই ছেলেটা কিভাবে তিন তিনটে লোককে গুলি করে খুন করল? কারণ আর যাই হোক ওর দ্বারা খুন হওয়ার নয়। সাধাসিধা একটা ছেলে। যে তার প্রেমিকা বা স্ত্রীকে অসম্ভব ভালোবাসে। উনি ছেলেটার কাছে জানতে চেয়েছিলেন কেন সে এই খুনগুলো করেছে। এর পিছনে আসল কারণটা কি। ছেলেটা প্রথমে কিছুই বলতে চায়নি ঠিক কথা, কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে সবকথা খুলে বলতে শুরু করে। আসলে সে নিজেও এতদিন কারোর কাছে এইকথাগুলো বলতে চাইছিল। কিন্তু কোনো কারণে বলতে পারেনি। তাই আজ ওনাকেই সবকথা খুলে বলছিল। তবে ও যেসব কথাগুলো বলছিল, তার মধ্যে বেশীরভাগই এই কেসের পক্ষে অপ্রয়োজনীয়। তবুও তাকে না থামিয়ে উনি ওর কথা শুনে যাচ্ছিলেন। আর লক্ষ্য করছিলেন ওর চোখদুটো। নিজের স্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে যেগুলো অসম্ভব তীব্রতায় জ্বলজ্বল করছিল। ও শোনাচ্ছিল ওর প্রেমের কথা, ওদের বিয়ের কথা, ওদের নতুন সংসারের কথা। সেইসবকথা শুনেও উনি এটা বুঝতে পারলেন না কেন ও খুনগুলো করেছে। তার থেকেও বড় কথা রোহন আগরওয়ালের সঙ্গে এই কেসের সম্পর্কটাই বা কি। আবার দেবার্ঘ্যবাবুর কথা ওনাকে আরো ধন্ধে ফেলে দিয়েছে। উনি বলেছেন পার্থর ফ্ল্যাট থেকে বেশকিছু সেক্স টয় পাওয়া গেছে। সেগুলো কিসে লাগত? সেগুলো কার? এই কেসের সঙ্গে সেগুলোর কিছু সম্পর্ক আছে? নাকি নেহাতই কাকতালীয়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ওনাকে জানতেই হবে। ওনার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, এই খুনের কারণ অতি গুরুতর। তা নাহলে পার্থর মত একটা ছেলে কোনোমতেই একসঙ্গে তিনজনকে খুন করতে পারেনা। সেই কারণটাই উনি জানতে পারছেন না। অথচ সেটাই এখন ওনাকে জানতে হবে। আজকের পর আবার পনেরোদিন পর হিয়ারিং। সেদিন কোনো সলিড লিড না দিলে কেসটা একপ্রকার শেষ হয়ে যাবে। সেইসাথে শেষ হয়ে যাবে দুটো জীবনও। যেটা উনি কোনোমতেই হতে দিতে চাননা। পার্থর সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে রাত্রি শেষ হয়ে সকাল হয়ে গিয়েছে, সেটা উনি জানতেই পারেন নি। উনি আরো কিছু কথা জানতে চাইছিলেন। কিন্তু সে সুযোগ উনি পেলেন না। ওনাদের কথার মাঝেই একজন এসে দাঁড়ালেন।
নীলকণ্ঠবাবু একমনে পার্থর কথা শুনছেন। এমন সময় কারোর পায়ের আওয়াজ শুনতে পাওয়া গেল। কেউ একজন সেলের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। নীলকণ্ঠবাবু মুখ তুলে সেদিকে তাকালেন। দেখলেন একজন পুলিশ অফিসার সেলের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। তার লক্ষ্যবস্তু যে তিনিই সেটা উনি ভালোমত বুঝতে পারলেন। এর সঙ্গে এটাও বুঝতে পারলেন যে, অফিসারটি ওনাকে এখানে দেখে মোটেও খুশী হয়নি। সেটা তার মুখের হাবভাব থেকেই স্পষ্ট। নীলকণ্ঠবাবু পুলিশ অফিসারটিকে দেকে কৌতুহলবশত উঠে দাঁড়ালেন। অফিসারটি ওনাকে বলল, “উকিলবাবু, আপনার সওয়াল-জবাব আশা করি শেষ হয়েছে। তাহলে কি আপনি এখন একবার আমার সঙ্গে আসতে পারবেন?” ওর কথা শুনে নীলকণ্ঠবাবু মৃদু হেসে বললেন, “আপনার জানা এত সহজে শেষ হয়না। তবে আপনি যখন বলছেন, তখন অবশ্যই আপনার সঙ্গে যাবো। কারণ আপনার কাছেও আমার অনেক কিছু জানার আছে।” ওনার কথা শুনে অফিসারটি যেন একটু এবাক হয়ে গেল। “আমার কাছে আপনার কিছু জানার আছে? কিন্তু কি?” নীলকণ্ঠবাবু আগের মতই স্মিতহাস্যে জবাব দিলেন, “বলব। তবে এখানে নয়। আপনার চেম্বারে গিয়ে। তবে তার আগে...” বলে পিছন ফিরে পার্থকে আশ্বাসের সুরে বললেন, “তুমি চিন্তা কোরোনা। আমি কোর্টে থাকবো। আর ভয় পাবে না।” বলে উনি সেল থেকে বেরিয়ে এলেন। উনি বেরিয়ে আসতেই একজন কনস্টেবল সেলে চাবি লাগিয়ে দিল। নীলকণ্ঠবাবু আরেকবার চোখের ইশারায় পার্থকে আশ্বাস দিয়ে অফিসারটির পিছন পিছন তার চেম্বারে চলে গেলেন। চেম্বারে নিজের চেয়ারে বসতে বসতে অফিসারটি বলল, “আপনি ওকে বৃথাই আশ্বাস দিচ্ছেন, নীলকণ্ঠবাবু। ওর পক্ষে এই কেস থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা প্রায় নেই বললেই চলে। বসুন।” শেষ কথাটা সে ওনাকে চেয়ারের দিকে ইশারা করে বলল। নীলকণ্ঠবাবু “ধন্যবাদ,” বলে চেয়ারে বসে বললেন, “সেটা আমার উপর আপনি অনায়াসে ছেড়ে দিতে পারেন। বাই দ্য ওয়ে, আপনি আমার নাম জানেন। তার মানে আমার সম্পর্কে আপনি সব জানেন।”
“জানতে হয়, উকিলবাবু। তা, আপনি তো বেশ কয়েকবছর এসব ঝঞ্ঝাট ছেড়েছুড়ে একপ্রকার সন্ন্যাস নিয়ে নিয়েছিলেন। তা হলে আবার কামব্যাক করলেন কেন? আর যাও বা করলেন, তাও আবার এইরকম কেসের জন্য, যাতে আপনার হার একশো শতাংশ নিশ্চিত?”
“আমি কোনো কেসই জেতার নিতাম না। আর আজও নিইনি। আমি কেস নিই সত্যাসত্য নির্বাচন করে। হ্যাঁ, এটা মানছি যে, খুন তিনটে পার্থই করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন। কারণটা কি?”
“আরে, চুলোয় যাক কারণ! কারণ যাই হোক। পার্থ খুনী, এটাই শেষ কথা।”
“উঁহু। শেষ নয়, বরং শুরু বলতে পারেন। আর কোর্টে আমি সেই কারণটাকেই তুলে ধরব। তাতে হয়তো পার্থর অপরাধ কম হবেনা, কিন্তু আসল সত্যিটা সবার সামনে আসবে। আর সবাই সেটা জানতে পারবে।”
“সবাই সত্যিটা জানতে পারবে কিনা জানিনা। কিন্তু একটা কথা জানি। আপনি রাজেশ আগরওয়ালকে চেনেন না। তার সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই আপনার। সে কে, আর কি করতে পারে।”
“একটা জিনিস দেখে খুব অবাক লাগছে জানেন?”
“কি?”
“এটাই যে রাজেশ আগরওয়ালের মতো আপনিও সত্যিটা জানতে চাননা। আপনি না চাইলেও, আমি চাই। আর যে কোনো প্রকারে আমি সেটা খুঁজে বের করবোই। And believe me, I don’t tell lie.”
“Best of luck.” একদৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে বলল অফিসারটি।
“Thank you. এখন আমি উঠি। তাড়া আছে। কেসের তোড়জোড় করতে হবে। পয়েন্টস্ নিতে হবে। অনেক কাজ। আবার পরে কথা হবে।” বলে নীলকণ্ঠবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন। তার দরজার দিকে কিছুটা গিয়ে আবার ফিরে এলেন। তারপর অফিসারটির চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমি রাজেশ আগরওয়ালকে চিনি কিনা সেটা বড় কথা নয়। কথা হচ্ছে, ও আমাকে চেনে। আর ভালোভাবেই চেনে। ফুরসত পেলে জিজ্ঞাসা করে নেবেন।” বলে উনি অফিসাররের চেম্বার থেকে বেরিয়ে এলেন। আসার সময় ওনার কানে এল অফিসারটির গলা, “দেবার্ঘ্য, আমার পারমিশন ছাড়া ফারদার কেউ যেন পার্থ সাহার সাথে দেখা করতে বা কথা বলতে না পারে।”
কাজটা যে সত্যি করেই খুব টাফ, সেটা প্রথম থেকেই জানেন নীলকণ্ঠবাবু। পুলিশের সাহায্যও যে তিনি পাবেন না, সেটাও ওনার ভালোমতই জানা। তবে দেবার্ঘ্য বলে অফিসারটি বেশ কাজের মনে হল। একমাত্র সে-ই ওনাকে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু ওপরওয়ালাকে না জানিয়ে, সে কতটা কি করতে পারবে সেটাই চিন্তার বিষয়। এই কেসের সবচেয়ে বড় পয়েন্ট হচ্ছে খুনের মোটিভ। পার্থর কথা অনুযায়ী সেটা হল প্রায়শ্চিত্ত। যেখানে প্রায়শ্চিত্ত থাকবে, সেখানে পাপ থাকবে। আর পাপের পাশাপাশি পাপীও অবশ্যসম্ভাবী। এখানে সেই পাপীটা কে? পার্থ? নাকি অন্য কেউ? সেই অন্য কেউটা কি রোহন? পাপী যেই হোক, পাপটা কি? এই পাপটা সম্পর্কে জানতে হবে। পাপটাকে যদি খুঁজে বের করা যায়, তাহলে পাপীকেও খুঁজে বের করা যাবে। আর পাপটাকে জানতে গেলে একবার ঘটনাস্থলে যাওয়াটা খুব জরুরী। আর তার ব্যবস্থা একজনই করতে পারে। সে হল... নীলকণ্ঠবাবুর চিন্তার জালটাকে ছিঁড়ে দিয়ে, ওনার চেম্বারের দরজার সামনে একটি ছায়ামূর্তি এসে দাঁড়াল। সে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরে ঢুকছে না। সেইদিকে নজর যেতে নীলকণ্ঠবাবু খানিকটা উচ্চস্বরে বললেন, “ভিতরে এসো।” ওনার কথা শুনে খানিকটা ইতস্তত করে ছায়ামূর্তিটা চেম্বারে ঢুকল। তার দিকে চেয়ে উনি বললেন, “বোসো। কি ব্যাপার, ঘুম আসছে না?” চেয়ারে বসে প্রিয়া নীচুস্বরে বলল, “না।” প্রিয়াকে উনি নিজের বাড়িতেই এনে রেখেছেন। ওনার মনে হয়েছে, ওনার বাড়িটাই আপাতত প্রিয়ার পক্ষে নিরাপদ জায়গা। তাই আজকের হিয়ারিং-র পর উনি এ বিষয়ে বন্ধু অবিনাশের সঙ্গে কথা বলেন। অবিনাশবাবু আর প্রিয়ার বাবা রাজী হয়ে যান। প্রিয়াও মানা করেনি। সন্ধ্যার পর প্রিয়াকে অবিনাশবাবু পৌঁছে দিয়ে গেছেন। প্রিয়ার উত্তরে উনি বললেন, “নতুন জায়গায় প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হয়। তুমি ঘুমের চেষ্টা করো। কাল থেকে অনেক স্ট্রেশ যাচ্ছে। ঘুমালে শরীরটা হাল্কা হবে।”
“আমার ঘুম আসছে না। একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞাসা করব ভাবছিলাম। ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু একতলায় নেমে এসে দেখি, এঘরে আলো জ্বলছে। আপনি ঘুমান নি? কালকে সারারাত তো জেগেই কাটিয়েছেন।”
“হ্যাঁ, একটু পর ঘুমাতে যাবো। তা তুমি কি জিজ্ঞাসা করবে বলছিলে।”
প্রিয়া সরাসরি নীলকণ্ঠবাবুর চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করল, “এই কেসে পার্থর ছাড়া পাওয়ার কি কোনোও আশা আছে?প্রিয়ার মুখে প্রশ্নটা শুনে কয়েক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলেন নীলকণ্ঠবাবু। কারণ উনি ওর মুখ থেকে সরাসরি এই প্রশ্নটা শুনবেন, তা আশা করেননি। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি বেশ খানিকটা ইতস্তত বোধ করলেন। নিজের প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে প্রিয়া বলল, “আপনি চুপ করে থাকবেন না, নীলকণ্ঠবাবু। সত্যিটা আমার জানা প্রয়োজন। আপনি যেটা সত্যি, সেটাই বলুন।” প্রিয়ার কথা শুনে নীলকণ্ঠবাবু গলাটা খাঁকড়ে নিয়ে বললেন, “দেখো প্রিয়া, সত্যি কথা বলতে কি, কেসটার এই সবে শুরু। সুতরাং এত তাড়তাড়ি কোনো কথা বলাই ঠিক হবে না। কিন্তু এই কেসে অনেক প্রশ্ন আছে। যেগুলোর উত্তর আমার জানা প্রয়োজন। সেই উত্তরগুলো জানা থাকলে আমার সুবিধা হবে, এই কেসে লড়তে।” প্রিয়া ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনার যা প্রশ্ন আছে, আমাকে করুন। সব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।” নীলকণ্ঠবাবু কয়েকমুহর্ত প্রিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর বলতে শুরু করলেন, “বেশ। এই কেসে খুন হয়েছে রোহন আর তার দুই বন্ধু। আর তাদের খুন করেছে তোমার স্বামী, পার্থ। তার মানে তোমরা দুজনেই রোহনকে আগে থেকেই চিনতে। কি তাই তো?”
“হ্যাঁ। আমরা রোহনকে চিনতাম।” নিম্নস্বরে জবাব দিল প্রিয়া।
“খুনের পর পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তখন রোহন এবং তার দুই বন্ধুকে পুরোপুরি ভাবে নগ্ন অবস্থায় পায়। কেন?”
“আপনাকে তো প্রথম দিনেই এর উত্তর দিয়েছিলাম। ওরা তিনজন মিলে আমাকে ধর্ষণ করছিল। তার মাঝেই পার্থ এসে পড়ে। আর ওদেরকে গুলি করে। তাই ওদেরকে নগ্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে।”
“পার্থর কাছে কি সবসময়ই আর্মস থাকে?”
“না। সেইদিনেই ওর কাছে প্রথমবার বন্দুক দেখতে পাই।”
“তার মানে রোহনকে খুন করার উদ্দেশ্যেই পার্থ ঐ আর্মসটা জোগাড় করে এনেছিল।”
“হতে পারে।”
“তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পার্থ জানল কি করে যে, ওরা তোমাকে ধর্ষণ করছে। আর যদি জেনেই থাকে তাহলে ও এত তাড়তাড়ি আর্মসটা জোগাড় করল কোথা থেকে?”
“আসলে...” কিছু একটা কথা বলতে গিয়ে চুপ করে গেল প্রিয়া। তার মুখে দ্বিধা আর দ্বন্দ্বের ছাপ স্পষ্ট। কোনো কথা বলতে চাইছে, কিন্তু কোনো কারণে বলতে পারছে না। কয়েক মুহুর্ত অপেক্ষা করার পর নীলকণ্ঠবাবু বললেন, “দেখো প্রিয়া, আমি চাই তোমাদের দুজনকে সাহায্য করতে। এবং তার জন্য আমাকে সব কথা জানতেই হবে। তা নাহলে আমার পক্ষে কোর্টে এটা প্রমাণ করা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে যে, কেন আর কোন পরিস্থিতিতে পার্থকে এই অপরাধ করতে হয়েছে। তাই তোমার কাছে আমার অনুরোধ কোনো কথা আর না লুকিয়ে, নিঃসঙ্কোচে সব খুলে বলো। এতে তোমাদেরই লাভ হবে।” কয়েক মুহুর্ত নিজের মনে কিছু ভেবে নিয়ে নীচুস্বরে প্রিয়া বলল, “আসলে এই কথাগুলো আপনাকে কিভাবে বলব সেটাই ভেবে উঠতে পারছি না। আমার আর পার্থর জীবনে গত কয়েকটা মাস কিভাবে গেছে, তা কেবল আমরাই জানি। সেটা আমরা কাউকে বোঝাতেও পারব না। আর কেউ সেটা বুঝতেও পারবে না। ভেবেছিলাম ঐ কয়েকটা মাসে আমাদের দুজনের সঙ্গে যা যা ঘটেছে তা কাউকেই আমরা জানাবো না। কিন্তু বুঝতে পারছি, আজ যদি আমি চুপ করে থাকি, তাহলে সেটা পার্থর প্রতি অন্যায় করা হবে। আজ ও যা কিছু করেছে তা কেবল আমার জন্য। ঐ জানোয়ারটার হাত থেকে আমাকে বাঁচানোর জন্য ও এই কাজটা করেছে। আর আমার চুপ করে থাকাটা কেবল মুর্খামিই হবে। আজ আমি আপনাকে সব কথা খুলে বলতে চাই। আপনি জিজ্ঞাসা করলেন না, যে পার্থ কিভাবে জানল যে, রোহন সেদিন আমাকে ধর্ষণ করছে? কারণ কেবল সেইদিনই নয়, ও প্রতিদিন আমাদের ফ্ল্যাটে আমার সাথে সময় কাটাতো। কখনো একা, কখনও বন্ধুদের সাথে। ও প্রতিদিন আমাকে ভোগ করত। আমাকে ধর্ষণ করত।”
“এসব কতদিন ধরে চলছে?”
“প্রায় মাস ছয়েক আগে থেকে।”
“তাহলে পার্থ এসব ব্যাপার আগে থেকেই জানতো?” ওনার গলায় বিস্ময় ঝরে পড়ল।
“হ্যাঁ।” প্রিয়ার স্বরে লজ্জার আভাস পাওয়া গেল।
“তা সত্ত্বেও ও কোনোও রকম স্টেপ নিল না? ও পুলিশের কাছে যেতে পারত। কোনোরকম লিগ্যাল স্টেপ নিতে পারত। সেসবকিছু না করে ও এইরকম স্টেপ নিতে গেল কেন?” ওনার গলায় আগের থেকে বেশী বিস্ময় ঝরে পড়ল।
“এটা ছাড়া ওর আর কোনো উপায় ছিল না। ওর মনে হয়েছিল আমাকে বাঁচানোর এটাই শেষ রাস্তা। ও যখন আমার চোখের সামনে ঐ তিনজনকে এক এক করে গুলি করে মারল, তখন আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ও এটা করতে গেল কেন। আজ মনে হচ্ছে ও যেটা করেছে ঠিক করেছে। রোহনদের মত মানুষদের সঙ্গে এটাই করা উচিত। আমাদের আরো আগে এটা করা উচিত ছিল।” একটানা কথা বলে চুপ করল প্রিয়া।
“পার্থর ফোন পেয়ে পুলিশ যখন তোমাদের ফ্ল্যাটে যায়, তখন ওখানে কেবল পার্থ ছিল। তুমি ছিলেনা। তুমি ছিলে কোথায়?”
“পুলিশ স্টেশনে ফোন করার পর ও বলে পুলিশ আসতে মিনিট পনেরো লাগবে। তার মধ্যে আমি যেন তৈরী হয়ে নিই। ও একটা ব্যাগে আমার জামাকাপড় আর অন্যান্য জিনিসপত্র ভরে ট্যাক্সি করে আমাকে আমার বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।”
“কেন?”
“যাতে পুলিশ আমার সম্পর্কে কোনোকিছু জানতে না পারে। আমি ওখানেই থাকতে চেয়েছিলাম। ওর কাছে, ওর পাশে থাকতে চেয়েছিনাম। সবকিছু ওর সঙ্গে ফেস করতে চেয়েছিলাম। ও রাজী হয়নি। আমাকে জোর করে ওখান থেকে পাঠিয়ে দিয়েছিল।”
“তোমাদের ফ্ল্যাটে পুলিশ বেশ কিছু সেক্স টয় পেয়েছিল। সেগুলো কার?”
“ওগুলো সব রোহন কিনে এনেছিল।” কিছুটা ইতস্তত করে বলল প্রিয়া।
কয়েক মুহুর্ত চুপ থেকে নীলকণ্ঠবাবু বললেন, “তুমি বললে প্রায় ছয় মাস ধরে রোহন এইসব করছে। কিন্তু তোমাদের সঙ্গে ওর পরিচয় কিভাবে হল? আর এসব শুরু কিভাবে?”
“এসবের শুরু আজ থেকে প্রায় মাস সাতেক আগে। আমাদের বিয়ে হয়েছে তার প্রায় চার মাস আগে। আমরা তখন একটা ছোট্ট ভাড়াবাড়িতে থাকি। ও একটা বেসরকারী কোম্পানীতে চাকরী করে। আর আমি ঘর সামলাই। ওর মাইনে অল্প ছিল। কিন্তু তাতে আমাদের দুজনের ভালোভাবেই চলে যাচ্ছিল। তারপর...”
সারাদিনের শেষে ক্লান্ত একটা বিকেল। কিছুটা একলা। খানিকটা মনমরা। আকাশের বুকে রঙের আঁকিবুকি। পাখিদের ঘরে ফেরার ডাক। হাল্কা বাতাসে শরীরে জেগে ওঠা শিরশিরানি। সবমিলিয়ে একটা দিনের শেষ। আর প্রিয়ার ব্যস্ততার শুরু। কিছুক্ষণ বাদেই পার্থ ফিরবে অফিস থেকে। ওর জন্য জলখাবার তৈরী, রাতের খাবার বানানো – সব বাকী। সকালে ও অফিসে বেরিয়ে গেলে সারাদিন প্রিয়ার অখণ্ড অবসর। সময়ের পায়ে যেন তখন ভারী শিকল। নিজের জায়গা থেকে যেন নড়তেও চায়না। ঘড়ির কাঁটাগুলোও হয়েছে তেমন! একদম অলস! সেই সময় যেন আর কাটতেই চায়না। আর গ্রীষ্মের দুপুর! যেন শেষ হওয়ার নামই নেই। দুপুরবেলা ঘুমানো প্রিয়ার ধাতে নেই। তার বদলে বিছানায় শুয়ে শুয়ে বই পড়ে। আর মাঝে মাঝে আড়চোখে দেওয়াল ঘড়ির দুষ্টু কাঁটাগুলোর দিকে তাকায়। মাঝে মাঝে মনে হয় ওরা যেন ওর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে এভাবে দেরী করছে। সাড়ে তিনটে...চারটে...সাড়ে চারটে...অবশেষে পাঁচটা। যেন একটা যুগের শেষ। পাঁচটা বাজলে, রোদের চোখরাঙানি আগের থেকে একটু কমলে প্রিয়া বিছানা থেকে ওঠে। ছোট্ট আড়মোড়া ভেঙ্গে শরীর থেকে আলস্যটাকে সরায়। তারপর একবার বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। ওদের বাড়ির পাশে খানিকটা জায়গা জুড়ে গাছের সারি। দিনের শেষে এই জায়গাটা পাখিদের কলতানে ভরে ওঠে। দিনের শেষে একটা রাত্রি কাটানোর জন্য নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মরে ওরা। দূরে রাস্তার ধারে তখন এক এক করে জ্বলে উঠছে ল্যাম্প পোস্টগুলো। আর রাস্তায় ব্যস্ত গাড়ির লম্বা লাইন। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ঘরে ফেরার তাড়ায়। পার্থ অফিস থেকে ফেরে ছ’টায়। কোনো কোনোদিন সাড়ে ছ’টা কিম্বা সাতটাও বেজে যায়। যেদিন যেমন কাজের চাপ থাকে। বিয়ের পর থেকে এই যে পার্থর পথ চেয়ে থাকা, ওর জন্য অধীর অপেক্ষা এসবই ওর জীবনে নতুন। বিয়ের আগেও ও পার্থর জন্য অপেক্ষা করত, কিন্তু সেই অপেক্ষাতে এখনকার মত আকুলতার ছোঁয়া থাকত না। ও আগের থেকে পার্থর উপর অনেক বেশী নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তবে এই আকুল অপেক্ষাটাও ওর মনের অনেক কাছাকাছি। ওর ভালো লাগে এইভাবে পার্থর জন্য অপেক্ষা করতে। ওর জন্য পথ চেয়ে থাকতে। দিনের শেষে এটাই ওর ব্যস্ততার চূড়ান্ত সময়। ও বারান্দা থেকে রান্নাঘরে গেল। জলখাবার তৈরী করার মাঝেই দরজার বেলটা জোরে জোরে দু’বার বেজে উঠল। প্রিয়া রান্নাঘর থেকে উঁকি মেরে দেখল ছ’টা বাজতে যাচ্ছে। তারমানে পার্থ আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছে। ও রান্নাঘর থেকে বলল, “যাচ্ছি।” তারপর হাতটা ধুয়ে আঁচলে হাতটা মুছতে মুছতে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। তারমাঝেই আরো দু’বার বেলটা বেজে উঠল। প্রিয়া দরজাটা খুলতে খুলতে বলল, “উফ্, খুলছি! একমুহুর্তও তর সয় না।” দরজাটা খুলতেই পার্থ একপ্রকার লাফিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকল। প্রিয়ার হাতে অফিসের ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে পাখাটা ফুলস্পিডে চালিয়ে চেয়ারে বসল। তারপর প্রিয়াকে বলল, “একগ্লাস জল খাওয়াও তো। ঠাণ্ডা জল। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।” প্রিয়া রান্নাঘর থেকে একগ্লাস জল এনে ওর হাতে দিল। পার্থ একচুমুকে জলটা শেষ করে গ্লাসটা রেখে প্রিয়ার হাতটা ধরে ওর সামনের চেসারে বসাল। তারপর বলল, “বসো। একটা কথা আছে।”
“কি?”
“আজকে অফিসে কানাঘুষো শুনলাম। কয়েকদিনের মধ্যে কিছু এমপ্লয়ির প্রমোশন হবে।”
“তোমারও প্রমোশন হবে!” আনন্দ প্রকাশ করে বলল প্রিয়া।
“ঠিক জানিনা। তবে শুনতে পাচ্ছি আমারও নাম লিস্টে আছে। আর যদি আমার প্রমোশনটা হয়, তবে সেটা তোমার জন্য।”
“আমার জন্য কেন?” প্রিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল।
“বাঃ, তোমার মতো এমন সুন্দরী আর পয়মন্ত বউ কজনের থাকে বলো?”
“থাক। আর এখন ওসব শুরু কোরো না। খাবার ঠা্ণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে এসো।”
“সুন্দরী, তুমি বড়ই নিঠুর!” বউয়ের চিবুক ধরে কাব্যিক ঢঙে কথাটা বলে মুচকি হেসে ঘরের ভিতর চলে গেল পার্থ।
“পাগল একটা!” বলে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল প্রিয়া। ওর মন তখন আসন্ন একটা আনন্দে মশগুল।অন্ধকার রাত্রি। জানালা দিয়ে গলে আসা পূর্ণিমার চাঁদের জ্যোৎস্নার আলো। সেই আলো নিজেদের গায়ে মাখতে থাকা দুটো নগ্ন শরীর। একটা পুরুষ। আর একটা নারী। বিছানায় শোওয়ার পর প্রিয়ার শরীরের গোপনতম স্থানে নিজের উদ্ধত পুরুষাঙ্গকে প্রোথিত করে রমণ করার পর ক্ষান্ত হয়েছে পার্থ। শান্ত করেছে নিজের অশান্ত শরীরটাকে। এখন ওর সুঠাম বুকে মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে আছে নগ্নিকা প্রিয়া। আর তার নগ্ন শরীরে আলপনা এঁকে যাচ্ছে পার্থর খেয়ালী আঙুল। দুজনেই চুপ। পরিবেশটাও কেমন যেন নিঃস্তব্ধ। নিশ্চুপ। সেই নিঃস্তব্ধতাকে ছিন্ন করে প্রথম কথা বলল প্রিয়া, “পার্থ!” পার্থ আনমনা হয়েই উত্তর দিল, “উম্!”
“আমরা কখনও ভেবেছিলাম, যে আমাদেরও বিয়ে হবে, একটা সংসার হবে? এটা কোনো স্বপ্ন নয়তো?”
পার্থ মৃদু হেসে উত্তর দিল, “তোমার কি মনে হয়?”
প্রিয়া বলল, “কি জানি। মাঝেমাঝে যখন একা থাকি, তখন মনে হয় এসব স্বপ্ন। কিন্তু যখন তোমার কাছে থাকি, তোমার পাশে থাকি, যখন তোমার শরীর আমার শরীরটাকে ছুঁয়ে থাকে, তখন মনে হয় এসব সত্যি। বাস্তব।”
“এসব কিছু বাস্তব। সব সত্যি। আমাদের বিয়ে, আমাদের সংসার – সব, সবকিছু সত্যি।”
“আর আমাদের ভালোবাসা?”
“সেটা কি বলার প্রয়োজন রাখে, প্রিয়া? এ জীবনে তোমাকে আমার থেকে বেশী আর কেউ ভালবাসেনি, আর ভবিষ্যতেও কেউ ভালবাসবে না।”
“আচ্ছা, যদি কেউ, মানে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি আমাদের মাঝে চলে আসে তাহলে তুমি কি করবে?”
“আমি আমাদের মাঝখানে কাউকে আসতেই দেবো না।”
“আর আমি যদি তোমার চোখের সামনে অন্য কারোর হাত ধরে চলে যাই, তখন তুমি কি করবে?”
“তোমার উপর আমার বিশ্বাস আছে প্রিয়া। তুমি তা কখনো করবে না। তুমি আর যাই করো না কেন, আমার সাথে বিট্রে করবে না।”
“আমার উপর এত বিশ্বাস তোমার?”
“নিজের উপর তোমার যতটা বিশ্বাস আছে, প্রিয়া, তার থেকে অনেকগুণ বেশী বিশ্বাস আছে।”
“নিজের সুন্দরী বউয়ের উপর এতটাও বিশ্বাস করা ভালো নয় Mr. husband, দিনকাল মোটেও ভালো নয়। আর তাছাড়া শুনেছো তো, ‘দুনিয়া মে লোগোকো ধোকা কভি হো যাতা হ্যায়/আঁখো হি আঁখো মে ইয়ারো কা দিল খো যাতা হ্যায়...’ তাই আপনে সমান্ কা ধ্যায়ান্ খুদ রখা করো, পতিজী। নেহী তো কোঈ দুসরা আ কর মুঝে আপসে ছিন্ কর লে জায়েগা। সমঝে?”
পার্থ বুঝতে পারল প্রিয়া ওর সঙ্গে মজা করছে। ও বলল, “তুমি কি আমাকে এতটাই কাপুরুষ ভাবো যে, কেউ একজন এসে তোমাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবে, আর আমি তোমাকে তার সঙ্গে যেতে দেব? আমি যতক্ষণ বেঁচে আছি। ততক্ষণ আমি তোমাকে কোথাও যেতে দেব না।”
প্রিয়া বুঝতে পারল পার্থ ওর ইয়ার্কি করে বলা কথাটাকে সিরিয়াসলি নিয়েছে। তাই ও প্রসঙ্গ পালটে বলল, “ওসব ছাড়ো। অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। চলো না কোথাও ঘুরে আসি।”
“উঁহু। এখন অফিস থেকে মোটেও ছুটি পাবোনা। প্রচণ্ড কাজের চাপ। পরে না হয় প্ল্যান করা হবে।”
“আচ্ছা, প্রমিস?”
“প্রমিস। এখন চলো ঘুমাতে যাই। অনেক রাত হয়েছে। কাল আবার তাড়াতাড়ি অফিস যেতে হবে।”
প্রিয়াকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিল পার্থ। ঘুমানোর জন্য। নিশ্চিন্তের ঘুম। কিন্তু ওরা দুজনেই জানে না, ওদের নিস্তরঙ্গ জীবনে সবচেয়ে বড় কালবৈশাখী ঝড় উঠতে চলেছে। যে ঝড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাবে ওদের বর্তমান আর সেই সাথে ভবিষ্যতও।
কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় শিল্পপতি রাজেশ আগরওয়ালের ঘরে আজ সাজো সাজো রব। আজ প্রায় পনেরো বছর পর ওনার ছেলে রোহন আমেরিকা থেকে ফিরছে। এই একটিই মাত্র সন্তান ওনার। আজ ওনার ছেলে ত্রিশ বছরে পা দিচ্ছে। রোহনের যখন মাত্র বারো বছর বয়স তখন ওনার স্ত্রী কবিতা দেবী অর্থাৎ রোহনের মা মারা যান। তারপর উনি আর বিয়ে করেন নি। ছেলেকে নিজের চেষ্টায় বড় করে তুলছিলেন। কিন্তু নিজের ব্যবসার পাশাপাশি তিনি সেই সময় রাজনীতির অজানা আঙিনায় পা ফেলার ব্যবস্থা করছিলেন। তাই ছেলেকে যতটা সময় দেওয়ার কথা, ততটা দিতে পারছিলেন না উনি। তাই অনেক ভেবে ছেলেকে আমেরিকায় এক আত্মীয়ের কাছে পাঠিয়ে দেবেন ঠিক করলেন। অবুঝ রোহন বাবাকে ছেড়ে এক অচেনা পরিবেশে একদমই যেতে চায়নি। ও বারবার বলেছে, “না ড্যাডি, আমি তোমাকে ছেড়ে আমেরিকা যেতে চাইনা।” আর ততবারই উনি ছেলেকে বুঝিয়েছেন, “বেটা, আমি যা করছি, তোমার ভালোর জন্যই করছি। এখানে আমি তোমাকে ঠিকমতো সময় দিতে পারছি না। সারাদিন তুমি বাড়িতে একলা থাকো। আর ওখানে তোমার মাসি আছে, তার ছেলেমেয়েরা আছে। তারা তোমার বন্ধু হবে। ওরা ছাড়াও আরোও নতুন নতুন কত বন্ধু হবে। তখন তোমার ড্যাডিকেই হয়তো মনে পড়বে না।” এইভাবে অনেক বোঝানোর পর উনি নিজের ছেলেকে রাজী করাতে পারেন। উনি যখন রোহনকে আমেরিকা পাঠান তখন ওর পনেরো বছর বয়স। ছেলে চলে যাওয়ার পর থেকে রাজেশ আগরওয়াল অনেক একা হয়ে পড়েন। কিন্তু কোনোকিছুতেই ভেঙে পড়া তাঁর ধাতে নেই। তিনি নিজের সমস্ত সময় উজার করে দিলেন নিজের ব্যবসা আর রাজনীতিতে। বর্তমানে তাঁর কোম্পানী Tech-India Pvt. Ltd. এখন পশ্চিমবঙ্গের সফলতম কোম্পানী বলা যেতে পারে। আর রাজনীতিতে তার উন্নতি? টাচ উড! রাজনীতিতে তাঁর উন্নতি সিনেমা-উপন্যাসকেও ঘোল খাইয়ে ছেড়ে দেবে। পার্টির সাধারণ একজন নেতা থেকে শুরু করে প্রথমে এম.এল.এ। এবং এরপরে রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রীত্বপ্রাপ্তি – সবেতেই তাঁর ক্ষুরধার মস্তিষ্ক আর সেই সাথে লোকবলের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবে নিন্দুকেরা বলে এসবই নাকি বাঁকা পথে প্রাপ্তি তাঁর। আজকের এই জায়গায় আসার জন্য তিনি যে কত মানুয়ের প্রাণ নিয়েছেন, তার কোনো হিসাব নেই। কিন্তু এসব কথা কেউই খুব বেশীদিন বলতে পারেনা। তার একটাই কারণ, এসব কথা যে বা যারা বলে তাদের শেষ ঠিকানা হয় হাসপাতালের মর্গের ঠাণ্ডাঘরে। সে যাই হোক। আপাতত পনেরো বছর পর তাঁর ছেলে রোহন পাকাপাকি ভাবে এখানে ফিরছে। তাই কদিন ধরেই ওনার মনটা খুব খুশী। উনি চাইছেন খুব শীঘ্র কোম্পানীর সমস্ত দায়িত্ব ছেলের হাতে তুলে দেবেন। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ওনার সব কথা পাকা হয়ে গেছে। রোহন দেশেতে ফিরলেই পার্টির একজন যুবনেতা হিসাবে তাকে যোগদান করাবেন। এতে মুখ্যমন্ত্রীরও পূর্ণ সায় আছে। তবে সেটা কতটা স্বতঃস্ফূর্ত, সেটা বিচার্য বিষয়। তবে এটা ঠিক যে রোহনের এদেশে পা রাখার আগেই রাজেশবাবু তার ভবিষ্যতের সমস্ত পরিকল্পনা সেরে রেখেছেন।
দেখতে দেখতে সেই দিনটা এসে গেল। সকালবেলা রাজেশবাবু বাড়ির ডাইনিংরুমে বসে ব্রেকফাস্ট করছেন, এমন সময় ওনার পি.এ. সুরেশবাবু ঘরে ঢুকলেন। রাজেশবাবু একমনে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। সুরেশবাবু ঘরে ঢোকাতে উনি কাগজ থেকে মুখ তুলে ওনার দিকে তাকালেন। তারপর টোস্টে একটা কামড় বসিয়ে চিবোতে চিবোতে বললেন, “বোসো।” সুরেশবাবু ওনার সামনে একটি চেয়ারে বসলেন। রাজেশবাবু বললেন, “বলো, আজকের শিডিউল কি কি?” সুরেশবাবু তাঁর সঙ্গে রাখা ডায়েরীটা খুলে বললেন, “আজ সকাল এগারোটা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা মন্ত্রীসভার জরুরী মিটিং আছে। আর বিকেল চারটেয় আমাদের কোম্পানীর যে জাপানী ক্লায়েন্টরা কলকাতায় এসেছে, তাদের নিয়ে সাইটে যেতে হবে।” রাজেশবাবু হাত থেকে কাগজটা ভাঁজ করে নামিয়ে রেখে বললেন, “ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছো। কালোকে ডাকো।” সুরেশবাবু ঘাড় নেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। কালো হল রাজেশবাবুর সবথেকে কাছের এবং খুবই বিশ্বস্ত লোক। আসলে কালো হল ওনার বডিগার্ড। কিন্তু লোকে বলে রাজেশবাবু সমস্ত অবৈধ কাজ নিজের হাতে না করে কালোকে দিয়েই করান। কিছুক্ষণের মধ্যেই সুরেশবাবু দশাসই চেহারার কালোকে সঙ্গে করে ঘরে ঢুকলেন। সুরেশবাবু নিজের জায়গায় এসে বসলেও কালো দাঁড়িয়েই রইল। কালো রাজেশবাবুকে একইসাথে ভয়ও পায়, আবার শ্রদ্ধাও করে। ওনার সামনে ও চেয়ারে কখনও বসে না। কালোকে দেখে রাজেশবাবু বললেন, “কালো, আজ বিকালে জাপানী ক্লায়েন্টদের নিয়ে আমার জমি দেখতে যাওয়ার কথা আছে। তা ওদিকে সব ঠিক আছে তো?” কালো বলল, “হ্যাঁ, স্যার। আপনি যেমন বলেছিলেন। আমি সেই রকমই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কালরাতেই সমস্ত ঝোপড়ি খালি করিয়ে জমি ফাঁকা করিয়ে দিয়েছি।” রাজেশবাবু খুশী হয়ে বললেন, “গুড! শালা, হারামীগুলোকে কত করে বললাম জমি খালি করে দিতে, শুনল না। এখন বুঝবে চুতিয়াগুলো যে, রাজেশ আগরওয়াল কি চিজ!” সুরেশবাবু বললেন, “কিন্তু স্যার, মিডিয়াগুলো আবার এতে নাক গলাবে না তো? ও শালাদের আবার বিশ্বাস নেই। ক্যামেরা কাঁধে, মাইক হাতে বেরিয়ে পড়লেই হল।” রাজেশবাবু বললেন, “এবার মিডিয়াও কিছু করতে পারবে না। সবকাজ আমি আগে থেকেই মিটিয়ে রেখেছি। মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছে ঐ প্লটটা সরকারী বলে ঘোষণা করে দেবে। আর সরকারী প্রোজেক্টটা পাবে আমাদের কোম্পানী। তবে কিছু পার্টি ফাণ্ড বাবদ খসবে বলে মনে হচ্ছে। তবে বেশী কিছু নয়। আর কালো, অন্য কোনো প্রবলেম হয়নি তো?” কালো বলল, “না স্যার। দুজন একটু প্রবলেম করছিল। তারা এখন আর কিছু করতে পারবে না।” ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রাজেশবাবু বললেন, “লাশগুলো ঠিকঠাক পুঁতেছিস তো? দেখিস বাবা, পরে যেন কিছু না হয়। বয়স হচ্ছে। আর টেনশন নিতে পারিনা।” কালো বলল, “ভয় নেই স্যার। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব করেছি।” রাজেশবাবু চেয়ার থেকে উঠে বললেন, “যাক, তাহলে নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। তোরাই তো আমার বলভরসা। শোন্, আমি চানটান করে রাজ্যসভার মিটিঙে যাবো। তুইও সঙ্গে যাবি। ওখান থেকে এয়ারপোর্টে বেরিয়ে যাবো।” কালো কিছু বলার আগে সুরেশবাবু বললেন, “এয়ারপোর্ট কেন স্যার? দিল্লী যাবেন নাকি? তাহলে তো আগে বলবেন, আমি সব ব্যবস্থা...” উনি আর কথা শেষ করতে পারলেন না। রাজেশবাবুর স্থির দৃষ্টি আপনা থেকেই ওনার কথা বন্ধ করে দিল। রাজেশবাবু বললেন, “তোমার বয়স হচ্ছে, সুরেশ। এবার রিটিয়ার করো। এইমধ্যেই ভুলে গেলে? দুপুর আডাইটেয় রোহন ল্যাণ্ড করবে। ওকে রিসিভ করতে যেতে হবে না?” নিজের ভুল বুঝতে পেরে জিভ কেটে সুরেশবাবু বললেন, “ইশ, সরি, সরি। একদম ভুলে গেছি। My mistake.” রাজেশবাবু বললেন, “আর বেশী ইংরেজী না মারিয়ে, বাইরে ওয়েট করো। আমি রেডি হয়ে আসছি।” কালো আর সুরেশবাবু ঘাড় নেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। রাজেশবাবু গুণগুণ করে গান গাইতে গাইতে বাথরুমে ঢুকে গেলেন। আর যেন তর সইছে না ওনার। অনেকদিন পর ছেলেকে দেখতে পাওয়ার আনন্দে মশগুল উনি।গাড়ির জানালার কাচের বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে রোহন উৎফুল্ল হয়ে বলল, “Wow dad! ইন্ডিয়া তো দারুণ ইমপ্রুভ করেছে! কলকাতার রাস্তা তো চেনাই যাচ্ছে না!” ছেলের উৎসাহ দেখে রাজেশবাবু বললেন, “বেটা, এখন আমাদের ইন্ডিয়া তোদের আমেরিকার থেকে কোনো অংশে কিন্তু কম নয়। তবু সবাই যে কেন আমেরিকা, আমেরিকা করে পাগল হয়ে যায় বুঝিনা।” ওনার কথায় রোহনও সায় দিয়ে বলল, “Really dad, I’m impressed. Our country has changed fully.”
“আর এই চেঞ্জটা কারা এনেছে জানিস?”
“কারা ড্যাড?”
“আমাদের মত ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টরা।”
“আর তোমাদের মত পলিটিশিয়ানরা।”
“Absolutely my boy.”
এয়ারপোর্ট থেকে ফিরতে ফিরতে বাবা-ছেলের মধ্যে কথোপকথন হচ্ছিল। আজ পনেরো বছর পর তাঁর ছেলে আবার তার নিজের দেশে, নিজের ঘরে, তার বাবার কাছে ফিরছে, এটা ভেবেই রাজেশবাবুর মনটা খুবই ভালো ছিল সকাল থেকে। মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা মিটিংটা শেষ হতে প্রায় দেড়টা বেজে গেল। মিটিং থেকে বেরিয়ে নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়ের অভাবটা ভালোমতই টের পেলেন উনি। হাতে আর মাত্র ঘন্টাখানেক সময় আছে। রোহনের প্নেন আড়াইটেয় ল্যাণ্ড করার কথা। এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে দেরী করা যাবেনা। তিনি চান না এতবছর পর দেশে ফিরে রোহন ওনার জন্য এয়ারপোর্টে ওয়েট করুক। তাই আর কালবিলম্ব না করে সুরেশবাবু আর কালোকে সঙ্গে নিয়ে এয়ারপোর্টের দিকে রওনা হলেন। গাড়ি ওনাদেরকে নিয়ে ঝড়ের গতিতে রওনা দিল এয়ারপোর্টের দিকে। রাস্তায় বারবার হাতঘড়ির দিকে চেয়ে সময়ের হিসেব করছেন দেখে সুরেশবাবু বললেন, “আপনি চিন্তা করবেন না স্যার। আমরা ঠিক টাইমেই পৌঁছে যাবো।” রাজেশবাবু বিরক্ত হয়ে বললেন, “ঠিক টাইমে তো পৌঁছাতেই হবে। ছেলেটা কি আমাদের জন্য এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে?” সুরেশবাবু তাড়াতাড়ি বললেন, “না, না, আমরা তার আগেই পৌঁছে যাবো।” ওনারা যখন এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছালেন তখন আড়াইটে বেজে গেছে। রাজেশবাবু একপ্রকার অস্থির হয়ে উঠলেন। ছেলেটাকে না জানি কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হল। তড়িঘড়ি এয়ারপোর্টের ভিতরে ঢুকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন উনি। রোহনের প্লেন কুড়ি মিনিট ডিলে হয়েছে। সুরেশবাবু হেসে বললেন, “দেখলেন স্যার, রোহনবাবাকে অপেক্ষা করতে হলনা।” ওনার হাসি দেখে সারা অঙ্গ জ্বলে গেল রাজেশবাবুর। উনি অনুচ্চকণ্ঠে বললেন, “তাতে তোমার অত দাঁত ক্যালানোর কি হল বুঝতে পারছি না। প্লেনটা ঠিক টাইমে এলে রোহনকে দাঁড়িয়েই থাকতে হত। এখন এখানে ক্যালানে কার্তিকের মত দাঁড়িয়ে না থেকে ভিতরে চলো। রোহনের প্লেন যেকোন সময় ল্যান্ড করবে।” রাজেশবাবুকে দেখে ওনার চারপাশে একটা ছোটখাটো ভিড় জমা হয়ে গেল। উনি নিজস্ব বডিগার্ড আর এয়ারপোর্ট সিকিউরিটির সহযোগীতায় ওয়েটিং লাউঞ্জে পৌঁছে গেলেন। ওখানে দাঁড়িয়েই উনি ছেলের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই রোহনের প্লেনটা ল্যান্ড করল। আর তারপর রাজেশবাবু দেখলেন বছর ত্রিশের এক সুদর্শন যুবক ওনার দিকে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে। এক মুহুর্তের মধ্যেই ছেলেকে চিনতে পারলেন উনি। বয়স বেড়েছে, অনেক লম্বাও হয়েছে। কিন্তু মুখের গড়নটা সেই ছোটবেলার মতই রয়ে গেছে। ছোটবেলায় সবাই বলত রোহন নাকি ওর মায়ের মতই দেখতে হয়েছে। হবে হয়তো। ওর মাও ঠিক এইরকমই সুন্দর দেখতে ছিল। অতীত থেকে বর্তমানে রাজেশবাবু ফিরে এলেন ছেলের ডাকে। “Hey dad, কেমন আছো?” ছেলেকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বললেন, “আমি ভালো আছি। বেটা, তুই কেমন আছিস।” “As you see, fit and fine.” রোহন হেসে উত্তর দিল। রাজেশবাবু ছেলেকে বললেন, “চল্। বাড়ি চল্।” রোহনের হাত থেকে কালো ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে নিল। রোহন এর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তাকাতেই রাজেশবাবু বললেন, “ও হচ্ছে কালো। আমার সবথেকে বিশ্বাসী লোক। আজ থেকে ও সবসময় তোর সঙ্গে থাকবে, তোর ছায়া হয়ে।” তারপর সুরেশবাবুর দিকে ইশারা করে বললেন, “আর ও হচ্ছে আমার পি.এ. সুরেশ। তুই ছোটবেলায় ওকে দেখেছিস তোর হয়তো মনে থাকবে না।” এতক্ষণ পর কথা বলার সুযোগ পেয়ে সুরেশবাবু হেসে বললেন, “রোহনবাবা, তুমি ভালো আছো তো?” রোহন কিছু বলার আগেই রাজেশবাবু দাঁত খিঁচিয়ে বললেন, “শুনলো তো ও ভালোই আছে। তুমি এতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো? তাড়াতাড়ি ড্রাইভারকে বলো গাড়ি রেডি করতে। দেখছো ছেলেটা এতঘন্টা জার্নি করে এসেছে, আর তুমি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেজুরে আলাপ করছো।” সুরেশবাবু তাড়া খেয়ে বললেন, “যাচ্ছি স্যার। এক্ষুণি যাচ্ছি।” বলে উনি ওখান থেকে চলে গেলেন। রোহন বলল, “You don’t worry, dad. I’m fine.” উনি বললেন, “তা হোক। সবকথা কি এখানে দাঁড়িয়েই বলবি নাকি। চল্, রাস্তায় যেতে যেতে কথা হবে।” “চলো।” রাজেশবাবু ছেলেকে নিয়ে এয়ারপোর্টের বাইরে বেরিয়ে এলেন। বাড়িতে পৌঁছে রাজেশবাবু হাতঘড়িতে দেখলেন প্রায় চারটে বাজতে যাচ্ছে। ওনার মনে পড়ে গেল চারটের সময় জাপানী ক্লায়েন্টদের সঙ্গে প্লট দেখতে যাওয়ার কথা। উনি কোম্পানীর ম্যানেজারকে বলে দিয়েছিলেন যে সে যেন ক্লায়েন্টদের নিয়ে প্লটে চলে যায়, উনি সোজা সেখানেই পৌঁছে যাবেন। কিছুক্ষণ আগে ম্যানেজারের ফোন এসেছিল। সে বলল যে ক্লায়েন্টদের পিক আপ করতে হোটেলে যাচ্ছে। উনি জানিয়ে দিয়েছেন যে রোহনকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে উনি প্লটে পৌঁছে যাবেন। সেইমত বাড়ি পৌঁছে রোহনকে বললেন, “বেটা, এখন তুই একটু আরাম করে নে। আমার একটা জরুরি মিটিং আছে। আমাকে এক্ষণি বেরিয়ে যেতে হবে। কিছু দরকাল হলে বাড়িতে যে কাউকেই হোক বলে দিবি।” রোহন হেসে বলল, “ড্যাড, তুমি এমনভাবে বলছো যেন আমি একটা বাচ্চা ছেলে। তুমি একদম চিন্তা কোরো না। কাজে যাও।” রাজেশবাবু বললেন, “ও.কে. বেটা। টেক কেয়ার।” “বাই ড্যাড।” বলে রোহন ব্যাগ নিয়ে বাড়ির ভিতর চলে গেল। রাজেশবাবু গাড়ি ঘুরিয়ে প্লটে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিল। হঠাৎ রাজেশবাবুর মোবাইলে একটা ফোন এল। মোবাইলটা বের করে দেখলেন ম্যানেজার ফোন করছে। উনি ভাবলেন ওনার দেরী হচ্ছে দেখে হয়তো ফোন করছে। উনি ফোনটা রিসিভ করে বললেন, “চিন্তা কোরোনা, আমি ঠিক পৌঁছে যাবো। তুমি ততক্ষণ ওনাদেরকে প্লটটা ঘুরিয়ে দেখাও।” ওনার কথা শেষ হওয়ার আগেই ওপাশ থেকে ম্যানেজার বলল, “স্যার, একটু প্রবলেম হয়ে গেছে।”
“কি প্রবলেম?”
“স্যার আমি একটু আগে ক্লায়েন্টদের প্লটে নিয়ে যাই। গিয়ে দেখি কিছু লোক ওখানে আগে থেকেই জড়ো হয়েছে। মাইক-টাইক বেঁধে কিসব বক্তৃতা দিচ্ছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম ওরা লোকাল লোক। মানে আগে এখানেই থাকত। কালকে আমরা ওদের তুলে দেওয়ার পর আজ আবার এসেছে। কিসব বিক্ষোভ দেখাতে। আমরা গিয়ে পৌঁছাতেই সব স্লোগান দিতে লাগল। সব দেখেশুনে ক্লায়েন্টরা গাড়ি থেকে নামলই না। বলল জমিতে নিশ্চয়ই কিছু ডিসপুট আছে। ওরা এরকম ডিসপুটেড জমিতে কোনো প্রোজেক্ট করবে না। ওরা হোটেলে ফিরে যেতে চাইছিল। বাধ্য হয়ে ওদেরকে হোটেলে পৌঁছে দিয়েছি।”
“খুব ভালো করেছো! এবার আমাকে আমার কাজ করতে দাও। আর একটা কথা বলোতো। ওখালে পাবলিক্যালি আমার নাম নিচ্ছিল নাকি?”
“না স্যার। সবাই নয়। তবে মুরুব্বি গোছের একজন ছিল। সে মাইক ধরে খুব তড়পাচ্ছিল।”
“পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। তুমি ওখানেই থাকো। কালো যাচ্ছে, ওকে দেখিয়ে দাও মুরুব্বিটাকে। বাকিটা ও সামলে নেবে।”
ফোন রেখে রাজেশবাবু কালোকে সব বুঝিয়ে দিলেন। আর বললেন উনি একঘন্টা পর আসল জায়গায় পৌঁছে যাবেন। কালো ঘাড় নেড়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল। রাজেশবাবু ড্রাইভারকে হোটেলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। সুরেশবাবু বললেন, “কালোকে না পাঠিয়ে লোকাল থানায় ফোন করলে ভালো হত না? ওরা ফোর্স নিয়ে গিয়ে দু মিনিটে সব সাফ করে দিত।”
“আর সেই সাথে পাবলিকের মধ্যে আমার গুড ইমেজটাও সাফ হয়ে যেত। এইরকম মাথা নিয়ে কি করে সব কাজ করো জানি না। কালো গিয়ে সব ম্যানেজ করে নেবে। এখন একটু চুপ করে বসো। আমাকে ভাবতে দাও জাপানীগুলোকে কিভাবে ম্যানেজ করবো।” প্রায় চেঁচিয়ে বললেন রাজেশবাবু। ওনার মেজাজ বুঝে সুরেশবাবু চুপ করে গেলেন। হোটেলে পৌঁছে ওনার জাপানী ক্লায়েন্টদের বোঝাতে বেশ খানিকটা বেগ পেতে হল রাজেশবাবুকে। অবশেষে তাদেরকে এটা বোঝাতে সমর্থ হলেন যে প্লটটা তাঁর নিজস্ব নয়। জমি সরকারী। প্রোজেক্ট সরকারী। তাঁর ইনভলভমেন্ট কেবলই একজন রাজ্যের মন্ত্রী হিসাবে। আজ যা কিছু হয়েছে তা কেবলই একটা ভুল। এই ভুল ‘সরকার’ আর দ্বিতীয়বার করবে না। দরকার পড়লে উনি ওনাদের সঙ্গে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী কথা বলাবার ব্যবস্থা করে দেবেন। ওনার অনেক বোঝাবার পর তারা নিমরাজী হল পরের দিন আবার ঐ জমি দেখতে যাওয়ার। তবে একটা শর্তে। যেন কোন প্রবলেম না হয়। সব মেনে নিয়ে হোটেল থেকে বেরোবার পথে কালোর ফোন এল। “স্যার, দুজনকে তুলে এনেছি। বাকীদের ঠেঙিয়ে ভাগিয়ে দিয়েছি।”
“গুড। ছাগলদুটোর ছাল ছাড়াতে শুরু কর্। আমি গিয়ে কিমা করবো।”
“ও.কে. স্যার।”
ফোন ছেড়ে দাঁতের ফাঁকে বললেন, “শালা, চুতিয়ার বাচ্চা!”
ঘন্টাখানেকের মধ্যে রাজেশবাবু নিজের আড্ডায় পৌঁছে গেলেন। তবে একা। সাথে ড্রাইভার বা সুরেশবাবু নেই। কারণ এই আড্ডার ঠিকানা উনি ছাড়া আর কেবল কালো জানে। উনি আর কোনো তৃতীয় ব্যক্তিকে তার ঠিকানা জানাতে চান না। উনি পৌঁছে দেখলেন কালো একাই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। যথার্থ ব্যবস্থা। চেয়ারের সাথে বেঁধে দুটোকে বেশ ভালোরকমই আদর করেছে। দুটোরই ঘাড় লটকে গেছে। তবে বেঁচে আছে। বুকদুটো ধুকধুক করে ওঠানামা করছে। উনি গিয়ে পৌঁছাতেই কালো বলল, “লোকাল নেতা। কাজ-টাজ কিছু নেই। পার্টি অফিয়ে বসে, আর আন্দোলন করে।” দাঁত কিড়মিড় করে রাজেশবাবু বললেন, “করাচ্ছি হারামীদের আন্দোলন। শালা আমার সাথে পাঙ্গা।” বলে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। কালো দুজনের মধ্যে একজনের চুলের মুঠি ধরে মুখটা তুলে ধরল। গোটা মুখটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। নাকটা ফেটে গেছে। বাঁ চোখটা কোটর থেকে বেরিয়ে আসার জোগাড়। কালো বলল, “মুরুব্বি। আজকের আন্দোলনের নেতা। আপনার নামেও স্লোগান দিচ্ছিল।” রাজেশবাবু বলল, “কেন রে শুয়োর, আমি তোর কোন বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছি রে, যে এভাবে আমার পিছনে লাগলি?” লোকটা কেবল দুবার গোঁ গোঁ করে উঠল। রাজেশবাবু তার মুখে জোরে একটা কিল মেরে বলল, “যা বলার পরিষ্কার করে বল্।” সে অনেক কষ্ট করে বলল, “আ..আমা..র ভু..ল হয়ে গে..ছে..” রাজেশবাবু তাকে ব্যঙ্গ করে বলল, “তব্ পস্তানেকা ক্যায়া, যব চিড়িয়া চুক গঈ ক্ষেত। এবার তোর কি অবস্থা করবো জানিস? প্রথমে তোকে মারব। তারপর কুচিকুচি করে কোপাবো। এই এত্তটুকু করে সাইজ করব। ঠিক কিমার মত। তারপর। তারপর তোর মাংসগুলোকে পলিথিনে ভরে... কি ভাবছিস? কুকুরকে খাওয়াবো? না, আমার কুকুর এত সস্তা মাংস খায় না। হ্যাঁ যা বলছিলাম। তারপর তোর মাংসগুলোকে আলাদা আলাদা পলিথিনে ভরে মা গঙ্গার বুকে ভাসিয়ে দেবো। একটা বাবুঘাটে, একটা আউটরাম ঘাটে আর একটা...আর একটা হাওড়া ব্রিজে দাঁড়িয়ে সোজা তলায়। ঔঁ শান্তি! তোরও আর আমারও। আর হ্যাঁ। ভগবানকে বলে দিবি পরেরবার যেন তোকে আর মানুষ করে না পাঠায়। পারলে কুকুর করে পাঠায় যেন। আমার না কুকুর পোষার খুব শখ। ঘরে চারটে আছে। তোকে নিয়ে পাঁচটা হবে।” লোকটা ভয় পেয়ে গোঁ গোঁ করতে লাগল। রাজেশবাবু কালোকে বলল, “চিল্লিয়ে কানের মাথা খাচ্ছে। কাট্ শুয়োরের বাচ্চার গলার নলিটাকে। তবে একবারে নয়। আড়াই প্যাঁচে। যাতে প্রাণটা একটু একটু করে বেরোয়।” কালো তৎপরতার সঙ্গে মালিকের নির্দেশ পালন করল। রাজেশবাবু তাড়িয়ে তাড়িয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করলেন। তারপর বললেন, “লাশদুটোর ব্যবস্থা কর্। আমি বাড়ি যাচ্ছি। খিদে পেয়েছে। ডিনারের সময়ও হয়ে গেছে। রোহন হয়তো আমার জন্য ওয়েট করে আছে। আজ অনেকদিন পর বাপ-বেটায় ডিনার করবো। কাজ হয়ে গেলে ফোন করে গুড নিউজটা জানাবি।” বলে বাইরে বেরিয়ে গেলেন রাজেশবাবু। কালো নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
“আমি পার্থ।”
“কি চাই?”
“কথা আছে, দরজা খুলুন।”
“কি কথা?”
“এখান থেকে বলা যাবে না। দরজাটা খুলুন।”
“যা বলার কাল সকালে বলবে। যাও, এখন শুয়ে পড়।”
“না। আমার এখনই দরকার। দরজাটা খুলুন।”
এই প্রথম আমার গলা দিয়ে অনুনয় নয়, বরং আদেশের সুর বের হল। তাতে কি কাজ হল? মনে তো হয়। কারণ দরজাটা খুলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। কিন্তু সবটা নয়। কিছুটা খোলা দরজার ফাঁক দিয়ে একটা মুখ বেরিয়ে এল। “কি বলার আছে বলো। দেরী হয়ে যাচ্ছে।” রাগটা মাথায় চড়ে বসলেও শান্ত গলায় জবাব দিলাম, “এখানে নয়, যা বলার ভিতরে গিয়ে বলব।” বিরক্তিতে ভরে উঠল মুখটা। “বললাম তো এখন নয়, কাল সকালে কথা হবে।” আমি বললাম, “না, আমি এখনই বলব।” মুখটা আরোও কিছু বলার আগেই ঘরের ভিতর থেকে ফ্রিজের বরফের চেয়েও একটা ঠাণ্ডা কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “ওকে ভিতরে আসতে দাও।” মুখটা পলকের মধ্যে সরে গেল। দরজাটাও খুলে গেল পুরোটা। ঠাণ্ডা হিমঘরে প্রবেশ করলাম আমি। সারা গায়ে একটা শিরশিরানি বয়ে গেল। এতক্ষণ অন্ধকারে থাকার পর হঠাৎ এত আলোতে এসে চোখটা ধাঁধিয়ে গেল। নিজেকে সামলে নিলাম। পাশে দাঁড়ানো লোকটা দাঁত খিঁচিয়ে বলল, “অমন সঙের মতন দাঁড়িয়ে না থেকে, যা বলার তাড়াতাড়ি বলে কেটে পড়ো। আমাদের দেরী হচ্ছে।” ধর্তব্যের আনলাম না ওকে। এগিয়ে গেলাম ঘরের এককোণে। সেখানে রকিং চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে বছর ত্রিশের এক সুদর্শন যুবক। আমার থেকে বয়সে সামান্য বড়। তার দিকে এগিয়ে গেলাম আমি। যুবকটি শান্তভাবে আমার দিকে তাকাল। তারপর পাশের টেবিলে রাখা গ্লাসটা তুলে নিয়ে তার ভিতরে রাখা রঙিন তরলে চুমুক দিল। তারপর জিজ্ঞাসা করল, “কি চাও পার্থ?”
“আপনি তো জানেন, আমি কি চাই।”
“আর তুমিও তো জানো, সেটা আর তুমি কোনোদিন ফেরৎ পাবেনা। ওটা এখন আমার। শুধু আমার।” গ্লাসের তরলে আরেক চুমুক।
“আমি আমার জিনিস ফেরত চাই।”
“সব জিনিস কি চাইলেই পাওয়া যায়?” আরেক চুমুক।
“তাহলে আমাকে ছিনিয়ে নিতে হবে।”
“Then go on.” আরেক চুমুক।
আর সহ্য হলনা। পকেট থেকে ঠাণ্ডা কৃষ্ণকায় পিস্তলটা বের করে ধরলাম তার মুখের কাছে।
“ওসব খেলনা সবার হাতে মানায় না, পার্থ। শুধু ধরতে জানলেই হয়না। চালাবার মত কলজেও থাকা চাই। আর সেটা তোমার মধ্যে নেই। ছেলেমানুষী কোরোনা।”
কয়েকমুহুর্ত চোখ বুজলাম। করিমের গলাটা কানে এল, “সাহস করে যদি একবার ঘোড়াটা টিপে দিতে পারো, ব্যাস আর দেখতে হবে না।” চোখটা খুললাম। মনটাকে স্থির করে টানলাম ট্রিগারটা। ‘দড়াম!’ কানফাটা একটা আওয়াজ। একটা চোখধাঁধানো আলো। আর একটা পোড়া গন্ধ। সামনের চেয়ারে বসে থাকা যুবকটির চোখদুটো বিস্ফারিত। হয়ত আমার স্পর্ধা দেখে। কিম্বা কলজের জোর দেখে। কপালের ঠিক মাঝখানে সদ্য তৈরী হওয়া গোল গর্তটা থেকে ততক্ষণে নেমে আসতে লেগেছে কালচে গরম রক্ত। হাতের গ্লাসটা শক্ত মেঝেতে পড়ে ঝনন্ শব্দ করে ভেঙ্গে গেল। পিছনের লোকটার হুঁশ ততক্ষণে ফিরে এসেছে। “অ্যাই শালা, মাদার**!” বলে ছুটে এল আমার দিকে। “দড়াম!” কাটা কলাগাছের মত লুটিয়ে পড়ল লোকটা। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে ছোঁড়া গুলিটা বোধহয় ওর হৃৎপিণ্ডটাকেই ফুটো করে দিয়েছে। এবার ঘুরে দাঁড়ালাম বিছানার দিকে। তিন নম্বর লোকটা কেবল, “আমি...আমি...” এইটুকুই বলার সুযোগ পেল। কালচে রক্ত সাদা বেডকভারটাকে মুহুর্তে রঙিন করে তুলল। বন্দুকটা নামালাম। গিয়ে বসলাম বিছানার একধারে। আমার ঠিক অপরধারে ভয়ে কাঁপছে প্রিয়া। আমার স্ত্রী। গায়ের জামাটা খুলে বাড়িয়ে দিলাম ওর দিকে। সেটা গায়ে দিয়ে নিজের লজ্জাটাকে কোনোরকমে ঢাকল ও। যদিও আমার জামাটা ওর লজ্জা, ওর মর্যাদা ঢাকার পক্ষে অনেক ছোট। ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কেন পার্থ?” এই প্রথম ওর চোখে চোখ রেখে উত্তর দিলাম, “পাপ করেছিলাম, প্রিয়া। আজ তার প্রায়শ্চিত্ত করলাম।” প্রিয়ার চোখের কোণে চিকচিক করতে থাকা জলগুলো আমার নজর এড়ালো না। ও এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে সশব্দে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। ওকে কাঁদতে দিলাম। কাঁদুক ও। আজ ও যত কাঁদবে, তত পাপের বোঝা কমবে আমার। মনটা পুরোপুরি শান্ত হল এতক্ষণে। আমি পেরেছি। কিন্তু এখনও একটা কাজ বাকী আছে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে নম্বরটা ডায়াল করলাম। আগে থেকেই সেভ করে রেখেছিলাম। কয়েকবার রিং বাজার পর কেউ ফোনটা ধরল। “হ্যালো?” শান্ত গলায় জবাব দিলাম, “হ্যালো! পুলিশস্টেশন?..
সারাদিনের পর প্রাক্তন অ্যাডভোকেট নীলকণ্ঠ বাগচী এইমাত্র টি.ভি.টা খুলে বসলেন। যদিও টিভি দেখতে যে খুব একটা পছন্দ করেন তা ঠিক নয়। তবুও সারাদিনের পর একবার অন্তত টিভিটা খুলে বসেন। সাধারণত নিউজ চ্যানেল দেখেন। দেশের ও রাজ্যের বিভিন্ন খবরাখবরের উপর নজর রাখেন। আজও সেই একই রুটিন মেনে টিভি খুলেছিলেন। পছন্দের নিউজ চ্যানেলটা খুলতেই টিভির পর্দায় খবরের ঝড় যেন আছড়ে পড়ল। একজন রিপোর্টার উত্তেজিত গলায় কারোর খুনের খবর রিপোর্ট করছে। নীলকণ্ঠবাবু খুব একটা আগ্রহ প্রকাশ করলেন না। এরকম মার্ডারের খবর আকছার শুনতে পাওয়া যায়। নিউজ চ্যানেলগুলোর কাজই হল ছোট্ট জিনিসকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে, তিলকে তাল করে তোলা। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই নীলকণ্ঠবাবু নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। কারন খুনের ঘটনাটা মোটেও ‘সামান্য’ নয়। খুন হয়েছে এরাজ্যের সবচেয়ে বড় শিল্পপতি ও মন্ত্রী রাজেশ আগরওয়ালের একমাত্র ছেলে রুলিং পার্টির যুবনেতা ও ভাবী মন্ত্রী রোহন আগরওয়াল। এই অবাঙালী শিল্পপতির পরিচিতি রাজনীতির ময়দানে কেবল এই রাজ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দিল্লী পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই এই তাবড় নেতা ও মন্ত্রীর একমাত্র ছেলের মৃত্যুর ঘটনা ব্রেকিং নিউজ হতে বাধ্য এবং তা হয়েছেও। এবং এই ঘটনা অন্যান্য রাজ্যবাসীর সাথে নীলকণ্ঠবাবুরও মনোযোগ আকর্ষণ করে নিল। উনি বেশ মনোযোগ সহকারে খবরটা শুনতে শুরু করলেন। রিপোর্টারের খবর অনুযায়ী আধঘন্টা আগে একজন যুবক *** থানায় ফোন করে জানায় যে, সে তার নিজের বাড়িতে রোহন আগরওয়াল ও তার দুই বন্ধুকে গুলি করে হত্যা করেছে। এবং বর্তমানে সে পুলিশের কাছে সারেন্ডার করতে চায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সত্যিই রোহন ও তার দুই সঙ্গীর মৃতদেহ পেয়েছে। তিনজনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তলটিকেও পুলিশ সিজ্ করেছে। পুলিশ খুনে অভিযুক্ত যুবককেও গ্রেপ্তার করেছে। খুনের কারণ কি হতে পারে তা পুলিশ এখনোও সঠিকভাবে জানেনা। পুলিশসূত্রে খবর, তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে পুলিশের সন্দেহ কোনো ব্যক্তিগত কারণেই এই খুন। কিন্তু রোহন ও তার সঙ্গীরা অত রাতে ঐ যুবকের বাড়িতে কি করছিল, তা পুলিশ এখনো জানতে পারেনি। তবে তদন্ত জোর কদমে শুরু হয়ে গেছে। কারণ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে জানিয়েছেন তিনি এবং তাঁর দল রাজেশ আগরওয়ালের পরিবারের প্রতি সমব্যথী। তদন্তে কোনোরকম ঢিলেমি তিনি একেবারেই বরদাস্ত করবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি স্বয়ং ডি.সি.পি.কে এই ঘটনার তদন্তে নিযুক্ত করেছেন। টিভি সেটটাকে অফ্ করে নীলকণ্ঠবাবু ভাবতে শুরু করলেন, এই খুনের প্রকৃত কারণটা কি হতে পারে। একজন রুলিং পার্টির মন্ত্রীর ছেলেকে স্রেফ আবেগের বশে বা নিতান্ত ব্যক্তিগত কারণে খুন করতে পারে, তা পুলিশ মনে করলেও অভিজ্ঞ উকিল নীলকণ্ঠবাবু তা একেবারেই তা মনে করেন না। তাঁর ত্রিশ বছরের কেরিয়ারে তিনি এমন অনেক কেসের সঙ্গেই যুক্ত থেকেছেন, যেখানে খুনের পিছনের কারণটা অতি গুরুতর। এক্ষেত্রেও সেইটাই সন্দেহ হচ্ছে নীলকণ্ঠবাবুর। তবে একটা জিনিস পরিষ্কার। ছোকরার কলজের জোর আছে বলতে হবে। নাহলে কেউ রোহন আগরওয়ালকে খুন করার মত বোকামি বা পাগলামি করত না। এবার হয় ওকে মরতে হবে, নাহলে জেলে পচতে হবে। নীলকণ্ঠবাবুর চিন্তাজালটাকে ছিন্ন করে দিয়ে ওনার পাশে রাখা টেলিফোনটা বেজে উঠল। না কোনো মোবাইল বা অত্যাধুনিক স্মার্টফোন নয়। বরং সাবেকী ল্যান্ডলাইন। নীলকণ্ঠবাবুর কোনো মোবাইল ফোন নেই। ইচ্ছা করেই কেনেন নি। এবং ব্যবহারও করেন না। উনি মানুষটাই সেকেলে। আর তাছাড়া রাস্তাঘাটে, বাড়িতে, এবং ওনার অফিসে সর্বত্র ছেলেছোকরাদের এই মোবাইল-জপ দেখলেই ওনার গা-পিত্তি জ্বলে যায়। এখনো উনি সব কাজ ঐ ল্যান্ডফোনের উপর নির্ভর করেই করে থাকেন। দিব্যি কাজ মিটে যায়। আজকালকার ছেলেমেয়েদের কেন যে এই মোবাইল-প্রীতি তা ওনার বোঝার বাইরে। যাই হোক এতরাতে কে ফোন করল, এইকথা ভাবতে ভাবতে নীলকণ্ঠবাবু ফোনটা তুললেন, “হ্যালো!”
“হ্যালো! নীলকণ্ঠ, আমি অবিনাশ বলছি। টিভিতে খবর দেখেছো?” অপরপাশ থেকে জবাব এল। অবিনাশবাবু অর্থাৎ অবিনাশ লাহিড়ী নীলকণ্ঠবাবুর অনেকদিনের বন্ধু এবং পরিচিত। তবে অবিনাশবাবুকে এতরাতে ফোন করতে দেখে নীলকণ্ঠবাবু বেশ অবাকই হলেন। কারণ ওনার কোনো বন্ধুই এতরাতে ওনাকে ফোন করেন না। তাই উনি বেশ কিছুটা অবাক হয়েই উত্তর দিলেন, “কি ব্যাপার বলোতো অবিনাশ? একজন মন্ত্রীপুত্রের মৃত্যুর খবর শুনে তুমি এমন উতলা হয়ে উঠেছো?”
“তোমার পাল্টা প্রশ্ন শুনেই বুঝতে পারছি, খবরটা তুমি শুনেছো।”
“হ্যাঁ, আমি খবরটা দেখেওছি এবং শুনেওছি। কিন্তু তুমি হঠাৎ এতরাতে আমাকে ফোন করে এসব বিষয়ে আলোচনা করছো, কি ব্যাপার বলোতো?”
“সবকথা ফোনে বলা যাবেনা। আমি এক্ষুণি তোমার বাড়ি আসছি। আমার সাথে আরেকজন থাকবে। তোমার ওখানো গিয়ে সব বলব।” ওপার থেকে অবিনাশবাবু বললেন।
বন্ধুর এইকথাটি শুনে নীলকণ্ঠবাবু সত্যিসত্যিই অবাক হলেন। তিনি এতরাতে কারোর সাথে দেখা করেন না জেনেও যখন অবিনাশ তাঁর বাড়িতে আসতে চাইছে, তখন ব্যাপারটা হয়তো সত্যি করেই গুরুতর। নীলকণ্ঠবাবুর গলায় এবার সত্যিকারের বিষ্ময় ঝরে পড়ল, “কি হয়েছে খুলে বলোতো। এতরাতে আমার বাড়িতে আসতে চাইছ, তার উপর আবার একজনকে সঙ্গে করে।”
“বললাম তো, গিয়ে সব বলছি। ততক্ষণ একটু ধৈর্য্য ধরো। আমি আধধন্টার মধ্যেই তোমার বাড়ি পৌছে যাবো। এখন রাখছি।” নীলকণ্ঠবাবু কিছু বলার আগেই ওপাশে অবিনাশবাবু লাইন কেটে দিলেন। ফোনটা যথাস্থানে রেখে নীলকণ্ঠবাবু ভাবনার অতলে তলিয়ে গেলেন। একজন শিল্পপতির ছেলের মৃত্যুর বিষয়ে অবিনাশ এত ইন্টারেস্ট নিচ্ছে কেন? অবিনাশের গলা শুনে মনে হল ব্যাপারটা সত্যিই বেশ গুরুতর। আবার সঙ্গে করে কাউকে নিয়ে আসার কথা বলল। সে কে? তার সঙ্গে এই ঘটনার সম্পর্কই বা কি? উনি কিছুই বুঝতে পারছিলেন না।
নীলকণ্ঠবাবুর মনের মধ্যে তোলপাড় করতে থাকা প্রশ্নের ঝড়টা শান্ত হবার আগেই ওনার বাড়ির কলিং-বেলটা বেজে উঠল দু’বার। আরো বাজার আগেই উনি উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন। দরজাটা খুলতেই সামনে বন্ধু অবিনাশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। আর অবিনাশের ঠিক পিছনে একজন ছায়ামূর্তিও দাঁড়িয়ে আছে। নীলকণ্ঠবাবু কিছুটা অবাক হয়ে বললেন, “এসো অবিনাশ, ভিতরে এসো।” অবিনাশবাবু নিজে ঢুকতে ঢুকতে ওনার পিছনের ছায়ামূর্তিটাকে বললেন, “ভিতরে আয়।” নীলকণ্ঠবাবু দেখলেন অবিনাশের সাথে একটি মেয়ে ঘরে ঢুকল। চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। মেয়েটির মুখের দিকে এক ঝলক তাকিয়েই নিজের অজান্তে নীলকণ্ঠবাবু একবার চমকে উঠলেন. পরক্ষণেই অবশ্য নিজেকে সামলে নিলেন। সেটা অবশ্য অবিনাশবাবুর নজর এড়াল না। উনি চোখের ইশারায় বন্ধুকে শান্ত হতে বললেন। নীলকণ্ঠবাবু নিজেকে সামলে নিয়ে অবিনাশবাবুকে বললেন, “আমার চেম্বারে চলো। ওখানে বসেই কথা হবে।” ওনার পিছন পিছন অবিনাশবাবু এবং মেয়েটি চেম্বারে এল। ওনাদেরকে চেয়ারে বসতে বলে নিজেও স্বস্থানে বসলেন। অবিনাশের পাশে, চেয়ারে বেশ খানিকটা জড়োসড়ো হয়ে বসল মেয়েটি। ওনার দিকে একবার তাকিয়েই মাথাটা নামিয়ে নিল সে। নীলকণ্ঠবাবুর অভিজ্ঞ চোখ পড়ে নিতে লাগল মেয়েটির হাবভাব। মেয়েটি যে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে আছে, সেটা ওর হাবভাবেই স্পষ্ট। আরেকটা জিনিস নীলকণ্ঠবাবু বুঝতে পারলেন যে, মেয়েটি একটি ট্রমার মধ্যে আছে। ওর চোখমুখটাও কেমন যেন ফোলা ফোলা লাগছে। তার মানে মেয়েটি সম্ভবত কান্নাকাটি করছিল। ওর পরনে একটি শাড়ি। তাও যেমন-তেমনভাবে পরা। তার মানে তাড়াতাড়িতে হাতের কাছে যা পেয়েছে, কোনোরকমে পরেছে। পোষাকের দিকে আলাদা করে নজর দেওয়ার সময় বা সুযোগ কোনোটাই তার কাছে ছিল না। এতকিছু বুঝতে পারলেও উনি এটা বুঝতে পারলেন না, মেয়েটি কে। আর এতরাতে অবিনাশই বা ওকে নিয়ে তার কাছে এল কেন। মন্ত্রীপুত্রের হত্যার সঙ্গে এই মেয়েটির সম্পর্কই বা কি। বন্ধুর মুখে প্রশ্নগুলো পড়ে নিয়ে অবিনাশবাবু বলতে শুরু করলেন, “তুমি হয়তো বেশ খানিকটা অবাক হচ্ছো যে, এতরাতে হঠাৎ আমি এখানে এলাম কেন। আর এই মেয়েটিই বা কে। তাইতো?”
“হ্যাঁ, তা বলতে পারো।”
“বেশ, তাহলে তোমাকে সব খুলে বলি। এই মেয়েটি হল প্রিয়া। আমার এক বন্ধুর মেয়ে। প্রায় একবছর হতে চলল ওর বিয়ে হয়েছে। আজ রাতে হঠাৎ ওর বাবা আমাকে ফোন করে জানায় ওর মেয়ে প্রিয়া একটা বড়ো বিপদে পড়েছে।”
“কি বিপদ?”
“বলছি। তুমি একটু আগে টিভিতে রোহন আগরওয়ালের খুনের খবরটাতো দেখেছো, সেটাই আসল বিপদ।”
“বুঝলাম না।”
“খবরে যে খুনীর কথা বলছে, সে প্রিয়ার স্বামী পার্থ। পার্থই রোহন আর ওর দু’জন সঙ্গীকে গুলি করে হত্যা করেছে।”
“কিন্তু রোহন আর ওর বন্ধুরা অতরাতে ওদের বাড়িতে কি করছিল?”
“সেটা আমার থেকে প্রিয়া তোমাকে ভাল করে আর ডিটেলসে বলতে পারবে।”
বন্ধুর কথা শুনে নীলকণ্ঠবাবু প্রিয়ার দিকে তাকালেন। এতক্ষণে উনি বুঝতে পেরেছেন, কেন এতরাতে অবিনাশ মেয়েটিকে সঙ্গে করে তাঁর কাছে নিয়ে এসেছেন। উনি আজ বেশ কয়েক বছর হল প্র্যাকটিস বন্ধ করে দিয়েছেন। যদিও কারণটি একান্ত ব্যক্তিগত, তবুও সেটা অবিনাশের ভালো করেই জানা। ও সেই কারণটার ফায়দা তুলতে চাইছে না তো? কারণ এর আগে অনেকের অনুরোধই তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা ছিল, আর কোনোদিন তিনি কোর্টে পা রাখবেন না। সেই কারণেই কি অবিনাশ আজকে এই মেয়েটিকে তাঁর সামনে শিখন্ডীর মত দাঁড় করিয়ে দিয়ে তাঁকে আবার কোর্টে ফেরত যেতে বাধ্য করছে। যদি তাই হয়, তিনি এই ফাঁদে পা দেবেন না। ওনাকে ওনার প্রতিজ্ঞা থেকে কেউ নড়াতে পারবে না। নীলকণ্ঠবাবু আবার বর্তমানে ফিরে এলেন। দেখলেন মেয়েটি অনুচ্চ কণ্ঠে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে। উনি মেয়েটাকে কিছুটা সময় দিলেন। তারপর নিজের জায়গা থেকে উঠে গিয়ে একগ্লাস জল এনে দিলেন প্রিয়াকে। তারপর নরমস্বরে বললেন, “জলটা খেয়ে নাও, প্রিয়া। কান্নাকাটি বন্ধ করো। এখন ওসবের সময় নয়। ধীরেসুস্থে মাথা ঠাণ্ডা করে বলোতো আসলে কি ঘটেছে? রোহন আর ওর বন্ধুরা অতরাতে তোমাদের বাড়িতে কি করছিল? আর তোমার স্বামী পার্থই বা কেন এমন একটা ব্লান্ডার করল?” প্রিয়া নীলকণ্ঠবাবুর হাত থেকে জলের গ্লাসটা নিয়ে একচুমুক খেয়ে টেবিলের উপর রাখল। তারপর দু’একবার নীলকণ্ঠবাবুর দিকে তাকিয়ে মাথাটা নীচু করে নিল। উনি বুঝতে পারলেন প্রিয়া কিছু বলতে চাইছে, অথচ কোনো কারণে বলতে পারছে না। ওনাকে সেই কারণটাই জানতে হবে। উনি আবার বললেন, “এখন চুপ করে থাকার সময় নয় প্রিয়া। তুমি জানো, রোহন কার ছেলে? রাজেশ আগরওয়ালের ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা নেই। ওরা পার্থর কোনো বড় ধরনের ক্ষতি করে দিতে পারে। এর আগে ও অনেকের অনেক ক্ষতি করেছে। তাই দেরী হয়ে যাওয়ার আগে সবকিছু খুলে বলো, প্রিয়া। তা নাহলে শুধু আমি কেন, কেউই তোমাকে কোনো রকম সাহায্য করতে পারবে না।” ওনার মুখে পার্থর ক্ষতির সম্ভাবনার কথা জেনে প্রিয়া নীলকণ্ঠবাবুর দিকে তাকালো। ওর চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। তবু ও কোনো কথা বলল না। কেবল নিঃশব্দে কেঁদে চলল। চোখ থেকে জলের ধারা গাল বেয়ে নিচের দিকে নেমে চলল। নীলকণ্ঠবাবু বন্ধুর দিকে তাকালেন। অবিনাশবাবু বন্ধুর ইঙ্গিত বুঝতে পেরে বললেন, “আর চুপ করে থাকিস না, প্রিয়া। খুলে বল্, পার্থ কেন এমন কাজ করল।” প্রিয়া একবারের জন্যও নীলকণ্ঠবাবুর দিক থেকে চোখ সরাল না। ওনার দিকে নির্নিমেষ ভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনুচ্চ কণ্ঠে বলল, “কারণ, ওরা আমাকে ধর্ষণ করছিল।”
গাড়িটা চালাতে চালাতে মেয়েটার কথা ভাবছিলেন নীলকণ্ঠবাবু। ওর কথা শুনে শিউড়ে উঠেছিলেন তিনি। যদিও সবকথা ও খুলে বলেনি এবং উনিও জানতে চাননি। তবে যেটুকু শুনেছেন তাতে ওনার মনটা ঘৃণায় ভরে উঠেছে। একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের প্রতি কিভাবে এমন আচরণ করতে পারে, তা ওনার চিন্তার বাইরে। এই কথাটা ভাবার পরক্ষণেই নিজের মনকে মৃদু ধমক দিলেন উনি। কিভাবে ঐ অসভ্য, ইতর, জানোয়ারটাকে ‘মানুষের’ পর্যায়ে ফেলছেন উনি? সে আর যাই হোক, মানুষ কখনই নয়। প্রিয়ার মুখ থেকে ঘটনাগুলো শুনতে শুনতে ওনার মনটা বারবার ফিরে যাচ্ছিল অতীতে। কয়েকবছর আগের সেই ঘটনাটা চোখের সামনে ফিরে ফিরে আসছিল। আর মনে পড়ে যাচ্ছিল ওনার নিজের ব্যর্থতা। মনে হচ্ছিল, পার্থ যেটাই করেছে, ঠিক করেছে। জানোয়ারগুলোর সাথে এমনটাই করা উচিত ছিল। আর পার্থ ঠিক সেটাই করেছে। কিন্তু এটা এখন আর ওনার উপর নির্ভর করছে না। আইনের চোখে পার্থ একজন অপরাধী। এবং তিনি তাকে বাঁচাবার দায়িত্ব নিয়েছেন। উনি প্রিয়াকে কথা দিয়েছেন, যেকোন প্রকারে পার্থকে ওর কাছে ফিরিয়ে দেবেন। কিন্তু কিভাবে? সেটা আপাতত ওনারও জানা নেই। তবে তিনি প্রিয়াকে আশ্বাস দিয়েছেন, উনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। তাঁর কাছে প্রিয়াকে নিয়ে আসার জন্য প্রথমে তিনি অবিনাশের উপর রেগে গিয়েছিলেন। মনে হয়েছিল অবিনাশ প্রিয়াকে ব্যবহার করতে চাইছে তাকে রাজী করাতে। কিন্তু সব কথা শোনার পর মনে হল এটাই ওনার কাছে একটা সুযোগ নিজের ভুলটা শুধরে নেওয়ার। ব্যর্থতাটাকে নিজের জীবন থেকে, নিজের মন থেকে মুছে ফেলার। প্রিয়াকে সবরকম প্রবোধ দেওয়ার পর, তাকে একপ্রকার জোর করেই অবিনাশের সঙ্গে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যেতে চায়নি। কোনোরকমে বুঝিয়ে রাজী করিয়েছেন। ওরা চলে যাবার পরেই উনি তৈরী হয়ে নিয়েছেন। যা করার ওনাকে আজ রাতেই করতে হবে। তা নাহলে আগামীকাল যখন পার্থকে কোর্টে তোলা হবে, তখন খুব সহজেই সরকারী উকিল আর রাজেশ আগরওয়ালের ভাড়াটে উকিলেরা প্রমাণ করে দেবে যে পার্থ ইচ্ছাকৃতভাবে, বিনা প্ররোচনায় রোহন আর তার সঙ্গীদের হত্যা করেছে। আর সেটা আটকানোর একটাই উপায়। পার্থর সঙ্গে কথা বলতে হবে। জানতে হবে এসবের শুরু কবে ও কিভাবে। আর সেটা জানতেই উনি এতরাতে যাচ্ছেন থানায়। পার্থর সাথে ওনাকে কথা বলতেই হবে।
ভাবতে ভাবতে থানার সামনে গাড়িটাকে দাঁড় করালেন নীলকণ্ঠবাবু। গাড়িটাকে পার্ক করে, নেমে এসে হাতঘড়িটার দিকে তাকালেন। ওনার হাতঘড়িটা জানাল মধ্যরাত্রি অনেক আগেই অতিক্রান্ত। অন্যদিন এইসময় তিনি অগাধে ঘুমান। আজ কিন্তু ওনার একদম ঘুম পাচ্ছেনা। বরং অনেকদিন পর মনের মধ্যে একটা নতুন উদ্যম খুঁজে পাচ্ছেন উনি। আর দেরী না করে তাড়াতাড়ি থানার দিকে পা বাড়ালেন। এইসময় একটি থানার দৃশ্য যেমন হওয়া উচিত, ঠিক তেমনটাই দেখা যাচ্ছে। নীলকণ্ঠবাবু ভেবেছিলেন একজন মন্ত্রীপুত্রের হত্যাকারীকে নিয়ে হয়তো বিশেষ ব্যস্ততা ওনার চোখে পড়বে। কিন্তু তেমন কিছুই ওনার নজরে এলো না। গেটের পাশের একটি বেঞ্চিতে বসে একজন কনস্টেবল বসে বসে ঢুলছে। নীলকণ্ঠবাবু গিয়ে তাকে একবার ঠেলা দিয়ে বললেন, “শুনছো?” সে কেবল একবার ভ্রু কুঞ্চন করল মাত্র। উনি আবার তাকে ঠেলা দিয়ে বললেন, “এই যে শুনছো?” এবার তার নিদ্রা পুরোপুরিভাবে সাঙ্গ হল। ধড়মড় করে সোজা হয়ে বসল। তারপর ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “কাকে চাই?” নীলকণ্ঠবাবু বললেন, “থানার ডিউটি অফিসার কোথায় আছে?” কনস্টেবলটি এবার ওনার দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখে বলল, “এতরাতেই দরকার? কাল সকালে আসবেন।” উনি ধীর গলায় জবাব দিলেন, “না। কাল সকালে দেরী হয়ে যাবে। আমার আজ রাতেই ওনাকে দরকার।” ওনার কথা শুনে কনস্টেবলটি আর কথা বাড়াল না। বলল, “বড়বাবু একটু আগে কোয়ার্টারে চলে গেছেন। তবে ছোটবাবু আছেন। ওনার রুমে।” উনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “ওনার নামটা?” কনস্টেবলটি উত্তর দিল, “দেবার্ঘ্য। দেবার্ঘ্য সরকার।” উনি কনস্টেবলটিকে “ধন্যবাদ!” বলে ভিতরে চলে গেলেন। কনস্টেবলটি ওনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখল। একবার মনে হল লোকটাকে কোথায় যেন দেখেছে। কিন্তু মনে করতে পারল না। তারপর আবার নিজের জায়গায় চলে গেল ঘুমানোর জন্য। থানার ছোটবাবুর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে নীলকণ্ঠবাবু কয়েক মুহুর্ত সময় নিয়ে কথাগুলো নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিলেন। তারপর পা বাড়ালেন রুমের দিকে। রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখলেন একজন যুবক মাথা নীচু করে একমনে একটি ফাইল পড়ছে। নীলকণ্ঠবাবু একবার গলাটা খাঁকড়ে নিয়ে বললেন, “ভিতরে আসতে পারি?” ফাইল থেকে মুখ তুলে ওনার দিকে তাকালেন। এতরাতে ওনার মত একজন পৌঢ় থানায় এসেছেন দেখে সে যে যারপরনাই অবাক হয়েছে, সেটা পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছে। কয়েক মুহুর্ত সময় নিয়ে যুবকটি বলল, “আসুন।” নীলকণ্ঠবাবু এগিয়ে গিয়ে একটি চেয়ারে বসলেন। তারপর বললেল, “আপনি এই থানার ডিউটি অফিসার। আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল।” ওনাকে প্রায় চুপ করিয়ে দিয়ে যুবকটি বলল, “যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন। আমি খুব ব্যস্ত আছি।”
“আমি জানি আপনি রোহন আগরওয়ালের খুনী পার্থ সাহাকে নিয়ে ব্যস্ত আছেন। আর আমি এসেছি ওর ব্যাপারেই আপনার সঙ্গে কথা বলতে।”
ওনার কথা শুনে দেবার্ঘ্যবাবু অবাক হয়ে গেলেন। নিজের কৌতুহলকে চাপতে অসমর্থ হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি...!?” নীলকণ্ঠবাবু পকেট থেকে নিজের নামাঙ্কিত কার্ডটি বের করে দেবার্ঘ্যবাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “আমি নীলকণ্ঠ বাগচী। একজন উকিল। আমি পার্থ সাহার হয়ে ওর কেসটা লড়ব। তাই ওর সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই।” ওনার হাত থেকে কার্ডটা নিয়ে দেবার্ঘ্যবাবু একই সঙ্গে আশ্চর্য এবং আনন্দিত হয়ে বললেন, “আপনিই সেই নীলকণ্ঠবাবু? চাকরীতে জয়েন করার পর থেকেই সিনিয়ারদের মুখে আপনার অনেক কথা শুনেছি। আপনি নাকি খুব দুঁদে উকিল। কোনো কেস হারেননি। তারপর হঠাৎ আপনি প্র্যাকটিস ছেড়ে দেন।” নীলকণ্ঠবাবু মৃদু হেসে জবাব দিলেন, “না। সব কেসে জিতিনি। জীবনে একটা কেস হেরে গিয়েছিলাম। সে সব কথা থাক। আজ আমি এসেছি পার্থর উকিল হয়ে। আমি একবার ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই। তবে তার আগে আপনাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করতে চাই। কাইন্ডলি যদি উত্তর দেন, তাহলে খুব ভালো হয়।” দেবার্ঘ্যবাবু বললেন, “প্লিজ এভাবে বলবেন না। আপনি আমার থেকে অনেক সিনিয়ার। আপনি কি জানতে চান বলুন, আমি যতটা সম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে জানেনই তো, খুনের ব্যাপার। তার উপর মন্ত্রীর ছেলে। তদন্তের স্বার্থে আপনাকে সব কথা বলতে পারবো না।” নীলকণ্ঠবাবু বললেন, “সেটা আমি জানি। আমি কেবল এটুকু জানতে চাই, পার্থ কি কিছু কনফেস করেছে? যে ও এই কাজটা কেন করেছে?”
“কিচ্ছু না। ইন ফ্যাক্ট ওকে থানায় আনার পর থেকে ও কারোর সঙ্গে একটা কথাও বলেনি। স্যার নিজে ইন্টারোগেট করছিলেন। ও কোনো কথাই বলেনি। কেবল একবার মাত্র বলেছে যে, ও খুনগুলো নিজেই করেছে। এবং নিজের ইচ্ছাতেই করেছে। আর কিচ্ছু বলেনি। He’s a tough guy. আর সত্যি কথা বলতে কি আমরা এইটাই শুনতে চেয়েছিলাম। আমাদের কাজটা সহজ হয়ে গেল। কাল আদালতে আমরা ওটাকেই ওর বয়ান হিসাবে তুলে ধরব। তাতে সরকারী উকিলেরও সুবিধে। কেসটা ওরা তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারবে। কারণ সব এভিডেন্স ওর বিরুদ্ধে। তার উপর ও নিজেই কনফেস করেছে যে খুনটা ও-ই করেছে। কিন্তু...” দেবার্ঘ্যবাবু হঠাৎ থেমে গেলেন। নীলকণ্ঠবাবু তাড়াতাড়ি বললেন, “কিন্তু কি?” দেবার্ঘ্যবাবু কিছুটা ইতস্তত করে বললেন, “একটা কথা আপনাকে বলতে পারি। তবে আনঅফিসিয়ালি। প্লিজ কাউকে জানাবেন না।”
“কি কথা?”
“পার্থবাবু থানায় ফোন করার পর আমরা স্পটে অর্থাৎ ওনার ফ্ল্যাটে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই পার্থবাবুর বেডরুমে রোহন আর ওর দু’জন বন্ধুর লাশ পড়ে আছে। আর পার্থবাবু বাইরে ডাইনিং রুমে বসেছিলেন। এবং ড্রিঙ্ক করছিলেন।”
“ঐ ফ্ল্যাটে পার্থ ছাড়া আর কেউ ছিল?”
“না। উনি ছাড়া আর কেউই ছিল না।” মাথা নেড়ে জবাব দিলেন দেবার্ঘ্যবাবু।
“আর লাশ তিনটে কিভাবে ছিল?”
“রোহনের লাশটা ছিল রকিং চেয়ারে। He was shot on his forehead. দ্বিতীয় লাশটা ছিল মেঝেতে। তাকে বুকে গুলি করা হয়েছিল। আর থার্ড লাশটা ছিল বিছানার উপর। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, they all three were fully naked. এবং আমরা ঐ ঘর থেকে কিছু ইউজড্ কন্ডোম, কন্ডোমের প্যাকেট, কন্ট্রাসেপটিভ পিল আর কিছু sex toy পেয়েছি। আমার মনে হয়েছিল ঐ ঘরে কিছু গুরুতর আর কিছু ইললিগাল হচ্ছিল। আর সেটা বুঝতে পেরেই স্যার ওখানে আমাদের বেশীক্ষণ ইনভেস্টিগেট করতে দেননি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে পার্থবাবু কিছু লুকিয়ে যাচ্ছেন। There’s something very serious matter in this case. আর আমার ভয় হচ্ছে আসল সত্যিটা কেউ জানতে পারবে না। সত্যিটা আড়ালেই থেকে যাবে। রাজেশ আগরওয়াল কোনো মতেই ঐ সত্যিটা সামনে আসতে দেবে না। উল্টে পার্থবাবুকে দোষী প্রমাণ করে, নিজের ছেলের মৃত্যুর রিভেঞ্জ নেবে। আমাদেরও বলা হয়েছে পার্থবাবুকে বেশী কিছু জিজ্ঞাসা না করতে, যাতে উনি নিজের বয়ান বদলাবার সুযোগ না পান। রাজেশ আগরওয়াল থেকে শুরু করে পুলিশের ওপর মহল পর্যন্ত সবাই চায় ব্যাপারটা এখানেই ধামাচাপা পড়ে যাক। কিন্তু আমি চাই সবাই জানতে পাক সত্যিটা কি।” একটানা কথা বলে চুপ করলেন দেবার্ঘ্যবাবু। নীলকণ্ঠবাবু বললেন, “ধন্যবাদ দেবার্ঘ্যবাবু। আমি একটু পার্থর সাথে কথা বলতে চাই। একা হলে ভাল হয়।”
“ওনাকে আলাদা সেলে রাখা হয়েছে। আপনি ওখানেই ওনার সঙ্গে কথা বলুন।”
“ঠিক আছে। সেই ভাল।”
দেবার্ঘ্যবাবু একজন কনস্টেবলকে ডেকে উপযুক্ত নির্দেশ দিলেন। নীলকণ্ঠবাবু দেবার্ঘ্যবাবুকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার সঙ্গে চলে গেলেন। কনস্টেবলটি ওনাকে একটা সেলের কাছে নিয়ে এল। তারপর দরজা খুলে ওনাকে ভিতরে যেতে বলল। উনি ভিতরে ঢুকে গেলে সে আবার দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেল। নীলকণ্ঠবাবু দেখলেন একটি বছর তেত্রিশের যুবক মেঝেতে হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে আছে। ঘুমাচ্ছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। উনি এগিয়ে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখলেন। যুবকটি ধীরে ধীরে মাথা তুলল। সামনে ওনাকে দেখে বেশ কিছুটা অবাক হয়েছে, সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝতে পারলেন নীলকণ্ঠবাবু। কিন্তু সে মুখে কিছুই বলল না। উনি লক্ষ্য করলেন ওর চোখদু’টো বেশ লাল। তার মানে নেশাটা বেশ ভালমতোই করেছে। উনিই প্রথম কথা বললেন, “আমি নীলকণ্ঠ বাগচী। তোমার উকিল। আমি জানতে চাই এই খুনগুলো কেন করলে?” পার্থ কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে ওনার দিকে তাকিয়ে রইল। কিন্তু কোনো কথা বলল না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আবার উনি জিজ্ঞাসা করলেন, “পার্থ, চুপ করে থেকো না। যা জিজ্ঞাসা করছি, তার উত্তর দাও।” আবার কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর পার্থ স্খলিত গলায় বলল, “আমি কিছু বলব না। আমার উকিলের দরকার নেই।” নীলকণ্ঠবাবু সেলের কোণা থেকে জলের কুঁজোটা তুলে এনে সব জলটা পার্থর মাথায় ঢেলে দিলেন। এই আকস্মিক আক্রমণে ও কিছুটা হকচকিয়ে গেল। তারপর রাগত স্বরে বলল, “এটা আপনি কি করলেন?” কুঁজোটা যথাস্থানে রেখে ওর দিকে চেয়ে শান্তস্বরে বললেন, “তোমার নেশাটা কাটালাম। এবার বলো খুনগুলো কেন করলে?” আগের মতোই জেদী কণ্ঠে পার্থ বলল, “বললাম তো, আমি কিচ্ছু বলব না। আমার কিছু বলার নেই।” নীলকণ্ঠবাবু মেঝেতেই ওর পাশে বসে আবার শান্তস্বরে বললেন, “বলতে তো তোমায় হবেই। নিজের জন্য না হলেও, প্রিয়ার জন্য।” কথাটা শুনে ওনার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকালো পার্থ।
“আপনি প্রিয়াকে চেনেন?” নীলকণ্ঠবাবুর মুখে প্রিয়ার নামটা শুনে একমুহুর্তের জন্য থমকে গেল পার্থ। উনি বললেন, “না। অন্তত আজকের আগে তো চিনতাম না।”
“তাহলে আপনি প্রিয়ার কথা বললেন যে!”
“তার কারণ, একটু আগে প্রিয়া আমার কাছে এসেছিল। সাহায্য চাইতে। তোমাকে বাঁচাতে। আর আমি তাকে কথা দিয়েছি, যেকোনো প্রকারে আমি তোমাকে ওর কাছে ফিরিয়ে দেবো।”
“সেটা সম্ভব নয় নীলকণ্ঠবাবু। আপনি রোহন আগরওয়ালকে চেনেন না। ওর বাবা রাজেশ আগরওয়ালকেও চেনেন না। ও আমাকে কোনমতেই বাঁচিয়ে রাখবে না।”
“তুমি ওদের যতটা চেনো, আমি তার থেকে কয়েকগুণ বেশী চিনি।”
“কিভাবে?”
“সে কথা এখন থাক। তুমি বলোতো, এই খুনগুলো কেন করলে? কি এমন কারণ ছিল যাতে এতবড় কাণ্ডটা ঘটালে?”
নীলকণ্ঠবাবুর প্রশ্নটা শুনে পার্থ কেমন যেন আনমনা হয়ে গেল। তারপর ঘোর লাগা গলায় বলল, “প্রায়শ্চিত্ত কাকে বলে জানেন? যখন কোনো মানুষ জীবনে কোনো ভুল করে... উঁহু! ভুল নয় পাপ করে, তখন তার জীবনটাই নরক হয়ে ওঠে। আর সেই মানুষটা ঐ নরকের আগুনে পুড়তে থাকে। প্রতিদিন। প্রতিমুহুর্ত। প্রতিপল। আপনি ভাবছেন, আমি হঠাৎ বড় বড় জ্ঞানের কথা বলছি। তা নয়। ঐ ভুল বলুন বা পাপ, আমিও করেছিলাম। তার মূল্য চোকাতে হচ্ছিল আমাকে। তার থেকেও বেশী প্রিয়াকে। অথচ ও কোনো ভুল করেনি। ও নিষ্পাপ। তা সত্ত্বেও আমার ভুলের মাশুল দিচ্ছিল ও। নিজের শরীরটা দিয়ে। আমার চোখের সামনে একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছিল প্রিয়া। কয়েকটা নোংরা হাত ওকে টেনে হিঁচড়ে আমার কাছ থেকে দূরে নিয়ে চলে যাচ্ছিল। আর আমি, একটা অপদার্থ, একটা কাপুরুষ সেটা কেবল দেখে যাচ্ছিলাম। কিছু করতে পারিনি। আমার কলজের জোর ছিলনা। আর আমার এই কিছু না করাটাই আমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছিল না। আমার মন, আমার আত্মা, আমার বিবেক আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। আমাকে প্রতিনিয়ত ওরা জিজ্ঞাসা করত কেন আমি কিছু করছি না। আমার কাছে কোনো জবাব ছিলনা। আর পারিনি। ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই এই পাপের হাত থেকে বাঁচার জন্য এটা করেছি। আমি প্রায়শ্চিত্ত করেছি।”
“তোমার কি ধারণা তুমি প্রায়শ্চিত্ত করেছো?”
“হ্যাঁ।”
“বেশ। তাহলে বলোতো, এবার প্রিয়ার কি হবে? আজকের পর তুমি বেঁচে থাকবে নাকি মারা যাবে তার কোনোও ঠিক নেই। আর বাইরের পৃথিবীতে সে একা। তোমাকে ছাড়া অসহায়। সেই পৃথিবীতে, যেখানে একটা নয়, অনেক অনেক রোহন আগরওয়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের থেকে তোমার প্রিয়াকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। কেউ না। তুমি প্রায়শ্চিত্ত নয়, ভুল করেছো। আর এই ভুলটাকে শোধরাবার একটাই সুযোগ রয়েছে তোমার সামনে। আমি। একমাত্র আমিই পারি তোমাকে এখান থেকে তোমার প্রিয়ার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। তার জন্য তোমাকে আমায় সাহায্য করতে হবে। তোমাকে খুলে বলতে হবে সবকিছু। প্রথম থেকে।”
কয়েক মুহুর্ত চুপ করে থাকার পর পার্থ বলতে শুরু করল, “আপনি ঠিক বলেছেন। আর চুপ করে থাকা অর্থহীন। আপনাকে সব খুলে বলব। আমার আর প্রিয়ার আলাপ ইউনিভার্সিটি থেকে। একই ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম আমরা। তবে ডিপার্টমেন্ট আলাদা। আমি Commerce আর ও science. যে সময়ের কথা বলছি, তখন আমরা সদ্য পাশ করে বেরিয়েছি। আমি তখন নিজের ডিগ্রীর ফাইল নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির দরজায় দরজায় ঘুরছি চাকরির ব্যর্থ আশায়।.....”
একটা অলস বিকেল। আকাশে ফুরিয়ে আসা আলো। আর রাস্তার ধারে একটা একটা করে জ্বলতে থাকা ল্যাম্পপোস্ট। আর এসবের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে পার্থ। আজকাল নিজেকে এত ব্যর্থ মনে হয় কেন কে জানে। সঙ্গের ফাইলে কেবলই জমতে থাকা ডিগ্রীর পেপারগুলেো। যেগুলো ছাইচাপা আগুনের মত বন্দী আছে ফাইলের ভিতর। আজও দু’ জায়গায় চাকরীর ইন্টারভিউ দিয়েছে। কিন্তু ফল শূ্ণ্য। মনের ভিতর আশাটাও দিনের আলোর মত কমে আসছে। নিভে আসছে। বড্ড ক্লান্ত লাগছে। কিন্তু এখনই মেসে ফিরতে ইচ্ছা করছে না। কোথাও গিয়ে বসতে পারলে ভাল হত। মনটাকে রিফ্রেশ করার প্রয়োজনটা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এমন সময় হঠাৎ পকেটে থাকা সস্তা মোবাইলটা বেজে উঠল। হয়তো দীপক, কিম্বা শান্তনু। ভাল লাগছে না। কথা বলার মরা ইচ্ছেটা আরোও ফিকে হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। কয়েকবার বাজার পর ব্যর্থমনস্ক হয়ে থেমে গেল ফোনটা। যাক, বাঁচা গেল! কিন্তু আবার! আর থাকা গেল না। সুইচড্ অফ্ করার ইচ্ছা নিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই চোখটা চুম্বকের মত আটকে গেল স্ক্রিণে। না, দীপক বা শান্তনু নয়। ওরা ছাড়াও আর একজন আছে যে ওকে ফোন করতে পারে, সেটা ওর খেয়ালই ছিল না। প্রিয়া। প্রিয়া ওর বন্ধু। শুধুই কি বন্ধু? হ্যাঁ, আবার না। ওদের প্রথম আলাপ ইউনিভার্সিটির একটা সেমিনারে। হালকা গোলাপী শাড়ি আর ম্যাচিং ব্লাউজ পরিহিতা ফর্সা, দীর্ঘাঙ্গী, ছিপছিপে চেহারার মেয়েটাকে দেখে বেশ ভালো লেগেছিল পার্থর। কিন্তু এগিয়ে গিয়ে কথা বলা বা আলাপ করার মত সাহস পায়নি ও। কেবলই তাকিয়ে ছিল ওর দিকে। নিষ্পলক। সারাক্ষণ। সেমিনার তিন দিন চলেছিল। শেষদিন দেড়টার মধ্যে সেমিনারের পাট চুকিয়ে ও গেছিল ক্যান্টিনে। খাবারের অর্ডার দেওয়ার পর দেখল ক্যান্টিন প্রায় কানায় কানায় ভর্তি। বসার জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে। হঠাৎ নজরে এল এককোণে একটা টেবিলে কেবল একজনই বসে আছে। একটি মেয়ে। সেই মেয়েটি। যাকে দেখে ওর ভালো লেগেছিল। ইচ্ছা হয়েছিল কথা বলার। কিন্তু পারেনি। ভয় পেয়েছিল। যদি মেয়েটি রেগে যায়? যদি ওকে অপমান করে? তাই ভীতু স্বভাবের পার্থ এগোয়নি। তবে সেদিন মেয়েটার সাথে কথা বলতে না পারার একটা কষ্ট ও বারবার নিজের মনের মধ্যে টের পাচ্ছিল। তাই আজ আবার তাকে চোখের সামনে বসে থাকতে দেখে, তার সঙ্গে কথা বলার অদম্য ইচ্ছাটা আবার মনের মধ্যে পাক খেতে শুরু করেছে। যাকে নতুন করে দমিয়ে রাখা পার্থর অসাধ্য। আর সত্যি কথা বলতে কি, পার্থরও ইচ্ছা একপ্রকার নেই নিজের ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রাখার। মনের কোণে ইতিউতি উঁকি মারতে থাকা সাহসগুলোকে জড়ো করে টেবিলটার দিকে এগিয়ে গেল ও। মেয়েটি মাথা নীচু করে নিজের মোবাইলটা ঘাঁটছিল। ও গিয়ে দাঁড়াতেই মেয়েটি মুখ তুলে ওর দিকে চাইল। চোখের তারায় জিজ্ঞাসাটা অতি সহজেই পড়ে ফেলা যায়। পার্থ কিছুটা ইতস্তত করে বলল, “আমি কি এখানে বসতে পারি? আসলে আর কোন টেবিল ফাঁকা নেই।” গলায় সেতারের সপ্তসুর তুলে উত্তর এল, “বসুন।” চেয়ার টেনে পার্থ বসতেই সে আবার হাতে ধরা মোবাইলটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অল্পক্ষণ চুপ করে থাকার পর পার্থ আবার বলল, “গত পরশু আপনাকে সেমিনারে দেখেছিলাম মনে হচ্ছে।” চোখটা এখনও মোবাইলের দিকে। তবুও উত্তর এল, “এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন! প্রায় সারাক্ষণই তো আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তাও আবার হাঁ করে।” উত্তরটা শুনে লজ্জা পেয়ে গেল ও। তবে ভাল লাগল এটা ভেবে যে এই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখাটা কেবল একপক্ষেই সীমাবদ্ধ নয়। তাই কিছুটা সাহসী হয়েই ও প্রশ্নটা করে ফেলল, “আপনি জানলেন কি করে যে, আমি আপনার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম?”
“তার জন্য জ্যোতিষ জানতে হয়না। যেভাবে তাকিয়ে ছিলেন তাতেই বোঝা যাচ্ছিল। আচ্ছা, আপনি কি সবসময় মেয়েদের দিকে ওভাবেই তাকিয়ে থাকেন?” মেয়েটি এবার মুখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলল।
“না। আসলে সেদিন আপনাকে সত্যিই খুব সুন্দর দেখতে লাগছিল। তবে sorry. আমার ওভাবে তাকিয়ে থাকা উচিত হয়নি। আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।” লাজুক হেসে পার্থ জবাব দিল।
“It’s ok. And thanks for the complement. তা আমার নাম প্রিয়া। আপনি?”
“আমি পার্থ।”
এইভাবে ওদের দুজনের আলাপ শুরু। ধীরে ধীরে ক্যান্টিন, ইউনিভার্সিটি গেট পেরিয়ে নন্দন কিম্বা কফি হাউস - ওদের বন্ধুত্বটা বাড়ছিল। কিন্তু ঐ যে বলে না, এক লড়কা ঔর লড়কী কভী দোস্ত নহী হো সাকতা, সেটাই ঘটছিল ওদের সঙ্গে। সময়ের চাকার সাথে পাল্লা দিতে দিতে ‘আপনি’ এসে পৌঁছেছিল ‘তুমি’তে। আর বন্ধুত্বের বেড়াজালটা ভেদ করে নিজেদের অজান্তে ওরা এসে পৌঁছেছিল প্রেমের দোরগোড়ায়। হয়তো সেই চৌকাঠটাও একদিন ওরা পেরিয়ে যাবে নির্দ্ধিধায়। এদিকে বর্তমানে পার্থর হাতে ধরা মোবাইলটা বাজতে বাজতে ক্লান্ত হয়ে চুপ করে গেছে। তৃতীয়বার আবার সেটা বাজার আগেই পার্থ ফোনটা করল। দু’বার বাজার পরেই ওপাশ থেকে রাগত কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “কি ব্যাপার, তখন থেকে রিং বেজে যাচ্ছে, ফোনটা ধরছ না কেন?” বিপদের আভাস বুঝে পার্থ সতর্ক হয়ে বলল, “বাসে ছিলাম, শুনতে পাইনি। বলো। কি বলছ?”
“কোথায় আছো তুমি?”
“বৌবাজার। কেন?”
“ভালো। আমি কফি হাউসে আছি। চলে এসো।”
“এখনই?”
“হ্যাঁ। আমি ওয়েট করছি।”
কথা না বাড়িয়ে পার্থ বলে, “ঠিক আছে আমি আসছি।” লাইনটা কেটে হাঁটতে শুরু করে ও। ফুটপাথ ধরে চলতে চলতে ফেলে আসা অতীতের অন্ধগলিগুলোতে একবার করে উঁকি মারতে থাকে ওর মন। সে প্রায় আজ বছর তিনেক হতে চলল। ইউনিভার্সিটি ফেরত ওরা দুজন একবার কফি হাউস যেত। প্রথম যখন প্রিয়া কফি হাউসে যাওয়ার কথা বলেছিল, তখন অজানা একটা আনন্দে ওর মনটা নেচে উঠেছিল। পুরানো বাংলা সিনেমায় দেখা আর মান্না দে-র গানে শোনা সেই কফি হাউসের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে একটা আলাদা এক্সসাইটমেন্ট টের পাচ্ছিল মনে মনে। মফস্বলের ছেলে বলে ছোট ছোট জিনিসে আনন্দ খুঁজে নেওয়া ওর স্বভাব। তাই তিন বছর আগের সেই সন্ধ্যা আজও ওর মনের মণিকোঠায় সমানভাবে উজ্জ্বল হয়ে আছে। এরপর আরোও অনেকবার ও প্রিয়াকে সঙ্গে করে কফি হাউস গেছে। কিন্তু তারপর আস্তে আস্তে সেসব কমে এসেছে আগের থেকে। তবে এখনও ওদের দুজনের দেখা করার মুখ্য জায়গা হচ্ছে সেই চিরপরিচিত কফি হাউস। চেনা টেবিলে কফির কাপে চুমুক দিতে প্রিয়ার খুব পছন্দ। ওরও পছন্দ, তবে ওর আরো ভাল লাগে প্রিয়ার সামনে গিয়ে বসতে। ওর চোখে চোখ রাখতে। ওর মুচকি হাসিতে গা ভাসাতে। ওর নরম হাতে নিজে হাত রাখতে। আর সবচেয়ে বেশী ভাল লাগে প্রিয়াকে নিজের মনের সবকথা খুলে বলতে। নিজের উজ্জ্বল আনন্দ, ধূসর মন খারাপ, ভাললাগা, মন্দলাগা সবকিছু ওকে বলতে। ধীরস্থির হয়ে ওর কথা শুনতে। আলগা হাসি, মজা, খুনসুটিতে ওকে রাগাতে। এককথায় ওর ভাল লাগে প্রিয়ার সঙ্গ পেতে। প্রিয়াই ওর বন্ধু। ওর সাথী। ওর হাসি। ওর কান্না। ওর সবকিছু। লাজুক আর ভীতু স্বভাবের কারণে চিরকালই ওর বন্ধু-বান্ধব কম। আর মেয়েবন্ধু? সেটা ওর কাছে ছিল দুর্লভ কোনো বস্তু। ও কারোর কাছেই কোনোদিন সহজ হতে পারেনি। কিন্তু প্রিয়াকে দেখে ওর মনে হয়, ওকে সবকথা বলা যায়, ওর সাথে সহজ হয়ে মেশা যায়। সবচেয়ে বড় কথা ওকে ভালবাসা যায়। ভাবনার মাঝেই পার্থ কফি হাউসে পৌঁছে গেল। ভিতরে ঢুকে দেখল কোণের এক টেবিলে ওর মনের আকাঙ্ক্ষা বসে আছে। ধীরপায়ে সেদিকে এগিয়ে গেল ও।পার্থ চেয়ারে গিয়ে বসতেই কফির অর্ডার দিল প্রিয়া। তারপর কফি আসতে কাপে চুমুক দিয়ে বলল, “এবার সত্যি করে বলোতো, আমার ফোনটা ধরছিলে না কেন?” বিপদ বুঝে পার্থ নিজের কাপে চুমুক দিল। তারপর বলল, “তখন বললাম তো বাসে ছিলাম, রিং শুনতে পাইনি।” প্রিয়া কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে পার্থর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “পার্থ, তোমার একটা অদ্ভুত অভ্যাস আছে, তুমি হয়তো জানো না।”
“সেটা কি?”
“তুমি যখন কারোকে কোনো মিথ্যা কথা বলো, বা কারোর থেকে কোনো কথা লুকিয়ে যাও, তখন তার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারো না। আমার দিকে তো একেবারেই নয়।” তারপর কফির কাপে চুমুক দিয়ে অত্যন্ত শান্তস্বরে বলল, “এবার সত্যি করে বলো, ফোনটা ধরছিলে না কেন?” ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পার্থ বলল, “আসলে আর ভালো লাগছে না, প্রিয়া। আর পারছি না। নিজেকে কেমন যেন ব্যর্থ বলে মনে হচ্ছে। আজ প্রায় তিন বছর হতে চলেছে, কিন্তু আজও একটা রোজগারের উপায় খুঁজে উঠতে পারলাম না।” পার্থর দীর্ঘশ্বাসের জবাবে ওর হাতের উপর হাত রেখে প্রিয়া বলল, “চিন্তা কোরো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আজ নাহয় কাল একটা ঠিক ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”
“মাঝে মাঝে মনে হয়, তোমাকে ঠকাচ্ছি না তো? আর কতদিন তুমি আমার জন্য এভাবে অপেক্ষা করে থাকবে? আর আমিই বা কতদিন এভাবে তোমাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখব?”
“তুমি ভুলে যেতে পারো, পার্থ। কিন্তু আমি ভুলিনি। আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম, তুমি যত খুশী তত সময় নিতে পারো। আমি তোমার জন্য এভাবেই অপেক্ষা করে থাকব।”
“কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি হেরে যাচ্ছি। ফুরিয়ে যাচ্ছি। কখনও মনে হয় আমি তোমাকে ঠকাচ্ছি। তোমার ভালবাসার সঠিক প্রতিদান আমি তোমাকে আগেও দিতে পারিনি, আর এখনও তোমাকে দিতে পারছি না।”
“তুমি জানো কেন আমি তোমায় এত ভালবাসি?”
“কেন?”
“কেননা তুমি একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ। তোমার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা আজ থেকে তিন বছর আগে। এই তিন বছরে তোমাকে আমি যতবার দেখেছি, যতবার তোমার কথা শুনেছি, আমার মনে হয়েছে, এই মানুষটাকে বিশ্বাস করা যায়। ভালবাসা যায়। আমার মনে হয়েছে, তুমি আর যাই করো, আমাকে কোনোদিন ঠকাবে না। সেই বিশ্বাসটার উপর ভরসা রেখে আমি তোমাকে ভালবেসেছি। তোমার থেকেও আমার নিজের বিশ্বাসের উপর ভরসা বেশী আছে। প্রমিস করো পার্থ, তুমি আমার এই বিশ্বাসটাকে কোনোদিনও ভাঙবে না। বলো, প্রমিস করো।”
নিজের হাতের উপর প্রিয়ার হাত রেখে পার্থ বলল, “আমি তোমাকে ছুঁয়ে প্রমিস করছি প্রিয়া, তোমার বিশ্বাসের গুরুভার আমি সারাজীবন বয়ে যাবো।” ওর কথা শুনে প্রিয়া মুচকি হেসে বলল, “That’s like a good boy. এবার কফিটা তাড়াতাড়ি শেষ করে নাও, আমরা এক জায়গায় যাবো।” অবাক হয়ে পার্থ জিজ্ঞাসা করল, “কোথায় যাবো?” সামান্য বিরক্তি প্রকাশ করে প্রিয়া বলল, “আঃ, চলোই না।”
“আর আমার সন্ধ্যের টিউশনিগুলো?”
“আজ তোমার ছুটি। আজকে সন্ধ্যেটা তুমি আমার সঙ্গে থাকবে।”
“কালকে গিয়ে কি বলব?”
“যাহোক কিছু একটা বাহানা করে দেবে।”
ওর কথা শুনে পার্থ মুচকি হেসে বলল, “উফ্, তুমি পারোও বটে! মাঝে মাঝে তোমার মাথায় যে কিসব ভূত চাপে, বুঝতে পারিনা।” উত্তরে প্রিয়াও মুচকি হেসে বলল, “আর বুঝে কাজ নেই। তাড়াতাড়ি করো, নাহলে দেরী হয়ে যাবে। আর ভরসা নেই ভূতটা হয়তো তোমার ঘাড় মটকাতে চলে আসবে।” বলে নিজের রসিকতায় নিজেই হাসল প্রিয়া। ওর সাথে সেই হাসিতে যোগ দিল পার্থও। সুনিপুণ প্রয়াসে মুহুর্তের মধ্যে পার্থর মনের সমস্ত গ্লানিগুলোকে একটানে ছুঁড়ে ফেলে দিল প্রিয়া। তাও পার্থর অগোচরে।
ট্যাক্সির খোলা জানালা দিয়ে একরাশ ঠাণ্ডা হাওয়া ক্রমাগত আছড়ে পড়ছিল ওদের উপর। কফি হাউস থেকে বেরোবার পর প্রিয়াই ট্যাক্সি ডেকে এনেছিল। ট্যাক্সি দেখে পার্থ জিজ্ঞাসা করল, “ট্যাক্সি নিয়ে কোথায় যাবো?”
“উফ্, চলোতো! তুমি বড্ড কথা বলো।”
আর কথা না বাড়িয়ে ওরা ট্যাক্সিতে চড়ে বসল। ওদেরকে নিয়ে ট্যাক্সি রওনা দিল এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। জানালার ধারে বসা প্রিয়ার নজর আছে বাইরের দৃশ্যের দিকে। আর পার্থ? ওর দৃষ্টি বারবার খুঁজে নিচ্ছে নিজের চাহিদাকে। সেই চাহিদার রূপধারী এক নারীকে। যার অবিন্যস্ত চুল শ্রাবণের মেঘরাশিকে টেক্কা দিয়ে খোলা হাওয়ায় ভাসছে। সেই নারীর হাত নিজের অবাধ্য চুলগুলোকে ব্যর্থ শাসনের প্রচেষ্টার রত। তার ঠোঁটে লেগে থাকা আলগা হাসি শুনিয়ে যাচ্ছে অনেক না বলা কথা। তার চোখের অন্তর্নিহিত দৃষ্টি পাল্লা দেয় রহস্যোপন্যাসকে। সব মিলিয়ে মোহময়ী এক নারী। সেই নারী, যে তার চাহিদা। তার আকাঙ্ক্ষা। তার লুকানো ভালবাসা। কিন্তু লুকানো কেন? অনেকবার প্রিয়া তার কাছে নিজের ভালবাসার কথা জাহির করলেও, সে ওর মনের কথা চেপে গেছে সুকৌশলে। কতকটা ভয়ে। আর অনেকটা সঙ্কোচে। অনেকবার ও ভেবেছে সে-ও নিজের মনের সুপ্ত ইচ্ছাটা প্রিয়াকে জানিয়ে দেবে। কিন্তু পারেনি। এগিয়ে গিয়েও বারবার পিছু হটেছে ওর একগুঁয়ে মন। আর যতবার ও এইভাবে ব্যর্থ হয়েছে, ততবারই নিজের মনকে প্রবোধ দিয়েছে, কোনো না কোনোদিন প্রিয়া নিজে থেকেই ওর মনের কথা বুঝতে পারবে। ওকে একটা কথাও বলতে হবে না। ও স্বপ্ন দেখে সেই দিনটার। আশা করে ও একদিন প্রিয়াকে খুলে বলতে পারবে নিজের মনের সুপ্ত কথা। নিজের চাহিদার কথা। নিজের লুকানো ভালবাসার কথা।
ভাবনার মাঝেই ট্যাক্সিটা থেমে গেল। দরজা খুলে নেমে গেল প্রিয়া। ওর দেখাদেখি নামল পার্থও। নেমে দেখল প্রিয়া ওকে প্রিন্সেপ ঘাটে নিয়ে এসেছে। ট্যাক্সির ভাড়াটা মিটিয়ে প্রিয়া ওর পাশে এসে দাঁড়াল। ওর দিকে তাকিয়ে এবাক হয়ে পার্থ বলল, “হঠাৎ এখানে এলে যে?”
“আঃ, চলোই না। ভিতরে গিয়ে যা জিজ্ঞাসা করার কোরো।” বলে পার্থর হাত ধরে একপ্রকার টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গেল প্রিয়া। তারপর ভিতরে ফাঁকা দেখে একটা বেঞ্চিতে পাশাপাশি বসল দু’জন। অন্ধকারের মাঝে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে থাকা প্রেমিক-যুগলদের মতো ওরাও বসে আছে। ওদের সামনে বিস্তৃত গঙ্গা নদী। আর তার বুকে ইতিউতি নৌকার ভেসে চলা। অনতিদূরে দীর্ঘছায়াধারী রঙবেরঙের বিদ্যাসাগর সেতু। চারিদিক থেকে বইতে থাকা মৃদুমন্দ বায়ু। আর আকাশের বুকে ত্রয়োদশীর ক্ষয়াটে চাঁদ হাজির তার ফ্যাকাশে জ্যোৎস্না নিয়ে। এগুলো মিলেমিশে তৈরী হয়েছে আলাদা একটা জগৎ। মাতাল করা একটা পরিবেশ। যেখানে কোনো চিন্তা নেই। কোনো ভাবনা নেই। কোনো পিছুটান নেই। আছে কেবল দুজন মানুষ। যারা একে অপরের কাছে দায়বদ্ধ। তাদের ভালবাসার কাছে দায়বদ্ধ। বিশ্বাসের কাছে দায়বদ্ধ। এই অন্য জগতে হারিয়ে যাওয়া দুটো মানুষ। পাশাপাশি দুটো শরীর। হাতে হাত ধরা। দৃষ্টি সামনের দিকে নিবদ্ধ। লঘু শ্বাসের আওয়াজ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ নেই। সমস্ত পরিবেশটা যেন চুপ করে সাক্ষী থাকছে ওদের নীরবতার। প্রথম কথা বলল প্রিয়া, “আজ খুব ইচ্ছা করছিল তোমার সঙ্গে এখানে আসার। বসার। তোমার সাথে কিছু কথা বলার। আর তোমার কথা শোনার।”
“কি শুনবে বলো?”
“একটা কবিতা।”
“ঠিক আছে।”
আকাশে করুণ ভাঙা চাঁদ,
আকাশে ধোঁয়ার ফাঁকে মরে যাওয়া চাঁদ;
ফ্যাকাশে চাঁদের এই ঘোলাটে আলোয়
সব-ই কেমন যেন ভাঙা-ভাঙা লাগে।
মনে হয় ভেঙে গেছে উঁচু ছাদগুলো
ভেঙে গেছে মনুমেল্ট গির্জের চুড়ো
ভাঙাচোড়া গোটা পৃথিবীটা।
নতুন কুয়াশা ওড়ে...
“বাঃ, কার কবিতা এটা?”
“কবি দিনেশ দাসের।”
“তুমি সত্যিই খুব ভালো আবৃত্তি করো।”
“তেমন কিছু না। মাঝে মাঝে আওড়াই আর কি।”
দুজনের লঘু বার্তালাপ চাপা পড়ে যায় এই মনোরম পরিবেশের আতিশয্যে। কিন্তু একটা কথা বারবার পার্থর মনে হতে লাগল। এই যে অচল সময়, সামনে দিগন্তবিস্তৃত নদী, বয়ে চলা মৃদুমন্দ বাতাস আর আকাশে কোলে থাকা ত্রয়োদশী চাঁদ ওকে যেন কিছু বলছে। বলছে আজই সেইদিন। আজই প্রিয়াকে বলা উচিত ওর মনের কথা। সুপ্ত চাহিদার কথা। আর ওর লুকানো ভালবাসার কথা। পার্থ মনে মনে ঠিক করে নেয় আজই ও প্রিয়াকে নিজের ভালবাসার কথা জানাবে। সাহসে ভর করে, কিছুটা ইতস্তত করে পার্থ লঘুস্বরে বলল, “প্রিয়া, আজ তোমায় একটা কথা বলতে চাই। যেটা আজ পর্যন্ত তোমাকে বলে উঠতে পারিনি। আসলে সাহস করে উঠতে পারিনি। কিন্তু আজ তোমায় সে কথা জানাতে চাই।”
“কি কথা?”
“আজ আমি তোমাকে বলতে চাই, এই পৃথিবীতে যদি সবচেয়ে বেশী কাউকে ভালোবেসে থাকি, সে হলে তুমি। আমি তোমাকে ভালবাসি প্রিয়া। আমি তোমাকে খুশী রাখতে চাই। তোমার মুখে হাসি হয়ে ফুটে উঠতে চাই। তোমার সঙ্গে এইভাবে জীবনের প্রত্যেকটা মুহুর্ত ভাগ করে নিতে চাই। তোমার সঙ্গে....” অর্ধোচ্চারিত শব্দগুলো ঠোঁটেই আটকে গেল। কারণ নরম একটা আঙ্গুল ওর ঠোঁটের উপর এসে পড়ে ওর বাক্যস্ফুর্তিতে লাগাম টেনে দিয়েছে। “শশশশ...!” সামনের নারীমূর্তিটা ওর সম্পূর্ণ অচেনা। একটা নতুন রূপ ধরা দিতে চাইছে ওর কাছে। ওর কাঁধের উপর রাখা পেলব হাতদুটো অচেনা। ওর দিকে ক্রমশ অগ্রগামী দুটো ঠোঁট অচেনা। আবেশে বন্ধ চোখদুটো অচেনা। এসবের মাঝে সে নিজেও অচেনা। নিজের কাছে। ওর প্রিয়ার কাছে। অন্ধকারের মাঝে দুটো শরীর একে অন্যের দিকে এগিয়ে গেল। পার্থ নিজের কাঁপতে থাকা ঠোঁটদুটো স্থাপন করল প্রিয়ার নরম ঠোঁটদুটোর উপর। সাথে সাথে সারা দেহে যেন বিদ্যুৎ-তরঙ্গ খেলে গেল। প্রিয়ার চোখদুটো বন্ধ। কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা। কিন্তু অনুভব করছে। সে যেন হারিয়ে যাচ্ছে অন্য একটা জগতে। তার নরম ঠোঁটের উপর বলিষ্ঠ ঠোঁটের চাপ, ওর পাতলা কোমরে পার্থর কাঁপতে থাকা হাত, আর মুখের উপর ক্রমাগত পড়তে থাকা তার গরম নিশ্বাস ওকে করে তুলছে পরিণত। দীর্ঘ চুম্বন শেযে আলাদা হল শরীর দুটো। ওরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে নিষ্পলক। ওরা দুজন নিরুত্তর। ওদের পরিবর্তে কথা বলছে নিস্তব্ধতা। কথা বলছে ওদের চোখ। একজোড়া চোথ বক্তা। অন্যজোড়া বাধ্য শ্রোতা। মাঝখানে সময় নিজের তালে বয়ে চলেছে। প্রিয়া মাথা রাখল পার্থর চওড়া বুকে। যেন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিতে চাইছে সেখানে। যেমন ত্রয়োদশী চাঁদ আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে দিগন্তবিস্তৃত আকাশের চওড়া বুকের মাঝে।একটা ঘর। চার দেওয়ালের একটা ঘর। মাথার উপরে একটা বেশী পাওয়ারের এল.ই.ডি. ল্যাম্প জ্বলছে। এ.সি.-র ঠাণ্ডা বাতাসে কেমন যেন শীত শীত করছে। কিন্তু সেটা বন্ধ করার উপায় নেই। কারণ আমার হাত-পা বাঁধা। আক্ষরিক অর্থেই বাঁধা। আমার হাতদুটো হ্যাণ্ডকাফ দিয়ে বিছানার সাথে বাঁধা। হ্যাণ্ডকাফটা নরম অথচ বেশ মজবুত। চেষ্টা করলেও সেটা খোলার সাধ্য আমার নেই। বড়জোর হাটদুটোকে অল্প অল্প নাড়াতে পারি। আর পা দুটো Ankle Restraints দিয়ে বাঁধা। এবং সেদুটো একে অপরের থেকে অনেকটাই সরানো। সৌজন্যে Spread Bar। নামগুলো আগে জানতাম না। এখন জানি। মানে জানতে হয়েছে। নিত্যদিনের এই খেলাটা খেলতে খেলতে বাধ্য হয়েই শিখে গেছি। আজ আমি বন্দিনী। Bondage. এ আর নতুন কথা কি! আজ কয়েকমাস যাবৎ আমি সত্যিসত্যিই বন্দিনী। একজন দাসী। Slave, Sex Slave. তাই আমার প্রভুর ইচ্ছানুযায়ী আজ আমি তাঁর Bondage girl. একটু আগে তিনিই আমার হাতদুটো মাথার উপর তুলে বিছানার সাথে হ্যাণ্ডকাফ দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন। পা দুটোও তিনিই বেঁধে দিয়েছেন। এখন আমি বিছানার উপর চিৎ হয়ে শুয়ে আছি। আলোটা সরাসরি চোখে এসে পড়ছে। টনটন করছে চোখদুটো। তবুও বুজতে পারবো না। কারণ প্রভুর আদেশ নেই। আর যদি তাঁর আদেশ অমান্য করে চোখদুটো ক্ষণেকের জন্যও বুজে ফেলি, তাহলে আমার কপালে অশেষ দুঃখ আছে। আমাকে চরম শাস্তি দেবেন আমার প্রভু। আর সেই শাস্তি যে কত ভয়ংকর হয় তা জানি। গতবারের শাস্তিটা মনে পড়তেই গা’টা শিউড়ে উঠল। সামলে নিলাম। কিন্তু প্রভুর নজর এড়াতে পারলাম না। “উঁহু, Don’t move. Lie down still, like a doll. Sex doll, you know.” প্রভুর স্বর গলিত সীসার মত আমার কানে এল। ওনাকে দেখতে পেলাম না। কারণ উনি আমার পায়ের দিকে একটি রকিং চেয়ারে বসে আছেন। আমি জানি ওনার দৃষ্টি সরাসরি আমার ঊরুসন্ধির দিকে। Spread Bar-এর কারণে আমার পা গুলো বেশ খানিকটা ছড়ানো। ফলে ওনার বিন্দুমাত্র অসুবিধা হচ্ছেনা আমার নির্লোম যৌনাঙ্গের দিকে তাকিয়ে থাকতে। উনি এমনটাই করেন। ঘন্টার পর ঘন্টার আমার নগ্ন শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ওনার মতে এই দৃশ্য অদ্ভুত এক মাদকতার সৃষ্টি করে, যা পৃথিবীর কোনো মদিরাই তৈরী করতে পারেনা। অদ্ভুত মানসিকতা আমার প্রভুর। আমাকে ভোগ করার চেয়ে, আমার নগ্ন সৌন্দর্ষ দেখাই বেশী পছন্দ করেন ওনার। তা বলে কেউ যেন এটা না ভাবে যে, উনি আমাকে একদমই ভোগ করেন না। করেন। এবং ভরপুর ভাবেই করেন। আসলে উনি আমার সঙ্গে নানান উত্তেজক খেলা করেন। আর সেই খেলাতে আমাকে নিতে হয় একটা ভাগ। ইচ্ছা বা অনিচ্ছাতে। আসলে এতে আমার ইচ্ছা বলে কিছুই নেই। আছে কেবল আমার প্রভুর ইচ্ছা। আজ যেমন তাঁর ইচ্ছা হয়েছে আমাকে Bondage হিসাবে দেখার। আমাকে তাই-ই সাজতে হয়েছে। প্রায় আধঘন্টা একই ভাবে শুয়ে আছি। হাতদুটো একভাবে মাথার উপর বেঁধে রাখার কারণে সামান্য যন্ত্রণা হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো নাড়াবার আদেশ নেই। এ.সি.-র ঠাণ্ডা বাতাসটা সারা গায়ে ধাক্কা মারছে। সারা গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। বিশেষ করে আমার স্তনবৃন্তদুটো। ঠা্ণ্ডা বাতাসে সেগুলো কেবলই খাড়া হয়ে উঠছে। আর তাদের চারপাশে ঘিরে থাকা বাদামী বলয় এবং সেখানের সমস্ত লোমবৃন্তগুলো খাড়া হয়ে উঠেছে। হাতে মদের গ্লাস নিয়ে প্রভু আমার পাশে এসে বসলেন। ওনার দৃষ্টিও আমার মত আমার স্তনবৃন্তগুলোর দিকে। সেইদিকে ইশারা করে ছোটছেলের মত উচ্ছসিত গলায় বলে উঠলেন, “Look at you arousal, baby. It looks awesome.” ওনার কথা শুনে আমার সত্যি করেই খুব লজ্জা পেল। এবার উনি যেটা করলেন সেটা আমি ভাবতেই পারিনি। উনি একটা বরফের টুকরো নিয়ে সেটাকে আমার বাম স্তনবৃন্তের উপর আলতো করে ছোঁয়ালেন। ঠাণ্ডা সেই স্পর্শটা আমি যেন সারা শরীর দিয়ে টের পাচ্ছিলাম। এবার উনি বরফটাকে আমার স্তনবৃন্তের উপর গোলাকারে বোলাতে লাগলেন। একে এ.সি.-র ঠাণ্ডা হাওয়া তার উপর বরফের ঠাণ্ডা স্পর্শ আমি আর সোজা হয়ে শুয়ে থাকতে পারছি না। “উমমমহহহ...” অস্ফুট একটা গোঙানি আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এল। আমার গোঙানির শব্দে উনি আরো আনন্দ পেলেন। এবার উনি বরফটাকে আমার খাড়া স্তনবৃন্তের উপর শক্ত করে চেপে ধরলেন। জায়গাটা কনকন করে উঠল। কিন্তু ওনার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। উনি ব্যস্ত নিজের খেলা নিয়ে। খেলাই বটে। আমার শরীরটা ওনার কাছে কেবল একটা খেলনা। যেটা নিয়ে উনি যখন খুশী, যেভাবে খুশী খেলেন। যেমন আজ খেলছেন। কিন্তু ওনার খেলা ক্রমশ আমার সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। হাতদুটো বাঁধা থাকার কারণে ওনার হাতটা সরিয়েও দিতে পারছি না, আবার নিজের সংবেদনশীল অঙ্গে এভাবে অত্যাচারও সহ্য করতে পারছি না। শরীরটা কেঁপে উঠল একবার। চটাস্! ওনার হাতের বিরাশি শিক্কার চড় নেমে এল আমার নগ্ন পাছায়। “তোমাকে কতবার স্থির হয়ে থাকতে বলেছি না?” আমার ফর্সা পাছাটা লাল হয়ে গেছে বোধহয়। প্রচণ্ড জ্বলছে। একটু হাত বোলাবো, সে সুযোগও নেই। চোখ ফেটে জল বেরোতে চাইছে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। প্রায় পাঁচমিনিট ধরে লাগাতার বরফ চেপে রাখার পর যখন উনি স্তনবৃন্তটা থেকে হাতটা সরালেন, আড়চোখে চেয়ে দেখলাম সেটার সাথে শুকনো কিসমিসের ফারাক বেশী কিছু নেই। এবার উনি নিজের মুখটা বাড়িয়ে আমার স্তনবৃন্তের কাছে নিয়ে এলেন। নিজের ঠাণ্ডা স্তনবৃন্তের উপর ওনার গরম নিঃশ্বাসটা অনুভব করতে পেরে সারা শরীরে যেন কেমন একটা শিরশিরানি বয়ে গেল। আমি জানি এবার উনি কি করবেন। আমার ভাবনাটাকে সত্যি করে উনি মুখ খুলে আমার ঠাণ্ডা স্তনবৃন্তটাকে নিজের মুখে ঢুকিয়ে নিলেন। তারপর একটি বাচ্চাছেলে যেমন তার মায়ের স্তন মুখে পুড়ে চুষতে থাকে, ঠিক তেমন ভাবেই তিনিও আমার স্তনবৃন্তটা চুষতে শুরু করলেন। কখনও চুষছেন, কখনও দাঁতের ফাঁকে রেখে আলতো করে কামড়াচ্ছেন। হঠাৎ কি খেয়াল হতে আমার ডান স্তনটাকে নিজের মুঠোয় পুরে নিলেন। তারপর আস্তে আস্তে সেটাকে পাম্প করতে লাগলেন। একই সঙ্গে দুটি স্তনেই ওনার আক্রমণে আমি হকচকিয়ে গেলাম। একদিকে ওনার দাঁতের কামড়, উল্টোদিকে ওনার হাতের টিপুনি। আমি আর পারছি না। শরীরটাকে ক্রমাগত নাড়িয়ে ওনার হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছি। তাতে ফল হচ্ছে উল্টো। ওনার আক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে। অবশেষে উনি থামলেন। আমার স্তনবৃন্তকে দলিত মথিত করে আমার পাশ থেকে উঠে গেলেন। আমি ভাবলাম, আজ বুঝি এখানেই ইতি। পরক্ষণেই ভুলটা টের পেলাম নিজের শরীরেই। এত তাড়াতাড়ি ছুটি নেই আমার। নিজের ঊরুতে বরফের ঠাণ্ডা স্পর্শ টের পেতেই ওনার মতলবটা বুঝতে পারলাম। একবার মাথাটা তুলে দেখার চেষ্টা করলাম। পারলাম না। উনি আমার পায়ের গোড়ালি থেকে শুরু করে বরফটাকে ক্রমশ উপরের দিকে তুলতে লাগলেন। যত উপরের দিকে উঠছেন আমার ছটফটানি বাড়ছে। ক্রমশ হাঁটু বেয়ে নিষিদ্ধ এলাকার দিকে পাড়ি দিয়েছেন উনি। আমার ভাগ্যে আজ সত্যিই কষ্ট আছে। অবশেষে ঊরুতে এসে থামলেন। তারপর নিজের অবস্থান পালটে চলে এলেন আমার নাভিমূলে। নাভির চারিদিকে জলের বৃত্ত রচনা করে ওনার হাত ক্রমশ নিম্নগামী। নির্লোম উপত্যকায় ক্রমাগত বরফটাকে ঘষছেন। আর পারলাম না। পাদুটোকে জড়ো করে ফেললাম। পরক্ষণেই নিজের পাছায় দ্বিতীয় শাস্তিটা পেলাম। এবার আরোও জোরে। আর তারপর আমার পাদুটো সরিয়ে দিলেন। যৌনাঙ্গের উপর বারকয়েক বরফ ঘষে একমুহুর্ত থামলেন। তারপর বাঁ হাতের তর্জনী, মধ্যমা আর বৃদ্ধাঙ্গুলির সাহায্যে আমার যৌনাঙ্গটাকে সামান্য ফাঁক করে বিনা প্ররোচনায় গোটা বরফটাকে ভিতরে ঠেলে ঢুকিয়ে দিলেন। আমার গোটা শরীরটা খাবি খেয়ে উঠল। বিছানা থেকে পিঠটা উপরে উঠে গেল। উনি শক্ত করে আমার কোমরটা ধরে আমাকে আবার বিছানায় শুইয়ে দিলেন। আমার নড়াচড়ার কারণে বরফটা বেরিয়ে এল। উনি সেটাকে আবার গুঁজে দিলেন ভিতরে। এখানেই শেষ নয়। অন্য একটা বরফ নিয়ে সেটাকে চেপে ধরলেন আমার খাড়াই ভগাঙ্কুরটার উপর। আজ আমি মরেই যাবো। চোখদুটো শক্ত করে বুজে ফেললাম। কিন্ত তাতে সুরাহা কিছু হওয়ার নয়। উনি ভিতরের বরফটাকে বের করে আনলেন। তারপর আস্তে আস্তে ঢোকাতে আর বের করতে লাগলেন। আমার সবচেয়ে সংবেদনশীল অঙ্গটা ক্রমশ অবশ হয়ে আসছে সেই ঠাণ্ডা আবেশে। আমার গোটা শরীরটা নিস্ফল উত্তেজনায় কাঁপছে থরথর করে। উনি এখনও আমাকে ধরে আছেন শক্ত করে। আর একই সঙ্গে আমার যৌনাঙ্গ আর ভগাঙ্কুরের উপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। অবশেষে আমাকে ক্নান্ত করে থামলেন উনি। তারপর ধীরে ধীরে আমার উপর উঠে এলেন। নিজের ঠোঁটদুটো রাখলেন আমার নরম ঠোঁটদুটোর উপর। আর শুরু করলেন ওনার কর্কশ চুম্বন। নিজের জিভটাকে ঠেলে গুঁজে ঢুকিয়ে দিলেন আমার মুখের ভিতর। তারপর আমার জিভের সাথে খেলা শুরু করলেন। নিজের পেটের উপর শক্ত কিছু একটার খোঁচা টের পেলাম। আর আন্দাজেই বুঝতে পারলাম ওনার অস্ত্রটি যুদ্ধের জন্য পুরোপুরিভাবে তৈরী। আমাকে বিন্দুমাত্র সামলাবার সুযোগ না দিয়ে উনি শেষ আঘাতটা করে দিলেন। চুম্বনরত অবস্থাতেই নিজের শিশ্নটিকে ধরে রাখলেন আমার যৌনাঙ্গের ঠিক মুখে। আর সাথে একটি জোর ধাক্কা। আর সঙ্গে সঙ্গে...
এক ঝটকায় ঘুমটা ভেঙ্গে গেল প্রিয়ার। দুঃস্বপ্ন দেখছিল সে। আস্তে আস্তে বিছানায় উঠে বসল ও। গোটা শরীরটা ঘামে ভিজে গেছে। হাত দিয়ে গলা আর ঘাড়ের ঘামগুলো মুছল। তারপর বিছানা থেকে উঠে বাইরের ব্যলকনিতে এসে দাঁড়াল। বাইরে বইতে থাকা মৃদুমন্দ বাতাস ওকে আরাম দিল। গোটা স্বপ্নটা আবার ফিরে এল ওর মনে। সামান্য একটা দুঃস্বপ্ন। অন্য কেউ হলে এটাকে উড়িয়ে দিত। কিন্তু ও সেটা পারল না। কারণ প্রিয়া জানে আজকের এই দুঃস্বপ্নটাই ওর জীবনে চরম বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছে।একেকটা সকাল দিয়ে কেবল সেই দিনেরই নয়, একটা মানুষের জীবনও নতুন করে শুরু হয়। সেই রকমই একটা সকাল আজ প্রিয়ার জীবনে এসে উপস্থিত হয়েছে। জানালা দিয়ে কাঁচা সোনালী রঙের রোদটা ঘরে ঢুকে ওর সারা দেহে যেন আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে গেল। ঘুমটা একটু আগেই ভেঙ্গেছিল ওর। মুখে রোদটা এসে পড়তে ও বিছানায় উঠে বসল। তারপর দুটো হাত ছড়িয়ে আলমোড়া ভাঙ্গল। ঘুমের রেশটা একটু একটু করে চোখ থেকে বিদায় নিচ্ছে। জানালার দিকে চোখ পড়তে দেখল বাইরে রোদে মোড়া একটা ঝকঝকে দিন উপস্থিত হয়েছে। বিছানা থেকে নেমে ও জানালার কাছে হাজির হল। কাচের ওপাশে কিছুটা হাইরাইজ, কিছুটা সবুজ ছোপ আর কিছুটা ব্যস্ত রাস্তাকে সঙ্গী করে তিলোত্তমা জেগে উঠছে একটু একটু করে। রোদ ঝলমলে দিনটা দেখে ওর মনটা খুশীতে ভরে উঠল। আনন্দ তার এমনিই হচ্ছে। আজ থেকে তার একটা নতুন পরিচয় এই পৃথিবীতে। সে পার্থ সাহার স্ত্রী। পার্থর সঙ্গে ওর বিয়েটা কেমন যেন একটা স্বপ্নের মত বলে মনে হচ্ছে। বিগত কয়েকটা মাসে ওদের দুজনের জীবনেই একটা আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। একটা সময় পর্যন্ত ওরা একটা অনিশ্চিত জীবনের অধিকারী ছিল। পার্থর কোনো চাকরী ছিলনা। ছিলনা কোনো রোজগারের পন্থা। তাই প্রিয়ার শত অনুরোধ, উপরোধ সত্ত্বেও ও বিয়েটা সেরে ফেলতে রাজী ছিলনা। একই কথা ও প্রিয়ার বাবা-মাকেও জানিয়েছিল। আগে চাকরী করে একটা রোজগারের ব্যবস্থা করব, তারপর বিয়ে, এই ছিল ওর ধনুকভাঙ্গা পণ। তাতে অবশ্য প্রিয়ার খারাপ লাগেনি। উল্টে গর্ব বোধ করেছে, পার্থর মত একটা Self-respected মানুষকে নিজের বন্ধু, নিজের সঙ্গী হিসাবে পাওয়ার কারণে। এই একটা কারণেই ওর পার্থকে এত ভাল লাগে। নিজের আত্ম-সম্মানের থেকে এই পৃথিবীতে আর কিছু এতটা আপন নয় পার্থর কাছে। তাই ও আর জোর করেনি। বরং অপেক্ষা করে গেছে পার্থর জন্য। তারপর হঠাৎ মাস তিনেক আগে পার্থ ওকে ফোন করে। ফোনটা ধরতেই ইথার-তরঙ্গ বেয়ে অনেকটা আনন্দ এসে পৌঁছায় ওর কাছে। এতটা আনন্দের কারণ প্রিয়া বুঝতে পারেনি। অবশেষে পার্থ বলে, “আমি একটা চাকরি পেয়ে গেছি, প্রিয়া।” কথাটা শুনে মনটা পাখির পালকের মত উড়ে গেল নিমেষে। “ওমা! কবে? কোথায়?”
“উফ্ তুমি তো দেখছি নিঃশ্বাস ফেলারও সুযোগ দেবে না। বলব। সব বলব। তবে ফোনে নয়। সামনাসামনি।”
“কোথায় যাবে? কফিহাউস?”
“নাঃ। এবার কফিহাউস নয়। অন্যকোথাও।”
“কোথায় তো সেটা বলো।”
“তোমাকে সে বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না। তুমি ড্রেস পরে রেডি থাকো। আমি তোমাদের বাড়ি থেকে পিক-আপ করে নেবো।”
প্রিয়ার কোনো কথা বলার আগেই পার্থ ফোন কেটে দিয়েছিল। মনটা আনন্দে ভরে উঠেছিল। একদৌড়ে মাকে জানিয়েছিল সুখবরটা। মা কপালে হাত ঠেকিয়ে ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে বলেছিল, “ঈশ্বর মঙ্গলময়।” যতটা দ্রত সম্ভব ও তৈরী হয়ে গিয়েছিল সেদিন। তারপর অপেক্ষা। এক একটা মিনিট যেন এক একটা যুগের সমান। এতদিনের অপার অপেক্ষা শেষ হওয়ার এক নতুন অপেক্ষা। এই অপেক্ষায় কোনো বিরক্তি নেই। আছে অগুন্তি খুশী। অবশেষে আধঘন্টা পর ঘরের সামনে গাড়ির হর্ণ শুনে ছুটে গিয়ে দরজা খুলেছিল। অনলাইনে ভাড়া করা ক্যাবে বসে থাকা পার্থ বলে, “চলো।” দ্বিতীয় কোনো প্রশ্ন না করে প্রিয়া গাড়িতে এসে বসে। ক্যাবের পিছনের সিটে ওরা দুজন পাশাপাশি বসে। ক্যাব ছাড়তেই প্রিয়ার আগ্রহের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। সাথেসাথে প্রশ্নের ঝড় আছড়ে পড়ে পার্থর উপরে। মুচকি হেসে পার্থ বলে, “এত অস্থির হয়োনা। এতদিন যখন অপেক্ষা করে এলে, তখন আর কিছুটা সময়। জানোই তো সবুরে মেওয়া ফলে।” আর কোনো কথা বলেনি প্রিয়া। ও ভালমতই জানে যে পার্থ ওকে কথাটা এখানে বলবে না। তাই ও চুপ করে বসে রইল। একসময় ক্যাব তার নিজস্ব গন্তব্যে এসে পৌঁছাল। পার্থকে নামতে দেখে প্রিয়াও গাড়ি থেকে নামল। আর নেমেই অবাক হয়ে গেল। ও পার্থকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি আমাকে প্রিন্সেপ ঘাটে নিয়ে এলে কেন?” পার্থ ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “এখান থেকেই তোমার আর আমার প্রেমের আসল যাত্রা শুরু হয়েছিল। তাই ভাবলাম এখানেই তোমাকে সুখবরটা জানাই। চলো। ভিতরে বসে তোমাকে সবকথা বলব।” ওরা দুজনে ভিতরে ঢুকে বেঞ্চিতে গিয়ে বসল। প্রিয়া বলল, “এবার সব খুলে বলো। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। কোথায় চাকরী পেলে? স্যালারি কত?”
“বলছি। বলছি। চাকরীটা আমি পেয়েছি Tech-India Pvt. Ltd. কোম্পানীতে।”
“সেতো কলকাতার নাম করা বেসরকারী কোম্পানী!”
“জানি। কয়েকদিন আগে ওরা কাগজে অ্যাড দিয়েছিল। জুনিয়র অ্যাকাউন্টেটের পোস্টের জন্য। আমি অ্যাপ্লিকেশন করেছিলাম। আজকে ইন্টারভিউ ছিল। And you know, I get the job. একবছর অ্যাপ্রেনটিশ হিসাবে কাজ করতে হবে। ঠিকঠাক কাজ করতে পারলে এক বছরের মধ্যেই প্রমোশন। আর স্যালারী এখন মাসে হাজার বারো। পরে আরো বাড়বে।”
কথাটা শুনে আনন্দে লাফিয়ে উঠে দুহাতে পার্থর গলা জড়িয়ে ধরে ওর গালে চুমু খেল প্রিয়া। “I’m very very happy. I love you.”
“I love you too.”
এরপর একটা একটা দিন যেন স্বপ্নের মত করে কেটে যেতে লাগল। পরের সপ্তাহেই নতুন কাজে পার্থ জয়েন। মেস ছেড়ে দিয়ে দু’কামরার ঘরভাড়া। আর প্রিয়ার নতুন অপেক্ষা। অবশেষে পার্থ রাজী হল বিয়ের পিঁড়িতে বসার জন্য। গ্রামের বাড়ি থেকে পার্থর বাবা-মা কলকাতায় এসেছিলেন। বিয়েটা কলকাতাতেই হয়েছে। পরের দিন পার্থর বাবা-মা আর অন্যান্য আত্মীয়েরা ফিরে গেছেন। পার্থ আর প্রিয়া এসে উঠেছে ওদের নতুন ঘরে। গতকাল ছিল ওদের কালরাত্রি। তাই ওরা দুজন আলাদা আলাদা ঘরে ঘুমিয়েছিল। আজকে ওদের ফুলশয্যা। কথাটা ভাবতেই মনের মধ্যে একটা লজ্জা পাক খেয়ে উঠল। সময় যেন কত তাড়াতাড়ি বয়ে যায়! এই ক’দিন আগে পর্যন্তও ওরা ছিল একে অপরের বন্ধু। আর আজ সেই পরিচয়টাই পাল্টে গিয়ে হয়ে গেছে স্বামী-স্ত্রী।
“Good morning ma’am. আশা করি রাতে ঘুম হয়েছে। আজকে আমার মুখ দেখতে কোনো অসুবিধা নেইতো?”
প্রিয়া ঘুরে দেখল ওর পিছনে পার্থ হাতে দুটো চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর কথা শুনে প্রিয়া হেসে ফেলল। আসলে ওর মা বলে গিয়েছিলেন যে কালরাত্রির দিন ওর দুজন যেন একে অপরের মুখ না দেখে। সংস্কার বশে কালকে ওকে নিজের কাছে ঘেঁষতে দেয়নি প্রিয়া। তাই আজকে ওর এই প্রশ্ন। ও মুচকি হেসে জবাব দিল, “নাঃ, আজকে আর কোনো অসুবিধা নেই।” পার্থ এগিয়ে এসে ওর হাতে চায়ের কাপটা দিয়ে বলল, “বাঁচালে।”
“কিন্তু তুমি চা করতে গেলে কেন? আমি তো যাচ্ছিলাম।”
“আমি ভাবলাম তুমি চা করতে পারো কিনা। বাপ-মায়ের একমাত্র মেয়ে হয়তো কোনোদিন রান্নাঘরেই ঢোকোইনি।”
“মোটেও না। আমি সবকাজ করতে পারি। বাপ-মায়ের একটা মেয়ে হতে পারি, তবে বাকীদের মত আদুরী নই। মা আমাকে সব কাজ শিখিয়ে দিয়েছে।”
“ঠিক আছে। কাল থেকে তুমিই চা করবে। এখন চা-টা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। আর আমাকে কিছু একটা রেডি করে দাও, খেয়ে আমি অফিস যাবো।”
পার্থর কথা শুনে প্রিয়া অবাক হয়ে বলল, “সে কি! তুমি তো ক’দিনের ছুটি নিয়েছিলে? আর কথা ছিল আমরা আজকে দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিতে যাবো। তাছাড়া ঘরে হাজার একটা কাজ পড়ে আছে, আর তুমি বলছো অফিস যাবে।”
“আরে কি করি বলোতো। বেসরকারী অফিসে চাকরী করি। নতুন জয়েন করেছি। বসের মুখের উপর কথা বলি কি করে? কাল রাতে স্যার ফোন করেছিলেন। আজ থেকে কোম্পানীর অডিট শুরু হচ্ছে। জুনিয়র অ্যাকাউন্ট্যাট হিসাবে আমাকে থাকতেই হবে। বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে। না গেলে চাকরী নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। তখন তোমায় কি খাওয়াবো, প্রিয়া সুন্দরী?” রসিকতা করে বলল পার্থ।
ওর কথা শুনে প্রিয়া লজ্জা পেয়ে বলল, “ঠিক আছে। তুমি কাজে যাও। আমি এইদিকটা সামলে নেবো।”
“ঠিক তো?”
ঘাড় নেড়ে নিজের সম্মতি জানাল প্রিয়া। পার্থ বলল, “ঠিক আছে আমি ততক্ষণে বাজার থেকে ঘুরে আসি। তুমি ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে নাও।”
পার্থ অফিস বেরিয়ে যাওয়ার পর নিজের সংসারের দিকে নজর দিল প্রিয়া। আজ নিজেকে কেমন যেন অন্য মানুষ বলে মনে হচ্ছে। হঠাৎ করে এত দায়িত্ব এসে পড়াতে নিজেকে কেমন যেন পরিণত বলে মনে হচ্ছে। এই ছোট্ট ঘরটা নিজের। এই ছোট্ট সংসারটা নিজের। আর? আর পার্থও তার নিজের। একান্ত নিজের। এক চমকে নিজেকে চিন্তার জগৎ থেকে বের করে নিয়ে এল প্রিয়া। এখন অত বিলাসিতা করে সময় নষ্ট করার মত পর্যাপ্ত সময় তার হাতে নেই। এই অগোছালো ঘরটাকে সাজিয়ে তুলতে হবে। বাজার থেকে কিছু কিনে আনতে হবে। সন্ধ্যেবেলা ওরা নিজেদের কিছু বন্ধুদেরকে নিমন্ত্রণ করেছে। তার আগে সব কাজ একা হাতে শেষ করে তারপর নিজেকে তৈরী হতে হবে। নিজের জন্য। পার্থর জন্য। আজকের রাতের জন্য। তাদের ফুলশয্যার জন্য।সন্ধ্যে থেকে বন্ধুরা একে একে সবাই এসেছিল। সবাই বসে একসাথে আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, হাসি-গল্প, একে অন্যের লেগপুলিং শেষ করে সবাই বিদায় নিল অবশেষে। বন্ধুদের বাইরে পর্যন্ত দাঁড়িয়ে এসে দরজা বন্ধ করে ভিতরে এল পার্থ। অফিস থেকে আজ বিকালেই ফিরে এসেছিল ও। আর বেল বাজানোর সাথে সাথেই প্রিয়া হাসিমুখে দরজা খুলে বলেছিল, “Welcome back Mr. husband. How is it looking?” ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে গেছিল ও। যদিও মেস ছেড়ে এই ভাড়াবাড়িতে ও এসেছে মাস দুয়েক, তবুও বেশ খানিকটা অগোছালো হয়েই পড়েছিল সারাবাড়িটা। কিন্তু মাত্র একবেলাতেই প্রিয়ার হাতের ছোঁয়ায় সেই ঘরটাই যেন অচেনা লাগছে। সেইসাথে অচেনা লাগছে তার প্রিয়াকেও। কোমরে আঁচলটা গাছকোমর করে গোঁজা আর ঘাড়ের উপর আলগা খোঁপা। কপালে মাঝারী একটা টিপ আর সিঁথিতে গাঢ় করে লাগানো সিঁদুর। সবমিলিয়ে আর প্রিয়াকে একদম অন্যরকম লাগছে। মনে হচ্ছে কদিন আগেও প্রিয়া বলে যে মেয়েটাকে সে চিনত, এ যেন সে নয়। এ অন্য কোনো একজন। সে ছিল তার প্রেমিকা, আর এ হচ্ছে তার স্ত্রী। তার অর্ধাঙ্গিনী। তার সারা জীবনের সাথী। “তোমার আর অভ্যাস বদলালো না। প্রথম দিনেও ওরকম ক্যাবলা হয়ে তাকিয়ে ছিলে, আজও একইভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছো। কি দেখছো অমন করে?” প্রিয়ার প্রশ্ন ওকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনে।
“আমার নতুন বউকে।” মুচকি হেসে পার্থ জানায়।
“থাক, আর কথা বলতে হবেনা। সবাই এখনই চলে আসবে। তৈরী হয়ে নাও। তোমার জামাকাপড় বের করে ইস্ত্রি করে রেখেছি।”
“বাব্বা, একদিনেই তো পুরো গিন্নী হয়ে উঠেছো দেখছি।”
“উফ্, তোমার সাথে কথায় পেরে ওঠা আমার কম্মো নয়। এখন চলো।”
বিকালের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে পার্থ বেডরুমের দিকে পা বাড়াল। যেখানে তার জন্য অপেক্ষা করে আছে ওর প্রিয়া।
ঘরের ভিতর ঢুকে এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেল পার্থ। দরজাটা বন্ধ করে বিছানায় গিয়ে বসল। ওর সামনে মাথা নীচু করে বসে আছে প্রিয়া। পরণে ওরই পছন্দ করে কেনা গোলাপী বেনারসী। সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ। ও খুঁজে খুঁজে গোলাপী রঙের শাড়িটাই কিনেছিল। একটু বেশী দাম হওয়া সত্ত্বেও। ও চেয়েছিল প্রিয়া ঐ রঙেরই শাড়ি পরুক, যে রঙের শাড়িতে ও প্রথমবার প্রিয়াকে দেখেছিল। গোলাপী। ওর প্রিয় রঙ। ভালবাসার রঙ। ওর থেকে একটু দূরে বসে আছে প্রিয়া। কিন্তু কেমন যেন একটু জড়োসড়ো ভাব। সেটা কি আসন্ন মিলনের ভয়ে? নাকি স্বাভাবিক লজ্জাবশত? পার্থ জানে না। ও শুধু জানে আজকের রাত কেবল ওদের দুজনের রাত। আজকের রাত ভালবাসার রাত। আজকের রাত মিলনের রাত। আজকের রাত সবকিছু ভুলে একে অন্যের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার রাত। প্রায় ফিসফিসিয়ে ডাকল পার্থ, “প্রিয়া...” প্রিয়া ওর মুখের দিকে তাকাল। চোখের তারায় সঙ্কোচ স্পষ্ট। যেটাকে কাটাতেই হবে। নিজেরই কাঁপতে থাকা হাতটা শক্ত করে রাখল ওর নরম হাতের উপর। মুখে কিছু বলল না। কিন্তু চোখের ভাষায় জানালো সঙ্কোচের কোনো কারণ নেই। প্রিয়ার দিকে আরোও কিছুটা এগিয়ে গেল ও। ঘন হয়ে বসল ওর শরীর ছুঁয়ে। হাত বাড়িয়ে খোঁপাটাকে খুলে ছড়িয়ে দিল ওর চুলগুলোকে। একরাশ চুল এসে পড়ল প্রিয়ার কাঁধে। পার্থ শরীরটাকে আরোও এগিয়ে নিয়ে গিয়ে মুখোমুখি হল প্রিয়ার। ঠোঁটদুটোর মধ্যে তফাত কেবল কয়েক ইঞ্চি। কয়েক মুহুর্ত সময় নিল পার্থ। ততক্ষণে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে প্রিয়া। অনুভব করছে নিজের মুখের উপর ক্রমাগত পড়তে থাকা পার্থর গরম শ্বাস। আর কল্পনা করে নিচ্ছে বহির্জগতে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলোকে। আজ ওর ভয় পাচ্ছে। সঙ্কোচ হচ্ছে। যে পুরুষটাকে ও এতদিন ভালবেসে এসেছে, আজ তারই স্ত্রী হয়ে, তার অঙ্কশায়িনী হতে যেন কুণ্ঠা বোধ হচ্ছে। নিজের মনকে কষে ধমক লাগাল প্রিয়া। সামনে বসে থাকা পুরুষটা কোনো অচেনা মানুষ নয়, বরং ওর স্বামী। তাকে কোনোভাবেই নিরাশ সে করবে না। করতে পারে না। সমস্ত কুণ্ঠাগুলোকে মন থেকে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দৃঢ়ভাবে চোখ খুলল প্রিয়া। যে অন্য কেউ নয়, পার্থর স্ত্রী। প্রিয়া নিজেই নিজের শরীরটাকে এগিয়ে নিয়ে গেল। নিজের ঠোঁটদুটোকে রাখল পার্থর ঠোঁটের উপর। ভরপুরভাবে চুম্বনের স্বাদ পাওয়ার আশায়। স্ত্রীর মনের কুণ্ঠার বালির বাঁধটা সরে গেছে বুঝতে পেরে আরও সচেষ্ট হল পার্থ। একটা হাত রাখল প্রিয়ার কাঁধে। আর ঠোঁটদুটোকে মিশিয়ে দিতে লাগল ওর নরম ঠোঁটদুটোতে। প্রিয়ার গরম ঘন হয়ে আসা শ্বাস ওকে যেন গলিয়ে দিচ্ছে। ও আলতো করে প্রিয়ার নিচের ঠোঁটটাকে নিজের মুখে পুরে চুষতে লাগল। এবং সেই সাথে নিজের জিভটাকে ঢুকিয়ে দিল ওর মুখে। সামান্য হাঁ করে নিজের মুখের ভিতর প্রিয়া ঢুকিয়ে নিল পার্থর জিভটাকে। পরের কিছুটা সময়ে ওর মুখের ভিতর ঝড় তুলল জিভদুটো। তারা এখন নিজেদের মধ্যে ক্রীড়ামত্ত। বেশ কিছুটা সময় পরে ওদের চুম্বন পর্ব শেষ হল। প্রিয়ার মুখ থেকে নিজের মুখটা সরিয়ে নিয়ে দেখল প্রিয়া একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। পার্থ ভালো করে লক্ষ্য করে দেখল। প্রিয়ার চোখে কোথাও আর সঙ্কোচ আর কুণ্ঠা নেই। তার জায়গা নিয়েছে একটুখানি লজ্জা আর অনেকটা দুষ্টুমি। পার্থ বুঝতে পারল প্রিয়া আস্তে আস্তে নিজেকে তৈরী করে তুলছে আজকের রাতের জন্য। ওকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য।
পার্থ হাত বাড়িয়ে প্রিয়ার কাঁধ থেকে শাড়ির আঁচলটা সরাতে যেতেই প্রিয়াকে ওকে ইশারায় বারণ করল। সাথেসাথে থেমে গেল ও। প্রিয়া মুচকি হেসে ঘরের আলোর দিকে ইশারা করল। পার্থ বুঝতে পারল প্রিয়া আগের থেকে অনেক সহজ হলেও আলোতে তার সামনে নগ্ন হতে ওর সম্ভ্রমে বাধছে। ও জোর করল না। বিছানা থেকে উঠে আলোটা নিভিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে একরাশ অন্ধকারের মাঝে হারিয়ে গেল ওরা দুজন। তবে পুরোপুরি নয়। খোলা জানালার ফাঁক দিয়ে চাঁদের নরম আলো ঢুকতে লাগল ঘরের মধ্যে। তাতে পুরোপুরি অন্ধকারটা না কাটলেও আবছা ভাবে সবকিছুই দেখা যাচ্ছে। সেই আবছায়াতে পার্থর চোখদুটো খুঁজে নিল ওর প্রিয়াকে। ও আবার ওর পাশে গিয়ে বসল। ও কিছু করার আগেই প্রিয়া নিজেই ব্লাউজ আর শাড়ি পিন-আপটা খুলে দিল। ভারী আঁচলটা অভিকর্ষের টানে নেমে এল কাঁধ থেকে। অন্ধকারে চোখদুটো অনেকটাই সয়ে গেছে। দেখতে কোনোরকম অসুবিধা হচ্ছেনা। আঁচলটা নিচে পড়ে যাওয়াতে শাড়িটা ওর বুক থেকে অনেকটাই সরে গেছিল। বাকিটা সরিয়ে দিল পার্থ। ব্লাউজে ঢাকা বুকটা শ্বাসের তালে তালে উঠছে আর নামছে। পার্থ চেয়ে দেখল প্রিয়া আবার নিজের চোখদুটো বুজে ফেলেছে। তবে এবার সঙ্কোচে নয় বরং লজ্জায়। পার্থ হাতদুটো এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ব্লাউজের প্রথম হুকটা খুলল। কিছুটা উন্মোচন হল নিষিদ্ধ রহস্যের। তারপর দ্বিতীয় হুক। আরোও কিছুটা উন্মোচন। তারপর একে একে ব্লাউজের সব হুকগুলো খুলে ফেলতেই গোলাপী অন্তর্বাসে ঢাকা বুকটা সামনে এল। প্রিয়ার গা থেকে ব্লাউজটা খুলে মেঝেতে রাখল পার্থ। মুখটা এগিয়ে নিয়ে গেল ওর বুকের কাছে। শাওয়ার জেল, পাউডার আর ডিওড্রেন্টের মিশ্র গন্ধ ঝাপটা মারল নাকে। তার সাথে মিশে আছে প্রিয়া শরীরের নিজস্ব মিষ্টি একটা গন্ধ। উত্তেজনায় ঘেমে ওঠা বুকটার আরো কাছে মুখটা নিয়ে গেল পার্থ। জোরে জোরে দামামা বাজাতে থাকা হৃৎপিণ্ডটার আওয়াজ পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে। পার্থ নিজের ঠোঁট রাখল প্রিয়ার গলায়। কণ্ঠমণিটা নড়ে উঠল দু’বার। উত্তেজনায় বিছানার চাদরটাকে খামচে ধরল দু’হাতে। পার্থর ঠোঁট বিভাজিকা ছুঁই ছুঁই। অন্ধকারে আন্দাজে হাত বাড়িয়ে খুঁজতে লাগল অন্তর্বাসের হুক। কিন্তু অনভ্যাসে ব্যর্থ হল সে। একবার। দু’বার। অবশেষে নিজেই সেটা খুলে দিল প্রিয়া। দায়িত্ব ভাগ করে নিল পার্থও। সযত্নে সেটাকে ওর বুক থেকে সরিয়ে রাখল মেঝেতে। অন্তর্বাসের আড়াল সরে যেতেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল ফর্সা স্তনদুটো। সেই সাথে ওরা দুজনেও। একটা নিষিদ্ধ আকর্ষণে ভারী স্তনদুটোর উপরে হাত রাখল পার্থ। অভিকর্ষকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মাথা উঁচু করে আছে অহংকারী স্তনযুগল। সৃষ্টিকর্তার অমোঘ সৃষ্টিতে যেন তারা অভিমানী। পৃথিবীর সব বাধা ভেদ করে মাথা তুলে আছে তারা। হাত রাখল পার্থ। অষ্টাদশী কন্যার পীণোদ্ধত কুচযুগলে হাত রাখল পুরুষ। সৃষ্টিকর্তার কি অমোঘ সৃষ্টি! একইসাথে তারা কঠিন আবার নরমও। একইসাথে তারা পেলব আবার কাঠিন্য তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। অপলক দৃষ্টিতে নিজের স্ত্রীর নগ্ন সৌন্দর্য্য দর্শন করতে লাগল পার্থ। নিষিদ্ধ রূপসুধা পান করতে লাগল নিজের তৃষ্ণার্ত চোখ দিয়ে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ওর মনে হল তার সামনে বসে থাকা নারীমূর্তিটি কোনো মানবীর নয়। স্বর্গের কোনো যক্ষকন্যা বসে আছে তার নগ্নতা নিয়ে। কিম্বা কোনো দক্ষ কারিগরের হাতে তৈরী জীবন্ত কোনো নারীমূর্তি। পার্থ আলোটা নিভিয়ে দিতেই লজ্জায় চোখ বুজে ফেলেছিল প্রিয়া। তারপর কেবল অনুভব করে গেছে পার্থর প্রতিটা পদক্ষেপের। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ কোনো সাড়া না পেয়ে ধীরে ধীরে চোখ খুলল সে। সামনে তাকিয়ে দেখল পার্থ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। বিশেষত তার নগ্ন স্তনযুগলের দিকে। আবছা আলোতে তার চোখের তারায় খুঁজে পেল নতুন এক ভাষা। কামনার ভাষা। তার কামনার উৎস যে সে নিজেই, এটা বেশ বুঝতে পারল সে। এতে তো তার লজ্জা পাওয়ার কথা। কিন্তু না। সে লজ্জা পেল না। বরং সেই কামনার ভাগীদার হল সে নিজেও। পার্থর মাথাটাকে দু’হাতে ধরে আস্তে আস্তে রাখল নিজের বুকের উপর। বাকী দায়িত্ব তার।
প্রিয়া ওর মাথাটাকে নিজের বুকের উপর রাখতেই, পার্থ ঠোঁট রাথল সেই নরম মাংসপিণ্ডগুলোর উপর। বাদামী বলয়ে ঘেরা লোভনীয় চোরীর মত বৃন্তদুটো যেন ওকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। অমোঘ সেই হাতছানি এড়াবার ক্ষমতা এই ধরাধামে কারোর নেই। পার্থর তো নেই-ই। কালবিলম্ব না করে ও সেই বৃন্তগুলোর একটায় নিজের জিভ দিয়ে স্পর্শ করল। সেই স্পর্শ সমস্ত রোমকূপ বেয়ে ছড়িয়ে পড়ল সারা শরীরে। শরীরে যেন বান ডেকেছে। কামনার বান। তাকে আটকানোর ক্ষমতা কারোর নেই। প্রিয়ারও নেই। সে চেষ্টা ও করলোও না। উল্টে নিজেকে ভেসে যেতে দিল কামনার সাগরে। নিজের স্তনবৃন্তের উপর পার্থর জিভের ভেজা স্পর্শ ওকে যেন ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্য এক জগতে। ও আর পারল না। ধৈর্যের বাঁধ অনেক আগেই ভেঙ্গে গিয়েছিল। এবার ও নিজের স্তনবৃন্তটাকে ঠেলে ঢুকিয়ে দিল পার্থ মুখের ভিতরে। মুহুর্তেই ওর মনের কথা টের পেয়ে বৃন্তটাকে নিজের মুখের ভিতর ঢুকিয়ে নিল পার্থ। শুরু করল লেহন। “আআআহহহ...” অসহ্য আরাম অস্ফুট গোঙানির আকার নিয়ে বের হয়ে এল মুখ থেকে। বাস্তবজ্ঞান লোপ পাচ্ছে আস্তে আস্তে। জাগছে শরীর। জাগছে কামনা। দাঁতের আলগা কামড় বসছে বৃন্তে। নখের আঁচড় পিঠে। শরীরী যন্ত্রণা পিছু হঠছে। শরীরে থাবা বসাচ্ছে অসহ্য সুখ। মনের খিদে দাগ ফেলছে শরীরে। হার মানছে লজ্জা। জয়ী হচ্ছে ভালবাসা। সময় এখন নিথর। পরিবেশ নিস্তব্ধ। জানালার বাইরে আধখাওয়া চাঁদ। সাথে তার ফ্যাকাশে জ্যোৎস্না। নিশাচর পাখির ডানার আওয়াজ। রাত-পাহারাদারের বাঁশির স্বর। একটা অন্ধকার ঘর। বিছানায় শরীরী সুখের জালে আটকে পড়ে ছটফট করতে থাকা দুটো শরীর। একজন পুরুষ। একজন নারী। একজন স্বামী। অন্যজন স্ত্রী। একজন সুখ দিতে ব্যস্ত। আর অন্যজন তার সমস্ত শরীর দিয়ে সেই সুখ নিতে ব্যস্ত। শরীরদুটো একে অন্যের দিকে আরো আরোও ঘন হয়ে এল।ঝড়ের মুখে শুকনো পাতার মত থরথর করে কাঁপতে থাকা প্রিয়ার শরীরটাকে ধীরে ধীরে বিছানায় শুইয়ে দিল পার্থ। শরীরের সাথে কোনোরকমে আটকে থাকা শাড়িটাকে খুলে সেটাকেও মেঝেতে ফেলে দিল ও। তারপর ঊর্দ্ধাঙ্গে নিরভরণা স্ত্রীর দিকে কয়েক মুহুর্ত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল পার্থ। ছোট্ট পাখির ছানার মত কাঁপছে প্রিয়ার নগ্ন দেহটা। হয়তো কতকটা লজ্জায়। আবার কতকটা উত্তেজনায়। পার্থ মাথা গলিয়ে নিজের পাঞ্জাবী আর গেঞ্জিটা খুলে ফেলল। স্ত্রীর মত সেও হল নগ্ন। তারপর নিজের শরীরটাকে ভাঁজ করে এগিয়ে নিয়ে গেল প্রিয়ার দিকে। ওর মুখের কাছে নিজের মুখটাকে নিয়ে গিয়ে থমকে দাঁড়াল কয়েক মুহুর্ত। সোজাসুজি তাকাল চোখের দিকে। বুঝে নিতে চাইল তার মনের ইচ্ছাটাকে। প্রিয়াও তাকাল ওর চোখের দিকে। সোজাসুজি। পার্থর চোখে প্রশ্ন। প্রিয়ার চোখে তার স্পষ্ট উত্তর। সেটা বুঝে নিতে বেশী সময় লাগল না পার্থর। স্ত্রীর ইচ্ছাটা জানার পর আর একমুহুর্ত সময়ও নষ্ট করতে চাইল না ও। নিজের সন্ধানী ঠোঁটজোড়াকে সঙ্গী করে আবিষ্কার করতে শুরু করে দিল স্ত্রীর শরীরের সমস্ত অচেনা গলিঘুঁজিগুলোকে। যার প্রতিটা মোড়ে মোড়ে লুকিয়ে আছে অজানা রহস্যের হাতছানি। পার্থ সচেষ্ট হল সেই সব রহস্যের মুখোমুখি হতে। পার্থর ঠোঁট ক্রমশ নিম্নগামী। স্পর্শ করল প্রিয়ার গালকে। সেখান থেকে ঠোঁট ছুঁয়ে চিবুক অতিক্রান্ত হয়ে গলা। সেখান থেকে কাঁধ। এবং হাত। নির্লোম বাহুমূলে জমে ওঠা ঘাম যেন এক একটা বহুমূল্য মুক্তোবিন্দু। সেখানে পারফিউম, পাউডার আর জমে ওঠা ঘামের সোঁদা গন্ধে ভরপুর। নাক ঢুকিয়ে লম্বা শ্বাস নিল পার্থ। ফুসফুসে ভরে নিতে লাগল স্ত্রীর নগ্ন বগলের সেই সুগন্ধ। ওর ক্রিয়াকলাপে প্রিয়া কিছুটা অবাকই হয়ে গেল। কিন্তু তার পরের পদক্ষেপই ওকে করে দিল হতচকিত। পার্থ জিভ ঠেকাল প্রিয়ার নগ্ন নির্লোম বগলে। একটু একটু করে চেটে নিতে লাগল প্রতিটা স্বেদবিন্দুকে। এতে প্রিয়া আরোও উত্তেজিত হয়ে পড়তে লাগল। পার্থর ভেজা জিভ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘুরছে তার বগলে। চেটে নিচ্ছে সেখানে জমে ওঠা ঘামগুলোকে। এই চিন্তাটাই ওকে আরোও পাগল করে দিচ্ছে। ফলতঃ আরোও ঘেমে উঠছে ও। আর পার্থর জিভ আরোও খোলামেলাভাবে ঘুরছে তার বগলে। অনেকটা সময় নিয়ে প্রিয়ার নির্লোম বগল পরিক্রমা করার পর থামল ওর জিভ। তারপর জায়গা পালটে চলে এল অপর বগলে। এতক্ষণ ওর হাতদুটো ছিল শান্ত। কিন্তু ধীরে ধীরে সে দুটোতেও ছড়িয়ে পড়ল অশান্তির বীজ। পার্থ একটা হাত রাখল নিজের স্ত্রীর গগণচুম্বী স্তনে। ছোটখাটো পর্বতস্তূপটাকে মুঠোবন্দী করে ফেলল ও। অস্ফুট গোঙানিটাকে অনেক কষ্ট করেও চেপে রাখতে পারল না প্রিয়া। “উউমমহ...” বিছানার চাদরটাকে দুহাতে খামচে ধরা ছাড়া আর বিশেষ কিছুই করার ছিল না প্রিয়ার। তার শরীরে এই প্রথমবার হাত পড়ল কোনো পুরুষের। এ এক অন্য অভিজ্ঞতা। এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে তার গোটা শরীর। পার্থর গরম শ্বাস খেলা করছে তার শরীরের যত্রতত্রে। পার্থর মুঠোবন্দী স্তন তাকে পাগল করে তুলছে। আর শরীরের প্রতিটা স্থানে পার্থর করা চুম্বন করে তুলছে মাতোয়ারা। ছোটবেলার রূপকথার গল্পের সাথে মিলে যাচ্ছে বাস্তব। সেখানে রাজকুমার সোনার কাঠি স্পর্শ করিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলত ঘুমন্ত রাজকুমারীকে। আর আজ বাস্তবে পার্থ জাগিয়ে তুলছে তাকে। ঘুম ভাঙ্গছে তার। সেই সাথে ঘুম ভাঙ্গছে তার মনের। আর অবশ্যই তার শরীরের। পার্থ ওর হাতের চাপ ক্রমশ বাড়াতে লাগল। একতাল মাখনের মত ওর আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে গলে পড়তে লাগল প্রিয়ার স্তন। ভালবাসার এই অত্যাচারে ফর্সা স্তনযুগল হয়ে উঠল রাঙা। তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই কারোর। পার্থিব ব্যথা, বেদনা এই মুহুর্তে শরীরে ঘেঁষতে ভয় পাচ্ছে। অনাবিল আনন্দে মাতোয়ারা শরীরদুটো আটকে পড়েছে সুখের খাঁচায়। যাতে প্রবেশের পথ অতি সুগম, কিন্তু প্রস্থান অতি দুরুহ। এই শরীরী খেলায় কোনো হারজিত নেই। আছে কেবল তীব্র সুখ। আর সেই সুখই ক্রমশ চেপে বসছে শরীর দুটোতে।
দুহাতে নির্দয়ভাবে স্ত্রীর পেলব স্তনদ্বয়কে পেষণ করতে করতে পার্থর ঠোঁট এসে পৌঁছাল প্রিয়ার বুকে। ও একটি স্তনের বৃন্ত মুখে নিয়ে চুষতে শুরু করল। মাঝে মাঝে দাঁতের ফাঁকে রেখে দিতে লাগল আলতো কামড়। সেই আলতো কামড়ে প্রিয়ার শরীরে যেন বিদ্যুৎতরঙ্গ খেলে যাচ্ছিল। পার্থর মাথাটা ধরে ও সজোরে চেপে ধরল নিজের স্তনজোড়ার উপর। ও এই অসহ্য শরীরী সুখ থেকে বেরিয়ে আসবার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই চেষ্টা ওকে আরোও বেশী করে সুখের চোরাবালিতে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। পার্থ স্তনগুলোতে জিভ দিয়ে বৃত্তাকারে ঘোরাতে লাগল। বাদামী বলয়টাকে লালা দিয়ে চাটতে লাগল। একে একে দুটো স্তনকেই পর্যায়ক্রমে পেষণ, লেহণ ও চর্বণ করার পর কিছুটা শান্ত হল পার্থ। কিন্তু ততক্ষণে অশান্ত হয়ে পড়েছে প্রিয়ার শরীরটা। ও চাইছে আরোও, আরোও কিছু। কার্পন্য নেই পার্থরও। স্তন অতিক্রম করে ওর ঠোঁট এখন প্রিয়ার বর্মের মত ফর্সা পেটে। আর তার মাঝে সুগভীর নাভি। জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলোতে পেটে লেগে থাকা ঘামগুলো চকচক করছে। পার্থ জিভ দিয়ে সেই নাভির গভীরতা মাপতে সচেষ্ট হল। জিভ দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নাভিমূলে জমে ওঠা স্বেদবিন্দুগুলোকে পরিষ্কার করল। প্রিয়ার শরীরের ঊর্দ্ধাঙ্গ নগ্ন হলেও নিম্নাঙ্গে এখনও বস্ত্রখণ্ড হিসাবে একটা মামুলি সায়া বর্তমান। পার্থ উঠে গিয়ে প্রিয়ার পায়ের কাছে বসল। তারপর ওর ডান পাটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে মুখের কাছে নিয়ে এল। আর প্রত্যেকটা আঙ্গুল এক এক মুখে পুরে ধীরে ধীরে চুষতে শুরু করল। পার্থর কাণ্ড দেখে প্রিয়া প্রথমে বেশ খানিকটা অবাক হয়ে গেল। তারপর ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসে পার্থকে বারণ করতে গেল। কিন্তু তার আগেই পার্থ ওকে ইশারায় বিছানায় শান্ত হয়ে শুয়ে থাকতে বলল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রিয়া আবার শুয়ে পড়ল। আর পার্থ নিজের কাজে মন দিল। পাটা হাতে নিয়ে নূপুর পরা গোড়লিতে চুম্বন করল। তারপর ধীরে ধীরে প্রিয়া পা বেয়ে চুম্বন করতে করতে ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে শুরু করল। ক্রমে ক্রমে গোড়ালি, পা, হাঁটু প্রিয়ার প্রত্যেকটা অঙ্গ হয়ে রইল পার্থর চুম্বনের সাক্ষী। অন্যদিকে প্রিয়া চোখ বুজে এই অনুভূতিটাকে গ্রহণ করছিল। পার্থ যত উপরের দিকে উঠে আসছে, ওর শরীরে কেমন যেন একটা অন্যরকম অনুভূতির জন্ম হচ্ছে। মনে হচ্ছে পার্থ যেটা করছে ঠিক করছে। আর ভালভাবেই করছে। নিজের ঊরুতে পার্থর চুম্বন যেন ওকে গলিয়ে দিচ্ছে। তোলপাড় করছে সারা শরীর। নিজেকে স্থির রাখা খুবই কষ্টকর। অবশেষে থামল পার্থ। তার অবিরত চুম্বনের কারণে প্রিয়ার পরণের সায়াটা গুঁটিয়ে কোমরের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। ওকে যথাস্থানে রাখা নিরর্খক। তাই পরক্ষণেই সেটারও স্থান হল মেঝেতে। শাড়ি, ব্লাউজের পাশে। প্রিয়ার পরণে এখন কেবলই একটি অন্তর্বাস। যেটি সযত্নে রক্ষা করে চলেছে তার সম্ভ্রমকে। তার নারীত্বের প্রতীককে একজন পুরুষের দৃষ্টির অগোচরে রাখার অন্তিম চেষ্টা। প্রিয়া চোখ মেলে চাইল। দেখল পার্থকে। তার দৃষ্টি আটকে রয়েছে ওর দু পায়ের মাঝখানে। নারী আর পুরুষের মাঝখানে কেবল একখণ্ড বস্ত্র। যেটা সরে গেলে স্ত্রী প্রিয়া পার্থর চোখে হয়ে উঠবে সম্পূর্ণা। কিম্তু ওটা তো কেবল একটা বস্ত্রখণ্ড নয়। ওটা একটা প্রাচীর। লজ্জার। সঙ্কোচের। সম্ভ্রমের। এতদিনের সংস্কারের। আজ যদি ঐ প্রাচীরটা সরে যায়, তাহলে এই রাত হয়ে উঠবে স্ময়ংসম্পূর্ণ। এতদিনের প্রাচীরটাকে সরানোর আগে দরকার মনের আগলটাকে সরানোর। সামনে বসে থাকা পুরুষটা অন্য কেউ নয়, আমার স্বামী। আমি নিজেও তার কাছে অপরিচিতা নই, তার স্ত্রী। আমাদের সম্পর্কটা ভালবাসার। বিশ্বাসের। আর এই ভালবাসা আর বিশ্বাসের মাঝে এতদিনের লজ্জা, সঙ্কোচ আর দ্বিধা ব্রাত্য। আজকের রাত একে অন্যকে চেনার রাত। নিজেকে অন্যের কাছে তুলে ধরার রাত। ভালবাসার রাত। মিলনের রাত। আর সেই মিলন হবে অবাধে। নিসঙ্কোচে। নির্দ্বিধায়। তাই লজ্জার আলগা প্রাচীরটা যত তাড়াতাড়ি সরে যায় ততই ভালো। পার্থ নিজে কাজটা করল। ধীরে ধীরে সরিয়ে দিল এতদিনের সংস্কারের সেই আলগা প্রাচীরটাকে। ধীরে ধীরে প্রকাশিত হতে লাগল নারীত্বের গোপনতম প্রতীক। পৃথিবীর নিষিদ্ধতম রহস্য। আজকের রাতে নারী প্রথম বারের জন্য সম্পূর্ণরূপে নগ্ন হল। একজন পুরুষের সামনে। তার স্বামীর সামনে। লজ্জায় প্রিয়া নিজের পা দুটোকে একসাথে জড়ো করে ফেলল। পার্থ সযত্নে পা দুটোকে সরিয়ে দিল। এবং প্রথম বারের জন্য দর্শন করল প্রিয়ার নগ্ন যৌবন। ওর যৌনাঙ্গ।
নাভির নীচেই নির্লোম উপত্যকা শুরু। ক্রমশ ঢালু হতে হতে গুহামুখে এসে শেষ। দুটো নরম মাংসের পাপড়ি দিয়ে সযত্নে ঢাকা সেই গুহামুখ। আর তার একটু উপরেই ফুলো শিম বীজের মত নারীর শরীরের সবচেয়ে সংবেদনশীল অঙ্গ। ভগাঙ্কুর। পার্থ আলতো করে সেই গুহামুখে হাত বোলাল। প্রিয়ার শরীরে যেন নতুন করে বিদ্যুৎতরঙ্গ খেলে গেল। শরীরে নতুন করে অস্বস্তি ফিরে এল। নিজের দু পায়ের মাঝখানে ক্রমশ ভিজে ভাবটা ও টের পাচ্ছিল। আর পাচ্ছিল পার্থ। প্রিয়ার যৌনাঙ্গটা যে ক্রমশ কামরসে ভেসে যাচ্ছে, সেটা ও ভালো করেই বুঝতে পাচ্ছিল। ও বুঝতে পারছিল প্রিয়ার অনভ্যস্ত শরীরের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। সেটা ওর ছটফটানিই বলে দিচ্ছে। পার্থ ওর অঙ্গুলিহেলন চালু রাখল। তার অঙ্গুলিহেলনের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রিয়ার ছটফটানি। কখনও বিছানার চাদর খামচে ধরছে, তো কখনও পার্থর হাত। কথনও বা পা দুটো দিয়ে চেপে ধরছে পার্থর হাত। গুহামুখ থেকে বের হতে থাকা সরু জলের স্রোত আঙ্গুল ভিজিয়ে দিচ্ছে। পিচ্ছিল হয়ে যাচ্ছে রাস্তা। পার্থ আঙুল রাখল ফুলে ওঠা ভগাঙ্কুরের উপর। তর্জনী, আর বৃদ্ধাঙ্গুলির মাঝে রেখে আলতো করে চাপ দিল পার্থ। সারা শরীর বেয়ে একটা শিরশিরানি ভাব বয়ে গেল প্রিয়ার। বাস্তবজ্ঞানশূণ্য হয়ে পড়ল সে। স্থান-কাল-পাত্র ভুলে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল ও। এই অপরিসীম সুখ আর সহ্য হচ্ছে না। সারা শরীর তোলপাড় করছে। কিছু একটা ধরে রাখতে চাইছে। কিন্তু পারছে না। নিজের শরীরটার উপর ক্রমশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে সে। সময় বয়ে চলেছে নিরন্তর। সময়ের সাইকেলে চড়ে রাত এগিয়ে চলছে নিজের গতিতে। কিন্তু হুঁশ নেই দুটো শরীরের। ফ্যাকাশে চাঁদের আলোয় ঘামে ভেজা দুটো শরীর। পুরুষ ধীরে ধীরে মাথা নীচু করে ঠোঁট রাথল নারীত্বের বেদীতে। এটাই সেই বিলম্বিত সময়। মুহুর্তের মধ্যের বিস্ফোরণ ঘটল নারী শরীরে। প্রথমবার। গরম, নোনতা জলের স্রোত বের হয়ে এল বন্ধ গুহামুখের ভিতর থেকে। ভিজিয়ে তুলল পুরুষের মুথমন্ডল।আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পায়ে যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেছে। প্রায় আধঘন্টা হতে চলল আমি একই জায়গায়, একইভাবে দাঁড়িয়ে আছি। পায়ের সাথে সাথে হাতদুটোতেও যন্ত্রণা হতে শুরু করে দিয়েছে। আমার হাতদুটো একটা হ্যাণ্ডকাফ দিয়ে বাঁধা। আর হাতদুটো মাথার উপর উঁচু করে সিলিং-র সাথে দড়ি দিয়ে বাঁধা। একইভাবে অনেকক্ষণ ধরে হাতদুটো মাথার উপর বাঁধা থাকার কারণে কাঁধে ব্যখা করছে। কিন্তু মুখে কোনো শব্দ করতে পারব না। তার কারণ আছে। আমার মুখের ভিতর একটি মাঝারী আকারে বল ঢোকানো আছে। যেটি একটি পাতলা অথচ শক্ত চামড়ার ফিতের সাহায্যে মাথার পিছনে বাঁধা আছে। অর্থাৎ আমি এখন Tied up এবং ball gagged দুইয়ের মিলিত অবস্থার মাঝে দোদুল্যমান অবস্থায় আছি। এর সাথে যোগ হয়েছে blind fold. অর্থাৎ আমার দুটো চোখই বাঁধা। আমি বাইরের দুনিয়ার কি হচ্ছে, বা আমার সাথে কি ঘটছে বা ঘটতে চলেছে, তার আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। আমার প্রভু আমায় বলেছেন আজ আমার চোখ দুটোর ছুটি। তার বদলে আমাকে কানে শুনে আর অনুভব করে নিজে মজা নিতে হবে, সাথে ওনাকেও আনন্দ দিতে হবে। আমার মজার কথা জানি না, কিন্তু আমার প্রভু যে আমার এই বন্দীদশার প্রত্যেকটা মুহুর্ত উপভোগ করছেন এবং এর পরেও উপভোগ করবেন, তাতে আমি একশো শতাংশ নিশ্চিত। আমাকে প্রতিবার ভোগ করার আগে আমার শরীরটাকে নিয়ে খেলা করতে ওনার খুব ভালো লাগে। উনি বলেন এই যে আমার অসহায়ত্ব, মুক্তি পাওয়ার আকুতি - এসব দেখতে ওনার খুব ভালো লাগে। আসলে উনি প্রতিবার এটা প্রমাণ করার জন্য উন্মুখ থাকেন যে, উনি আমার প্রভু। আর আমি ওনার কেনা দাসী। ওনার কথায় ওনার নিজস্ব Brothel-র slave, একজন sex-slave. যার শরীরটাকে উনি যেমনভাবে চাইবেন ব্যবহার করবেন। আমার শরীরটার উপর, আমার মনটার উপর, আমার আত্মাটার উপর কেবল, কেবল ওনারই রাজত্ব থাকবে। এখানে আমার ইচ্ছার কোনো দাম নেই। সত্যি বলতে কি আমার ইচ্ছা বা অনিচ্ছা বলে কোনো বস্তু থাকতে পারে, সেটা উনি মনেই করেন না। একজন যৌন-দাসীর ইচ্ছা বলে কিছু থাকতেই পারেনা। আর অনিচ্ছার কথা তো বাদই দিলাম। আমার কাজই হল আমার প্রভুকে আনন্দ দিয়ে যাওয়া। ব্যাস, এইটুকুই। আজকে আমার প্রভুর ইচ্ছা হয়েছে আমার শরীরটাকে একটু tease করার। তাই এইসব ব্যবস্থা। আমার হাতদুটো হ্যান্ডকাফ দিয়ে বেঁধে দড়ির সাথে বেঁধে দিয়েছেন। মুখের ভিতর বলটা ঢুকিয়ে চামড়ার ফিতেটা আটকে দিয়েছেন। আর তারপর আমার চোখদুটোকে blind fold করে বেঁধে দিয়ে বললেন, “Enjoy my teasing, baby. It would be awesome. Have fun.” প্রায় ফিসফিসিয়ে বলা কথাগুলো আমার কানে যেন তরল সীসা ঢেলে দিল। ঘরের ভিতর এতক্ষণ পাখা চলছিল। আমার চোখদুটো বাঁধার কিছুক্ষণ পরেই বেশ ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করে দিল। বুঝতে পারলাম উনি এ.সি. চালিয়ে দিয়েছেন। ধীরে ধীরে ঘরটার পরিবেশটা কেমন যেন ঠান্ডা হয়ে এল।
আমি এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে শোনার চেষ্টা করছি যে ঘরের ভিতর ঠিক কি হচ্ছে। কান খাড়া করেও আমার প্রভুর কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না। সারা ঘর জুড়ে এ.সি.-র ঠাণ্ডা শোঁ শোঁ আওয়াজ। ঘড়ির টিক টিক। আর বাইরে ব্যস্ত গাড়ির হর্ণ। সময়টাও মনে হচ্ছে আমারই মত একজায়গায় নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার প্রভুর সঙ্গে যখন ওনার এই personal brothel-এ ঢুকেছিলাম, তখন শেষ দুপুর। এতক্ষণে নিশ্চয় বিকেল। আকাশের বুকে রঙের আলপনা। পাখিদের ঘরে ফেরার ডাক। কিছু কিছু মানুষেরও। তার মধ্যে আমি নেই। আমি নিশ্চল। নিথর। এককালে হয়তো ছিল কিছু ফেলে আসা অতীত। কিন্তু বর্তমান আর ভবিষ্যৎ? উঁহু। নৈব নৈব চ। আকাশের বুকে হারিয়ে যাওয়া রঙটা আমার জন্য নয়। পাখিদের ঘরে ফেরার ডাকটাও আমার জন্য নয়। আমার জন্য আছে কেবল একরাশ থিকথিকে অন্ধকার। আর একজন প্রভু। যাঁর কাছে আমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ বাঁধা পড়ে আছে। আর বাঁধা পড়ে আছি আমি। ওনার যৌনদাসী। খেলার পুতুল। হাতটা যন্ত্রণা হচ্ছে। একটু নাড়ালাম। সপাত্! প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বেতের লাঠির তীব্র পুরষ্কার আছড়ে পড়ল আমার পাছায়। “উমমগগগ...” একটা অস্ফুট গোঙানি। আর কিছু নয়। “Don’t make noises. Stay calm. And feel the pain with pleasure.” আবার সেই সাপের হিসহিসানি আওয়াজ। মনের মধ্যে ভয়টাও যেন ভয় পেয়ে গুঁটিয়ে গেল। তার কারণটাও বেশ স্পষ্ট। বেশ বুঝতে পারছি আজ প্রভুর হাতে ওনার প্রিয় খেলনাটা আছে। ওনার পাতলা লিকলিকে বেতের লাঠি। তেল চুকচুকে কালো লাঠিটা যতবারই দেখি ততবারই গোটা শরীরটা শিরশির করে ওঠে। কারণ যতবার প্রভু ওনার ঐ প্রিয় খেলনাটা নিয়ে আমার সাথে খেলেছেন, ততবারই আমার সারা শরীরে সাপের মত আঁকাবাঁকা দাগ তৈরী হয়েছে। আমার ফর্সা শরীরে লাল দাগ তৈরী করার জন্যই ওর অত কদর। অনেকবার ভেবেছি সাহস করে লাঠিটাকে ভেঙে দেব। কিন্তু শেষ মুহুর্তে সেই সাহসটাকে নিজের সঙ্গে পাইনি। বরং ভয়টা মনের মধ্যে জাঁকিয়ে বসে। প্রভু যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে। এই ভয়টাকেই পুঁজি করেই আমার প্রভু আমার শরীরের উপর রাজত্ব করছেন। আমার মনের উপর রাজত্ব করছেন। আমার আত্মার উপর রাজত্ব করছেন। আর আমি ঐ ভয়টাকেই একমাত্র সঙ্গী করে ওনার যৌন-দাসী হয়ে আছি।
সপাত্! চিন্তার জালটাকে নির্মমভাবে ছিঁড়ে দিয়ে বেতের লিকলিকে লাঠিটা আমার শরীরে নতুন ছাপ ফেলল। “উমমগগ...” তীব্র যন্ত্রণা গোঙানির আকার নিল। কিন্তু আমার অর্ধোচ্চারিত গোঙানিটাকে মাধপথেই থেমে গেল। সৌজন্যে আমার প্রভু এবং ওনার প্রিয় খেলনা। মাঝে মাঝে যন্ত্রণার ভয় যে তীব্র যম্ত্রণাকে ভুলিয়ে দিতে পারে আর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়তো আমি। আবার প্রভুর হাতের ঐ বেতের লাঠি সাপের মত আমার ছোবল দিতেই আমার গোঙানি নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে গেল। নতুন করে গুঙিয়ে ওঠার ভুল করলাম না। তবুও জানি প্রভুর হাতের ঐ লাঠি এখানেই থেমে থাকবে না। আরোও, আরোও অনেকবার সে ছাপ ফেলবে আমার শরীরে। তার থেকে অনেক বেশী আমার মনে। “That’s like a good girl. Relax your body. Enjoy the pain.” প্রভুর কণ্ঠস্বরের সাথে সাথেই আরোও কিছু অনুভব করলাম নিজের শরীরে। একটা ভেজা ভেজা স্পর্শ অনুভব করলাম নিজের বাঁ বগলের উপর। প্রভু আজ আবার আমার বাহুমূল লেহন করছেন। আমার শরীরের নানা স্থান নানা উপায়ে লেহন করা ওনার সবথেকে পছন্দের। আমার শরীরের কোথাও একবিন্দু লোম থাকা উনি একেবারেই পছন্দ করেন না। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে আমাকে স্নানের সময় আমার বগল ও যৌনাঙ্গের লোম পরিষ্কার করতে হয়। বাঁ বগলটা ক্রমেই ওনার লালায় ভিজে যাচ্ছে। এতক্ষণ উনি কেবল চাটছিলেন, এবার তার সাথে যোগ হল ওনার দাঁতের কামড়। তার সাথে একটা বলিষ্ঠ হাতের মুঠো শক্ত করে ধরল আমার নরম স্তনটাকে। আমার পরণে কেবল একটি অন্তর্বাস। উনি তার উপর দিয়েই স্তনটাকে টিপছেন, মোচড়াচ্ছেন। “I like to lick you underarm very much. It’s very smooth and sweaty.” এবার উনি আমার স্তনটাকে ঠেলে অন্তর্বাসের উপর তুলে আনলেন। এবং স্তনবৃন্তটাকে দু আঙ্গুলের মাঝে রেখে নির্দয়ভাবে সেটাকে মোচড়াতে লাগলেন, এবং নিজের দিকে টান দিয়ে পাক দিতে লাগলেন। যন্ত্রণায় চোথে জল চলে এসেছিল বোধহয়। পরক্ষনেই আমার শরীরে তৃতীয়বারের জন্য তার ছাপ ফেলল লাঠিটা। সামলে নিলাম নিজেকে। কারণ এর বেশী নিজেকে আর নিজের শরীরটাকে কষ্ট দিতে চাইনা। কিন্তু আমি না চাইলেও আমার প্রভু চান। আর তাই স্তনবৃন্তের পাক বেড়েই চলল। সাথে বেড়ে চলল আমার যন্ত্রণা। এবার এর সাথে হঠাৎ অন্তর্বাসের উপর দিয়েই আমার যৌনাঙ্গের উপর দিয়ে হাত বোলাতে শুরু করলেন। ঊরুসন্ধির ভিজে ভাব আমি নিজেও টের পাচ্ছি। স্তনবৃন্তটাকে আরাম দিয়ে উনি এবার আমার যৌনাঙ্গের সাথে খেলায় মেতে উঠলেন। ভেজা প্যান্টিটার উপর দিয়ে বারকয়েক আঙুল চালিয়ে বললেন, “Baby, your pussy is damn wet. And it smells good, like a rose. I like it.” বলে আমার ভেজা যৌনাঙ্গের উপর নিজের নাক ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলেন। সেই অদ্ভুত ভেজা আর শ্বাসের গরম একটা মিলিত অনুভবে শরীরে একটা শিরশিরানি বয়ে গেল। উনি প্যান্টির উপর দিয়েই আমার ফুলে ওঠা ভগাঙ্কুরটাকে দু আঙুলে চেপে ধরলেন। সমস্ত ভয়কে উপেক্ষা করে সারা শরীরটা থরথর করে কেঁপে উঠল। আর তারপরেই আসন্ন শাস্তির ভয়ে গোটা শরীরটা গুঁটিয়ে গেল। কিন্তু না। এবার ওনার লাঠি আমার শরীরে নতুন কোনো ছাপ ফেলল না। তার বদলে উনি আমার প্যান্টিটাকে দুহাতে ধরে হাঁটু পর্যন্ত নামিয়ে আনলেন। তারপর আমার ভেজা যৌনাঙ্গের উপর আঙুল বোলাতে লাগলেন। আর অন্য হাতে ভগাঙ্কুরটাকে চটকাতে লাগলেন। এই দুইয়ের মিলিত আক্রমণে আমি একপ্রকার দিশেহারা হয়ে পড়লাম। নিজের শরীরটাকে, বিশেষ করে যৌনাঙ্গটাকে ওনার হাত থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু পারলাম না। অবশেষে হাল ছেড়ে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে উনি একটা আঙুল এক ঝটকায় ঢুকিয়ে দিলেন আমার কোমল যৌনাঙ্গে। সমস্ত বাধাকে উপেক্ষা করে আঙুলটাকে বারবার বের করতে লাগলেন, আবার ভিতরে ঢোকাতে লাগলেন। সেই সাথে অন্য হাতের আঙুল দিয়ে আঁচড় কাটছেন আমার ভগাঙ্কুরে। আর পারছি না। তীব্র যৌনসুখ ঘন কামরসের রূপ ধরে ভিজিয়ে তুলছে আমার ঊরুসন্ধি। আর সেই নোনতা জলের ধারা গড়িয়ে নেমে আসছে আমার গোড়ালি অবধি। কিন্তু বিরাম নেই প্রভুর আঙুল চালনা। শেষ নেই তীব্র কামসুখের। আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। ছোটথাটো বিস্ফোরণ ঘটল আমার শরীরে। পা সহ গোটা শরীরটা কাঁপছে। স্থির হয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। শরীরটা আবেগের বশে বারবার আগুপিছু করছে। সবচেয়ে করুণ অবস্থা কোমরের নিচে খেকে যৌনাঙ্গ অবধি। তলপেটের পর থেকে বাকী শরীরটা যেন অবশ হয়ে গেছে। দু পা দিয়ে প্রভুর হাতটাকে চেপে ধরলাম। একটা মোটা জলের ধারা আমার পা দুটোকে ভিজিয়ে দিল। নিজের যৌনাঙ্গে প্রভুর আঙুল চেপে ধরে orgasm-টা শেষ করলাম আমি। Orgasm শেষ হতেই প্রভু ধীরে ধীরে নিজের আঙুলটা বের করে আনলেন আমার যৌনাঙ্গ থেকে। তারপর আমারই কামরসে ভেজা আঙুলটা মাথাতে লাগলেন আমার দুই স্তন ও স্তনবৃন্তে। তারপর একই সঙ্গে যন্ত্রণা আর আবেশের কারণে আমার ক্লান্ত শরীরটাকে একলা ফেলে রেখে চলে গেলেন আমার প্রভু।প্রিয়ার কামোত্তেজনা কয়েক মুহুর্ত স্থায়ী হল। কিন্তু শরীরের কাঁপুনি এখনও হয়ে যাচ্ছে। সেই কাঁপুনির মাঝেই পার্থ ঠোঁট ছোঁয়াল স্ত্রীর নির্লোম যৌনাঙ্গের কোমল বেদীতে। নিজের যৌনাঙ্গে প্রথমবার পার্থর আঙুল পেয়ে প্রিয়া নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। মুহুর্তের উত্তেজনায় নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছিল। তারপর সেই ক্ষণস্থায়ী উত্তেজনার রেশ ধীরে ধীরে কেটে যাওয়াতে ওর শরীরটা স্থির হয়ে আসছিল। নিজের শরীরের উপর কাবু পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টার মাঝেই নিজের যৌনাঙ্গে পার্থর গরম জিভের ভেজা অনুভূতি টের পেতেই আবার অস্থির হয়ে উঠতে লাগল শরীরটা। পার্থর গরম শ্বাস ওকে যেন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিচ্ছে। তবু এই অস্থিরতার মাঝে ওর মনে হল এই অস্থিরতাতেই যেন ওর শরীর পূর্ণতা পাচ্ছে। আজকের রাত পরিবর্তনের রাত। এই পরিবর্তন কেবল শরীরেরই নয়, মনেরও। এই পরিবর্তন ক্ষণস্থায়ী নয়, চিরস্থায়ী। আজকের রাতের পর সে আর কুমারী কন্যা থাকবে না। সে হয়ে উঠবে পরিপূর্ণ এক নারী। সে হয়ে উঠবে এক স্ত্রী। তার নতুন পরিচয়ে পরিচিত হবে সে। তার মন চাইল সেই পরিপূর্ণতার স্বাদ পেতে। তার স্বামী পার্থ তাকে দেবে নারীত্বের নতুন আস্বাদ। পার্থ নিজের ঠোঁট ছোঁয়াল স্ত্রীর যৌনাঙ্গে। কিছুটা উত্তপ্ত গরম ঘন রস ভিজিয়ে তুলছে তার ঠোঁট। গরম নোনতা স্বাদে জিভ বিদ্রোহ করলেও মন একেবারেই তা চাইছে না। তাই শত অসুবিধা সত্ত্বেও ও নিজের জিভ ঠেকাল গরম পিচ্ছিল ঐ জায়গাটায়। তারপর ধীরে ধীরে জিভটা ঠেলে ঢোকাতে লাগল কৃষ্ণগহ্বরের অন্ধকার গুহায়। চারপাশের চাপ চাপ মাংসপেশীগুলো ওর জিভটাকে ভিতরে ঢুকছে। কিন্তু ওর জিভ সেই সব বাধা ঠেলে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। বড়ই পিচ্ছিল সেই পথ। সেই সাথে বন্ধুরও বটে। প্রতি মহুর্তেই অজানা কিছুর আশঙ্কা থেকেই থাকে। পার্থর মনে হল ও কোনো জ্বলন্ত উনুনের মধ্যে নিজের জিভটা ঢুকিয়ে দিয়েছে। তেতে পুড়ে যাচ্ছে ওর জিভটা। তবুও ও নিজের কাজ জারি রাখল। জিভটাকে টেনে বের করে আনল সেই উত্তপ্ত কৃষ্ণগহ্বর থেকে। তারপর ক্ষণেক থেমে আবার জিভটাকে ঢুকিয়ে দিল ভিতরে। এবার আরো একটু বেশী ভিতরে। এইভাবে একটু একটু করে ও নিজের জিভটা একসময় গোটাটাই ঢুকিয়ে দিল ভিতরে। তারপর আলতো করে চুষতে শুরু করল। একটু একটু করে জলস্রোত বাড়ছে। বাড়ছে প্রিয়ার শরীরের অস্থিরতাও। শরীরটা ক্রমাগত মোচড় খাচ্ছে। কোমরটা বারবার বিছানা থেকে উপরে উঠে যাচ্ছে, আবার পরক্ষণেই বিছানায় পড়ে যাচ্ছে। ও একটা হাত পার্থর মাথায় রাখল। আর পার্থর মাথাটাকে সজোরে টিপে ধরল নিজের যৌনাঙ্গের উপর। আর দ্বিতীয়বারের জন্য নিজের কামরস স্খালন করল পার্থর মুখে। পার্থ স্ত্রীর সেই নোনতা গরম রসের প্রসাদ গ্রহণ করল সাগ্রহে। অসহ্য কামোত্তেজনায় প্রিয়ার তলপেটটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। আর ঘন কামরসের চোরা স্রোত ওর যৌনাঙ্গ থেকে বেরিয়ে এসে পড়ছে পার্থর মুথে। কয়েক মুহুর্ত প্রিয়ার ঐ উত্তেজনা স্থায়ী হল। তারপর ওর শ্রান্ত দেহটা বিছানায় আছড়ে পড়ল। পার্থ ধীরে ধীরে ওর যৌনাঙ্গ থেকে নিজের মুখটা বের করে আনল। তখনও তার মুখে লেগে আছে প্রিয়ার চরম কামোত্তেজনার কিছু অংশ। ও দেখল প্রিয়া চোখ বুজে হাঁফাচ্ছে। পার্থ বুঝতে পারল প্রথমবার এই উত্তেজনার কারণে প্রিয়া ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ওর নিজের শরীরটাও ততক্ষণে জেগে উঠেছে। সেও চাইছে প্রিয়াও স্পর্শ করুক ওর শরীরটাকে। নরম হাতে ঘুম ভাঙাক তার দস্যি যৌনাঙ্গের। সেই ইচ্ছাতেই ও নিজের শরীর থেকে পাজামা আর জাঙ্গিয়াটা খুলে ফেলল। আদিম পুরুষের মত হল নগ্ন। প্রিয়ার সামনে প্রথমবারের জন্য নগ্ন হতে কেমন যেন অদ্ভুত লাগছিল। কিন্তু মনের সমস্ত দ্বিধা দ্বন্দ্বকে পিছনে ফেলে নতুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকতে সে উদ্যত হল।
নগ্নদেহী পুরুষ ধীরে ধীরে বসল নগ্ন নারীর পাশে। ওর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে রাখল নিজের উত্তুঙ্গ পুরুষাকারের উপর। নারীর নরম হাতের স্পর্শে মাথা তুলে দাঁড়াতে লাগল ওর পুরুষাকার। চোখ খুলে আচমকা এবাক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকাল প্রিয়া। জীবনে সে প্রথমবার এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে সে। এর আগে ও কোনোদিন কোনো পুরুষের য়ৌনাঙ্গকে ছুঁয়ে দেখেনি। হাতে নেওয়া তো আনেক দূরের কথা। পার্থ তার প্রেমিক ছিল ঠিক কাথা। কিন্তু বিয়ের আগে ওরা কখনই নিজেদের মধ্যে কোনোরকম শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেনি। এ সম্পর্কে শিথিলতা ছিল দু পক্ষেরই। তাই এক অর্থে দুজনের শরীরই একে অপরের কাছে এতদিন ছিল অচেনা। অনেক কিছুই রয়ে গেছিল অজানায আজকের রাত হল সেইসব কিছু অচেনাকে চেনার রাত। অজানাকে জানার রাত। একে অপরের সমস্ত গোপনীয়তাকে প্রত্যক্ষ করার রাত। আর সেই কাজেই উদ্যত ওরা দুজন। নিজের হাতের তালুবন্দী পার্থর যৌনাঙ্গটাকে অবাক দৃষ্টিতে দেখছিল প্রিয়া। দেখছিল কিভাবে, কোন জাদুবলে একটু একটু করে আকারে ও আকৃতিতে বড় হচ্ছে সেটি। দেখতেই দেখতে আকারে দ্বিগুণ হয়ে একটি আস্ত ময়াল সাপের আকার ধারণ করল সেটা। একহাতে ধরতে অসুবিধা হচ্ছে। বিছানায় উঠে বসে দু হাতে শক্ত করে ধরল প্রিয়া। কিন্তু এরপর কি করতে হবে তা বুঝে উঠতে পারছিল না। পার্থ ওকে ইশারা করল ওর চামড়াটাকে ধরে নিচের দিকে নামাতে। ওর কথামত তেমনটাই করল প্রিয়া। চামড়াটা একটু নামাতেই ফটাস্ করে লালরঙের ডিমের আকারের মুণ্ডিটা খুলে গেল। আর তার উপরের দিকে একটা ছোট্ট ফুটো। আর সেই ফুটো থেকে বেরিয়ে আসা এক বিন্দু জল। পার্থ আঙুলের ডগায় সেই বিন্দুটাকে আলগোছে তুলে নিয়ে গেল প্রিয়ার মুখের কাছে। অনভ্যস্ত প্রিয়ার মন চাইছে না সেটাকে নিজের মুখে নেওয়ার। কিন্তু স্ত্রীর মন থেকে ঘেন্নার ভাবটা সরানোর কারণেই পার্থ কতকটা জোর করেই সেই আঙুলটা ঢুকিয়ে দিল প্রিয়ার মুখে। ঘেন্নার প্রাথমিক ধাক্কাটা বেশ সহজেই কাটিয়ে উঠল প্রিয়া। নিজের মুখে ঢোকানে পার্থর আঙুলটা চাটতে শুরু করল। তারপর দু হাতে পার্থর পুরুষাঙ্গটা ধরে তার চামড়াটা আস্তে আস্তে ওঠাতে আর নামাতে লাগল। ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল ওর হাতের গতি। একটু আগে প্রিয়ার শরীর যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, এখন সেই একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে পার্থ। প্রিয়ার অনভ্যস্ত হাত ঝড় তুলেছে ওর শান্ত শরীরে। আর সেই ঝড় একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ছে ওর গোটা শরীরে। পার্থর মন চাইছে আরো কিছু। আর ওর মনের সুপ্ত ইচ্ছাটা টের পেয়ে প্রিয়া নিজের মুখটা এগিয়ে নিয়ে এল হাতে ধরা পার্থর পুরুষাঙ্গের কাছে। নাকটা আরো কাছে নিয়ে গিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নিল। ভিজে, সোঁদা একটা গন্ধ ঝাপটা মারল নাকে। অনভ্যস্ত মন বারণ করছে ওকে। কিন্তু স্বামীকে নিরাশ ইচ্ছাটাও যেন মরে গেছে অনেক কাজে। এখন ইচ্ছা করছে ওর সবকিছুতেই নিজের নীরব ও সরব ছাপ ফেলে যেতে। তাইতো অনিচ্ছা সত্ত্বেও পার্থকে নিজের যৌনাঙ্গ চাটতে ও চুষতে দিয়েছে। ওর মুখে নিজের তীব্র কামোত্তেজনার ছাপ ফেলেছে ফলস্বরূপ। আর এখন মনের মরা অনিচ্ছাটাকে দূরে সরিয়ে রেখে ও উদ্যত হয়েছে স্বামীকে শরীরী সুখ দিতে। নিজের মনকে এর বেশী চিন্তা করার অবকাশ না দিয়ে, নিজের কাজে মন দিল। পার্থ স্বপ্নেও ভাবেনি প্রিয়া নিজে থেকে এই কাজটা করতে ইচ্ছুক হবে বলে। ও ভেবেছিল প্রিয়াকে বলেকয়ে রাজী করাতে হবে। কিন্তু প্রিয়া নিজে থেকেই কাজটা করতে শুরু করল দেখে ও খুশী হল মনে মনে। প্রিয়া ধীরে ধীরে মাথা নীচু করে নিজের ঠোঁটদুটো রাখল পার্থর পুরুষাঙ্গের মাথায়। তারপর ধীরে ধীরে মাথা আরো নীচু করতে লাগল। ফলস্বরূপ পার্থর উত্তুঙ্গ পুরুষাঙ্গটি একটু একটু করে প্রবেশ করতে লাগল ওর উষ্ণ মুখগহ্বরে। ওর মুখের গরম শ্বাস, ভেজা জিভের স্পর্শ আর নরম ঠোটের আদর - সবকিছু মিলেমিশে পার্থকে নিয়ে যেতে লাগল অন্য একটা জগতে। তীব্র সুখের আবেশে ছটফট করতে লাগল ওর শরীরটা। প্রিয়া মাথা উপর নীচু করে ওকে মুখমৈথুনেক চরম সুখ দিচ্ছে। সাথে সাথে নোনতা জলের চোরাস্রোতটাকেও জিভ দিয়ে চেটে নিচ্ছে। পার্থ দুটো হাত রাখল প্রিয়ার মাথার উপর। তারপর একটু একটু করে চাপ দিতে লাগল। একটু একটু করে সমস্ত পুরুষাঙ্গটাই অদৃশ্য হয়ে গেল প্রিয়ার মুখের অন্তরালে। তারপর মাথার উপর চাপ কমাতেই, প্রিয়া মাথাটা উপরে তুলে আনল। একটু একটু করে প্রিয়ার লালামিশ্রিত পুরুষাঙ্গটি বেরিয়ে এল। এইভাবে বারবার পার্থ নিজের পুরুষাঙ্গটিকে ঢুকিয়ে আর বের করতে লাগল। সাথে সাথে প্রিয়ার মুখ-রমণের নতুন অভিজ্ঞতা পেতে লাগল। এটা ওদের কাছে একটা খেলার মত। নতুন এক প্রকারের খেলা। যে খেলার নেশায় মাতাল ওরা দুজন। অনেকটা সময় ধরে খেলাটা খেলল ওরা দুজন। অবশেষে হার মানল অকপক্ষ। পার্থ আর ধরে রাখতে পারল না নিজেকে। প্রিয়ার মুখ থেকে নিজের পুরুষাঙ্গটিকে বের করে এনে রাখল প্রিয়ার বুকের উপর। ওকে সাহায্য করল প্রিয়া। দুহাতে শক্ত করে নিজের স্তনদ্বয়ের উপর রাখল স্বামীর উত্তুঙ্গ পুরুষাকারকে। কয়েক মুহুর্তের অপেক্ষা। তারপর প্রিয়ার হাতে ধরা অশান্ত ময়াল সাপটি নাচতে নাচতে ওগড়াতে লাগল গরম, ঘন গরল। আর সেই গরম তরলগুলোকে নিজের স্তনের উপর নিতে লাগল প্রিয়া। মিনিট খানেক ধরে নিজের তরল বমি করার পর শান্ত হল পার্থর পুরুষাঙ্গ। ততক্ষণে প্রিয়ার বুক ঢেকে গেছে চ্যাটচ্যাটে তরলে। তবে তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই কারোর। ওরা এখন আসল মুহুর্তের জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছে। বিশেষ করে প্রিয়া। ওর মত প্রতিটা মেয়েই অপেক্ষা করে এই সময়টার জন্য। বিশেষ একটা মুহুর্ত। যখন একজন কুমারী পরিণত হয় একজন নারীতে। তার পবিত্র কুমারীত্ব হয় বিলুপ্ত। একজন নারীর পরিচয়ে, একজন স্ত্রীর পরিচয়ে পরিচিত হতে থাকে সে। আজ, এখন প্রিয়ার জীবনেও সেই সময়টা এসে হাজির হয়েছে। যখন কৌমার্য্যের চৌকাঠ পেরিয়ে, সে পা রাখবে নারীত্বের দুনিয়ায়। মনে মনে নিজেকে সেই সময়টার জন্য তৈরী করল সে। মনের ভয় আর বুকের ধুকপুকুনিটাকে বুকেই আটকে রাখার নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যেতে লাগল ও।প্রিয়ার মুখ দেখে পার্থ বুঝতে পারল ও ভয় পাচ্ছে। ও প্রিয়াকে ধীরে ধীরে বিছানায় শুইয়ে দিল। প্রিয়া ওর চোখের দিকে তাকাল। পার্থ বলল, “ভয় পাচ্ছো?” প্রিয়া কোনো উত্তর দিল না। কেবল ঘাড় নেড়ে সায় দিল। পার্থ মুচকি হেসে বলল, “ভয় পেয়ো না। প্রথমে হয়তো একটু লাগবে, যন্ত্রণা হবে। তারপরে সব ঠিক হয়ে যাবে।” নার্ভাস ভাবে ঘাড় নাড়ল প্রিয়া। পার্থ প্রিয়ার কোমরের তলায় একটা বালিশ রাখল। যাতে ওর কোমর আর তলপেটটা উঁচু হয়ে যায়। তারপর ওর দু পায়ের মাঝখানে উবু হয়ে বসল। আর নিজের পুরুষাঙ্গটাকে আলতো করে ঠেকাল প্রিয়ার যৌনাঙ্গের ঠিক মুথে। প্রিয়ার শরীরটা বার দুয়েক কেঁপে উঠল শুধু। পার্থ ঐ অবস্থাতেই প্রিয়ার শরীরের উপর উঠে এল। তারপর নিজের ঠোঁটদুটো ওর ঠোঁটের উপর রেখে গাঢ় চুম্বন করতে লাগল। প্রিয়া ভয়ে চোখ বুজে ফেলেছিল। কিন্তু পার্থ চুম্বন শুরু করতেই, ও-ও সঙ্গ দিতে শুরু করল। পার্থ প্রিয়ার সাথে চুম্বনরত অবস্থাতেই কোমর দুলিয়ে নিজের পুরুষাঙ্গটিকে ওর যৌনাঙ্গের ভিতরে ঢোকাতে চেষ্টা করল। শুনতে যতটা সহজ, কাজটা পার্থর মত একজন অনভিজ্ঞের পক্ষে আর প্পথমবারের জন্য বেশ কঠিন বৈকি। প্রিয়ার কুমারী যৌনাঙ্গের আঁটো মাংসপেশীগুলো পার্থর পুরুষাঙ্গটিকে ভিতরে ঢুকতে বাধা দিতে লাগল। হাল ছাড়ল না পার্থ। প্রিয়াও ছাড়ল না। তীব্র ব্যথা সত্ত্বেও ওকে ওর কাজ করে যেতে দিল। কয়েকবারের চেষ্টায় পার্থ নিজের পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগটা ঢোকাতে সক্ষম হল। প্রিয়া যন্ত্রণা মাত্রাছাড়া মনে হচ্ছে। পার্থ এবার বলপ্রয়োগ করে পুরুষাঙ্গটিকে ভিতরে ঢোকাতে লাগল। ওর মনে হল কোনো জ্বলন্ত উনুনের মধ্যে নিজের পুরুষাঙ্গটিকে ঢোকাচ্ছে। উল্টো দিকে প্রিয়ার মনে হচ্ছে কোনো ধারালো ছুরি ওর যৌনাঙ্গের নরম মাংসপেশীগুলোকে কেটে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। তীব্র যন্ত্রণায় ওর চোখ দিয়ে জল গড়াতে লাগল। কিন্তু কোনো আওয়াজ করল না। পার্থর পুরুষাঙ্গ ভিতরে ঢুকে কিছুটা গিয়ে আটকে গেল। পার্থ বুঝতে পারল সময় উপস্থিত। প্রিয়াও বুঝতে পারল। ও চোখদুটো বুজে ফেলল। ওর যৌনাঙ্গের ভিতর ঢুকে থাকা পুরুষাঙ্গটা একটু একটু করে বেরিয়ে আসছে। ও অবাক হয়ে গেল এত সহজে পার্থকে হার মানতে দেখে। কিন্তু না পার্থ নিজের পুরুষাঙ্গটাকে অগ্রভাগ পর্যন্ত টেনে বের করে আনল। প্রিয়ার কাঁধদুটো শক্ত করে ধরে বিছানায় শুইয়ে রেখে কোমরের এক ধাক্কায় পুরুষাঙ্গটাকে ভিতরে ঢুকিয়ে দিল। প্রিয়া বুঝতে পারল না কি হল। কেবল অনুভব করল পার্থর পুরুষাঙ্গটা তীরের ফলার মতো কিছু একটা ফাটিয়ে দিয়ে, ওর যৌনাঙ্গের অনেকটা ভিতর পর্যন্ত ঢুকে গেল। সাথে সাথে অসহ্য যন্ত্রণা। “উফ্ মাগো!” এর বেশী কিছু বলতে পারল না ও। কথায় বলে কিছু পেতে গেলে, কিছু দিতে হয়। এই যন্ত্রণার আহুতি দিয়ে প্রিয়া নিজের দেহে নারীত্বকে বরণ করে নিল। পার্থ কয়েক মুহুর্ত সময় নিল। তারপর নিজের পুরুষাঙ্গটাকে টেনে বের করে আনল। সাথে সাথে আবার যন্ত্রণা হতে শুরু করে দিল। প্রিয়া অনুভব করল পার্থ নিজের পুরুষাঙ্গটাকে বের করে নিতেই কিছু ঠাণ্ডা ভিজে ওর যৌনাঙ্গ থেকে বেরিয়ে এল। ও নিচে হাত নিয়ে গিয়ে ভিজে বস্তুটায় হাত ছোঁয়াল। তারপর সেটাকে চোখের কাছে নিয়ে এসে দেখল। আবছা আলোতেও কাঁচা রক্ত চিনতে ভুল করল না ও। বুঝতে পারল ওর সতীচ্ছদটা ছিঁড়ে যাওয়ার কারণেই এই রক্ত। ধীরে ধীরে যন্ত্রণাটাও কমে আসছে আগের থেকে। পার্থ আবার ওর কোমর নাড়াতে শুরু করল। ওর পুরুষাঙ্গটা আস্তে আস্তে আবার ভিতরে ঢুকতে লাগল। প্রিয়ার যৌনাঙ্গটা অসম্ভব টাইট। তাই ভিতরে ঢোকাতে অসুবিধা হচ্ছে। প্রিয়ার কথা চিন্তা করে ধীরে ধীরে রমণ করতে লাগল ও। পার্থ ঠিকই বলেছিল। প্রথমে ব্যথা লাগবে ঠিকই, কিন্তু আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করবে। ঠিক সেটাই হচ্ছে। ওর যৌনাঙ্গ থেকে ক্রমাগত আসা যাওয়া করতে থাকা পুরুষাঙ্গটা ওকে আর ব্যথা নয়, বরং শরীরী সুখ দিচ্ছে। সেই সুখের সাগরে নিজের শরীরটাকে ভাসিয়ে দিল প্রিয়া। ওর শরীরের উপর ক্রমাগত আগু-পিছু করতে থাকা শরীরটার সাথে তাল রেখে ও-ও নিজের কোমরটাকে উপর-নীচ করতে শুরু করল। স্ত্রীর শরীরের স্পন্দন পার্থকে বুঝিয়ে দিল যে, সে-ও এই উত্তেজক খেলায় অংশ নিতে তৈরী। পার্থ নতুন ছন্দে শুরু করল এই খেলা। আগের থেকে অনেক স্বতস্ফূর্ত। অনেক সাবলীল। সঙ্গিনী প্রিয়াও অনেক সাবলীল। দুটো শরীরই একই লয়ে, একই ছন্দে নিজেদের খেলায় মত্ত। নারীর শরীরের উপর আগুপিছু করতে থাকা পুরুষ। আর তার কোমর ধরে তার পুরুষাঙ্গটাকে নিজের শরীরের গভীরে, আরোও গভীরে পৌঁছে দিতে সাগ্রহী নারী। ভারী পুরুষাঙ্গ ভিতরে ঢুকছে সব বাধাকে তুচ্ছ করে। আর নারী শরীরটাকে করে তুলছে পিচ্ছিল। আর সেই পিচ্ছিল পথ বেয়ে আরো দূরে পাড়ি দিচ্ছে পুরুষ। প্রতিটা ধাক্কায় নারী শরীর যেন নাচছে। তার থেকে নাচছে, তার নারী শরীরের প্রতীকি অঙ্গ। তার নরম স্তনযুগল। সেই নাচতে থাকা স্তনযুগলকে সজোরে খামচে ধরে আরো সচল হচ্ছে পুরুষ। গতি এখন মধ্যম। তাতেই নারী শরীর পৌঁছে গেল গন্তব্যে। কোমরটাকে উপরের দিকে উঁচু করে তুলে ধরে সে ছেড়ে দিল, তার মিলনের প্রথম কামরস। পুরুষের পুরুষাঙ্গের গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে সেই রস। ভিজিয়ে তুলছে নারীর ঊরু। আর সেই সাথে বিছানাও। সুখের আবেশে চোখ বুজল নারী। কান্ত শরীরটা নামিয়ে রাখল বিছানাতে। শরীর ক্লান্ত, মন নয়। সে চাইছে আরো আরাম, আরো সুখ। ক্লান্তি নেই পুরুষেরও। পিচ্ছিল যৌনাঙ্গকে উপেক্ষা করে সে লাগাতার ঠেলে দিচ্ছে তার পুরুষাঙ্গটাকে। ক্লান্তি শেষে আবার জাগছে নারী শরীর। পুরুষের কোমর পায়ে করে আঁকড়ে ধরে পুরুষের পুরুষাঙ্গটাকে ঢুকতে দিচ্ছে নিজের ভিতরে। পুরুষের গতি এখন সম্পূর্ণ। দুরন্ত গতিতে সে নিজের পুরুষাঙ্গটাকে ভিতরে ঢোকাচ্ছে, আবার পরক্ষণেই টেনে বের করে আনছে। পিচ্ছিল যৌনাঙ্গে বারংবার পুরুষাঙ্গ যাওয়ার কারণে অন্ধকার ঘরটাতে অদ্ভুত একটা আওয়াজ বের হচ্ছে। “ফচ্...ফচ্...ফচ্...” সম্প্রতি তার সাথে যোগ হয়েছে নারীর তীব্র যৌন শীৎকার। “আআহহহ...ওওওহহ...উউউফফফ....” এই দুই শব্দের মিলিত ককটেলে পরিবেশটা মাদকীয় করে তুলেছে। অবশেষে শেষ হল এই উত্তেজক খেলার। পুরুষ স্তব্ধ করল তার গতি। তারপর নারীর শরীরের গভীরতম প্রান্তে তীব্র বেগে ফেলতে লাগল তার পৌরুষের বীজ। আর নারী প্রথমবারের জন্য সেই বীজকে সযত্নে গ্রহণ করল নিজের মধ্যে। নারী শরীরটা বিছানায় পড়ে গেল। আর রমণক্লান্ত পুরুষশরীরটা এলিয়ে পড়ল নারী উপর। পুরুষ মাথা রাখল নারীর বুকে। নারী সযত্নে আলিঙ্গন করে তাকে টেনে নিল নিজের বুকে। রাত্রি শেষের পথে। নীল আকাশে আবছা রঙের খেলা। একটা আলো আঁধারী ঘর। সেই ঘরে একটা বিছানা। আর সেই বিছানায় পরিপূর্ণ মিলনের পর একে অপরের বাহুবন্দী দুটো শরীর নিশ্চিন্তে নিদ্রামগ্ন। একটা পুরুষ, একটা নারী। একজন স্বামী, অন্যজন স্ত্রী।
বেশ বেলাতেই ঘুম ভাঙল প্রিয়ার। গোটা শরীরটা ব্যথায় ভর্তি। বিশেষ করে তলপেটের নীচে থেকে। খোলা জানালা দিয়ে একগোছা নরম আলো ঘরে ঢুকে মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেকটাই বেলা হয়ে গেছে। দেওয়াল ঘড়ির দিকে চোখ পড়তে দেখল ঘন্টার কাঁটা নটার ঘরে ধাক্কা মারছে। যদিও পার্থর আজ অফিস নেই, তবুও আর শুয়ে থাকা যায়না। ব্যথায় মোড়া শরীরটাকে বিছানা থেকে তুলতে যেতেই বাধা পেল। পার্থর একটা হাত ওর শরীরের উপর রাখা। ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুমন্ত স্বামীর দিকে চেয়ে মুচকি হাসল প্রিয়া। তারপর নিজের শরীর থেকে ওর হাত সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে এল। মেঝে থেকে নিজের শাড়ি-ব্লাউজ ইত্যাদিগুলো তুলে নিয়ে পরে ফেলল। তারপর পার্থর কপালে একটা আলতো করে চুমু দিয়ে বাথরুমের দিকে চলে গেল। বাথরুমের দেওয়ালে লাগানো ছোট্ট আয়নাতে নিজের প্রতিচ্ছবির সামনে দাঁড়াল প্রিয়া। কপালের সিঁদুরের টিপটা ধেবড়ে ঘেঁটে গিয়েছে। সেটা দেখেই গতরাত্রের সবকথা মনে পড়ে গেল। কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে নিজের মনে। পরক্ষণেই মনে হল এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে। পার্থ এখন আর তার প্রেমিক নয়, তার স্বামী। আর সে তার প্রেমিকা নয়, তার স্ত্রী। আর গতকাল রাত্রে ওর আর পার্থ মধ্যে যা কিছু হয়েছে, সবই আর পাঁচটা স্বামী-স্ত্রীর মতোই স্বাভাবিক, জৈবিক ঘটনা। এতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। তারপর এই সব কথা ভুলে শাওয়ার চালিয়ে স্নান করতে লাগল প্রিয়া।
স্নান সেরে ভিজে কাপড়টা গায়ে জড়িয়ে শোওয়ার ঘরে এল ও। চেয়ে দেখল পার্থ এখনও অগাধে ঘুমাচ্ছে। ঘরের জানালাগুলোর পর্দা টেনে দিয়ে ও নতুন শাড়ি পরল। কিছুক্ষণ পর ঘুম ভাঙল পার্থ। পাশে হাত বাড়িয়ে দেখল প্রিয়া নেই। বিছানায় উঠে বসে দেখল ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে বসে প্রিয়া চুল আঁচড়াচ্ছে। সদ্য স্নান করে এসেছে ও। বিছানা থেকে নেমে মেঝে থেকে পাজামাটা তুলে পড়ল ও। ওকে উঠতে দেখে প্রিয়া মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করল, “ঘুম হল?” পার্থ ছোট্ট একটা আলমোড়া ভেঙে বলল, “হুম্। তোমার তো স্নান হয়ে গেছে দেখছি।” “এইমাত্র করে এলাম। তুমি যাও, ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি জলখাবার করছি।” কোনো উত্তর না দিয়ে প্রিয়ার পিছনে এসে দাঁড়াল পার্থ। আয়নায় প্রিয়ার প্রতিচ্ছবির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ও। প্রিয়া বলল, “কি দেখছো?” পার্থ উত্তর দিল, “তোমাকে। এই নতুন রূপে তোমাকে খুব ভালো দেখাচ্ছে।” প্রিয়া মুচকি হেসে বলল, “সকাল থেকেই ফ্লাটিং শুরু করে দিলে বউয়ের সাথে?” পার্থও মুচকি হেসে জবাব দিল, “একে ফ্লাটিং বলে না, সুন্দরী। গোদা বাংলায় একে বলে ভালোবাসা। বুঝলে? নির্ভেজাল ভালোবাসা।” প্রিয়া বলল, “বাব্বা, সকাল থেকেই একদম কবিদের মত কথা বলছ দেখছি।”
“বিয়ের পর সব ছেলেরাই একটু আধটু কবি হয়। আর মেয়েরা কি হয় জানো?”
“কি?”
“একেকটা পাকা গিন্নী। ঠিক তোমার মত।”
ওর রসিকতায় দুজনেই হাসতে লাগল। পার্থ শরীরটা ভাঁজ করে মাথাটা এগিয়ে নিয়ে গেল বসে থাকা প্রিয়ার কাঁধের কাছে। সদ্যস্নাত প্রিয়ার শরীর থেকে সাবান আর পারফিউমের মিলিত একটা স্নিগ্ধ একটা গন্ধ আসছে। ওর ফর্সা চওড়া পিঠ আর কাঁধে লেগে থাকা ইতিউতি জলবিন্দু। ঘাড়ের উপর ভিজে চুলের আলগা খোঁপা। কপালে পরা সিঁদুরের টিপ, আর সিঁথির গাঢ় সিঁদুরের দাগ। সবমিলিয়ে পরিপূর্ণ এক নারী। সম্পূর্ণা এক স্ত্রী। এক প্রেমিকা। এক বন্ধু। এক সাথী। একজন নারী। অনেকগুলো পরিচয়। পার্থর ঘোর কাটল প্রিয়ার কথায়। “তোমার সাথে কাব্য করলে বেলা বয়ে যাবে। আমি চললাম রান্নাঘরে। তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাব্য করো।” টুল থেকে উঠে পড়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে লাগল প্রিয়া। তখনই ওর চোখ পড়ল বিছানার উপর। চাদরটা কুঁচকে একশা হয়ে আছে। তার চেয়েও বড় কথা মাঝখানে কিছুটা অংশ জুড়ে রক্তের কালো ছাপ। তার কৌমার্য্য ভঙ্গের প্রমাণ। তার কুমারী থেকে নারী হওয়ার প্রমাণ। প্রিয়া চাইল না জিনিসটা পার্থর চোখে পড়ুক। তাই ওর নজর এড়িয়ে বিছানার চাদরটা নিয়ে চলে গেল। ব্যাপারটা পার্থ ঠিক লক্ষ্য করল। মনে মনে হাসল ও। প্রিয়া একবিংশ শতাব্দীর মেয়ে হয়েও, তার ধ্যানধারণা এখনও সেই পুরানো যুগের। তাই ও ওকে লুকিয়ে চাদরটা নিয়ে চলে গেল। ও চাইলে এ বিষয়ে প্রিয়ার সাথে কথা বলতে পারে। কিন্তু পার্থ ওর মনের সংস্কার, চিন্তা-ভাবনা, ইচ্ছা কোনোটাকেই জোর করে বদলাবে না। ওর প্রিয়া যেমন, ওকে ও ঠিক তেমনভাবেই আপন করে নেবে। মনে মনে মুচকি হেসে তোয়ালেটা নিয়ে বাথরুমের দিকে পা বাড়াল পার্থ।একটা গোটা ঘটনাবহুল দিনের শেষে নীলকণ্ঠবাবু নিজের চেম্বারে এসে বসলেন। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এটাই তাঁর ব্যস্ততম দিন। আজ অনেক দিন পর কালো কোট গায়ে দিয়ে কোর্টরুমে ধর্মাবতারের সামনে দাঁড়ালেন উনি। নিজের করা প্রতিজ্ঞাটা ভেঙ্গে দিয়ে আবার নিজের মক্কেলের হয়ে সওয়াল করলেন। তাকে নির্দোশ প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন। এতদিন পর আবার তাঁকে সওয়াল করতে দেখে কোর্টরুমে ছোটখাটো ভীড় জমে গিয়েছিল বলা যেতে পারে। কারণ এটা সবাই বিশ্বাস করে উঠতে পারছিল না যে, অ্যাডভোকেট নীলকণ্ঠ বাগচী আবার কোর্টে ফিরে এসেছে। সেই পুরানো নীলকণ্ঠ বাগচী, যার সওয়ালের কাছে হার মেনেছে কত বিপক্ষের উকিল। কত যে প্রায় হেরে যাওয়া কেস কেবল নিজের সওয়াল আর প্রমাণের ভিত্তিতে জিতেছেন তার শেষ নেই। একটা সময় লোকে ভাবত, কেস জিততে গেলে নীলকণ্ঠ উকিলকে ধরো, চোখ বুজে কেস জিতে যাবে। কিন্তু উনি সব কেস নিজের হাতে নিতেন না। ওনার মতে উনি এমন কেস নিতেন যার মধ্যে সত্যতা আছে। উনি কোনোদিন এমন কোনো ব্যক্তির হয়ে কেস লড়েন নি, যে সত্যি করেই কোনো অপরাধ করেছে। উনি কোনোদিন কোনো অপরাধীর হয়ে কেস লড়েন নি। তারপর হঠাৎ করেই সবাই জানতে পারল নীলকণ্ঠ উকিল আর কারো কেস লড়বে না। সে ওকালতি ছেড়ে দিয়েছে। কেন ছেড়েছে তা নিয়েও এক একজনের এক একরকম মত। তবে তার মধ্যে কোনটা সত্যি তা কেউ জানে না। তার কারণ উনি কেন ওকালতি ছেড়েছেন, তা কাউকেই বলেন নি।
মাথাটা প্রচণ্ড ধরে আছে। কাল সারারাত ঘুমান নি। এখন একবার কফি খেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু কফি খেলে ঘুমের রেশটা কেটে যাবে। তা সত্ত্বেও কিচেনে গিয়ে নিজের পছন্দের ব্ল্যাক কফি বানিয়ে নিয়ে এসে আবার চেম্বারে বসলেন। চেয়ারে পিঠটা ঠেকিয়ে কফির কাপে আলতো করে চুমুক দিলেন। তারপর এক এক করে সারাদিনের ঘটনাগুলোকে মনের মধ্যে সাজিয়ে নিতে লাগলেন। গতকাল রাতে যখন উনি থানায় যান, তখন প্রায় শেষ রাত্রি। থানার ডিউটি অফিসার দেবার্ঘ্যবাবুর সাথে দেখা করার পর উনি পার্থর সেলে যান। সেখানে ওর কাছে ওর জীবনের কথা শুনছিলেন। ছেলেটার কথা শুনতে শুনতে ওনার বারবার মনে হচ্ছিল, এই ছেলেটা কিভাবে তিন তিনটে লোককে গুলি করে খুন করল? কারণ আর যাই হোক ওর দ্বারা খুন হওয়ার নয়। সাধাসিধা একটা ছেলে। যে তার প্রেমিকা বা স্ত্রীকে অসম্ভব ভালোবাসে। উনি ছেলেটার কাছে জানতে চেয়েছিলেন কেন সে এই খুনগুলো করেছে। এর পিছনে আসল কারণটা কি। ছেলেটা প্রথমে কিছুই বলতে চায়নি ঠিক কথা, কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে সবকথা খুলে বলতে শুরু করে। আসলে সে নিজেও এতদিন কারোর কাছে এইকথাগুলো বলতে চাইছিল। কিন্তু কোনো কারণে বলতে পারেনি। তাই আজ ওনাকেই সবকথা খুলে বলছিল। তবে ও যেসব কথাগুলো বলছিল, তার মধ্যে বেশীরভাগই এই কেসের পক্ষে অপ্রয়োজনীয়। তবুও তাকে না থামিয়ে উনি ওর কথা শুনে যাচ্ছিলেন। আর লক্ষ্য করছিলেন ওর চোখদুটো। নিজের স্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে যেগুলো অসম্ভব তীব্রতায় জ্বলজ্বল করছিল। ও শোনাচ্ছিল ওর প্রেমের কথা, ওদের বিয়ের কথা, ওদের নতুন সংসারের কথা। সেইসবকথা শুনেও উনি এটা বুঝতে পারলেন না কেন ও খুনগুলো করেছে। তার থেকেও বড় কথা রোহন আগরওয়ালের সঙ্গে এই কেসের সম্পর্কটাই বা কি। আবার দেবার্ঘ্যবাবুর কথা ওনাকে আরো ধন্ধে ফেলে দিয়েছে। উনি বলেছেন পার্থর ফ্ল্যাট থেকে বেশকিছু সেক্স টয় পাওয়া গেছে। সেগুলো কিসে লাগত? সেগুলো কার? এই কেসের সঙ্গে সেগুলোর কিছু সম্পর্ক আছে? নাকি নেহাতই কাকতালীয়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ওনাকে জানতেই হবে। ওনার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, এই খুনের কারণ অতি গুরুতর। তা নাহলে পার্থর মত একটা ছেলে কোনোমতেই একসঙ্গে তিনজনকে খুন করতে পারেনা। সেই কারণটাই উনি জানতে পারছেন না। অথচ সেটাই এখন ওনাকে জানতে হবে। আজকের পর আবার পনেরোদিন পর হিয়ারিং। সেদিন কোনো সলিড লিড না দিলে কেসটা একপ্রকার শেষ হয়ে যাবে। সেইসাথে শেষ হয়ে যাবে দুটো জীবনও। যেটা উনি কোনোমতেই হতে দিতে চাননা। পার্থর সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে রাত্রি শেষ হয়ে সকাল হয়ে গিয়েছে, সেটা উনি জানতেই পারেন নি। উনি আরো কিছু কথা জানতে চাইছিলেন। কিন্তু সে সুযোগ উনি পেলেন না। ওনাদের কথার মাঝেই একজন এসে দাঁড়ালেন।
নীলকণ্ঠবাবু একমনে পার্থর কথা শুনছেন। এমন সময় কারোর পায়ের আওয়াজ শুনতে পাওয়া গেল। কেউ একজন সেলের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। নীলকণ্ঠবাবু মুখ তুলে সেদিকে তাকালেন। দেখলেন একজন পুলিশ অফিসার সেলের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। তার লক্ষ্যবস্তু যে তিনিই সেটা উনি ভালোমত বুঝতে পারলেন। এর সঙ্গে এটাও বুঝতে পারলেন যে, অফিসারটি ওনাকে এখানে দেখে মোটেও খুশী হয়নি। সেটা তার মুখের হাবভাব থেকেই স্পষ্ট। নীলকণ্ঠবাবু পুলিশ অফিসারটিকে দেকে কৌতুহলবশত উঠে দাঁড়ালেন। অফিসারটি ওনাকে বলল, “উকিলবাবু, আপনার সওয়াল-জবাব আশা করি শেষ হয়েছে। তাহলে কি আপনি এখন একবার আমার সঙ্গে আসতে পারবেন?” ওর কথা শুনে নীলকণ্ঠবাবু মৃদু হেসে বললেন, “আপনার জানা এত সহজে শেষ হয়না। তবে আপনি যখন বলছেন, তখন অবশ্যই আপনার সঙ্গে যাবো। কারণ আপনার কাছেও আমার অনেক কিছু জানার আছে।” ওনার কথা শুনে অফিসারটি যেন একটু এবাক হয়ে গেল। “আমার কাছে আপনার কিছু জানার আছে? কিন্তু কি?” নীলকণ্ঠবাবু আগের মতই স্মিতহাস্যে জবাব দিলেন, “বলব। তবে এখানে নয়। আপনার চেম্বারে গিয়ে। তবে তার আগে...” বলে পিছন ফিরে পার্থকে আশ্বাসের সুরে বললেন, “তুমি চিন্তা কোরোনা। আমি কোর্টে থাকবো। আর ভয় পাবে না।” বলে উনি সেল থেকে বেরিয়ে এলেন। উনি বেরিয়ে আসতেই একজন কনস্টেবল সেলে চাবি লাগিয়ে দিল। নীলকণ্ঠবাবু আরেকবার চোখের ইশারায় পার্থকে আশ্বাস দিয়ে অফিসারটির পিছন পিছন তার চেম্বারে চলে গেলেন। চেম্বারে নিজের চেয়ারে বসতে বসতে অফিসারটি বলল, “আপনি ওকে বৃথাই আশ্বাস দিচ্ছেন, নীলকণ্ঠবাবু। ওর পক্ষে এই কেস থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা প্রায় নেই বললেই চলে। বসুন।” শেষ কথাটা সে ওনাকে চেয়ারের দিকে ইশারা করে বলল। নীলকণ্ঠবাবু “ধন্যবাদ,” বলে চেয়ারে বসে বললেন, “সেটা আমার উপর আপনি অনায়াসে ছেড়ে দিতে পারেন। বাই দ্য ওয়ে, আপনি আমার নাম জানেন। তার মানে আমার সম্পর্কে আপনি সব জানেন।”
“জানতে হয়, উকিলবাবু। তা, আপনি তো বেশ কয়েকবছর এসব ঝঞ্ঝাট ছেড়েছুড়ে একপ্রকার সন্ন্যাস নিয়ে নিয়েছিলেন। তা হলে আবার কামব্যাক করলেন কেন? আর যাও বা করলেন, তাও আবার এইরকম কেসের জন্য, যাতে আপনার হার একশো শতাংশ নিশ্চিত?”
“আমি কোনো কেসই জেতার নিতাম না। আর আজও নিইনি। আমি কেস নিই সত্যাসত্য নির্বাচন করে। হ্যাঁ, এটা মানছি যে, খুন তিনটে পার্থই করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন। কারণটা কি?”
“আরে, চুলোয় যাক কারণ! কারণ যাই হোক। পার্থ খুনী, এটাই শেষ কথা।”
“উঁহু। শেষ নয়, বরং শুরু বলতে পারেন। আর কোর্টে আমি সেই কারণটাকেই তুলে ধরব। তাতে হয়তো পার্থর অপরাধ কম হবেনা, কিন্তু আসল সত্যিটা সবার সামনে আসবে। আর সবাই সেটা জানতে পারবে।”
“সবাই সত্যিটা জানতে পারবে কিনা জানিনা। কিন্তু একটা কথা জানি। আপনি রাজেশ আগরওয়ালকে চেনেন না। তার সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই আপনার। সে কে, আর কি করতে পারে।”
“একটা জিনিস দেখে খুব অবাক লাগছে জানেন?”
“কি?”
“এটাই যে রাজেশ আগরওয়ালের মতো আপনিও সত্যিটা জানতে চাননা। আপনি না চাইলেও, আমি চাই। আর যে কোনো প্রকারে আমি সেটা খুঁজে বের করবোই। And believe me, I don’t tell lie.”
“Best of luck.” একদৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে বলল অফিসারটি।
“Thank you. এখন আমি উঠি। তাড়া আছে। কেসের তোড়জোড় করতে হবে। পয়েন্টস্ নিতে হবে। অনেক কাজ। আবার পরে কথা হবে।” বলে নীলকণ্ঠবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন। তার দরজার দিকে কিছুটা গিয়ে আবার ফিরে এলেন। তারপর অফিসারটির চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমি রাজেশ আগরওয়ালকে চিনি কিনা সেটা বড় কথা নয়। কথা হচ্ছে, ও আমাকে চেনে। আর ভালোভাবেই চেনে। ফুরসত পেলে জিজ্ঞাসা করে নেবেন।” বলে উনি অফিসাররের চেম্বার থেকে বেরিয়ে এলেন। আসার সময় ওনার কানে এল অফিসারটির গলা, “দেবার্ঘ্য, আমার পারমিশন ছাড়া ফারদার কেউ যেন পার্থ সাহার সাথে দেখা করতে বা কথা বলতে না পারে।”
কাজটা যে সত্যি করেই খুব টাফ, সেটা প্রথম থেকেই জানেন নীলকণ্ঠবাবু। পুলিশের সাহায্যও যে তিনি পাবেন না, সেটাও ওনার ভালোমতই জানা। তবে দেবার্ঘ্য বলে অফিসারটি বেশ কাজের মনে হল। একমাত্র সে-ই ওনাকে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু ওপরওয়ালাকে না জানিয়ে, সে কতটা কি করতে পারবে সেটাই চিন্তার বিষয়। এই কেসের সবচেয়ে বড় পয়েন্ট হচ্ছে খুনের মোটিভ। পার্থর কথা অনুযায়ী সেটা হল প্রায়শ্চিত্ত। যেখানে প্রায়শ্চিত্ত থাকবে, সেখানে পাপ থাকবে। আর পাপের পাশাপাশি পাপীও অবশ্যসম্ভাবী। এখানে সেই পাপীটা কে? পার্থ? নাকি অন্য কেউ? সেই অন্য কেউটা কি রোহন? পাপী যেই হোক, পাপটা কি? এই পাপটা সম্পর্কে জানতে হবে। পাপটাকে যদি খুঁজে বের করা যায়, তাহলে পাপীকেও খুঁজে বের করা যাবে। আর পাপটাকে জানতে গেলে একবার ঘটনাস্থলে যাওয়াটা খুব জরুরী। আর তার ব্যবস্থা একজনই করতে পারে। সে হল... নীলকণ্ঠবাবুর চিন্তার জালটাকে ছিঁড়ে দিয়ে, ওনার চেম্বারের দরজার সামনে একটি ছায়ামূর্তি এসে দাঁড়াল। সে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরে ঢুকছে না। সেইদিকে নজর যেতে নীলকণ্ঠবাবু খানিকটা উচ্চস্বরে বললেন, “ভিতরে এসো।” ওনার কথা শুনে খানিকটা ইতস্তত করে ছায়ামূর্তিটা চেম্বারে ঢুকল। তার দিকে চেয়ে উনি বললেন, “বোসো। কি ব্যাপার, ঘুম আসছে না?” চেয়ারে বসে প্রিয়া নীচুস্বরে বলল, “না।” প্রিয়াকে উনি নিজের বাড়িতেই এনে রেখেছেন। ওনার মনে হয়েছে, ওনার বাড়িটাই আপাতত প্রিয়ার পক্ষে নিরাপদ জায়গা। তাই আজকের হিয়ারিং-র পর উনি এ বিষয়ে বন্ধু অবিনাশের সঙ্গে কথা বলেন। অবিনাশবাবু আর প্রিয়ার বাবা রাজী হয়ে যান। প্রিয়াও মানা করেনি। সন্ধ্যার পর প্রিয়াকে অবিনাশবাবু পৌঁছে দিয়ে গেছেন। প্রিয়ার উত্তরে উনি বললেন, “নতুন জায়গায় প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হয়। তুমি ঘুমের চেষ্টা করো। কাল থেকে অনেক স্ট্রেশ যাচ্ছে। ঘুমালে শরীরটা হাল্কা হবে।”
“আমার ঘুম আসছে না। একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞাসা করব ভাবছিলাম। ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু একতলায় নেমে এসে দেখি, এঘরে আলো জ্বলছে। আপনি ঘুমান নি? কালকে সারারাত তো জেগেই কাটিয়েছেন।”
“হ্যাঁ, একটু পর ঘুমাতে যাবো। তা তুমি কি জিজ্ঞাসা করবে বলছিলে।”
প্রিয়া সরাসরি নীলকণ্ঠবাবুর চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করল, “এই কেসে পার্থর ছাড়া পাওয়ার কি কোনোও আশা আছে?প্রিয়ার মুখে প্রশ্নটা শুনে কয়েক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলেন নীলকণ্ঠবাবু। কারণ উনি ওর মুখ থেকে সরাসরি এই প্রশ্নটা শুনবেন, তা আশা করেননি। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি বেশ খানিকটা ইতস্তত বোধ করলেন। নিজের প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে প্রিয়া বলল, “আপনি চুপ করে থাকবেন না, নীলকণ্ঠবাবু। সত্যিটা আমার জানা প্রয়োজন। আপনি যেটা সত্যি, সেটাই বলুন।” প্রিয়ার কথা শুনে নীলকণ্ঠবাবু গলাটা খাঁকড়ে নিয়ে বললেন, “দেখো প্রিয়া, সত্যি কথা বলতে কি, কেসটার এই সবে শুরু। সুতরাং এত তাড়তাড়ি কোনো কথা বলাই ঠিক হবে না। কিন্তু এই কেসে অনেক প্রশ্ন আছে। যেগুলোর উত্তর আমার জানা প্রয়োজন। সেই উত্তরগুলো জানা থাকলে আমার সুবিধা হবে, এই কেসে লড়তে।” প্রিয়া ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনার যা প্রশ্ন আছে, আমাকে করুন। সব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।” নীলকণ্ঠবাবু কয়েকমুহর্ত প্রিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর বলতে শুরু করলেন, “বেশ। এই কেসে খুন হয়েছে রোহন আর তার দুই বন্ধু। আর তাদের খুন করেছে তোমার স্বামী, পার্থ। তার মানে তোমরা দুজনেই রোহনকে আগে থেকেই চিনতে। কি তাই তো?”
“হ্যাঁ। আমরা রোহনকে চিনতাম।” নিম্নস্বরে জবাব দিল প্রিয়া।
“খুনের পর পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তখন রোহন এবং তার দুই বন্ধুকে পুরোপুরি ভাবে নগ্ন অবস্থায় পায়। কেন?”
“আপনাকে তো প্রথম দিনেই এর উত্তর দিয়েছিলাম। ওরা তিনজন মিলে আমাকে ধর্ষণ করছিল। তার মাঝেই পার্থ এসে পড়ে। আর ওদেরকে গুলি করে। তাই ওদেরকে নগ্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে।”
“পার্থর কাছে কি সবসময়ই আর্মস থাকে?”
“না। সেইদিনেই ওর কাছে প্রথমবার বন্দুক দেখতে পাই।”
“তার মানে রোহনকে খুন করার উদ্দেশ্যেই পার্থ ঐ আর্মসটা জোগাড় করে এনেছিল।”
“হতে পারে।”
“তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পার্থ জানল কি করে যে, ওরা তোমাকে ধর্ষণ করছে। আর যদি জেনেই থাকে তাহলে ও এত তাড়তাড়ি আর্মসটা জোগাড় করল কোথা থেকে?”
“আসলে...” কিছু একটা কথা বলতে গিয়ে চুপ করে গেল প্রিয়া। তার মুখে দ্বিধা আর দ্বন্দ্বের ছাপ স্পষ্ট। কোনো কথা বলতে চাইছে, কিন্তু কোনো কারণে বলতে পারছে না। কয়েক মুহুর্ত অপেক্ষা করার পর নীলকণ্ঠবাবু বললেন, “দেখো প্রিয়া, আমি চাই তোমাদের দুজনকে সাহায্য করতে। এবং তার জন্য আমাকে সব কথা জানতেই হবে। তা নাহলে আমার পক্ষে কোর্টে এটা প্রমাণ করা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে যে, কেন আর কোন পরিস্থিতিতে পার্থকে এই অপরাধ করতে হয়েছে। তাই তোমার কাছে আমার অনুরোধ কোনো কথা আর না লুকিয়ে, নিঃসঙ্কোচে সব খুলে বলো। এতে তোমাদেরই লাভ হবে।” কয়েক মুহুর্ত নিজের মনে কিছু ভেবে নিয়ে নীচুস্বরে প্রিয়া বলল, “আসলে এই কথাগুলো আপনাকে কিভাবে বলব সেটাই ভেবে উঠতে পারছি না। আমার আর পার্থর জীবনে গত কয়েকটা মাস কিভাবে গেছে, তা কেবল আমরাই জানি। সেটা আমরা কাউকে বোঝাতেও পারব না। আর কেউ সেটা বুঝতেও পারবে না। ভেবেছিলাম ঐ কয়েকটা মাসে আমাদের দুজনের সঙ্গে যা যা ঘটেছে তা কাউকেই আমরা জানাবো না। কিন্তু বুঝতে পারছি, আজ যদি আমি চুপ করে থাকি, তাহলে সেটা পার্থর প্রতি অন্যায় করা হবে। আজ ও যা কিছু করেছে তা কেবল আমার জন্য। ঐ জানোয়ারটার হাত থেকে আমাকে বাঁচানোর জন্য ও এই কাজটা করেছে। আর আমার চুপ করে থাকাটা কেবল মুর্খামিই হবে। আজ আমি আপনাকে সব কথা খুলে বলতে চাই। আপনি জিজ্ঞাসা করলেন না, যে পার্থ কিভাবে জানল যে, রোহন সেদিন আমাকে ধর্ষণ করছে? কারণ কেবল সেইদিনই নয়, ও প্রতিদিন আমাদের ফ্ল্যাটে আমার সাথে সময় কাটাতো। কখনো একা, কখনও বন্ধুদের সাথে। ও প্রতিদিন আমাকে ভোগ করত। আমাকে ধর্ষণ করত।”
“এসব কতদিন ধরে চলছে?”
“প্রায় মাস ছয়েক আগে থেকে।”
“তাহলে পার্থ এসব ব্যাপার আগে থেকেই জানতো?” ওনার গলায় বিস্ময় ঝরে পড়ল।
“হ্যাঁ।” প্রিয়ার স্বরে লজ্জার আভাস পাওয়া গেল।
“তা সত্ত্বেও ও কোনোও রকম স্টেপ নিল না? ও পুলিশের কাছে যেতে পারত। কোনোরকম লিগ্যাল স্টেপ নিতে পারত। সেসবকিছু না করে ও এইরকম স্টেপ নিতে গেল কেন?” ওনার গলায় আগের থেকে বেশী বিস্ময় ঝরে পড়ল।
“এটা ছাড়া ওর আর কোনো উপায় ছিল না। ওর মনে হয়েছিল আমাকে বাঁচানোর এটাই শেষ রাস্তা। ও যখন আমার চোখের সামনে ঐ তিনজনকে এক এক করে গুলি করে মারল, তখন আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ও এটা করতে গেল কেন। আজ মনে হচ্ছে ও যেটা করেছে ঠিক করেছে। রোহনদের মত মানুষদের সঙ্গে এটাই করা উচিত। আমাদের আরো আগে এটা করা উচিত ছিল।” একটানা কথা বলে চুপ করল প্রিয়া।
“পার্থর ফোন পেয়ে পুলিশ যখন তোমাদের ফ্ল্যাটে যায়, তখন ওখানে কেবল পার্থ ছিল। তুমি ছিলেনা। তুমি ছিলে কোথায়?”
“পুলিশ স্টেশনে ফোন করার পর ও বলে পুলিশ আসতে মিনিট পনেরো লাগবে। তার মধ্যে আমি যেন তৈরী হয়ে নিই। ও একটা ব্যাগে আমার জামাকাপড় আর অন্যান্য জিনিসপত্র ভরে ট্যাক্সি করে আমাকে আমার বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।”
“কেন?”
“যাতে পুলিশ আমার সম্পর্কে কোনোকিছু জানতে না পারে। আমি ওখানেই থাকতে চেয়েছিলাম। ওর কাছে, ওর পাশে থাকতে চেয়েছিনাম। সবকিছু ওর সঙ্গে ফেস করতে চেয়েছিলাম। ও রাজী হয়নি। আমাকে জোর করে ওখান থেকে পাঠিয়ে দিয়েছিল।”
“তোমাদের ফ্ল্যাটে পুলিশ বেশ কিছু সেক্স টয় পেয়েছিল। সেগুলো কার?”
“ওগুলো সব রোহন কিনে এনেছিল।” কিছুটা ইতস্তত করে বলল প্রিয়া।
কয়েক মুহুর্ত চুপ থেকে নীলকণ্ঠবাবু বললেন, “তুমি বললে প্রায় ছয় মাস ধরে রোহন এইসব করছে। কিন্তু তোমাদের সঙ্গে ওর পরিচয় কিভাবে হল? আর এসব শুরু কিভাবে?”
“এসবের শুরু আজ থেকে প্রায় মাস সাতেক আগে। আমাদের বিয়ে হয়েছে তার প্রায় চার মাস আগে। আমরা তখন একটা ছোট্ট ভাড়াবাড়িতে থাকি। ও একটা বেসরকারী কোম্পানীতে চাকরী করে। আর আমি ঘর সামলাই। ওর মাইনে অল্প ছিল। কিন্তু তাতে আমাদের দুজনের ভালোভাবেই চলে যাচ্ছিল। তারপর...”
সারাদিনের শেষে ক্লান্ত একটা বিকেল। কিছুটা একলা। খানিকটা মনমরা। আকাশের বুকে রঙের আঁকিবুকি। পাখিদের ঘরে ফেরার ডাক। হাল্কা বাতাসে শরীরে জেগে ওঠা শিরশিরানি। সবমিলিয়ে একটা দিনের শেষ। আর প্রিয়ার ব্যস্ততার শুরু। কিছুক্ষণ বাদেই পার্থ ফিরবে অফিস থেকে। ওর জন্য জলখাবার তৈরী, রাতের খাবার বানানো – সব বাকী। সকালে ও অফিসে বেরিয়ে গেলে সারাদিন প্রিয়ার অখণ্ড অবসর। সময়ের পায়ে যেন তখন ভারী শিকল। নিজের জায়গা থেকে যেন নড়তেও চায়না। ঘড়ির কাঁটাগুলোও হয়েছে তেমন! একদম অলস! সেই সময় যেন আর কাটতেই চায়না। আর গ্রীষ্মের দুপুর! যেন শেষ হওয়ার নামই নেই। দুপুরবেলা ঘুমানো প্রিয়ার ধাতে নেই। তার বদলে বিছানায় শুয়ে শুয়ে বই পড়ে। আর মাঝে মাঝে আড়চোখে দেওয়াল ঘড়ির দুষ্টু কাঁটাগুলোর দিকে তাকায়। মাঝে মাঝে মনে হয় ওরা যেন ওর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে এভাবে দেরী করছে। সাড়ে তিনটে...চারটে...সাড়ে চারটে...অবশেষে পাঁচটা। যেন একটা যুগের শেষ। পাঁচটা বাজলে, রোদের চোখরাঙানি আগের থেকে একটু কমলে প্রিয়া বিছানা থেকে ওঠে। ছোট্ট আড়মোড়া ভেঙ্গে শরীর থেকে আলস্যটাকে সরায়। তারপর একবার বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। ওদের বাড়ির পাশে খানিকটা জায়গা জুড়ে গাছের সারি। দিনের শেষে এই জায়গাটা পাখিদের কলতানে ভরে ওঠে। দিনের শেষে একটা রাত্রি কাটানোর জন্য নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মরে ওরা। দূরে রাস্তার ধারে তখন এক এক করে জ্বলে উঠছে ল্যাম্প পোস্টগুলো। আর রাস্তায় ব্যস্ত গাড়ির লম্বা লাইন। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ঘরে ফেরার তাড়ায়। পার্থ অফিস থেকে ফেরে ছ’টায়। কোনো কোনোদিন সাড়ে ছ’টা কিম্বা সাতটাও বেজে যায়। যেদিন যেমন কাজের চাপ থাকে। বিয়ের পর থেকে এই যে পার্থর পথ চেয়ে থাকা, ওর জন্য অধীর অপেক্ষা এসবই ওর জীবনে নতুন। বিয়ের আগেও ও পার্থর জন্য অপেক্ষা করত, কিন্তু সেই অপেক্ষাতে এখনকার মত আকুলতার ছোঁয়া থাকত না। ও আগের থেকে পার্থর উপর অনেক বেশী নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তবে এই আকুল অপেক্ষাটাও ওর মনের অনেক কাছাকাছি। ওর ভালো লাগে এইভাবে পার্থর জন্য অপেক্ষা করতে। ওর জন্য পথ চেয়ে থাকতে। দিনের শেষে এটাই ওর ব্যস্ততার চূড়ান্ত সময়। ও বারান্দা থেকে রান্নাঘরে গেল। জলখাবার তৈরী করার মাঝেই দরজার বেলটা জোরে জোরে দু’বার বেজে উঠল। প্রিয়া রান্নাঘর থেকে উঁকি মেরে দেখল ছ’টা বাজতে যাচ্ছে। তারমানে পার্থ আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছে। ও রান্নাঘর থেকে বলল, “যাচ্ছি।” তারপর হাতটা ধুয়ে আঁচলে হাতটা মুছতে মুছতে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। তারমাঝেই আরো দু’বার বেলটা বেজে উঠল। প্রিয়া দরজাটা খুলতে খুলতে বলল, “উফ্, খুলছি! একমুহুর্তও তর সয় না।” দরজাটা খুলতেই পার্থ একপ্রকার লাফিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকল। প্রিয়ার হাতে অফিসের ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে পাখাটা ফুলস্পিডে চালিয়ে চেয়ারে বসল। তারপর প্রিয়াকে বলল, “একগ্লাস জল খাওয়াও তো। ঠাণ্ডা জল। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।” প্রিয়া রান্নাঘর থেকে একগ্লাস জল এনে ওর হাতে দিল। পার্থ একচুমুকে জলটা শেষ করে গ্লাসটা রেখে প্রিয়ার হাতটা ধরে ওর সামনের চেসারে বসাল। তারপর বলল, “বসো। একটা কথা আছে।”
“কি?”
“আজকে অফিসে কানাঘুষো শুনলাম। কয়েকদিনের মধ্যে কিছু এমপ্লয়ির প্রমোশন হবে।”
“তোমারও প্রমোশন হবে!” আনন্দ প্রকাশ করে বলল প্রিয়া।
“ঠিক জানিনা। তবে শুনতে পাচ্ছি আমারও নাম লিস্টে আছে। আর যদি আমার প্রমোশনটা হয়, তবে সেটা তোমার জন্য।”
“আমার জন্য কেন?” প্রিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল।
“বাঃ, তোমার মতো এমন সুন্দরী আর পয়মন্ত বউ কজনের থাকে বলো?”
“থাক। আর এখন ওসব শুরু কোরো না। খাবার ঠা্ণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে এসো।”
“সুন্দরী, তুমি বড়ই নিঠুর!” বউয়ের চিবুক ধরে কাব্যিক ঢঙে কথাটা বলে মুচকি হেসে ঘরের ভিতর চলে গেল পার্থ।
“পাগল একটা!” বলে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল প্রিয়া। ওর মন তখন আসন্ন একটা আনন্দে মশগুল।অন্ধকার রাত্রি। জানালা দিয়ে গলে আসা পূর্ণিমার চাঁদের জ্যোৎস্নার আলো। সেই আলো নিজেদের গায়ে মাখতে থাকা দুটো নগ্ন শরীর। একটা পুরুষ। আর একটা নারী। বিছানায় শোওয়ার পর প্রিয়ার শরীরের গোপনতম স্থানে নিজের উদ্ধত পুরুষাঙ্গকে প্রোথিত করে রমণ করার পর ক্ষান্ত হয়েছে পার্থ। শান্ত করেছে নিজের অশান্ত শরীরটাকে। এখন ওর সুঠাম বুকে মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে আছে নগ্নিকা প্রিয়া। আর তার নগ্ন শরীরে আলপনা এঁকে যাচ্ছে পার্থর খেয়ালী আঙুল। দুজনেই চুপ। পরিবেশটাও কেমন যেন নিঃস্তব্ধ। নিশ্চুপ। সেই নিঃস্তব্ধতাকে ছিন্ন করে প্রথম কথা বলল প্রিয়া, “পার্থ!” পার্থ আনমনা হয়েই উত্তর দিল, “উম্!”
“আমরা কখনও ভেবেছিলাম, যে আমাদেরও বিয়ে হবে, একটা সংসার হবে? এটা কোনো স্বপ্ন নয়তো?”
পার্থ মৃদু হেসে উত্তর দিল, “তোমার কি মনে হয়?”
প্রিয়া বলল, “কি জানি। মাঝেমাঝে যখন একা থাকি, তখন মনে হয় এসব স্বপ্ন। কিন্তু যখন তোমার কাছে থাকি, তোমার পাশে থাকি, যখন তোমার শরীর আমার শরীরটাকে ছুঁয়ে থাকে, তখন মনে হয় এসব সত্যি। বাস্তব।”
“এসব কিছু বাস্তব। সব সত্যি। আমাদের বিয়ে, আমাদের সংসার – সব, সবকিছু সত্যি।”
“আর আমাদের ভালোবাসা?”
“সেটা কি বলার প্রয়োজন রাখে, প্রিয়া? এ জীবনে তোমাকে আমার থেকে বেশী আর কেউ ভালবাসেনি, আর ভবিষ্যতেও কেউ ভালবাসবে না।”
“আচ্ছা, যদি কেউ, মানে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি আমাদের মাঝে চলে আসে তাহলে তুমি কি করবে?”
“আমি আমাদের মাঝখানে কাউকে আসতেই দেবো না।”
“আর আমি যদি তোমার চোখের সামনে অন্য কারোর হাত ধরে চলে যাই, তখন তুমি কি করবে?”
“তোমার উপর আমার বিশ্বাস আছে প্রিয়া। তুমি তা কখনো করবে না। তুমি আর যাই করো না কেন, আমার সাথে বিট্রে করবে না।”
“আমার উপর এত বিশ্বাস তোমার?”
“নিজের উপর তোমার যতটা বিশ্বাস আছে, প্রিয়া, তার থেকে অনেকগুণ বেশী বিশ্বাস আছে।”
“নিজের সুন্দরী বউয়ের উপর এতটাও বিশ্বাস করা ভালো নয় Mr. husband, দিনকাল মোটেও ভালো নয়। আর তাছাড়া শুনেছো তো, ‘দুনিয়া মে লোগোকো ধোকা কভি হো যাতা হ্যায়/আঁখো হি আঁখো মে ইয়ারো কা দিল খো যাতা হ্যায়...’ তাই আপনে সমান্ কা ধ্যায়ান্ খুদ রখা করো, পতিজী। নেহী তো কোঈ দুসরা আ কর মুঝে আপসে ছিন্ কর লে জায়েগা। সমঝে?”
পার্থ বুঝতে পারল প্রিয়া ওর সঙ্গে মজা করছে। ও বলল, “তুমি কি আমাকে এতটাই কাপুরুষ ভাবো যে, কেউ একজন এসে তোমাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবে, আর আমি তোমাকে তার সঙ্গে যেতে দেব? আমি যতক্ষণ বেঁচে আছি। ততক্ষণ আমি তোমাকে কোথাও যেতে দেব না।”
প্রিয়া বুঝতে পারল পার্থ ওর ইয়ার্কি করে বলা কথাটাকে সিরিয়াসলি নিয়েছে। তাই ও প্রসঙ্গ পালটে বলল, “ওসব ছাড়ো। অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। চলো না কোথাও ঘুরে আসি।”
“উঁহু। এখন অফিস থেকে মোটেও ছুটি পাবোনা। প্রচণ্ড কাজের চাপ। পরে না হয় প্ল্যান করা হবে।”
“আচ্ছা, প্রমিস?”
“প্রমিস। এখন চলো ঘুমাতে যাই। অনেক রাত হয়েছে। কাল আবার তাড়াতাড়ি অফিস যেতে হবে।”
প্রিয়াকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিল পার্থ। ঘুমানোর জন্য। নিশ্চিন্তের ঘুম। কিন্তু ওরা দুজনেই জানে না, ওদের নিস্তরঙ্গ জীবনে সবচেয়ে বড় কালবৈশাখী ঝড় উঠতে চলেছে। যে ঝড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাবে ওদের বর্তমান আর সেই সাথে ভবিষ্যতও।
কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় শিল্পপতি রাজেশ আগরওয়ালের ঘরে আজ সাজো সাজো রব। আজ প্রায় পনেরো বছর পর ওনার ছেলে রোহন আমেরিকা থেকে ফিরছে। এই একটিই মাত্র সন্তান ওনার। আজ ওনার ছেলে ত্রিশ বছরে পা দিচ্ছে। রোহনের যখন মাত্র বারো বছর বয়স তখন ওনার স্ত্রী কবিতা দেবী অর্থাৎ রোহনের মা মারা যান। তারপর উনি আর বিয়ে করেন নি। ছেলেকে নিজের চেষ্টায় বড় করে তুলছিলেন। কিন্তু নিজের ব্যবসার পাশাপাশি তিনি সেই সময় রাজনীতির অজানা আঙিনায় পা ফেলার ব্যবস্থা করছিলেন। তাই ছেলেকে যতটা সময় দেওয়ার কথা, ততটা দিতে পারছিলেন না উনি। তাই অনেক ভেবে ছেলেকে আমেরিকায় এক আত্মীয়ের কাছে পাঠিয়ে দেবেন ঠিক করলেন। অবুঝ রোহন বাবাকে ছেড়ে এক অচেনা পরিবেশে একদমই যেতে চায়নি। ও বারবার বলেছে, “না ড্যাডি, আমি তোমাকে ছেড়ে আমেরিকা যেতে চাইনা।” আর ততবারই উনি ছেলেকে বুঝিয়েছেন, “বেটা, আমি যা করছি, তোমার ভালোর জন্যই করছি। এখানে আমি তোমাকে ঠিকমতো সময় দিতে পারছি না। সারাদিন তুমি বাড়িতে একলা থাকো। আর ওখানে তোমার মাসি আছে, তার ছেলেমেয়েরা আছে। তারা তোমার বন্ধু হবে। ওরা ছাড়াও আরোও নতুন নতুন কত বন্ধু হবে। তখন তোমার ড্যাডিকেই হয়তো মনে পড়বে না।” এইভাবে অনেক বোঝানোর পর উনি নিজের ছেলেকে রাজী করাতে পারেন। উনি যখন রোহনকে আমেরিকা পাঠান তখন ওর পনেরো বছর বয়স। ছেলে চলে যাওয়ার পর থেকে রাজেশ আগরওয়াল অনেক একা হয়ে পড়েন। কিন্তু কোনোকিছুতেই ভেঙে পড়া তাঁর ধাতে নেই। তিনি নিজের সমস্ত সময় উজার করে দিলেন নিজের ব্যবসা আর রাজনীতিতে। বর্তমানে তাঁর কোম্পানী Tech-India Pvt. Ltd. এখন পশ্চিমবঙ্গের সফলতম কোম্পানী বলা যেতে পারে। আর রাজনীতিতে তার উন্নতি? টাচ উড! রাজনীতিতে তাঁর উন্নতি সিনেমা-উপন্যাসকেও ঘোল খাইয়ে ছেড়ে দেবে। পার্টির সাধারণ একজন নেতা থেকে শুরু করে প্রথমে এম.এল.এ। এবং এরপরে রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রীত্বপ্রাপ্তি – সবেতেই তাঁর ক্ষুরধার মস্তিষ্ক আর সেই সাথে লোকবলের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবে নিন্দুকেরা বলে এসবই নাকি বাঁকা পথে প্রাপ্তি তাঁর। আজকের এই জায়গায় আসার জন্য তিনি যে কত মানুয়ের প্রাণ নিয়েছেন, তার কোনো হিসাব নেই। কিন্তু এসব কথা কেউই খুব বেশীদিন বলতে পারেনা। তার একটাই কারণ, এসব কথা যে বা যারা বলে তাদের শেষ ঠিকানা হয় হাসপাতালের মর্গের ঠাণ্ডাঘরে। সে যাই হোক। আপাতত পনেরো বছর পর তাঁর ছেলে রোহন পাকাপাকি ভাবে এখানে ফিরছে। তাই কদিন ধরেই ওনার মনটা খুব খুশী। উনি চাইছেন খুব শীঘ্র কোম্পানীর সমস্ত দায়িত্ব ছেলের হাতে তুলে দেবেন। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ওনার সব কথা পাকা হয়ে গেছে। রোহন দেশেতে ফিরলেই পার্টির একজন যুবনেতা হিসাবে তাকে যোগদান করাবেন। এতে মুখ্যমন্ত্রীরও পূর্ণ সায় আছে। তবে সেটা কতটা স্বতঃস্ফূর্ত, সেটা বিচার্য বিষয়। তবে এটা ঠিক যে রোহনের এদেশে পা রাখার আগেই রাজেশবাবু তার ভবিষ্যতের সমস্ত পরিকল্পনা সেরে রেখেছেন।
দেখতে দেখতে সেই দিনটা এসে গেল। সকালবেলা রাজেশবাবু বাড়ির ডাইনিংরুমে বসে ব্রেকফাস্ট করছেন, এমন সময় ওনার পি.এ. সুরেশবাবু ঘরে ঢুকলেন। রাজেশবাবু একমনে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। সুরেশবাবু ঘরে ঢোকাতে উনি কাগজ থেকে মুখ তুলে ওনার দিকে তাকালেন। তারপর টোস্টে একটা কামড় বসিয়ে চিবোতে চিবোতে বললেন, “বোসো।” সুরেশবাবু ওনার সামনে একটি চেয়ারে বসলেন। রাজেশবাবু বললেন, “বলো, আজকের শিডিউল কি কি?” সুরেশবাবু তাঁর সঙ্গে রাখা ডায়েরীটা খুলে বললেন, “আজ সকাল এগারোটা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা মন্ত্রীসভার জরুরী মিটিং আছে। আর বিকেল চারটেয় আমাদের কোম্পানীর যে জাপানী ক্লায়েন্টরা কলকাতায় এসেছে, তাদের নিয়ে সাইটে যেতে হবে।” রাজেশবাবু হাত থেকে কাগজটা ভাঁজ করে নামিয়ে রেখে বললেন, “ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছো। কালোকে ডাকো।” সুরেশবাবু ঘাড় নেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। কালো হল রাজেশবাবুর সবথেকে কাছের এবং খুবই বিশ্বস্ত লোক। আসলে কালো হল ওনার বডিগার্ড। কিন্তু লোকে বলে রাজেশবাবু সমস্ত অবৈধ কাজ নিজের হাতে না করে কালোকে দিয়েই করান। কিছুক্ষণের মধ্যেই সুরেশবাবু দশাসই চেহারার কালোকে সঙ্গে করে ঘরে ঢুকলেন। সুরেশবাবু নিজের জায়গায় এসে বসলেও কালো দাঁড়িয়েই রইল। কালো রাজেশবাবুকে একইসাথে ভয়ও পায়, আবার শ্রদ্ধাও করে। ওনার সামনে ও চেয়ারে কখনও বসে না। কালোকে দেখে রাজেশবাবু বললেন, “কালো, আজ বিকালে জাপানী ক্লায়েন্টদের নিয়ে আমার জমি দেখতে যাওয়ার কথা আছে। তা ওদিকে সব ঠিক আছে তো?” কালো বলল, “হ্যাঁ, স্যার। আপনি যেমন বলেছিলেন। আমি সেই রকমই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কালরাতেই সমস্ত ঝোপড়ি খালি করিয়ে জমি ফাঁকা করিয়ে দিয়েছি।” রাজেশবাবু খুশী হয়ে বললেন, “গুড! শালা, হারামীগুলোকে কত করে বললাম জমি খালি করে দিতে, শুনল না। এখন বুঝবে চুতিয়াগুলো যে, রাজেশ আগরওয়াল কি চিজ!” সুরেশবাবু বললেন, “কিন্তু স্যার, মিডিয়াগুলো আবার এতে নাক গলাবে না তো? ও শালাদের আবার বিশ্বাস নেই। ক্যামেরা কাঁধে, মাইক হাতে বেরিয়ে পড়লেই হল।” রাজেশবাবু বললেন, “এবার মিডিয়াও কিছু করতে পারবে না। সবকাজ আমি আগে থেকেই মিটিয়ে রেখেছি। মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছে ঐ প্লটটা সরকারী বলে ঘোষণা করে দেবে। আর সরকারী প্রোজেক্টটা পাবে আমাদের কোম্পানী। তবে কিছু পার্টি ফাণ্ড বাবদ খসবে বলে মনে হচ্ছে। তবে বেশী কিছু নয়। আর কালো, অন্য কোনো প্রবলেম হয়নি তো?” কালো বলল, “না স্যার। দুজন একটু প্রবলেম করছিল। তারা এখন আর কিছু করতে পারবে না।” ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রাজেশবাবু বললেন, “লাশগুলো ঠিকঠাক পুঁতেছিস তো? দেখিস বাবা, পরে যেন কিছু না হয়। বয়স হচ্ছে। আর টেনশন নিতে পারিনা।” কালো বলল, “ভয় নেই স্যার। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব করেছি।” রাজেশবাবু চেয়ার থেকে উঠে বললেন, “যাক, তাহলে নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। তোরাই তো আমার বলভরসা। শোন্, আমি চানটান করে রাজ্যসভার মিটিঙে যাবো। তুইও সঙ্গে যাবি। ওখান থেকে এয়ারপোর্টে বেরিয়ে যাবো।” কালো কিছু বলার আগে সুরেশবাবু বললেন, “এয়ারপোর্ট কেন স্যার? দিল্লী যাবেন নাকি? তাহলে তো আগে বলবেন, আমি সব ব্যবস্থা...” উনি আর কথা শেষ করতে পারলেন না। রাজেশবাবুর স্থির দৃষ্টি আপনা থেকেই ওনার কথা বন্ধ করে দিল। রাজেশবাবু বললেন, “তোমার বয়স হচ্ছে, সুরেশ। এবার রিটিয়ার করো। এইমধ্যেই ভুলে গেলে? দুপুর আডাইটেয় রোহন ল্যাণ্ড করবে। ওকে রিসিভ করতে যেতে হবে না?” নিজের ভুল বুঝতে পেরে জিভ কেটে সুরেশবাবু বললেন, “ইশ, সরি, সরি। একদম ভুলে গেছি। My mistake.” রাজেশবাবু বললেন, “আর বেশী ইংরেজী না মারিয়ে, বাইরে ওয়েট করো। আমি রেডি হয়ে আসছি।” কালো আর সুরেশবাবু ঘাড় নেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। রাজেশবাবু গুণগুণ করে গান গাইতে গাইতে বাথরুমে ঢুকে গেলেন। আর যেন তর সইছে না ওনার। অনেকদিন পর ছেলেকে দেখতে পাওয়ার আনন্দে মশগুল উনি।গাড়ির জানালার কাচের বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে রোহন উৎফুল্ল হয়ে বলল, “Wow dad! ইন্ডিয়া তো দারুণ ইমপ্রুভ করেছে! কলকাতার রাস্তা তো চেনাই যাচ্ছে না!” ছেলের উৎসাহ দেখে রাজেশবাবু বললেন, “বেটা, এখন আমাদের ইন্ডিয়া তোদের আমেরিকার থেকে কোনো অংশে কিন্তু কম নয়। তবু সবাই যে কেন আমেরিকা, আমেরিকা করে পাগল হয়ে যায় বুঝিনা।” ওনার কথায় রোহনও সায় দিয়ে বলল, “Really dad, I’m impressed. Our country has changed fully.”
“আর এই চেঞ্জটা কারা এনেছে জানিস?”
“কারা ড্যাড?”
“আমাদের মত ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টরা।”
“আর তোমাদের মত পলিটিশিয়ানরা।”
“Absolutely my boy.”
এয়ারপোর্ট থেকে ফিরতে ফিরতে বাবা-ছেলের মধ্যে কথোপকথন হচ্ছিল। আজ পনেরো বছর পর তাঁর ছেলে আবার তার নিজের দেশে, নিজের ঘরে, তার বাবার কাছে ফিরছে, এটা ভেবেই রাজেশবাবুর মনটা খুবই ভালো ছিল সকাল থেকে। মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা মিটিংটা শেষ হতে প্রায় দেড়টা বেজে গেল। মিটিং থেকে বেরিয়ে নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়ের অভাবটা ভালোমতই টের পেলেন উনি। হাতে আর মাত্র ঘন্টাখানেক সময় আছে। রোহনের প্নেন আড়াইটেয় ল্যাণ্ড করার কথা। এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে দেরী করা যাবেনা। তিনি চান না এতবছর পর দেশে ফিরে রোহন ওনার জন্য এয়ারপোর্টে ওয়েট করুক। তাই আর কালবিলম্ব না করে সুরেশবাবু আর কালোকে সঙ্গে নিয়ে এয়ারপোর্টের দিকে রওনা হলেন। গাড়ি ওনাদেরকে নিয়ে ঝড়ের গতিতে রওনা দিল এয়ারপোর্টের দিকে। রাস্তায় বারবার হাতঘড়ির দিকে চেয়ে সময়ের হিসেব করছেন দেখে সুরেশবাবু বললেন, “আপনি চিন্তা করবেন না স্যার। আমরা ঠিক টাইমেই পৌঁছে যাবো।” রাজেশবাবু বিরক্ত হয়ে বললেন, “ঠিক টাইমে তো পৌঁছাতেই হবে। ছেলেটা কি আমাদের জন্য এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে?” সুরেশবাবু তাড়াতাড়ি বললেন, “না, না, আমরা তার আগেই পৌঁছে যাবো।” ওনারা যখন এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছালেন তখন আড়াইটে বেজে গেছে। রাজেশবাবু একপ্রকার অস্থির হয়ে উঠলেন। ছেলেটাকে না জানি কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হল। তড়িঘড়ি এয়ারপোর্টের ভিতরে ঢুকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন উনি। রোহনের প্লেন কুড়ি মিনিট ডিলে হয়েছে। সুরেশবাবু হেসে বললেন, “দেখলেন স্যার, রোহনবাবাকে অপেক্ষা করতে হলনা।” ওনার হাসি দেখে সারা অঙ্গ জ্বলে গেল রাজেশবাবুর। উনি অনুচ্চকণ্ঠে বললেন, “তাতে তোমার অত দাঁত ক্যালানোর কি হল বুঝতে পারছি না। প্লেনটা ঠিক টাইমে এলে রোহনকে দাঁড়িয়েই থাকতে হত। এখন এখানে ক্যালানে কার্তিকের মত দাঁড়িয়ে না থেকে ভিতরে চলো। রোহনের প্লেন যেকোন সময় ল্যান্ড করবে।” রাজেশবাবুকে দেখে ওনার চারপাশে একটা ছোটখাটো ভিড় জমা হয়ে গেল। উনি নিজস্ব বডিগার্ড আর এয়ারপোর্ট সিকিউরিটির সহযোগীতায় ওয়েটিং লাউঞ্জে পৌঁছে গেলেন। ওখানে দাঁড়িয়েই উনি ছেলের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই রোহনের প্লেনটা ল্যান্ড করল। আর তারপর রাজেশবাবু দেখলেন বছর ত্রিশের এক সুদর্শন যুবক ওনার দিকে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে। এক মুহুর্তের মধ্যেই ছেলেকে চিনতে পারলেন উনি। বয়স বেড়েছে, অনেক লম্বাও হয়েছে। কিন্তু মুখের গড়নটা সেই ছোটবেলার মতই রয়ে গেছে। ছোটবেলায় সবাই বলত রোহন নাকি ওর মায়ের মতই দেখতে হয়েছে। হবে হয়তো। ওর মাও ঠিক এইরকমই সুন্দর দেখতে ছিল। অতীত থেকে বর্তমানে রাজেশবাবু ফিরে এলেন ছেলের ডাকে। “Hey dad, কেমন আছো?” ছেলেকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বললেন, “আমি ভালো আছি। বেটা, তুই কেমন আছিস।” “As you see, fit and fine.” রোহন হেসে উত্তর দিল। রাজেশবাবু ছেলেকে বললেন, “চল্। বাড়ি চল্।” রোহনের হাত থেকে কালো ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে নিল। রোহন এর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তাকাতেই রাজেশবাবু বললেন, “ও হচ্ছে কালো। আমার সবথেকে বিশ্বাসী লোক। আজ থেকে ও সবসময় তোর সঙ্গে থাকবে, তোর ছায়া হয়ে।” তারপর সুরেশবাবুর দিকে ইশারা করে বললেন, “আর ও হচ্ছে আমার পি.এ. সুরেশ। তুই ছোটবেলায় ওকে দেখেছিস তোর হয়তো মনে থাকবে না।” এতক্ষণ পর কথা বলার সুযোগ পেয়ে সুরেশবাবু হেসে বললেন, “রোহনবাবা, তুমি ভালো আছো তো?” রোহন কিছু বলার আগেই রাজেশবাবু দাঁত খিঁচিয়ে বললেন, “শুনলো তো ও ভালোই আছে। তুমি এতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো? তাড়াতাড়ি ড্রাইভারকে বলো গাড়ি রেডি করতে। দেখছো ছেলেটা এতঘন্টা জার্নি করে এসেছে, আর তুমি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেজুরে আলাপ করছো।” সুরেশবাবু তাড়া খেয়ে বললেন, “যাচ্ছি স্যার। এক্ষুণি যাচ্ছি।” বলে উনি ওখান থেকে চলে গেলেন। রোহন বলল, “You don’t worry, dad. I’m fine.” উনি বললেন, “তা হোক। সবকথা কি এখানে দাঁড়িয়েই বলবি নাকি। চল্, রাস্তায় যেতে যেতে কথা হবে।” “চলো।” রাজেশবাবু ছেলেকে নিয়ে এয়ারপোর্টের বাইরে বেরিয়ে এলেন। বাড়িতে পৌঁছে রাজেশবাবু হাতঘড়িতে দেখলেন প্রায় চারটে বাজতে যাচ্ছে। ওনার মনে পড়ে গেল চারটের সময় জাপানী ক্লায়েন্টদের সঙ্গে প্লট দেখতে যাওয়ার কথা। উনি কোম্পানীর ম্যানেজারকে বলে দিয়েছিলেন যে সে যেন ক্লায়েন্টদের নিয়ে প্লটে চলে যায়, উনি সোজা সেখানেই পৌঁছে যাবেন। কিছুক্ষণ আগে ম্যানেজারের ফোন এসেছিল। সে বলল যে ক্লায়েন্টদের পিক আপ করতে হোটেলে যাচ্ছে। উনি জানিয়ে দিয়েছেন যে রোহনকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে উনি প্লটে পৌঁছে যাবেন। সেইমত বাড়ি পৌঁছে রোহনকে বললেন, “বেটা, এখন তুই একটু আরাম করে নে। আমার একটা জরুরি মিটিং আছে। আমাকে এক্ষণি বেরিয়ে যেতে হবে। কিছু দরকাল হলে বাড়িতে যে কাউকেই হোক বলে দিবি।” রোহন হেসে বলল, “ড্যাড, তুমি এমনভাবে বলছো যেন আমি একটা বাচ্চা ছেলে। তুমি একদম চিন্তা কোরো না। কাজে যাও।” রাজেশবাবু বললেন, “ও.কে. বেটা। টেক কেয়ার।” “বাই ড্যাড।” বলে রোহন ব্যাগ নিয়ে বাড়ির ভিতর চলে গেল। রাজেশবাবু গাড়ি ঘুরিয়ে প্লটে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিল। হঠাৎ রাজেশবাবুর মোবাইলে একটা ফোন এল। মোবাইলটা বের করে দেখলেন ম্যানেজার ফোন করছে। উনি ভাবলেন ওনার দেরী হচ্ছে দেখে হয়তো ফোন করছে। উনি ফোনটা রিসিভ করে বললেন, “চিন্তা কোরোনা, আমি ঠিক পৌঁছে যাবো। তুমি ততক্ষণ ওনাদেরকে প্লটটা ঘুরিয়ে দেখাও।” ওনার কথা শেষ হওয়ার আগেই ওপাশ থেকে ম্যানেজার বলল, “স্যার, একটু প্রবলেম হয়ে গেছে।”
“কি প্রবলেম?”
“স্যার আমি একটু আগে ক্লায়েন্টদের প্লটে নিয়ে যাই। গিয়ে দেখি কিছু লোক ওখানে আগে থেকেই জড়ো হয়েছে। মাইক-টাইক বেঁধে কিসব বক্তৃতা দিচ্ছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম ওরা লোকাল লোক। মানে আগে এখানেই থাকত। কালকে আমরা ওদের তুলে দেওয়ার পর আজ আবার এসেছে। কিসব বিক্ষোভ দেখাতে। আমরা গিয়ে পৌঁছাতেই সব স্লোগান দিতে লাগল। সব দেখেশুনে ক্লায়েন্টরা গাড়ি থেকে নামলই না। বলল জমিতে নিশ্চয়ই কিছু ডিসপুট আছে। ওরা এরকম ডিসপুটেড জমিতে কোনো প্রোজেক্ট করবে না। ওরা হোটেলে ফিরে যেতে চাইছিল। বাধ্য হয়ে ওদেরকে হোটেলে পৌঁছে দিয়েছি।”
“খুব ভালো করেছো! এবার আমাকে আমার কাজ করতে দাও। আর একটা কথা বলোতো। ওখালে পাবলিক্যালি আমার নাম নিচ্ছিল নাকি?”
“না স্যার। সবাই নয়। তবে মুরুব্বি গোছের একজন ছিল। সে মাইক ধরে খুব তড়পাচ্ছিল।”
“পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। তুমি ওখানেই থাকো। কালো যাচ্ছে, ওকে দেখিয়ে দাও মুরুব্বিটাকে। বাকিটা ও সামলে নেবে।”
ফোন রেখে রাজেশবাবু কালোকে সব বুঝিয়ে দিলেন। আর বললেন উনি একঘন্টা পর আসল জায়গায় পৌঁছে যাবেন। কালো ঘাড় নেড়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল। রাজেশবাবু ড্রাইভারকে হোটেলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। সুরেশবাবু বললেন, “কালোকে না পাঠিয়ে লোকাল থানায় ফোন করলে ভালো হত না? ওরা ফোর্স নিয়ে গিয়ে দু মিনিটে সব সাফ করে দিত।”
“আর সেই সাথে পাবলিকের মধ্যে আমার গুড ইমেজটাও সাফ হয়ে যেত। এইরকম মাথা নিয়ে কি করে সব কাজ করো জানি না। কালো গিয়ে সব ম্যানেজ করে নেবে। এখন একটু চুপ করে বসো। আমাকে ভাবতে দাও জাপানীগুলোকে কিভাবে ম্যানেজ করবো।” প্রায় চেঁচিয়ে বললেন রাজেশবাবু। ওনার মেজাজ বুঝে সুরেশবাবু চুপ করে গেলেন। হোটেলে পৌঁছে ওনার জাপানী ক্লায়েন্টদের বোঝাতে বেশ খানিকটা বেগ পেতে হল রাজেশবাবুকে। অবশেষে তাদেরকে এটা বোঝাতে সমর্থ হলেন যে প্লটটা তাঁর নিজস্ব নয়। জমি সরকারী। প্রোজেক্ট সরকারী। তাঁর ইনভলভমেন্ট কেবলই একজন রাজ্যের মন্ত্রী হিসাবে। আজ যা কিছু হয়েছে তা কেবলই একটা ভুল। এই ভুল ‘সরকার’ আর দ্বিতীয়বার করবে না। দরকার পড়লে উনি ওনাদের সঙ্গে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী কথা বলাবার ব্যবস্থা করে দেবেন। ওনার অনেক বোঝাবার পর তারা নিমরাজী হল পরের দিন আবার ঐ জমি দেখতে যাওয়ার। তবে একটা শর্তে। যেন কোন প্রবলেম না হয়। সব মেনে নিয়ে হোটেল থেকে বেরোবার পথে কালোর ফোন এল। “স্যার, দুজনকে তুলে এনেছি। বাকীদের ঠেঙিয়ে ভাগিয়ে দিয়েছি।”
“গুড। ছাগলদুটোর ছাল ছাড়াতে শুরু কর্। আমি গিয়ে কিমা করবো।”
“ও.কে. স্যার।”
ফোন ছেড়ে দাঁতের ফাঁকে বললেন, “শালা, চুতিয়ার বাচ্চা!”
ঘন্টাখানেকের মধ্যে রাজেশবাবু নিজের আড্ডায় পৌঁছে গেলেন। তবে একা। সাথে ড্রাইভার বা সুরেশবাবু নেই। কারণ এই আড্ডার ঠিকানা উনি ছাড়া আর কেবল কালো জানে। উনি আর কোনো তৃতীয় ব্যক্তিকে তার ঠিকানা জানাতে চান না। উনি পৌঁছে দেখলেন কালো একাই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। যথার্থ ব্যবস্থা। চেয়ারের সাথে বেঁধে দুটোকে বেশ ভালোরকমই আদর করেছে। দুটোরই ঘাড় লটকে গেছে। তবে বেঁচে আছে। বুকদুটো ধুকধুক করে ওঠানামা করছে। উনি গিয়ে পৌঁছাতেই কালো বলল, “লোকাল নেতা। কাজ-টাজ কিছু নেই। পার্টি অফিয়ে বসে, আর আন্দোলন করে।” দাঁত কিড়মিড় করে রাজেশবাবু বললেন, “করাচ্ছি হারামীদের আন্দোলন। শালা আমার সাথে পাঙ্গা।” বলে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। কালো দুজনের মধ্যে একজনের চুলের মুঠি ধরে মুখটা তুলে ধরল। গোটা মুখটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। নাকটা ফেটে গেছে। বাঁ চোখটা কোটর থেকে বেরিয়ে আসার জোগাড়। কালো বলল, “মুরুব্বি। আজকের আন্দোলনের নেতা। আপনার নামেও স্লোগান দিচ্ছিল।” রাজেশবাবু বলল, “কেন রে শুয়োর, আমি তোর কোন বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছি রে, যে এভাবে আমার পিছনে লাগলি?” লোকটা কেবল দুবার গোঁ গোঁ করে উঠল। রাজেশবাবু তার মুখে জোরে একটা কিল মেরে বলল, “যা বলার পরিষ্কার করে বল্।” সে অনেক কষ্ট করে বলল, “আ..আমা..র ভু..ল হয়ে গে..ছে..” রাজেশবাবু তাকে ব্যঙ্গ করে বলল, “তব্ পস্তানেকা ক্যায়া, যব চিড়িয়া চুক গঈ ক্ষেত। এবার তোর কি অবস্থা করবো জানিস? প্রথমে তোকে মারব। তারপর কুচিকুচি করে কোপাবো। এই এত্তটুকু করে সাইজ করব। ঠিক কিমার মত। তারপর। তারপর তোর মাংসগুলোকে পলিথিনে ভরে... কি ভাবছিস? কুকুরকে খাওয়াবো? না, আমার কুকুর এত সস্তা মাংস খায় না। হ্যাঁ যা বলছিলাম। তারপর তোর মাংসগুলোকে আলাদা আলাদা পলিথিনে ভরে মা গঙ্গার বুকে ভাসিয়ে দেবো। একটা বাবুঘাটে, একটা আউটরাম ঘাটে আর একটা...আর একটা হাওড়া ব্রিজে দাঁড়িয়ে সোজা তলায়। ঔঁ শান্তি! তোরও আর আমারও। আর হ্যাঁ। ভগবানকে বলে দিবি পরেরবার যেন তোকে আর মানুষ করে না পাঠায়। পারলে কুকুর করে পাঠায় যেন। আমার না কুকুর পোষার খুব শখ। ঘরে চারটে আছে। তোকে নিয়ে পাঁচটা হবে।” লোকটা ভয় পেয়ে গোঁ গোঁ করতে লাগল। রাজেশবাবু কালোকে বলল, “চিল্লিয়ে কানের মাথা খাচ্ছে। কাট্ শুয়োরের বাচ্চার গলার নলিটাকে। তবে একবারে নয়। আড়াই প্যাঁচে। যাতে প্রাণটা একটু একটু করে বেরোয়।” কালো তৎপরতার সঙ্গে মালিকের নির্দেশ পালন করল। রাজেশবাবু তাড়িয়ে তাড়িয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করলেন। তারপর বললেন, “লাশদুটোর ব্যবস্থা কর্। আমি বাড়ি যাচ্ছি। খিদে পেয়েছে। ডিনারের সময়ও হয়ে গেছে। রোহন হয়তো আমার জন্য ওয়েট করে আছে। আজ অনেকদিন পর বাপ-বেটায় ডিনার করবো। কাজ হয়ে গেলে ফোন করে গুড নিউজটা জানাবি।” বলে বাইরে বেরিয়ে গেলেন রাজেশবাবু। কালো নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন